#তানিশা সুলতানা
প্রিয় মানুষটির হাতের মুঠোয় অন্য একটা হাত দেখে থমকে যায় অধরা। পা দুটে থেমে যায় তার। চোখ দুটো টলমল করে ওঠে। ওষ্ঠজোড়া কাঁপছে। তাদের হাসিমুখ খানা বড্ড চোখে লাগছে। মেয়েটা শক্ত করে ধরে আছে মাহিমের হাত। খিলখিল করে হাসছে। মাহিমের ঠোঁটের কোণেও হালকা হাসি ঝুলে আছে।
ভার্সিটিতে অধরা পায়ে হেঁটেই যায়। বাড়ি থেকে দশ মিনিট লাগে। ভার্সিটির সামনেই শিশু পার্ক। সেখানে শিশু কম দেখা যায় কিন্তু কপোত-কপোতীর দেখা বেশি মিলে। সেই শিশু পার্কের সামনে মাহিম এবং তার সাথে একটা মেয়ে।
চোখে টলমল করা পানিটুকু দুই গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। হাতের উল্টো পিঠে মুছে নেয় অধরা। মাথা নিচু করে ফেলে। যেতে হবে তাদের সামনে দিয়ে। তাই ওড়নাটা মাথায় তুলে নেয়। ব্যাগ বুকের মধ্যে নিয়ে তারাহুরো করে হাঁটতে থাকে।
যাতে মাহিম তাকে না দেখতে পায়।
মাহিমকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় আচমকা অধরার হাত ধরে ফেলে মাহিম৷ চমকে ওঠে অধরা। মেয়েটিও ভ্রু কুচকে তাকায়।
মাহিম এক টানে অধরাকে সামনে দাঁর করিয়ে হাত ছেড়ে দেয়।
“একা কেনো? আর এতো আগে কেনে? ক্লাসরুম ঝাড়ু দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছিস?
মেয়েটা হেসে ফেলে। লজ্জায়,অধরা নিচু মাথা আরও নিচু করে ফেলে। লোকটা সারাক্ষণ তাকে লজ্জা দিতে থাকে। একটুও কি ভালো করে কথা বলা যায় না?
মেয়েটি হাসি থামিয়ে মাহিমের হাত জড়িয়ে ধরে বলে
” কে?
মাহিম অধরার নিচু মাথার দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে ওঠে
“প্রেয়সী
আরেকদরফা চমকে ওঠে অধরা। বড়বড় চোখে তাকায় মাহিমের দিকে। মাহিম বিরক্ত হয় নিজের ওপর।
মেয়েটি বলে
” বুঝলাম না?
“ওর নাম অধরা। সেটাই বলেছি। না বোঝার কি আছে? আজিব
মেয়েটার চোখে মুখে প্রশ্ন। অধরার মনেও প্রশ্ন জেগেছে।
” তুমি তো প্রেয়সী বললা
“তিশা ইদানীং কানে বেশি শুনছো তুমি।
আর তুই
চল তোকে ক্লাসে দিয়ে আসি। সব গুলো ক্লাসরুম একাই ঝাঁড়ু দিবি। এটাই তোর পানিশমেন্ট।
বলে অধরার হাত ধরে টানতে টানতে চলে যায়। পেছনে রেখে যায় হতদম্ভ তিশাকে। যে অংক মেলাতে ব্যস্ত।
অধরার মনে এখন প্রশ্ন নয় ভয় চেপেছে। এই যে মাহিম তার হাত ধরে হাঁটছে এটা যদি মাহমুদা দেখে ফেলে তাহলে তো অধরাকে আর আস্ত রাখবে না। কোমর যেটুকু ভালো আছে সেটুকুও ভেঙে দিবে৷
শুকনো ঢোক গিলে আশেপাশে দেখে নেয় অধরা। চারপাশে মানুষজন গিজগিজ করছে। করবে না? শিশু পার্কের পাশেই কোর্ট। দুই পাশে ফুলের দোকান।
” হাত ছাড়ুন ভাইয়া। কেউ দেখলে কি বলবে?
মাহিম দাঁড়িয়ে যায়। শক্ত চোখে তাকায় অধরার দিকে। হাত ছাড়ে না বরং আরও একটু শক্ত করে ধরে
“কথা শিখে গেছিস না?
থা*প্প*ড়ে গাল লাল করে দিবো। চুপচাপ হাঁটতে থাকে।
এরপর আর কিছু বলার থাকে না অধরার। আসলে আমরা সব সময় প্রিয় মানুষদের কাছে দুর্বল। চুপচাপ তাদের কথা মেনে নেওয়া আত্মসম্মান বিসর্জন দেওয়া না। এটার মধ্যে ভালোবাসা মিশে থাকে। মাহিম হাত ধরে হাঁটাতে অধরার খারাপ লাগছে না। বরং ভালোই লাগছে। আবার মনের মধ্যে ভয়ও কাজ করছে।
ভার্সিটির মাঠে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে দেখা যাচ্ছে। এখনো গেইট খোলা হয়। একটু বেশি আগে এসে পড়েছে অধরা। কি করবে? মুহিতের বিহেভিয়ার তার পছন্দ না। তার থেকে দূরে না আসা পর্যন্ত শান্তি নেই। ভেবেছিলো কলেজের মাঠে এসে বসে থাকবে তবুও মুহিতের নিকনিক সয্য করবে না।
অধরা আড়চোখে তাকাচ্ছে মাহিমের দিকে আর মিটমিট করে হাসছে। কি সুন্দর লম্বাচওড়া মানুষটা। গম্ভীর মুখে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। সাদা শার্টের হাতা কনুই ওবদি গুটিয়ে রেখেছে যার ফলে ফর্সা হাতের কালে লোম গুলো দৃশ্যমান। কিন্তু সুন্দর লাগছে দেখতে।
বড়বড় আঙুলের ভাজে অধরার ছোট ছোট আগুলগুলো।
মুহুর্তটা দারুণ। ক্ষণে ক্ষণে শরীরে কাটা দিয়ে উঠছে মানুষটার ছোঁয়া পেয়ে। অনুভূতির সাগরে ডুবে মরতে ইচ্ছে হচ্ছে।
মাহিম হাত ঘড়ি দেখছে আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। চেখে মুখে বিরক্তি ফুটে উঠেছে। অধরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রিনরিনিয়ে বলেই ফেলে
” হাসপাতালে যাবেন না?
মাহিম শীতল চোখে তাকায় অধরার দিকে। অধরা তাকিয়ে ছিলো বিধায় দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। অধরা চোখ নামিয়ে ফেলে। ভয়ংকর লোকটার চোখ দুটো। একদম হৃদয় পর্যন্ত ভুমিকম্প তুলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
“আজকে বাসায় গিয়ে মাকে বলবি তুই ওই বাড়িতে আর থাকছিস না।
অধরার কপালে ভাজ পড়ে যায়। কি বলছে লোকটা? ফের তাকায় মাহিমের পানে। মাহিম তাকিয়েই ছিলে।
” তাহলে থাকবো কোথায়?
“আমি সব ঠিক করে ফেলেছি। তুই আর ওই বাড়িতে থাকছিস না। আর মুহিতকে দেখে কাঁপা-কাঁপি করার কি আছে স্টুপিট? কড়া গলায় কথা বলতে পারিস না? নেক্সট টাইম কাঁপতে দেখলে পা ভে*ঙে ফেলবো তোর।
অধরা কি বলবে বুঝতে পারছে না। গাল ফুলিয়ে ফেলে। কোথায় থাকবে সে? একা একা থাকবে কি করে? বাবা কে কি বলবে?
অধরাকে চুপ থাকতে দেখে মুহিত আবার বলে ওঠে
” কি ওর ছোঁয়া ছুঁয়ি ভালো লাগে? এনজয় করিস?
অধরা ফোঁস করে শ্বাস টেনে বলে
“একা থাকবো কি করে আমি? দিনে না হয় মেনেজ করে নিবো কিন্তু রাতে? এটাই ভাবছিলাম।
“রাতে আমি থাকবোনি তোর সাথে।
অধরা আর কিচ্ছু বলে না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। আর কি বলার আছে? লোকটা খেপেছে আজকে। সোজা কথা বলবেই না। মাহিমের ফোন বেজে ওঠে। সে অধরার হাত ছেড়ে দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে। ফোনের স্কিনে এক পলক তাকিয়ে
” আসছি আমি। মনে রাখিস
বলেই মাহিম অধরার মাথার ঘোমটা আরও একটু টেনে দিয়ে ফোন রিসিভ করতে করতে চলে যায়। অধরা তাকিয়েই থাকে। লোকটা মনে মনে কি প্লানিং করেছে?
মুহিত আর মিথি পাশাপাশি হাঁটছে। মুহিতের বাইকের তেল শেষ।
মিথি বেশ বিরক্ত। পায়ে হেঁটে কলেজে সে খুব কমই যায়। তার হাঁটতেই ভালো লাগে না।
মুহিত শান্ত ভাবে হাঁটতেই পারে না। এই গাছের পাতা ছিঁড়ছে, ওই গাছের ফল ছিঁড়ছে। গাড়িতে সেটা ছুঁড়ে দিচ্ছে। এদিকে যাচ্ছে ওদিকে যাচ্ছে।
মিথি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। তার দাভাই একটা বাঁদর। এটা সে মানে।
“আচ্ছা বোনু একটা কথা বল তো। ভাইয়া কেনো অধরাকে মারতে বললো?
” ভাইয়া কেনো মারতে বলবে?
আম্মুর গ্লাস ভেঙেছে তাই মেরেছে আম্মু। এসব ভাইয়া জানেও না।
মুহিত দাঁড়িয়ে যায়। তার মা যে তাকে বললো “অধরা মাহিমের রুমে ঢুকেছিলো। মাহিমকে টাচ করতে যাচ্ছিলো সেই জন্য মারতে বলেছে”
তার মা তাকে মিথ্যে বললো?
“মিথি এটা সত্যি?
” দাভাই আমি কখনোই মিথ্যে বলি না। এটা তুমিও জানো।
চোয়াল শক্ত করে ফেলে মুহিত। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে।
“আমার সাথে চল। আম্মুর কাছে যাবো।
মিথির হাত ধরে বলে মুহিত। মিথি অবাক হয়ে তাকায়।
” কিন্তু কেনো?
“আমাকে মিথ্যে বলার শাস্তি তাকে পেতেই হবে।
মিথি শুকনে ঢোক গিলে। এখন একমাত্র মাহিমই পারবে তার মাকে বাঁচাতে। তার দাভাই একটা সাইকো। একবার রেগে গেলে সেই রাগ সহজে পড়ে না।
চলবে……………..
১–৯ পর্ব লিংক