একজন বিধবা মহিলার সাথে দেখা হলো। তার মুখে শুনলাম তার স্বামীর ভালোবাসার কথা, নিজের চোখে দেখলাম তার গভীর প্রেমের নিদর্শন। ভদ্রমহিলার নাম নাইমা বেগম। তিনি একটি কলেজের ইংরেজীর প্রফেসর। তার স্বামী ২০১৭ সালে হজ্জে গিয়েছিলেন এবং সেখানেই ইন্তেকাল করেছিলেন।
নাইমা বেগমের মেয়ের বৌভাতের অনুষ্ঠানে আমরা গিয়েছিলাম ছেলে পক্ষের আত্মীয় হিসেবে। তিনি সোনালী রঙের উপরে মেরুন রঙের কাজ করা একটা ব্রোকেট কাতান শাড়ী পরেছিলেন। শাড়ীর আঁচলটা হাতের মধ্যে একটু ভাজ করে ধরে রেখেছেন। শাড়ীটি বেশ গর্জিয়াস, আমাদের দেশে বিধবা মহিলারা ঠিক এত উজ্জল শাড়ী পরে না। একজন আত্মীয়া নাইমা বেগমকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। পরিচয়ের শুরুতেই তিনি তার শাড়ী নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। আমরা অবাক হয়ে শুনছিলাম।
“আমি বিধবা তবুও আজ এ শাড়ীটা পরেছি। আমার নিজের কাছেই কেমন যেন লাগছে। আমার দেবররা সবাই বিয়েতে এসেছে, আমার খুব খারাপ লাগছে যে ওরা নিশ্চয়ই ভাবছে আমাদের ভাই নেই কিন্তু ভাবী এত রঙীন শাড়ী পরেছে কেন! কিন্তু শাড়ীটি আমি আজ না পরে পারলাম না। আমার স্বামী ২০১৬ সালে দিল্লী গিয়েছিলেন অফিসিয়াল কাজে এবং আমার জন্য এ শাড়িটি নিয়ে এসেছিলেন। কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে শাড়িটি পরবো বলে রেখে দিয়েছিলাম। শাড়িটি কখনো খুলে দেখিনি, ঠিক যেভাবে তিনি এনেছিলেন সেভাবেই আলমারিতে ছিলো। এর কয়েক মাস পরে তিনি হজ্জে যান এবং ইন্তেকাল করেন। শাড়িটি আর কখনো আমার পরা হয়নি। মেয়ের বিয়ে ঠিক হলো। শাড়িটি মেয়েকে দিয়ে দিলাম। বাবার কেনা শাড়িটি পেয়ে মেয়েও খুব খুশী। বৌভাতের আগের দিন আমার মেয়ে শাড়িটি খুলেই তুমুল কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। কাঁদতে কাঁদতে শাড়িটি আমার কাছে নিয়ে এসে বললো, বৌভাতে এ শাড়িটি তোমাকে পরতেই হবে।”
কথা শেষ করে তিনি হাতের মধ্যে যত্ন করে ধরে রাখা আঁচলটি আমাদের সামনে মেলে ধরলেন। আঁচলে সুতা দিয়ে ভরাট সেলাইয়ে সুন্দর করে বেশ বড় বড় হরফে লিখা ‘Nayma Begum’.
নাইমা বেগমের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আর আমরা? .. ‘ তাজমহলের শুভ্র পাষাণে দুফোটা অশ্রু কার? একটি যেন গো শ্বেত কমল পাপড়ি মেলেছে তার।’…. চোখের সামনে আর একটি তাজমহল দেখে আমাদের চোখগুলি মুগ্ধতার জলে ছলছল করে উঠলো।