মায়াবতী
পর্ব:৪৬
তানিশা সুলতানা
রিকশা থেকে নামতে গিয়ে হোঁচট খায় অর্ণব। একদম বুক কেঁপে ওঠে তার। পড়তে গিয়ে বেঁচে যায়।
রিকশা মামা পেছন তাকিয়ে বলে
“দেইখা নামেন।
অর্ণব ওনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। তারপর টাকা দিয়ে তন্নির দিকে এগিয়ে যায়।
তন্নি বসে ছিলো অর্ণবকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়।
অর্ণবের সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। মনটা শান্ত হয়ে যায়। এই মেয়েটার তার ভালো থাকার মেডিসিন।
তন্নি এগিয়ে এসে অর্ণবের মুখোমুখি দাঁড়ায়। গোড়ালি উঁচু করে আঁচল দিয়ে অর্ণবের মুখের ঘাম মুছিয়ে দেয়।
” কেমন আছেন?
অর্ণব তন্নির দুই গালে হাত দিয়ে মুখটা ভালো করে দেখে উওর দেয়
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি?
” আমিও ভালো
আসুন বসি
অর্ণবের হাত ধরে গাছের জড়ের উপর বসে।
“আর্জেন্ট আসতে বললা যে?
” অনেক দিন দেখা হয় না। আজকে খুব করে দেখতে ইচ্ছে হলো।
অর্ণব তন্নির মাথাটা নিজের কাঁধে রাখে। এটা সে সব সময়ই করে। তন্নিরও অর্ণবের কাঁধে মাথা রাখতে খুব ভালো লাগে। এখানেই সুখ খুঁজে পায়।
“আমার অনির মাম্মা তো শুধুমাত্র দেখার জন্য কখনোই আমাকে ডাকবে না।
তন্নি মুচকি হাসে। একটু বেশিই বুঝে মানুষটা তাকে।
” বাবা আসছে ৪ তারিখ।
অর্ণব চমকে ওঠে। বড়বড় চোখ করে তাকায় তন্নির দিকে
“সিরিয়াসলি?
তন্নি মুচকি হেসে বলে
” হুমম
“এতো দ্রুত চলে আসবে ভাবতেই পারি নি। যাক ফাইনালি পার্মানেন্টলি পেতে যাচ্ছি তোমায়।
দুজনের চোখে মুখে খুশির ঝলক। প্রিয় মানুষটাকে চিরতরে পাওয়ার আনন্দে দুজনই আত্মহারা। অপেক্ষার প্রহর যে ভয়ংকর খারাপ।
ভালোবাসার পূর্ণতা পাওয়ার আনন্দ অন্য রকম। প্রিয় মানুষ সারাজীবন পাশে থাকবে এর থেকে সুখের আর কিছু হতেই পারে না।
__
রাত এগারোটা বাজে। অথৈ ঘুমিয়ে পড়বে কি না ভাবছে। বেশ খানিকক্ষণ ফেসবুক ঘাটাঘাটি করেছে। সাগর অনলাইনে। তার নামের পাশে সবুজ বাতি জ্বলছে। কিন্তু অথৈকে একটা মেসেজ দিচ্ছে না। দশটার দিকে একটা পিক আপলোড করেছে। সেখানে কতোজন কতো রকম কমেন্ট করছে। তাদের কমেন্টের রিপ্লাই দিচ্ছে।
অথচ অথৈকে একটা মেসেজ দেওয়ার সময় নাই তার।
তাচ্ছিল্য হাসে অথৈ। ফোন বালিশের পাশে রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
বাবা মা ভাই বোন সবাইকে পইপই করে বলে দিয়েছে তাকে উইস না করতে।
দরজাটাও লক করে রেখেছে।
সাগরকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে যায় অথৈ। ঘুমায় পাশে ফোনের শব্দে। খানিকটা বিরক্ত হয় অথৈ। এতো রাতে আবার কে?
কিন্তু ফোনের স্কিনে তাকাতেই ঘুম আর বিরক্তও ছুটে যায়। সাগর কল করেছে?
তারাহুরো করে কল রিসিভ করে অথৈ।
সাগর বলে ওঠে
” হ্যাপি বার্থডে অথৈ
খুশিতে অথৈয়ের চোখে পানি চলে আসে। তার সাগর তাকে উইস করেছে? ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে ঠিক ঠিক বারোটা বাজে। সবার আগে সাগর উইস করলো।
অথৈয়ের কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে সাগর আবারও বলে ওঠে
“অথৈ শুনছো?
অথৈ চোখের পানি মুছে নেয়। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে অথৈ বলে
” থ্যাংক ইউ
“খুশি হও নি?
অথৈ নাক টেনে বলে।
” আপনি আমার সাথে একটু কথা বললেই আমি খুশি হয়ে যাই। আর তো আমার জন্মদিনে সবার আগে শুভেচ্ছা জানালেন। খুব খুশি আমি।
“সর্দি হয়েছে?
” না না
“তাহলে নাক টানছো।
অথৈ কি জবাব দিবে বুঝতে পারছে না। চোখে পানি চলে এসেছিলো এটা বলবে? কি ভাববে সাগর?
না বলাই যাবে না।
” হ্যাঁ ঠান্ডা লেগেছে।
সাগর শব্দ করে হেসে ওঠে। অথৈ সেই হাসির শব্দ কান পেতে শুনতে থাকে। এতো বেশি কেনো ভালো লাগে?
“কাল কলেজে আসবা?
” হ্যাঁ যাবো
“কয়টায়?
” বারোটায়।
“আমায় ট্রিট দিবা না কাল?
” ঠিক আছে দিবো।
“ওকে
সময় পেলে কালকে তোমার থেকে ট্রিট নিবো।
এখন ঘুমিয়ে পড়ো। গুড নাইট
সাগর কল কেটে দেয়। অথৈ ফোনটা বুকে জড়িয়ে হেসে ফেলে। এতো সুখ কপালে লিখা ছিলো? এতো খুশি জীবনে কখনো হয় নি অথৈ।
ঘুম কি আর হবে অথৈয়ের? সে তো তার সাগরের কথাই ভাবতে থাকবে। কল্পনা করতে থাকবে কাল কি কি হবে। ভাবতে থাকবে কোন জামাটা পড়ে যাবে? সাগরের সাথে কিভাবে কথা বলবে? একটা কাপল পিক তোলার আবদার করবে কি? সাগর কি কিছু গিফট দিবে অথৈকে?
ভালো করে দুটো কথা বলবে?
তখন আবারও ফোন বেজে ওঠে অথৈয়ের। তন্নি কল করেছে। অথৈ মুচকি হেসে তন্নির কল রিসিভ করে। বেশ খানিকক্ষণ কথা বলে দুজন।
তারপর ঘুমতে যাবে তখনই দরজায় কড়া নরে। অথৈ জানে তার ভাই বোন এসেছে। তাকে কেক কাটাবে।
অথৈ গলায় ওড়না পেঁচিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দরজা খুলে দেয়। আর্থি অর্ণব আশা আর আনোয়ার চারজন এক সাথে হ্যাপি বার্থডে বলে ওঠে। জড়িয়ে ধরে অথৈকে। আনোয়ারের হাতে চকলেট কেক। অথৈয়ের প্রিয়।
অথৈ বলেই দিছে সে কেক কাটবে না। তাই অর্ণব কেক খানিকটা তুলে অথৈয়ের মুখের সামনে ধরে বলে
” কেক কাটবি না ইটস ওকে
খেতে তো পবলেম নাই।
অথৈ মুচকি হেসে খেয়ে নেয়।
__
আশা বেগমের আচরণ ইদানীং কেমন অদ্ভুত লাগে। সে ছেলেমেয়েদের সাথে ভালো করে কথা বলে না। আনোয়ারের সাথেও তেমন কথা বলে না। ঠিকঠাক ভাবে কোনো কাজ করে না। সারাক্ষণ কিছু একটা ভাবতে থাকে। কারো সাথে সেই ভাবনাটা শেয়ারও করে না।
রান্না করছিলো আশা বেগম। তখন তার ফোন বেজে ওঠে। চমকে ওঠেন তিনি। অর্ণব ডাইনিং টেবিলে বসে মায়ের হাবভাব বুঝতেছিলো। এমন কেনো করছে?
ফোনটা হাতে নিতেই কেমন মুখটা চুপসে যায় আশা বেগমের।
অর্ণব কিছু একটা আন্দাজ করে বাঁকা হাসে।
অথৈ গোলাপি একটা থ্রি পিছ পড়ে নেয়। খুব বেশি সাজুগুজু করে না। কারণ সকাল বেলায় তার মনটা ভেঙে যায়। কারণ সাগর অনলাইনে নেই। সে কি আসবে না?
আজকে অথৈয়ের ক্লাস নাই। শুধুমাত্র সাগরের জন্যই যাবে। নেই বললে কখনোই সাগর আসতে চাইতো না।
চলবে