#WriterঃMousumi_Akter
মৃত্যুই কি পৃথিবীতে সব চেয়ে বড় শাস্তি ভাই। এই মুহুর্তে যে ভয়ংকর যন্ত্রণায় আমি পুড়ছি এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ ই মৃত্যু। আপনি আমাকে মৃত্যু দিন ভাই। কিন্তু তার আগে একবার আমাকে প্রিয়তাকে দেখতে দেন।
শ্রাবণের চোখ দিয়ে নোনা জল ক্রামগত স্রোতের মত বইছে। চোখের দিকে তাকালেই বোঝে যাচ্ছে যন্ত্রণায় কাতর ছেলেটা। প্রান্তিকের হৃদয় পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।হৃদয়ের ভেতরে এত বেশী যন্ত্রণা হচ্ছে সেই যন্ত্রণায় ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে প্রান্তিকের হৃদয়। একদিকে শ্রাবণ তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় আর বিশ্বস্ত ছিল। অপরদিকে নিজের বোন আর রজনির ক্ষতি করার চেষ্টা। দু’টোর কোনটায় প্রান্তিকের মস্তিষ্ক থেকে নামছে না।একবার শ্রাবণের সাথে কাটানো ভাল মুহুর্ত গুলো মনে পড়ছে আরেকবার শ্রাবণের করা বেঈমানিগুলো মনে পড়ছে।বুকের ব্যাথা ক্রমশ বাড়ছে প্রান্তিকের।এই ব্যাথা দীর্ঘদিন দিন ধরে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে প্রান্তিক।প্রান্তিকের রাগি তেজস্বী মুখটা মলিন হয়ে গিয়েছে চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।পিস্তল টা শ্রাবণের মাথায় ধরে খুব নরম কন্ঠে বলল,
” তুই ম’ রে যেতে চাস শ্রাবণ।?”
“হ্যাঁ ভাই, আমি ম’রে যেতে চাই।”
বাহ! সব কিছুতে জিতে যাবি তুই। আমি তোকে জিততে দিবনা শ্রাবণ। কোনদিন জিততে দিবনা। তুই আমাকে আমার বিশ্বাসের কাছে হারিয়ে দিয়েছিস,আমার ভালবাসার কাছে হারিয়ে দিয়েছিস,এখন আবার তোকে মে’রে সারাজীবন অশান্তিতে পো-ড়া-তে চাস।তুইতো আমাকে ভালবাসিস নি তাই বুঝবিনা ভালবাসার মানুষের ক্ষতি করলে কেমন কষ্ট হয়। কিন্তু আমিতো তোকে ভালবাসি শ্রাবণ তোকে মে’ রে ফেললে এই পৃথিবীর আমি এক সেকেন্ড ও নিঃশ্বাস নিতে পারব না শান্তিতে।তোকে আমি কত ভালবাসি একবার চিন্তা কর শ্রাবণ -প্রান্তিক চৌধুরী কারো ভুল কে ক্ষমা করেনা।সেখানে তুই এত কিছু করার পরও তোর জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে।তোকে আমি কত ভালবাসি বুঝতে পেরেছিস। আর তোর চেয়েও অধিক ভালবাসি আমার রজনিগন্ধ্যাকে।তুই তাকে কীভাবে মে’রে ফেলতে চাইছিলি শ্রাবণ। ওর নিষ্পাপ মুখটার কথা একবার ভেবে দেখ।আমার হৃদয়আত্মা কেঁপে ওঠে আমার রজনিগন্ধ্যা মুখটা ভেষে উঠলে।ওই সরল মুখটার ক্ষতি করে তাকে মে’রে ফেলে তুই আমাকে কষ্ট দিতে চেয়েছিস।আমার ফুলের মত বোনটা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা পড়ছে। এত এত অন্যায় করে এখন কেমন লাগছে তোর।” প্রান্তিক বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ল।বুকের তীব্র ব্যাথা শুরু হয়েছে তার।
“আমি ড্রাগে আসক্ত ছিলাম ভাই। আমার জীবন টা এমন হক কেনো ভাই? আমি সহ্য করতে পারছিনা আর কিছু। এই পৃথিবীর পৃথিবীর শ্বাস নিঃশ্বাস যেন বিষাক্ত লাগছে সব।আমি এক মুহুর্তে এই পৃথিবীতে থাকতে চাইনা।”
“তোকে বাঁচিয়ে রাখব না আমি। তুই আমার রজনিগন্ধ্যার ক্ষতি করতে চেয়েছিস তাই তোর থেকে আমার বোনকে কেড়ে নিয়েছি। আমি বুঝে গিয়েছিলাম শ্রাবণ কাজ গুলো তুই করছিস।আমার চোখ কি ফাঁকি দেওয়া কি এতই সহজ? এই সব কিছুর মাঝে এটা বুঝে গিয়েছিলাম তুই আমার বোনকে ভাল বেসেফেলেছিস। কিন্তু তুই ড্রাগ এডিক্টেড। হাজার টা অন্যায় করেছিস। বহু নারীতে আসক্ত হয়েছিস। আমি জেনে বুঝে আমার বোনকে তোর হাতে কীভাবে তুলে দিই। তোর বিরুদ্ধে সব প্রমাণ আমার কাছে আছে। আমি চাইলেই তোর ফাঁ*সি হবে।”
রজনি খেয়াল করছে প্রান্তিক কে অসুস্থ দেখাচ্ছে। প্রায় প্রায় এমন অসুস্থ প্রান্তিক হয়ে পড়ে।রজনি দরজা দিয়ে সোজা ভেতরে প্রবেশ করে।কাদতে কাদতে বলে,
” শ্রাবন ভাইয়া কে ছেড়ে দিন আপনি।”
রজনির কন্ঠ শুনে প্রান্তিক আচমকা পেছনে ঘুরে তাকায়। রজনিকে দেখে বলে, ” তু-তুমি এখানে? প্লিজ রজনিগন্ধ্যা এই জা নো য়া রে র সামনে থেকে যাও তুমি। প্লিজ যাও৷ ওর নজর ভাল না।”
রজনি প্রান্তিকের কাঁধে হাত রেখে বলল, ” আপনার শরীর খারাপ। প্লিজ বাইরে চলুন।”
“প্লিজ রজনিগন্ধ্যা তুমি যাও।আমার হিসাব -নিকাশ আছে।”
” কীসের হিসাব-নিকাশ হ্যাঁ! যাকে মা’ র’ তে গিয়ে কাদতে হয় তার সাথে কীসের হিসব -নিকাশ। শ্রাবণ ভাইয়ার বোন এই দুনিয়াতে নেই। আপনি বুঝেন আপন জন হারানোর যন্ত্রণা কত ভয়াবহ হয়। যার হারিয়েছে সেই জানে। একমাত্র বোনকে হারিয়ে ভাইয়া উ*ন্মা*দ হয়ে গিয়েছিল। প্রতিশোধ এর নেশায় যত নিচে নামার দরকার নেমেছে। আপনি হলে কি করতেন হ্যাঁ! মানুষ যখন প্রিয় মানুষ হারায় তখন হুঁশে থাকেনা।মানুষটা খারাপ না। আপনি একবার তাক্ব সুযোগ দিন।”
শ্রাবণ কাদতে কাদতে বলল,” আপনাকে ভাবি বলে ডাকার মুখ নেই আমার। তবুও লাস্ট রিকুয়েষ্ট ভাবি আমাকে একটাবার প্রিয়তাকে দেখতে দিন।”
” প্রিয়তাকে আজ রাত চারটায় ইন্ডিয়া নিয়ে যাবে। ওর অবস্থা ভালনা। বিগত দশদিন একটা কথাও বলেনি।ডাক্তার বলেছে সারভাইব করবে কীনা সিওর না।”
“ভাবি আমি ক্ষমা চাইতে পারব না আপনার কাছে। আমার কিছুই বলার নেই।”
“আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি অন্ত ভাইয়া। আমার কোনো অভিযোগ নেই।”
“আমার শেষ অন্যায় টা শুনলে আমাকে ক্ষমা করতে পারবেন না আপনি।এই পৃথিবীতে সব থেকে বেশী ঘৃনা আপনি করবেন।”
“এই মুহুর্তে কিছুই শুনতে চাইছিনা। চলুন প্রিয়তার কাছে। আপনার জন্য মেয়েটা কেমন নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে।”
গাড়ি বের করে প্রান্তিক -রজনি শ্রাবণ হসপিটালে গেল।কি আশ্চর্য ঘটনা হসপিটালে শ্রাবণ পা রাখতেই প্রিয়তা বিড়বিড় করে কথা বলছে। হাত-পা রেসপন্স করছে। চোকগ বুজে আছে অথচ শ্রাবণের নাম ধরে ডাকছে। প্রিয়তার পাশেই অন্ত বসে আছে। প্রিয়তা চোখ বুজে অন্তর হাতটা শক্তভাবে চেপে ধরে বলল,
” শ্রাবণ তুমি এসেছো। আমাকে ছেড়ে যেওনা তুমি। প্লিজ শ্রাবণ।”
অন্তর কষ্ট হচ্ছে। সে যে এত বছর চুপি চুপি প্রিয়তাকে ভালবেসেছে কখনো প্রকাশ করেনি।সেই ভালবাসা শ্রাবনের থেকেও কম ছিলনা কোন কিছুতে।অপ্রকাশিত ভালবাসা গুলো বড়ই কঠিন আর যন্ত্রণাদায়ক।অন্ত প্রিয়তার হাতটা শক্ত ভাবে চেপে ধরে বলল____” তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা। কোথাও যেতেও দিবনা তোমাকে। কথা দিলাম।”
প্রিয়তা বিড়বিড় করে বলছে, ” আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালবাসো শ্রাবণ। আমার নিজের চেয়েও বেশী ভালবাসো।”
অন্ত মলিন মুখে বলল, ” তোমাকে সত্যি নিজের চেয়েও বেশী ভালবাসি প্রিয়তা কিন্তু তোমাকে বোঝাতে পারিনি।চোখের সামনে শ্রাবণের সাথে এত ঘনিষ্টতায় বুকে চিনচিন ব্যাথা হয়েছে তবুও আমি চুপ থেকেছি।নিরবে সহ্য করেছি।আড়ালে চোখে পানি ফেলেছি। ওয়ালে নিজের মাথা ঠুকেছি। আম্মুর কোলে মাথা কেদেছি। কয়েকটা বছর আমি ভাল নেই। শুধু সৃষ্টিকর্তার কাছে চেয়েছি তোমাকে। আমার চাওয়া কবুল হয়েছে। তবুও আমি তোমাকে পাইনি। তুমি আমার কাছে তোমার মন শ্রাবণের কাছে। শ্রাবণ সত্যি ভাগ্যবান।”
নিচে এম্বুলেন্স চলে এসছে। অন্ত আর অন্তর মা-বাবা , প্রিয়তার মা-বাবা ও আছে হসপিটালে।সেই সময়ে প্রান্তিক আর রজনিও উপস্থিত হয়।সবাই সব কিছু রেডি করছে। প্রিয়তার কেমন খিঁচুনি উঠে গিয়েছে। ইমারজেন্সি ওয়ার্ডে অন্ত ডাক্তার ডাকতে গেল।যাওয়ার সময় কেমন যেন মনে হল সে শ্রাবণ কে দেখেছে।মুখে রোমাল বাঁধা। অন্ত খুব একটা সিওর না।ব্যস্ত থাকায় দ্রুত ইমারজেন্সি ওয়ার্ড থেকে ডাক্তার ডেকে নিয়ে এল।ডাক্তার এসে একটা ইনজেকশন দিয়ে বলল, ‘ উনাকে বাইরে নিয়ে যান এখনি।’
স্ট্রেচারে প্রিয়তাকে সুইয়ে উপর থেকে নিচে নেওয়া হচ্ছে।প্রান্তিক শ্রাবণ কে বলেছে সে যেন দূর থেকে প্রিয়তাকে দেখে।কাছে না যায়। হসপিটালের কেউ শ্রাবণ কে সহ্য করতে পারবে না।ওয়াল ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণ। প্রিয়তাকে ওর সামনে দিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রিয়তার ফুলের মত মুখটা আর সেই ফুটন্ত ফুলের মত নেই শুকিয়ে গিয়েছে। একটা হাত হেলে পড়েছে বাইরে।সেই মেহেদী রাঙা হাত টায় এখনো লেখা, ” শ্রাবণের বউ।”
শ্রাবণ দুই হাত মুখে গুজে হু হু করে কেদে উঠে বলল,
” তুমি আমার ই বউ জা-ন পাখি। তোমার জীবন টা আমি এলোমেলো করে দিলাম। তোমাকে দেওয়া ক্ষত কোনদিন মুছবে কীনা আমি জানিনা। কিন্তু আমি যে তোমার আর প্রান্তিক ভাই এর ক্ষতি করেছি সেই অপরাধ আমাকে ভাল থাকতে দিবেনা। আমাদের আর দেখা হলনা প্রাণপাখি। আমি ক্ষমা চাইতে পারলাম না। আমি এই পৃথিবীতে থাকব না। তুমি সেটাও জানতে পারবেনা।এই বেঈমান কে বেঈমান ভেবেই অন্তর সাথে ভাল থেকো। “
প্রিয়তা খানিকটা দূরে চলে গিয়েছে। শ্রাবণ দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে। নিজেকে বেশীক্ষণ সামলাতে পারল না। ছুটে গেল প্রিয়তার কাছে। প্রিয়তার হাত ধরতে যেতেই অন্ত শ্রাবণের বুকে ধাক্কা মেরে বলল,
” ওকে স্পর্শ করবিনা তুই। ও আমার বউ। তোর পাপি হাতে ওকে স্পর্শ করে ওকে পাপি করবিনা তুই।”
শ্রাবণ ভীষণ অবাক হল অন্তর কথা শুনে। মাত্র একটা কবুল বলার সাথেই অন্তর অধিকার এত বেড়ে গিয়েছে। শ্রাবণ সাহস পাচ্ছেনা প্রিয়তাকে স্পর্শ করতে।
শ্রাবণ অন্তর পা জড়িয়ে ধরে বলল, ” আমি তোর পায়ে ধরি ভাই। খোদার কসম আমি একবার ওকে ছুঁয়ে দেখে হারিয়ে যাবো।একবার ওকে দেখতে দে। আমি ডাকলে ও উঠবে। ও উঠবেই।”
“প্লিজ শ্রাবন আমার ওয়াইফ এর অবস্থা ভালনা।এখনি ওকে দেশের বাহিরে নিতে হবে। এই মুহুর্তে তোর সস্তা নাটক দেখার সময় নেই।প্রিয়তার মনে যে ক্ষত তুই সৃষ্টি করেছিস। সেই ক্ষত ভুলিয়ে একদিন আমি ওকে একটা সুস্থ হৃদয় উপহার দিবো। আই প্রমিজ। তোর ভালবাসায় ও আজ মৃত্যুর মুখে। আমার ভালবাসায় জীবন ফিরে পাবে।”
রজনি বলল, ” অন্ত ভাইয়া আমার মনে হয় শ্রাবণ ভাইয়া পাশে থাকলে প্রিয়তা সুস্থ হয়ে যাবে। “
“প্লিজ ভাবি এই রিকুয়েষ্ট করবেন না। আমি পারব না। মাঝে মাঝে নিজের ভালবাসার জন্য স্বার্থপর ও হতে হয়। আজ থেকে আমি না হয় স্বার্থপর হলাম।”
“প্রিয়তাকে ভাল রাখার জন্য হলেও অন্তত শ্রাবন ভাইয়াকে দরকার।”
“আপনি শ্রাবণের হয়ে আর একটা কথাও বলবেন না যদি আসল কথা বলি।প্রান্তিক ভাই কোথায় ভাবি?”
” হসপিটালেই আছে গ্যাস নিচ্ছে। কি আসল কথা। “
” ভাই আমাকে নিষেধ করেছে বলতে।আমি বলব না। ভাই এর যে এত গ্যাস নিতে হয়,বুকে ব্যাথা হয় এগুলা এমনি এমনি না। প্রিয়তাকে আমি সুস্থ বানিয়ে দেশে ফিরব।আপনি এই শ্রাবণের থেকে জেনে নিবেন ভাই এর কি হয়েছে।”
বলেই অন্ত প্রিয়তাকে নিয়ে চলে গেল।শ্রাবণ হসপিটালেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। কাদতে কাদতে বলল,
” এই দেখায় শেষ দেখা আমাদের প্রিয়তা।আপণ বলতে তুমিই ছিলে আমার। সেই তুমিও আজ অন্য কারো।কিছু মানুষের কপাল এত খারাপ হয় কেনো বলোতো। আমি জানি আমার প্রিয়তা ভাল নেই। আমার প্রিয়তা জানতেও পারল না তাকে ছাড়া বিষন্ন জীবনে মৃত্যুর পথযাত্রী তাকে ঠাকানো প্রেমিক। যদি পরকালে কিছু হয় আমি শুদ্ধ হয়ে তোমার সামনে আসব। “
অন্ত প্রিয়তাকে গাড়িতে উঠালো।নিচেই অন্তর মা-বাবা, শ্রাবণের মা-বাবা অপেক্ষা করছিল।ওরা এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যাবে।শ্রাবনের চোখের সামনে তার প্রিয় মানুষ টা চলে গেল।
রজনির মাথার মধ্য অন্তর কথা গুলো শিরা উপশিরায় ছড়িয়ে গেল।সে শ্রাবণের সামনে বসে পড়ল।খুব চিন্তিত মুখে বলল, ” শ্রাবণ ভাইয়া উনার কি হয়েছে? কি জানতে বলল অন্ত ভাইয়া।”
” ভাবি অতিরিক্ত সিগারেট এর প্রভাবে ভাই-এর হৃদরোগ হয়েছে।ভাই ক্যান্সারে আক্রান্ত। ডাক্তার আমাকে রিপোর্ট দিয়ে বলেছিল ভাই যেন আর ভুলেও সিগারেট না খায়।টোটাল সিগারেট নিষিদ্ধ ভাই এর জন্য।যদি সিগারেট এর মাত্রা বেড়ে যায় ভাই কে বাঁচানো যাবেনা। কিন্তু আমি সেই রিপোর্ট এর ব্যাপারে আমি ভাইকে কিছুই বলিনি। বরং আরো সিগারেট খেতে দিয়েছি। এইবার এক্সিডেন্ট এর পরে পুনঃরায় রিপোর্ট করে ডাক্তার। অন্তকে সেই রিপোর্ট দেখিয়ে ডাক্তার বলে ভাই এর অবস্থা ভেতরে ভেতরে ভাল না।এটা দীর্ঘ দুই বছর বহন করছে ভাই।তখন ই অন্ত বুঝে যায় যে আমি আগেই জানতাম সব।”
রজনির ভেতরে কেমন জ্বলে পড়ে উঠল।টপ টপ করে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে রজনির।নিজের সমস্ত বল প্রয়োগ করে শ্রাবণের গালে একনাগাড়ে কত গুলো থা- প্প- ড় মেরে বলল, ‘ খু*নি। তুই একটা জা’নো’য়া’র। জা’নো’য়া’রে’র চেয়েও খারাপ তুই। যদি উনার কিছু হয় আমি নিজেও ম-রে যাবো। তোকে আমি কোনদিন ক্ষমা করব না।’
‘ভাবি আমাকে যা শাস্তি দিবেন দিন। প্লিজ বাঁচিয়ে রাখবেননা। আপনার কাঁন্না আমি সহ্য করতে পারছিনা।এত খারাপ কাজ আমার হাতে কেনো হল ভাবি।’
রজনি হাউমাউ করে কাদছে। কাদতে কাদতে বেসামাল হয়ে পড়েছে।শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল,
” উনি আমার প্রেম,আমার ভালবাসা।আমি বেঁচে আছি উনার জন্য। উনার কিছু হলে আমার কি হবে? আপনি আমার সামনে থেকে চলে যান শ্রাবণ ভাইয়া। প্লিজ চলে যান।আপনাকে আমি সহ্য করতে পারছিনা।”
এরই মাঝে প্রান্তিক এর গ্যাস নেওয়া শেষ।রজনিকে খুজছে চারদিকে। হঠাৎ চোখ পড়ল – রজনি হসপিটালের বারান্দায় বসে হাউ মাউ করে কাদছে।দেখেই প্রান্তিকের বক্ষস্থলে চিন চিন করে উঠল। রজনির চোখের পানি সে সহ্য করতে পারেনা। প্রান্তিক খানিক টা দূরে দাঁড়িয়ে ডাকল, ” রজনিগন্ধ্যা।”
প্রান্তিকের ককন্ঠস্বর কানে যেতেই রজনি তুফানের গতিতে তাকাল।পরণে সাদা শার্ট শার্টের দুইটা বোতাল খোলা।বুকের গুটি কয়েক পশম দেখা যাচ্ছে।পরণে থ্রি কোয়ার্টার। শেষ রাতে এক সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে হসপিটালের বারান্দায়। যাকে দেখলেই রজনি হারিয়ে যায় ভালবাসার অন্যজগৎ এ।রজনি প্রান্তিক কে দেখেই উঠেই ছুটে গিয়ে প্রান্তিক কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদছে।প্রান্তিক হঠাৎ বুঝতে পারছে না এভাবে কাদছে কেনো রজনি।
প্রান্তিক রজনিকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে ফিস ফিস করে বলল, ” এখানে এসব করা যাবেনা। চলো বেডরুমে।”
রজনি এসব কথায় পাত্তা না দিয়ে কেদেই যাচ্ছে। প্রান্তিক রজনিকে কোলে তুলে নিয়ে আসার সময় শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল, ” তোকে অনেক ভালবাসিরে ভাই আমি। অনেক বেশী। যা কিছুই হয়ে যাক না কেনো তুই আমার ভাই। যা ডাক্তার দেখিয়ে আয়। তোর ভাবির ছেলে মানুষি দেখ। এখন সিনেমার নায়কদের মত কোলে নিতে হল।”
শ্রাবণ অনুশোচনায় কিছুই বলতে পারছেনা।মলিন মুখে প্রান্তিকের হাসি খুশি মুখের দিকে তাকাল।
প্রান্তিক আবার ও বলল, ” ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় আয়। “
চলবে?….