তানিশা সুলতানা
মাহমুদা ক্লাস নিচ্ছিলো। ভরা ক্লাস রুমে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে যায় মুহিত। মায়ের হাত থেকে ইতিহাস বইটা কেড়ে নেয়। সেটা ছুঁড়ে মারে বাইরে। বই একদম কলেজের মাঠে এসে পড়ে। মাহমুদা আতঙ্কে ওঠে। ক্লাস ভর্তি ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে যায়। সবাই ভয় পেয়ে গেছে।
মুহিতকে চেনে সবাই। বলা বাহুল্য অনেক মেয়েদের ক্রাশ সে। দেখতে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর, জীম করা বডি। সারাক্ষণ হাতা কাটা টিশার্ট পড়ে বা শার্টের বোতাম খোলা থাকাতে দুই হাতের পেশি ফুলে থাকে। যা মেয়েদের আকর্ষণ করে। লম্বা সিল্কি চুল গুলো পেছনে ঠেলতে থাকে।
সেই ক্রাশের এই রূপ আগে জানা ছিলো না। রাগে রীতিমতো কাঁপছে সে। চোয়াল শক্ত। কপাল থেকে ঘাম ঝড়ছে৷
মাহমুদা শুকনো ঢোক গিলে বলে
“মুহিত সিনক্রিয়েট করছো কেনো? এটা আমার কাজের জায়গা।
মুহিত মাহমুদার সামনের ডাস্টার তুলে নেয়। তা বোর্ডে ছুঁড়ে মারে৷ বিকট শব্দ হয়। মাহমুদা ভয়ে কাঁপছে। বাকিরাও তাই।
লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে ফেলেছে। অন্য ক্লাসের স্টুডেন্টরা টিচারটা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এদের কার্যকলাপ দেখছে।
মুহিত চিৎকার করে বলে ওঠে।
” আমাকে মিথ্যে কেনো বললে? সাহস হলো কি করে অধরাকে মারার?
মাহমুদা শাড়ির আঁচল টেনে থেমে থেমে বলতে যায়
“আমার কথা
মুহিত মাহমুদাকে বলতে না দিয়ে তার দিকে তেড়ে যেতেই মাহিম মুহিতের হাত ধরে ফেলে।
মিথি মাহিমকে কল করেছিলো।এবং ঝড়ের গতিতে সে চলে এসেছে। মিথি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপছে। কাঁদতে কাঁদতে তার হেঁচকি উঠে গেছে।
মাহমুদা এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলে। মাহিমকে দেখে সে সাহস পেয়েছে। এতোগুলো স্টুডেন্টের সামনে অপমান।
মুহিত তাকায় মাহিমের দিকে।
চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে তার।
স্টুডেন্টরা মাহিমকেও চেনে৷ নিঃসন্দেহে মাহিমের থেকে মুহিত অনেক বেশি সুন্দর। দুই ভাই কোথাও গেলে সবার নজর মুহিতের দিকেই থাকবে। মাহিমকে কেমন আনস্মার্ট লাগে। গম্ভীর সে।
“ব্রো ছেড়ে দাও আমায়। উনি মিথ্যে বলেছে। বলে কি না অধরা তোমাকে টাচ
বাকিটা বলার আগেই মাহিম শক্ত গলায় বলে
” এটা ক্লাস রুম৷ মাম্মা ক্লাস নিচ্ছে। বাসায় চল
মুহিত এবার তাকায় সবার দিকে। ইসস রে এখানে সিনক্রিয়েট করে ফেললো?
মাহিম মুহিতের হাত ছেড়ে মাহমুদার কাছে যায়। মায়ের দুই গালে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দেয়।
“ডোন্ট ক্রাই মাম্মা
তোমার ছেলে পাগল হয়ে গেছে৷
মাহমুদা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে। মাহিম মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করে। মিথি বইটা কুড়িয়ে এনে মায়ের হাতে দেয়। ডাস্টার খুঁজে রাখে টেবিলে।
মাহিম মায়ের গলা জড়িয়ে স্টুডেন্টদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে
” সরি গাইসস
আমার ভাইয়ের মাথায় প্রবলেম। সরি ফর দ্যাট। আজকে মাম্মা ক্লাস নিতে পারবে না। ভালে থেকো সবাই।
বলেই সে মাহমুদার হাত ধরে ক্লাস রুম থেকে বের। দরজার সামনে দাঁড়ানো প্রিন্সিপাল স্যারকে বলে মাকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়। মুহিত চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস টেনে ওদের পেছনে যায়।
__
অধরার কানে পৌঁছে গেছে কথাটা। সে ভয়ে কাঁপছে। আজকেও তাকে মা*ই*র খেতে হবে। জীবনটা এমন কেনো? এতো অশান্তিতে বাঁচা যায়?
সে ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরেছে কিছুক্ষন আগে। তখনই মুহিত আর মাহিমের কথা শুনে ফেলে। মাহমুদা চেয়ারে বসে আছে কপালে হাত দিয়ে। মিথি মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
অধরা নিজের রুম থেকে উঁকি দিয়ে দেখছে। বের হওয়ার সাহস নেই তার। মুহিতের প্রতি বিরক্ত সে। কেনো এমন করলো? শান্তিতে থাকতে দিবে না কি?
মাহিম মাহমুদার সামনে এসে দাঁড়ায় এবং বলে
“অধরাকে নিয়ে এতো প্রবলেম হচ্ছে? আমি অধরাকে দাদু বাড়িতে রেখে আসবো।
মাহমুদা তাকায় ছেলের দিকে। বেশ কয়েক বছর হলো সে শশুড় বাড়ি ছেড়েছে। ছেলেমেয়েদেও ওই বাড়িতে যেতে দেয় না।
অধরার মা চলে যাওয়ার পরে দাদি মমতা অধরাকে দেখতে পারতো না। তাই আরিফ মেয়েকে মাহমুদার কাছে দিয়েছে। যাতে একটু ভালো থাকতে পারে।
মুহিত এগিয়ে এসে বলে
” এখানেই থাকবে ও।
মাহিম চোখ মুখ শক্ত করে বলে
“থাকবে না এখানে। রোজ রোজ ঝামেলা আমি মেনে নিবো না। শান্তি চাই আমার।
” ওই বাড়ি থেকে অধরা ভার্সিটিতে আসবে কি করে?
“আমি কোলে করে আনবো।
মুহিত ভ্রু কুচকে তাকায়। অধরার হেঁচকি উঠে যায়। মাহমুদা শক্ত চোখে তাকায়।
আসলে মাহিম এটা বলতে চায় নি। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।
মাহমুদা বলে
” হ্যাঁ ওই মেয়েকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আয়। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
মাহিম বাঁকা হাসে। মুহিত দাঁত কটমট করে মায়ের দিকে এগিয়ে যায়।
“কেনো সহ্য করতে পারবে না? মাথায় বসে আছে ও তোমার?
মাহিম আর এইদিকে নজর দেয় না। সে চলে যায় অধরার রুমে। অধরা খাটের ওপর বসে আছে। মাহিম ঢুকে অধরার পাশে বসে বলে
” জলদি লাগেজ গুছিয়ে নে।
অধরা তাকায় মাহিমের দিকে। মাহিম কেনো তাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে? অধরা যে তাকে না দেখে থাকতে পারে না। এতো বড় শাস্তি কেনো দিচ্ছে?
অধরার চোখে পানি চলে আসে
“আমায় কাছাকাছি রাখা যেতো না ডাক্তার সাহেব?
মাহিম তাকায় অধরার দিকে। অধরার কোমরে হাত রেখে তাকে এক টানে কাছাকাছি নিয়ে আসে। অধরা চোখ বড়বড় করে তাকায় মাহিমের দিকে। হার্ট বিট দ্রুত লাফাচ্ছে তার। নিশ্বাস আটকে আসছে। লোকটার শার্টের কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে লাগছে৷ তার নিশ্বাস অধরার চোখে মুখে পড়ছে।
” এতোটা কাছাকাছি?
অধরা জোরে জোরে মাথা নারায়। দুই হাতে মাহিমকে দূরে ঠেলে। মাহিম অধরার মুখে ফু দিয়ে ছেড়ে দেয়।
অধরা বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে।
এটা কি ছিলো? কেমন অনুভূতি? কি নাম এই অনুভূতির?
“রিলাক্স
কিচ্ছু হয় নি। তুই আমার কথা শোন।
অধরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আড়চোখে তাকায় মাহিমের দিকে।
তখনই মুহিত চলে আসে।
দুজনের মাঝখানে ধপ করে বসে পড়ে। মাহিম বিরক্ত হয়। অধরা উঠে যায়। আলমারির ওপর থেকে লাগেজ নামাতে থাকে।
মুহিত অধরার দিকে তাকিয়ে বলে
” থেকে যাও না অধরা। তোমাকে ছাড়া আমি থাকবো কি করে?
অধরা চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। মাহিম দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“এমন ভাবে বলছিস যেনো সারাক্ষণ অধরা তোর সাথে চিপকে থাকে?
” ডাক্তারের কাজ পেশেন্ট দেখা। এখানে কি তোমার ভাইয়া? বুড়ো হয়ে গেছো। চুল সাদা হয়ে গেছে তোমার। বিয়ে সাদি করো। আমার রাস্তা ক্লিয়ার করে দাও।
মাহিম দাঁড়িয়ে যায়। ভাই হলে কি হবে? এই ছেলেটাকে সে দেখতে পারে না। ভালোই লাগে না।
“যাচ্ছো ভাইয়া? ঠিক আছে যাও। আমি অধরার সাথে রিলাক্সে একটু কথা বলি।
মাহিম মুহিতের কলার টেনে দাঁড় করায়। তারপর টানতে টানতে নিয়ে যায়। মুহিত এটা ওটা বলতে থাকে কিন্তু মাহিম শোনে না।
অধরা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” মুহিত ভাইয়া কেনো বুঝতে পারে না আমি মাহিম ভাইয়াকে ভালোবাসি? কেনে এমন করে? আমার ভালো লাগে না।
অধরা লাগেজ টেনে বিছানায় নামাতেই দেখতে পায় একটা চিরকুট হলুদ কাগজের।
কপালে ভাজ পড়ে অধরার। চিরকুটা হাতে নেয়। ভাজ খুলতেই চোখে জ্বল জ্বল করে ওঠে কিছু লাইন
“ভাইয়া তোমার সাথে মজা রটাচ্ছে। সে অলরেডি ম্যারিড। তোমার ইমোশন নিয়ে খেলছে সে। ভালোবাসা বুঝতে শেখো প্রেয়সী। কেউ একজন তোমার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। তোমার জন্য হাজারটা মেয়েকে ইগনোর করছে। তার দিকে তাকাও একটু। হয়ে যাও না পাগলটার প্রেয়সী।
চিরকুটটা পড়ে অধরা ধপ করে বসে পড়ে।
চলবে……………..
১–৯ পর্ব লিংক