মায়াবতী পর্ব ৩৭
তানিশা সুলতানা
সাগর এখন সুস্থ। অথৈই ভালো আছে। কিন্তু দুজনের একজনও কথা বলছে না। চুপচাপ আছে। সাগরকে তার বাবা মা এতো এতো কথা জিজ্ঞেস করেছে তবুও তার মুখ থেকে একটা শব্দও বের হয় নি। এক দৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখের সামনে থেকে সরছেই না তন্নিকে অপমান করার দৃশ্য টা। কিভাবে পারলো অর্ণব?
বাবার থেকে জেনেছে বাইকটা ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। এতে খুশি সাগর। এই বাইক সাগরের আর দরকার নাই।
অথৈ ও কথা বলছে না। তার মনটা পড়ে আছে তন্নির কাছে। তন্নি ঠিক আছে? সাগরের এক্সিডেন্টের কথা জানে তন্নি? ইতি কি খুব খারাপ কিছু করেছে তন্নির সাথে?
আশা এখনো অথৈয়ের হাত ধরে আছে।
অথৈ দীর্ঘ শ্বাস ফেল বলে
“মা তোমার ছেলেটা আমার জীবনটা শেষ করে দিলো। আমার তন্নিটাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। কে করলো মা? আমাদের জীবনটা এলোমেলো কেনো করে দিলো? ভালোই তো ছিলাম আমরা। কতো সুন্দর দিন কাটাচ্ছিলাম। আমি কখনোই তোমার ছেলেকে ক্ষমা করবো না। কোনোদিনও না।
আনোয়ার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আশা অনুতপ্তের আগুনে পুরছে। সে কি বড্ড বেশি ভুল করে ফেললো?
সাগর ঘন্টাখানিক পরে শুধু একটাই কথা বলেছে ” বাবা আমাকে দূরে কোথাও নিয়ে চলো। আমি আর এই শহরে থাকতে চাই না।
অথৈ আসে সাগরের সাথে দেখা করতে। সাগরের পাশে বসে সে। সাগর অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসে।
“ভালো লাগছে ভাইয়া?
সাগর শুধু মাথা দোলায়। কিন্তু সাগরকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ভালো নেই৷ তার মুখটা নীল হয়ে গেছে।পুরো মাথায় ব্যান্ডেজ করা। হাতটা ব্যান্ডেজে মুরানো।
সাগরের বাবা মা ভেবেছিলো এবার হয়ত সাগর কথা বলবে। কিন্তু বলে না।
” আসছি
ভালো থাকবেন
সাগর এবার বলে ওঠে
“তন্নির খেয়াল রেখো।
অথৈয়ের চোখে পানি চলে আসে। এতো ভালোবাসা তন্নির কপালে ছিলো? মানুষটা তন্নিকে এতো ভালোবাসে? তার ভালোবাসার কাছে অর্ণবের ভালোবাসা কিছুই না।
__
অর্ণব শার্টের ওপরের দুটো বোতাম খুলে বুক ফুলিয়ে এগিয়ে যায় ইতিকে পেছন ফেলে। যেনো সে যুদ্ধে জয়ী হয়ে গেছে। তন্নি বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি অর্ণবের দিকে।
অর্ণব তন্নির সামনে এসে দাঁড়ায়
“আমি তোমাকে সরি বলবো না কজ ভুলটা তোমার ছিলো। কতোবার না করলাম তাও তুমি কি করে সাগরের বাইকে উঠলে? আত্মা কাঁপলো না তোমার?
তন্নি ফোঁস করে শ্বাস তুলে বলে
” কাঁপলো না। কি করবেন?
অর্ণব ভ্রু কুচকে তাকায়।
“কি করবো মানে? পা ভেঙে বসিয়ে রাখবো।
“আপনি পাগলামি করেন না আমায় নিয়ে? এটা শুধুই পাগলামি। এখানে আমি ভালোবাসা দেখতে পাই না। ভালোবাসলে কখনোই ভালোবাসার মানুষটিকে অপমান করতে পারতেন না। এতোগুলো মানুষের সামনে এভাবে বলতে পারতেন না। একবার হলেও আপনার বুক কাঁপতো অর্ণব।
বলতে বলতে তন্নির চোখে পানি চলে আসে।
” আমি খুব সহজ সরল। আপনিই আমার জীবনের প্রথম পুরুষ। আপনার মতো করে কখনো কেউ আমাকে ভালোবাসার কথা বলে নি। যত্ন করে নি। পাগলামি করে নি।
আমি ভালোবাসার কাঙাল। এই পৃথিবীতে আমাকে ভালোবাসার মতো মানুষের সংখ্যা খুব কম।
আপনার তো অনেকেই আছে কিন্তু আমার আপনি ছাড়া কেউ নেই। এই কথাটা আপনাকে অনেকবার বলেছি আমি।
তন্নি হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়। তবুও আবার গড়িয়ে পড়ে।
“আপনার জন্য আমি সব হারাতে বসেছি। আমার অথৈয়ের সাথে দুরত্ব তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আমার বাবা আমার সাথে ভালো করে কথা বলছে না। বাড়িটা পর্যন্ত ছেড়েছি। আর কি কি করবো অর্ণব? আমায় বলে দিন?
অর্ণবের কপালে তিনটে ভাজ পড়ে।
” বাড়ি ছেড়েছো কেনো?
“যাতে আপনি আমার নাগাল না পান।
অর্ণব আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। বড্ড অসহায়ও আমি। কিন্তু আত্মসম্মানহীন না। ভালোবাসার জন্য আত্মসম্মানবোধ বিসর্জন দিতে পারবো না আমি।
অর্ণব বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ায়। তন্নির কথা অর্থ বুঝতে চাইছে সে।
“ক্লিয়ার করে বলো অনির মাম্মা। তোমার প্রবলেম কি? কি হয়েছে?
” প্রবলেম টা আপনি।
“বকেছি আমি তাই তো? আরে বাবা সরি বলতেই তো এসেছি।
” সরি বললেই কথা গুলো উঠে আসবে?
আপনি হয়ত জানেন না বন্দুকের গুলি আর কথা একবার বেরিয়ে গেলে আর ফেরত নেওয়া যায় না।
“আমার মাথা গরম হয়ে গেছিলো। তোমাকে মানা করার পরেও তুমি কি করে পারলে?
বলতে বলতে তন্নির দুই গালে হাত দেয়।
” আর কখনো বকবো না গড প্রমিজ।
তন্নি অর্ণবের হাত সরাতে যায়। অর্ণব শক্ত করে ধরে।
“প্লিজ অনির মাম্মা। এক সাথে সংসার করতে গেলে একটু আতটু ঝগড়া তো হবেই বলো।
” ছাড়ুন আমায়।
“আগে বলবে কি হয়েছে। তারপর ছাড়বো।
” বললাম আপনি বকেছেন। অপমান করেছেন তাই।
অর্ণব তন্নির মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।
“তোমাকে খোলা বইয়ের মতো পড়তে পারি আমি। বলো কি হয়েছে? কে কি বলেছে?
না বললে আজকে সিরিয়াসলি আমি বাসায় যাবো না। যেটা হওয়া বাকি সেটাও হয়ে যাবে। তুমি কিন্তু আমায় কন্ট্রোল করতে পারবে না।
তন্নি নরম গলায় বলে।
” বললাম তো
“আমায় রাগিয়ো না।
তন্নি চুপ করে থাকে
” টেল মি অনির মাম্মা।
তন্নি বলতে যাবে তখনই
ইতি বেগম আসে । অর্ণব ছেড়ে দেয় তন্নিকে।
“শাশুড়ীও হয়েছে অনরোমান্টিক। এদের উদ্দেশ্যই শুধু আমার রোমাঞ্চের বারোটা বাজানো।
তন্নি চোখ পাকিয়ে তাকায় অর্ণবের দিকে। ইতি কটমট চোখে তাকায়। তারপর
তন্নির হাতে ফোনটা দেয়।
” অথৈ কল করেছে।
বলেই আবার ইতি বেগম চলে যায়। তন্নি ফোন কানে নেয়।
“তন্নি ঠিক আছিস তুই? ভালো আছিস তো? কোথায় চলে গেছিস? কতোবার কল করেছি তোকে? সাগর ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছে।
সাগরের কথা শুনে তন্নি বিচলিত হয়ে ওঠে
” কি বলছিস তুই?
“হ্যাঁ রে
এখন মোটামুটি সুস্থ। তোকে অনেকবার কল করেছিলাম আমি।
” তুই ঠিক আছিস অথৈ? তোর গলা এমন শোনাচ্ছে কেনো?
চলবে………..