#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১২(বোনাস)
রাত বাসায় এসেই সায়ানের খোঁজ করা শুরু করলো। কিন্তু কোথাও তাকে না দেখে সে এক প্রকার দৌড়েই মিতালির রুমে চলে গেলো।গিয়ে দেখতে পেলো সায়ান মিতালির বিছানায় শুয়ে আছে আর মিতালি পাশে ঘুম। রাত এগিয়ে গেলো। রাতের পায়ের শব্দে নুশান সোফা থেকে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,
-“তুমি!”
-“আসলাম!”
নুশান মাথা নাড়ায়। রাত ভিতরে ঢুকে পড়লো।দেখতে পেলো মিতালি সায়ানের উপর এক হাত তুলে রেখেছে। রাত সায়ানের পাশে গিয়ে বসলো।নুশান বলতে লাগলো,
-“মিতালি মাত্রই ঘুমালো।”
-“তো?”(ভ্রু কুঁচকে)
-” না মানে উঠে সায়ানকে না পেলে..”
-“আই ডোন্ট কেয়ার।”
বলেই রাত সায়ানকে কোলে তুলে নিলো। অমনি মিতালি লাফ দিয়ে উঠলো।ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সায়ানও কেঁদে উঠলো। মিতালি সায়ানকে কেড়ে নিয়ে বলতে লাগলো,
-“তুমি যাও আমি দেখছি।”
রাত তো বিরক্তির শীর্ষে। এমনিতেই সে মিতালির এ বাসায় থাকাটা মানতে পারছে না।তারমধ্যে মিতালির এসব তো তাকে আরো বিরক্ত করছে।মিতালি সায়ানকে নিজের কোলে নিয়ে দুলাচ্ছে আর নানান কথা বলছে।রাত সেখানেই বসে আছে।মিতালি ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“কি হলো যাও?”
-“কোথায়?”
-“আমরা স্বামী-স্ত্রী এখানে টাইম স্পেন্ড করব। তুমি এখানে এভাবে বসে থাকলে..”
রাত হাতে হাত ভাজ করে হালকা হেসে বললো,
-“ওহ রিয়ালি!তাহলে আমার সায়ানকে দিয়ে দাও।”
-“না!সায়ান আমার ছেলে।ওকে আমি দিবো না।”
রাত বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“মিতালি এবার বেশি হচ্ছে! “
-“আমি দিবো না।”
রাত জোর করেই সায়ানকে নিজের কোলে নিয়ে নিলো।সায়ানের কান্নাও থেমে গেলো।সে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।পিছন পিছন মিতালিও অসহ্যকর এক চিৎকারের সহিত দৌড়ে আসছে।রাত সায়ানকে শিশিরের কোলে দিয়ে বললো,
-“অনেক হয়েছে।আর না।”
শিশির সায়ানকে দুলিয়ে দুলিয়ে বললো,
-“আবার কি করলো?”
-“আমি গিয়ে সায়ানকে চাইলাম। ও দিলো না। এসব কি স্যার?”
শিশির সায়ানকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে বললো,
-“আমার রুমে কারোর ঢোকার সাহস নাই।”
হলোও তাই!মিতালি শিশিরের রুমের দরজার সামনে এসে থেমে গেলো।মনে পড়ে গেলো গতকালকের রাতের বের করে দেয়ার দৃশ্যটা।তাই আর না ঢুকে এবার বেশ জোরেই কান্না আরম্ভ করে দিলো। নুশান এসেও সামলাতে পারছে না। মিতালি নুশানকে বারবার আঘাত করছে।রাত আর না পেরে নুশানকে সরিয়ে মিতালির গালে চড় বসিয়ে দিলো। তারপর মিতালির হাত ধরে দরজার সামনে নিয়ে যেয়ে ধাক্কা দিয়ে বললো,
-“গেট আউট ফ্রম মাই হাউজ রাইট নাউ।”
নুশান কিছু বলতে যাওয়ার আগেই রাত হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললো,
-“আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। আপনারা যাবেন নাকি আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হব? অনেক হয়েছে! আমরা আপনাদেরকে আমাদের বাসায় এলাউ করছি না। সাতদিন তো নেভার।”
শিশিরও পিছন পিছন সায়ানকে কোলে নিয়ে আসতে আসতে বলছে,
-“হ্যা! আমি তো এসব চরিত্রহীনদের চেহারাই দেখতে চাই না। সাহস কিভাবে হলো আমাদের বাসায় পা রাখারও?”
মিতালি দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
-“বেশি বলে ফেলছো!”
রাত চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“এখনো যাননি!”
-“আমি যাবো না!”
মিতালির এমন কথায় রাত রেগে গেলো। কিছু বলতে যাবে তার আগেই চৈতী বেগম এসে গেলেন। উনি রাতকে থামিয়ে বলতে লাগলেন,
-“কি সমস্যা রাত?ওদেরকে চলে যেতে বলছো কেন?”
-“মানেটা কি আন্টি!আমি এদেরকে আমার বাসায় এলাউ করব না।”(মুখ ঘুরিয়ে)
-“আমার কথাই শেষ কথা।শিশির আমার কথাট বিরুদ্ধে যায় না।জানো না তুমি এটা?”(শক্ত গলায়)
রাত চুপ করে রইলো।শিশির এবার মুখ খুললো,
-“কিন্তু মা!তাই বলে তুমি কিনা মিতালিকে এলাউ করছো!কেন?”
চৈতী বেগম মিতালিকে ঘরে আনতে আনতে বললেন,
-“আমি যা বলেছি তাই হবে।ওদের সাতদিন থাকার,থাকবে।”
রাত চৈতী বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“কিন্তু মা..”
-“আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না।”
রাত ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো চৈতী বেগমের দিকে। মিতালির মুখের হাসিটা তার চোখ এড়ালো না। সে দৌড়ে রুমে চলে গেলো।শিশির তার মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“মা!তোমার এই ডিসিশন টা আমার মানতে ইচ্ছে করছে না।”
বলেই শিশির সেখান থেকে চলে গেলো। চৈতী বেগম সেদিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলেন।মিতালি হেসে বললো,
-“থ্যাংক ইউ সো মাচ শ্বাশুড়ি মা।”
চৈতী বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন মিতালির দিকে। মিতালি বাঁকা হেসে বললো,
-“উপস আন্টি!”
চৈতী বেগম সেখান থেকে রাতের রুমে পা বাড়ালেন।
এদিকে রুমে এসে অঝোরে কাঁদছে রাত। চৈতী বেগমের থেকে এমন বিহেভিয়ার সে আশা করেনি।
শিশির রাতকে নানাভাবো কথায় ভুলানোর চেষ্টা করছে।সায়ানকে কোলে নিয়ে বলছে,
-“রাত কেঁদো না। দেখো না সায়ান কিভাবে তোমায় ড্যাবড্যাব করে দেখছে।”
রাত নাক টানছে আর কেঁদে চলেছে।শিশির রাতকে চিমটি দিয়ে বললো,
-“দেখো না রাত!লুক!”
রাত উঠে দাঁড়ালো।শিশিরও দাড়িয়ে বললো,
-“আর কত কাঁদবে। “
রাত কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-“আন্টি আমার সাথে এভাবে কথা বললো!”
-“আমারো ভীষণ খারাপ লেগেছে রাত। আমি বুঝতে পারছি।”
রাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই চৈতী বেগম রুমে ঢুকে বললেন,
-“আসব?”
রাত বসে পড়লো। মুখ ঘুরিয়ে চোখ মুছে নিলো। শিশির মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“তোমারো পারমিশন নিতে হয় মা?”
চৈতী বেগম ঢুকে পড়লেন। রাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে কাঁধে হাত রেখে বললেন,
-“রাত তুমি কি রাগ করেছো মা?”
রাত উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“না আন্টি। আমার রাগ নেই।”
-“রাগ করো না।আমি এমনটা করেছি,নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। সাতটা দিন কোনোভাবে চলে যাক।”
-“মানেহ!”(ভ্রু কুঁচকে)
শিশিরও মায়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,
-“কারণ আছে মানে?কি কারণ মা? দেখো আমি আর রাত কিন্তু কখনোই মিতালিকে এলাউ করিনি। একমাত্র তোমার কথায় ওকে এখনো পুলিশে দিইনি। ওর সাহস কিভাবে হয় এত বড় কান্ড ঘটানোর পর আমার বাসায় পা রাখারও।”
বলতে বলতে শিশির রাগে রিরি করতে লাগলো।রাতও উত্তরের আশায় চৈতী বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে।এদিকে চৈতী বেগম মনে মনে ভাবছেন,
-“কারণ তো অবশ্যই আছে রে।কিন্তু আপাতত তোদের বললে তোরা রেগে কিছু একটা করে বসবি মিতালির সাথে।এতে মিতালি ক্ষেপে পুলিশি ঝামেলা করবে। যা আমি মোটপও চাই না।”
চৈতী বেগমকে চুপ থাকতে দেখে রাত বলে উঠলো,
-“বলো আন্টি!মিতালিকে রাখার কারণটা কি?”
-“কিছু না। আমি চাইছি তাই।সাতদিন থেকে চলে যাবে।”
শিশির রেগে বললো,
-“মা,তাহলে আমি আর রাতও এখানে থাকব না। আমরা সায়ানকে নিয়ে দূরে চলে যাব।”
-“মিতালি এসেছে আজ ২ দিন। আর পাঁচটা দিনই তো।দেখতে দেখতে চলে যাবে। ওর কাছে একটু সায়ানকে কিছুক্ষণের জন্য দিস। ব্যস। পরেই তো ঝামেলাটা চলে যাবে।”
রাত ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কাঁদছে। শিশির বড্ড বেশিই রেগে আছে। আর একবারও যদি সে মিতালির মুখ দেখে তাহলে হয়ত খুনই করে ফেলবে। একমাত্র তার মায়ের জন্য তাকে এমনটা করতে হচ্ছে। তবুও সে দমেনি। আবারো ক্ষুব্ধ হয়ে বললো,
-” মা প্লিজ!আমি আর এক মুহুর্তও ওকে দেখতে চাই না। আমি ওকে এখনই বের করছি।”
বলেই শিশির সায়ানকে রাতের কোলে দিয় দরজার দিকে যেতে লাগলো। চৈতী বেগম পিছন থেকে বলে উঠলেন,
-“যাস না শিশির। তোকে আমার কসম দিলাম।”
শিশিরের পা থেমে গেলো। রাত কাঁপা গলায় বললো,
-“এটা কি বললে আন্টি।তুমি মিতালির জন্য কসম দিলে?”
চৈতী বেগম মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
-“আমাকে যদি একটুও ভালোবেসে থাকিস তাহলে আর পাঁচটা দিন একটু মানিয়ে নিস।তোদের ভালোর জন্যেই করছি।”
বলেই উনি একপ্রকার দৌড়ে বেরিয়ে গেলেন। শিশির ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে বললো,
-“দেখলে তুমি? মিতালির জন্যে মা কসম দিলো।”
-“কিছু তো আছেই। আমাকে মায়ের পেট থেকে কথা বের করতে হবে।”(মনে মনে)
-“রাত?”
-“হুম?”
-“কি ভাবছো?”
-“না কিছু না। থাক পাঁচটা দিন। কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমিও ছাড় দিবো না।”
-“আমার সামনে যেন না আসে। আমি এসব চরিত্রহীনদের মুখ দেখতে চাই না।”
বলেই সে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। রাত সায়ানের জন্য ফিডার বানাতে বানাতে ভাবতে লাগলো,
-“আমাকে আগে জানতে হবে যে মা কোন কারণে মিতালিকে রাখতে চাইছে।কারণ সাতদিন চলে গেলেও মিতালি সেই কারণটা নিয়ে মাকে আবারো ব্লেকমেইল করতে পারে।অবশ্য আমিও অবাক হয়েছিলাম মায়ের মিতালিকে আমাদের বাসায় রাখার।কিন্তু বড়দের বিরুদ্ধে আর কি বলব!কিন্তু এখন তো কেসটা সিরিয়াস মনে হচ্ছে। আর মিতালি থেকে আমাকে সতর্ক থাকতে হবে।ওর মনেও প্যাচ আছে।”
কথাগুলো ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো রাত। সায়ানের পাশে শুয়ে ফিডার খাওয়াতে লাগলো।মনে তার হাজারো চিন্তা!এভাবে তার বরের ডিভোর্সি বউকে তার স্বামীসহ থাতে দিতে হচ্ছে। সে কিছুই করতে পারছে না। তাকে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকাটা মানায়?আর কত?
চলবে….
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার দিয়েন)
(গতকাল একটা জায়গায়, “আগামীকাল বিয়ে” লিখেছিলাম। ওটা এঙ্গেজমেন্ট হবে।ইডিট করতে ভুলে গেছিলাম।দুঃখিত)
(মিতালিকে রাখার ব্যাপারটা বেমানান লাগলেও এর কারণ রয়েছে। অনুসা রাত রহস্য ছাড়া গল্প লিখে না।যাদের অবাস্তব লাগবে তাদের উদ্দেশ্যে বলব যে কাল্পনিক গল্পে বাস্তবতা খুঁজতে আসবেন না।এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক গল্প।)