কনে বদল পর্ব ৭
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। উঠে দেখি নীরু রুমে নেই! ভাবলাম হয়ত বারান্দায় বসে আছে। বারান্দায় গিয়ে দেখলাম সেখানেও নেই! কোথায় গেল এত রাতে!
কেমন একটা ভয় কাজ করতে লাগল। হোটেল থেকে বেরিয়ে বিচে গেলাম। দূর থেকে একজন কে দেখা যাচ্ছে বিচে বসে আছে। পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম একা একা বসে আছে নীরু।
সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে । কী গভীরে ধ্যানে মগ্ন! মনে হলো কোথায় হারিয়ে যেন গেছে। আমি পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছি নীরুর কোনো হদিশ নাই!
আমি নীরুর গায়ে আলত করে হাত রেখে ডাক দিলাম, “এই নীরু।”
নীরু কোনো কথা বলল না এক ঝটকায় আমাকে জড়িয়ে ধরল। নীরু এত শক্ত করে হাতের বাঁধন বেঁধেছে মনে হচ্ছে আমি হারিয়ে যাব! নীরু আমাকে কোথাও হারাতে দিবে না। নীরুর চোখের পানিতে আমার বুক ভিজে যাচ্ছে। আমি কোনো কথা বলছি না। অনেকটা সময় কেটে গেল। নীরু ঠোঁট ফুলিয়ে বলছে, “আমি দেখতে অনেক পঁচা তাই না?”
“কে বলছে তুমি পঁচা!” আমি নীরু কে তুমি করে বললাম। এটা আমি ইচ্ছে করে বলিনি ভিতর থেকে এসে পড়েছে।
“আমি জানি তো আমি পঁচা, তাই তো তুমি আমায় পছন্দ করো না। “
“পছন্দ করি তো।”
“মিথ্যা কথা। “
“সত্যি তোমায় পছন্দ করি।”
নীরু আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সমুদ্রের শো শো শব্দ শুনা যাচ্ছে। গভীর রাত আশেপাশে কোনো মানুষজন নেই। আমি নীরুকে বললাম, ” হোটেলে যাবে না?”
কেমন আদুরে স্বরে বলে, “আরেকটু থাকি?”
আমি কিছু বলি না। কেমন একটা ভালোলাগা কাজ করে ভিতরে। ঠিক বলা যায় না। কেমন কেমন লাগছে! নীরুকে একটা কিস করতে ইচ্ছে করছে। লজ্জায় করতে পারছি না।
———-
“ঘর এমন অন্ধকার করে রেখেছিস কেন চারু?”
মুখ তুলে রুমমেট কাজলের দিকে তাকিয়ে বলে, ” এতক্ষনে এলি?”
” একটু কাজ পরে গেল তাই আসতে দেরি হলো, তা তুই এমন ঝিম মেরে পরে আছিস কেন?”
“এমনই ভালো লাগছে না রে।”
“তা তোর বিয়ের কী হলো? বিয়ে করবি করবি করে সবাইকে পাগল করে ফেললি।”
“বিয়ে ভেঙে গেছে। “
“এত দারুণ খবর! আর কিছুদিন মুক্ত বাতাস নিতে পারবি। তা বিয়েটা কে ভাঙ্গল ?”
“আমিই “
“ক্যান! ছেলে আগে একটা বিয়ে করেছে এমন খবর পেয়েছিস, নাকি ছোটো বাচ্চা সহ কোনো মেয়ে হাজির হয়ে ছেলের বউ দাবি করেছে! “
বিরক্তি নিয়ে কাজলের দিকে তাকায় চারু।
“তাহলে কি ছেলে নাইট ক্লাবে যায়?”
“ধুর! কি সব বলিস!”
“বিয়ে না করার কারণটা কি?”
“ছেলেটা খুব ভালো।”
“ছেলে ভালো তাই বিয়ে ভেঙে দিছিস, ভালো করেছিস। ভালো ছেলেগুলো হাসবেন্ড হিসাবে বাজে হয়। ভিজা তেনার মতো নেতিয়ে লেপ্টে থাকে! এদেরকে জীবন
থেকে সরানো যায় না আবার টানাও যায় না। বড্ড বিরক্তিকর!
হাসবেন্ড হিসাবে ভালো হয় দুষ্টু ছেলেরা। এরা খুব রোমান্টিক হয়!”
“তুই দেখি জামাই বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছিস!”
“সব অভিজ্ঞতা বুঝলি। আচ্ছা একটু অপেক্ষা কর। কফি বানাই, কফি খেতে খেতে তোর বিয়ে ভাঙার গল্প শুনব।”
হলের মধ্যে একটা সিলিন্ডার গ্যাসের চুলার ব্যবস্থা করেছে ওরা। তাতে চা, কফি বা টুকটাক রান্না করে।
দুইকাপ কফি হাতে নিয়ে চারুর পাশে বসে কাজল। “তা তুইতো বলেছিলি ছেলেকে তোর ভালোই লেগেছে?”
“হ্যাঁ লেগেছিল। সত্যিই রায়হান খুব ভালো ছেলে!”
“এতই যখন ভালো ভালো করছিস তা বিয়েটা করলি ক্যান শুনি?”
“তুই তো জানিস আমি বড়ো হয়েছি মামা বাড়িতে। “
“এনিয়ে তোর ভালো ছেলে কথা তুলেছে বুঝি?”
“না,না রায়হান ওমন ছেলেই না।”
কফির কাপে আলতো চুমুক দিয়ে কাজল বলে, “খুব সিরিয়াস কিছু মনে হচ্ছে? বলত শুনি।”
তুই তো জানিস আমার বাব-মা মারা গেছে আমার বয়স যখন পাঁচ বছর। সেই থেকে আমি মামার কাছে থাকি। কখনো মনেই হয়নি উনারা আমার বাবা-মা না।
আমার প্রতি মামার একটা টান থাকবে স্বাভাবিক রক্তের সম্পর্ক। কিন্তু মামির তো তা নেই। তুই ভাবতে পারবি না মামি আমাকে কতটা ভালোবাসে! নীরুর চেয়ে আমাকে বেশি ভালোবাসে!
ছোটোবেলা থেকেই আমি সবকিছুতে নীরুর চেয়ে বেশি পেয়ে আসছি।”
“হ্যাঁ তোর কথা শুনে অবাক লাগে, এত ভালো মানুষ হয়!”
একবার কী হয়েছে শোন, নীরু আর আমি তখন স্কুলে পড়ি। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলো। আমরা দুজন সে বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরলাম। এমন বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের জ্বর এসে গেল! মামি সারারাত আমার পাশে বসে রইলেন! অদিকে নীরুর কোনো খবর নেই! ভাবতে পারিস?”
“তোর কথা শুনে উনাদের দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।”
উনাদের এমন ভালোবাসায় নীরু সবসময় ঠকে যেত। নীরুর কি খারাপ লাগত না? আমার মনে হয় লাগত। ও আমাকে হিংসা করত বলে মনে হয়। করাটাই স্বাভাবিক তা-ই না?
“হ্যাঁ তুই ঠিকই বলেছিস, নীরুর জায়গায় আমি হলেও তাই করতাম।”
“কিন্তু নীরু অনেক বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে ও কখনো হিংসা প্রকাশ করত না!”
“সত্যি বলেছিস, ক্যাম্পাসে দেখা হলে কত আন্তরিকতা দেখায় যেন তোকে কত ভালোবাসে। এমন একটা ভাব দেখায় যেন তুই ওর আপন বোন!”
“ওর এ ব্যাপারটা বুঝেছি অনেক পরে। পড়াশোনায় আমি ভালোছিলাম তাই সবাই আমাকে একটু বেশি আদর করত। এটা ওর ভালো লাগত না! কিন্তু ও খারাপ লাগাটা সুন্দর করে লুকিয়ে ফেলতে পারে। এটা ওর একটা চমৎকার গুন।”
“এতে ওকে দোষী করা যায় না, একজন বাহিরের মানুষ এসে আমার বাবা-মার ভাগ নিয়ে যাবে। আমি তাকে সাদরে গ্রহণ করব এতটা মহৎ মানুষ খুব কমই হয়।”
আমি কিন্তু চাইনি হলে উঠব, বরং চেয়েছিলাম মামা-মামীর সাথেই থাকব। নীরু চালাকি করে আমাকে হলে পাঠিয়ে দিল। মামাকে বলেছে, “আমি হলে থাকতে চাই।” অথচ আমাকে বলেছির ও হলে থাকতে চায়।
রায়হান যেদিন আমাকে দেখতে আসল কেন জানি আমার চেয়ে নীরুই বেশ খুশি হলো। রায়হানের সব গুনগান করা শুরু করল! প্রথমে ভাবলাম দুলাভাই হিসাবে রায়হানকে নীরুর খুব ভালো লেগেছে!
আমার কাছে একটু অন্যরকম লাগল ব্যাপারটা। রায়হানের মোবাইল নাম্বার নিল আমার কাছ থেকে। রায়হানের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপ করে। আমি বুঝলাম নীরু রায়হান কে পছন্দ করে ফেলেছে!
“কী বলছিস! “
হ্যাঁ এমনটাই মনে হলো আমার। এবার বল রায়হানকে আমি কী করে বিয়ে করি!
নীরু তো আমাকে ওর প্রিয় দুইজন মানুষের ভাগ দিছে, আমি ওকে একজন দিয়ে দিলাম।”
“রায়হান কী ওকে মেনে নিবে? ওর তো ভালো লেগেছিল তোকে।”
নীরু এদিক দিয়ে খুব বুদ্ধিমতি ও জানে কী করে মানিয়ে নিতে হয়। ও ঠিক রায়হান কে আপন করে নিবে। রায়হান খুব ভালো ছেলে। ও কাউকে কষ্ট দিতে জানে না।”
“তোর কী হবে তাহলে?”
চলবে–
® নাবিল মাহমুদ