Devil বা satan কে নিয়ে আমাদের আজকের গল্প। ১৯৯০সালে বাংলাদেশের সাতক্ষিরা অঞ্চল থেকে ছড়িয়ে পড়া এক খবর খুবই হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল সাতক্ষীরা ও তার আশপাশের অঞ্চলে।হঠ্যাৎ হঠ্যাৎ গায়েব হয়ে যেতে থাকে কুমারী মেয়েরা।তাদের পরিবার পুলিশের আশ্রয় নিলেও বিশেষ কোন লাভ হয়নি;কোন কিছুতেই খোঁজ পাওয়া যায়নি তাদের। গুজব রটে গেল, ‘’ওলাদ চক্র” (devil or satan group) নামের একটি গোপন সংগঠন নাকি এই ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিল।এলাকার সবাই বলতে শুরু করল,এই ওলাদচক্রই (devil or satan group) মেয়েদের হঠ্যাৎ করে হারিয়ে যাওয়ার পিছনে দায়ী।
কি এই ওলাদচক্র?(devil or satan group) কারা চালায় এই সংগঠন?কি বা তাদের উদ্দেশ্য;কিভাবে কাজ চালায় এরা?
কেনই বা তাদের এতো তরুনি মেয়ের দরকার হয়? কেন নিখোঁজ হওয়া মেয়েগুলো আর কখনো ফিরে আসেনা?
প্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আলোচনা যেমন একেবারেই আলাদা;তেমনি লোমহর্ক।তবে বিষয়বস্তু আগেই বলছিনা।সাথে থাকুন পুরো গল্প জুড়ে টের পাবেন devil ও satan দের তান্ডব।
satanism এর নাম তো আমরা সবাই শুনেছি;
সৃষ্টি কর্তা হিসাবে শয়তানে (satan) বিশ্বাস করা ও তার পূজা করাই এক কথায় satanism।এটা এমন একটা স্বতন্ত্র ধর্ম যার চর্চা করা সভ্য সমাজে একেবারে নিষিদ্ধ;এর চর্চা করতে হয় গোপনে কাউকে না জানিয়ে।যুগে যুগে বিভিন্ন গ্রুপ এই সেটারিজমের চর্চা করে এসেছে গোপনে’’ ‘’ওলাদচক্র’’ এমনি একটা গ্রুপ; যারা শয়তানকে (satan) প্রভু মানে তার পূজা করে। কিন্তু ‘’ওলাদচক্র’’ কেন মেয়েদের অপহরণ করা শুরু করলো এর কারণ হিসাবে যে তথ্য সবচেয়ে বেশিবার শোনা গেছে সেটি হচ্ছে জিন জাতির মধ্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জাত ইফ্রিদের বংশ বিস্তারের উদ্দেশ্য এই তরুনি মেয়েদের গুম করা হতো। ইফ্রিদের অস্তিত্বের কথা ইসলাম ধর্ম অনুয়ায়ি পরীক্ষিত। ইফ্রিদের অস্তিত্বের কথা জানা যায় বুখারি হাদিস থেকেও।অনেকেরই মনে হয়তো প্রশ্ন জেগেছে ইফ্রিদ জিনিসটা কি?
আগেই বলা হয়েছে ইফ্রিদ জিন জাতির মধ্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও বিপদ জনক। এদেরকে কখনো দেখা যায়না, তবে এদের আওয়াজ (conjuring) শোনা যায় এবং অস্তিত্ব অনুভব করা যায়।এরা মানব নারীর সাথে যৌন (sex) সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে,এতে করে ও নারীটি অন্তসত্তা(preagnent) হয়ে পড়ে।সাধারণ মানব শিশু নয় মাসের মাথাই জন্ম নিলেও ইফ্রিদের সন্তান জন্ম নেয় একমাসের মাথায়।যেই নারীর সাথে ইফ্রিদ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে ওই নারীর গর্ভে ২৯দিনে বেড়ে ওঠে ভ্রুন।কি শুনে অবাক হচ্ছেন? ইফ্রিদের সন্তান মাতৃগর্ভে বেড়ে উঠলেও সে নারী গর্ভ থেকে পুষ্টি গ্রহণ করেনা; তাকে হৃস্টপুষ্ট করে গড়ে তোলে শয়তান ইফ্রিদ নিজে।এই সন্তান বড় হয়ে বংশ বিস্তার করে টিকে রাখে ইফ্রিদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।আর এভাই যুগের পর যুগ টিকে থাকে ভয়ানক জিন জাত ইফ্রিদ।
প্রচলিত আছে সাতক্ষীরা অঞ্চলের এই ‘’ওলাদচক্র” ছিল ইফ্রিদের উপাসক।তাদের কাজ ছিল ইফ্রিদের জন্য তরুনি মেয়েদের ধরে আনা।জিনদের(devil) সংগম হয়ে গেলে এবং তারপর বাচ্চা হয়ে গেলে মেয়েটিকে মেরে ফেলা হতো,তার দেহ পুরে ফেলা হতো, যেন কেউ কখনো খুঁজে না পায়।এভাবেই চলতে থাকে প্রক্রিয়া কিন্তু এসব খবর তো আর চাপা থাকেনা।মানুষের কাছে কোন না কোন ভাবে পৌছে যায় এই ওলাদচক্রের খবর।আর তারপরেই ‘’কিয়ামত আন্দোলন’’ নামে এক আন্দোলন শুরু হয় এই অলাদ চক্রের(devil or satan group) বিরুদ্ধে; যার নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর কাশেম আলি।সবাই এই আন্দোলনকে সমর্থন দিলেও ধিরে ধিরে এই আন্দোলন চরমপন্থি হতে শুরু করলে সরকার এদের নিষিদ্ধ করে দেয়।
প্রফেসর কাশেম আলি একটা বই লিখেছিলেন, “The devil child”।এই বইটির মূল বিষয়বস্তুই ছিল ওলাদচক্র ও ইফ্রিদ।
এখানে জানিয়ে রাখা ভাল, সাতক্ষীরায় ওলাদচক্র ছিলই বা তারাই যে কিশোরি মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়েছিল এমন কোন তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি খাতা কলমে ;পুরোটাই জনশ্রুতি। কলারুয়া,দেবনগর,শ্যামনগর ও সুন্দরবন সংলগ্ন আশেপাশের গ্রামের মানুষজন আজও বিশ্বাস করে ইফ্রিদ চক্রই মেয়েদের নিয়ে গিয়েছিল।
এমনো তো হতে পারে কাজের সন্ধানে মেয়েগুলো চলে গিয়েছিল বিদেশে আর কখনো ফিরে আসতে পারেনি দেশে। হয়তো এমনি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিলকে তাল বানিয়ে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ওলাদচক্রের সাথে।এমন কিছুও ঘটা অসম্ভব নয়।
তবে সত্য হোক আর গুজব হোক,নব্বই দশকের এই ঘটনাটি চারেদিকে যে সাড়া ফেলেছিল ভিষণভাবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। নইলে কি আর বলিউড অভিনেত্রি আনুশকা শর্মার প্রডাকশন হাউজ থেকে এই ঘটনা নিয়ে সিনেমা বানানো হয়। হ্যাঁ প্রিয় পাঠক বাংলাদেশের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অরি নামে সিনেমা বানানো হয়েছে বলিউডে।সেই সিনেমার মূল বিষয় বস্তুই ছিল ইফ্রিদ জিন, আর সেই ঘটনা প্রসঙ্গেই দেখানো হয়েছিল সাতক্ষীরার সেই শয়তান উপাসক বা ওলাদচক্রটিকে।সাতক্ষীরার কথাও উল্লেখ করাও হয়েছে বলিউড এই সিনেমাটিতে। আর আমাদের দেশের পরিচালকরা নাকি সিনেমার কাহিনী/ঘটনা প্রবাহ খুঁজে পাননা।
আমাদের দেশের প্রচলিত লোকগাথা নিয়ে বলিউড সিনামা বানিয়ে ফেললো,শত শত কোটি টাকা কামিয়ে নিলো। অথচ কয়জন বাংলাদেশি এই ঘটনার কথা জানে সন্দেহ আছে।এই দেশের অনাচে কানাচে কতো অমীমাংসিত ঘটনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সে সব খোঁজ কি আমরা রাখি কখনো?
প্রিয় পাঠক কেমন লাগলো আমাদের আজকের গল্প জানাতে ভুলবেন না।আর ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।
আমদের গল্প যদি আপনাদের ভাললাগে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাবেন এবং বেশি বেশি বন্ধু দের সাথে শেয়ার করে আমাদের উৎসাহ দিবেন যেন আমরা আপনাদের জন্য নতুন নতুন গল্প নিয়ে আসতে পারি।