- স্বামী পরকীয়া করলে স্ত্রীর করণীয়
- মেয়েরা পরকীয়া করে কেন
- পরকীয়া প্রেমের উপকারিতা।
- স্ত্রী পরকীয়া করলে বোঝার উপায়।
৩.পরকীয়া প্রেমের উপকারীতা
রাগের মাথায় কথা বলতে গেলে মানুষ কিছু না কিছু ভুল করবেই তাই আজকে মাথা ঠান্ডা রেখে আমার স্ত্রী মিলির সাথে কথাগুলো বলতে হবে। রাগলে যে আমি উল্টাপাল্টা অনেক কথা বলি এটা আমাকে বলেছে রত্না, আমার গার্লফ্রেন্ড । রেস্টুরেন্টে বসে অনেকক্ষণ রত্নার সাথে কথা বললাম, কিভাবে মিলির সাথে ব্যাপারটা নিয়ে বোঝাপড়া করা যায়। সেই আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে রেগে যাওয়া যাবে না, মিলি অনেক উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলবে, আমাকে চুপ করে থাকতে হবে।
মিলির সাথে ঘর বেঁধেছিলাম সাত বছর আগে , আমাদের জমজ দুটি কন্যা সন্তান আছে। কিন্তু এখন আর মিলি আগের মিলি নেই, শরীর কেমন একটু মুটিয়ে গেছে গায়ের ফর্সা রংটাও এখন কেমন তামাটে হয়ে গেছে মেদবহুল পেট শাড়ি পরলে বিশ্রী লাগে দেখতে, সব কেমন যেন বদলে গেছে। আর আমার জীবনে অক্সিজেনের মতো উপস্থিত হয়েছে রত্না, ছিপ ছিপে গড়ন, টুকটুকে ফর্সা বড় বড় চোখ কেমন যেন নেশা ধরে তাকালেই। লোকে এটাকে পরকীয়া বলে তাই এর একটা সহজ সমাধান করতে হবে, তাতে বেশ কয়েকটা জীবনের সুরাহা হবে।
আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এলাম মিলির সাথে বসতে হবে।
কলিংবেল বাজাতেই মিলি দরজা খুলে দিল । আমি অন্য কোন কথা না বলে বললাম,
– বসার ঘরে আসো, তোমার সাথে কিছু কথা আছে
-চুলায় তরকারি চাপানো, পুড়ে যাবে তো নামিয়ে আসছি
-লাগবেনা, তুমি এসো। আমি হাত ধরে প্রায় টেনে মিলিকে বসার করে নিয়ে গেলাম।
-কি হয়েছে? চোখে মুখে স্পষ্ট বিরক্তি মিলির
-দেখো মিলি এখন আমি যেই কথাগুলো তোমাকে বলবো সেগুলো শুনতে তোমার ভালো লাগবে না। আগেই বলে রাখি, চিৎকার চেঁচামেচি করে কোন লাভ নেই অযথা পাড়া প্রতিবেশী জানবে
-কি এমন কথা! মিলি বেশ অবাক হয়
-তোমার সাথে আমার আর হচ্ছে না। আমি মাথা নিচু করে বললাম
-মানে! মিলি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি মনে মনে প্রমাদ গুনছি হয়তো এখনই বিস্ফোরণ হবে
-মানে আমি তোমার সাথে এক ছাদের নিচে আর থাকতে চাচ্ছি না, তাছাড়া আমি অন্য একটা মেয়েকে পছন্দ করি।
আমি আশ্চর্য হলে খেয়াল করলাম মিলির চোখে মুখে নিরবতা, কেমন যেন স্তব্ধ সে। নিচু স্বরে বললো,
– আমাকে দুইদিন সময় দাও
আমি মাথা তুলে তার চোখের দিকে তাকালাম
-দেখো রাশেদ বিয়েটা তো পারিবারিকভাবে হয়েছিল তাই তোমার আর আমার পরিবার দুই পরিবারকেই জানাতে হবে তাই দুইদিন সময় চেয়েছি, তোমার কাছে থাকার জন্য না। তাদেরকে খবর দিতে হবে।
আমি সম্মতি সূচক মাথা নাড়লাম । তরকারিটা পুড়ে গেছে মিলি আর সেদিকে গেল না আমি নিজেই গিয়ে চুলাটা বন্ধ করলাম, সেই রাতে খাওয়া হলো না। মেয়ে দুটো ঘ্যানঘ্যান করছে।
মিলিকে গিয়ে বললাম ওদেরকে কিছু একটা খাওয়াতে
-আমি পারবো না, খুব ঘুম পাচ্ছে ।আমি অবাক হয়ে দেখলাম মিলি পাশ ফিরে কোলবালিশটা জড়িয়ে সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে গেল
কোনমতে সেই রাতটা পার করলাম । মিলি পরদিন সকালেও নাস্তা বানায়নি, ঘুমাচ্ছে। বাচ্চা দুটোকে কোনরকমে পাউরুটি কলা খাইয়ে রেডি করে স্কুলে দিয়ে আমি অফিসে গেলাম
১১:৩০ টার দিকে একটা ফোন এলো, একটা আননোন নাম্বার। রিসিভ করতেই শুনলাম ওই পাশ থেকে আমার মেয়েদের স্কুলের কোন একজন টিচার আমাকে বলছেন মেয়ে দুটোকে বাড়ি নিয়ে আসতে। স্কুল ১১ টায় ছুটি হয়েছে, এখনো ওদেরকে আনতে কেউ যায়নি । ওদের মায়ের নাম্বারে ফোন করলে সেটা বন্ধ পাওয়া গেছে তাই এই নাম্বারে ফোন করা হয়েছে।
প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে আমি স্কুলে গেলাম। বাচ্চাদেরকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। দেখি মিলি কাপড়-চোপড় গুছাচ্ছে, দুটো ব্যাগ ভর্তি কাপড়। মিলি তাহলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে , সত্যিই চলে যাবে।
আমাকে দেখে একটুও অবাক না হয়ে বললো
– তুমি চলে এসেছো ? ভালোই হয়েছে আজকে বিকেলে সবাইকে ডেকেছি
-একেবারে আসিনি, কাজ ফেলে এসেছি। তুমি মেয়েদেরকে আনতে যাওনি কেন? কিছুটা রাগের গলায় বললাম
-অনেক তো করলাম আর কত, এবার নিজে করো কিছুটা। যাইহোক এখন অফিসে গেলেও বিকেল চারটার মধ্যে ফিরে আসবে ,সবাই আসবে। সবার তো আর এত সময় নেই যে তোমার জন্য বসে থাকবে আর আমি কাপড় চোপড় গুছিয়ে নিয়েছি তুমি চিন্তা করো না দুইদিন সময় লাগবে না আমার, আজকের মধ্যেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।
আমি অফিসে ফিরে যাচ্ছি । কিছুটা ভালো লাগছে , যাক অবশেষে মিলি নিজে থেকে কোন ঝামেলা তৈরি করেনি। দুই পরিবার বসবে, আমার পরিবারকে আমি ম্যানেজ করে ফেলবো ওর পরিবার জানি চেঁচামেচি করবে কিন্তু মিলি নিজেই যেখানে অলরেডি কাপড়-চোপড় গুছিয়ে ফেলেছে সেখানে মিলির পরিবার আমার মনে হয় না তেমন কিছু করতে পারবে।
ঠিক বিকেল চারটা বাজে, সবাই বসে আছে আমার বাবা মা ভাই বোন মিলির পক্ষ থেকেও তাই। চারদিকে নিরবতা গলা খাঁকারি দিয়ে আমার মা বললেন,
-ছেলে মেয়ে নিজেই যেহেতু সংসার করতে চাচ্ছে না তাহলে আমরা আর এখানে কেন উপস্থিত?
-আপনি ভুল বললেন মা আমি সংসার করতে চেয়েছিলাম আমার পক্ষ থেকে প্রস্তাবটা আসেনি, প্রস্তাবটা এসেছে আপনার ছেলের পক্ষ থেকে। আমি তো আমার বাচ্চা দুটোকে নিয়ে সুখে ছিলাম কিন্তু যেহেতু আপনার ছেলে চাচ্ছে না তাই আমি সংসারটা করবো না, শুধু শুধু অন্যের পথের কাঁটা হয়ে থাকতে চাই না । মিলি একটু রুক্ষভাবে বলে উঠলো। আমার মায়ের সাথে ও কখনো এভাবে কথা বলে না, আজ প্রথম বললো।
-সে যাই হোক কথা তো একই
-জ্বী আপা আমার মেয়েকে আমি নিয়ে যাচ্ছি আপনারা কাগজপত্র পাঠিয়ে দেবেন , আমাদের কোন চাওয়া পাওয়া নেই আমার শাশুড়ি মা বলে উঠলেন ।আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম, সৃষ্টিকর্তার অসীম দয়া এত ভালোয় ভালোয় সব কিছু হয়ে যাবে আমি কল্পনাও করতে পারিনি, ভেবেছিলাম থানা পুলিশ কেস অনেক কিছু হবে।
সবাই উঠতে লাগলো। মিলি দুটো ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বের হচ্ছে। এটাই মিলির শেষ যাত্রা এ বাড়ি থেকে অথচ তার মধ্যে কোন বিকার নেই । আমার বাচ্চা দুটো তারস্বরে চিৎকার করছে
-কি ব্যাপার ওদেরকে রেডি করোনি! আমি অবাক হয়ে মিলিকে জিজ্ঞেস করলাম
-ওদেরকে কেন রেডি করবো? যাবো তো আমি একা, ওরা থাকবে তোমার কাছে।
-মানে ?বাচ্চারা সাধারণত মায়ের কাছেই থাকে, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার, তুমি এসব কি বলছো উল্টাপাল্টা?
-দেখো রাশেদ সাধারণভাবে কি হয় আর অসাধারণভাবে কি হয় আমার জানা নেই কিন্তু দুটো বাচ্চা পালার মতো অবস্থা আমার নেই । তুমি তো জানোই আমি চাকরি বাকরি করি না যেটা করতাম সেটা তুমি ছাড়িয়ে দিয়েছো । এখন বাচ্চা দুটো আমি পালতে পারবো না আর তাছাড়া আমার নিজের একটা জীবন আছে দুই বাচ্চা নিয়ে কেউ আমাকে বিয়ে করবে না। তুমি তো অলরেডি মেয়ে ঠিক করে রেখেছো, তার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছো ,তোমার তো অসুবিধা হবার কথা না। তোমার জন্য সব রেডি কিন্তু আমার জীবন সঙ্গী খুঁজে নিতে হবে, দুই বাচ্চা সহ জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল একটা ব্যাপার। আর বাবা হিসেবেও বাচ্চাদের প্রতি তোমার অনেক দায়িত্ব এবং কর্তব্য আছে যদি ওরা আমার কাছে থাকে তাহলে প্রতি মাসে তোমাকে ওদের বাবদ কিছু টাকা দিতে হবে যেটা তোমার দ্বিতীয় বউ পছন্দ করবে না এক সময় হয়তো তুমি টাকা দেয়া বন্ধ করে দিবে তখন আমি পড়ে যাব মহা বিপদে আমি চাই আমার বাচ্চা দুটো মানুষ হোক ওরা তোমার কাছে থাকলেই ভালো থাকবে, এখানে রাখতে না পারলেও তুমি হয়তো ওদেরকে হোস্টেলে রেখে পড়াশোনা করাতে পারবে আমার সেই সঙ্গতি নেই।
আমার পরিবারের সবাইকে অবাক করে দিয়ে মিলি ও তার পরিবার বের হয়ে গেল। আমার বাচ্চা দুটো কেঁদেই চলেছে আমার বোন ঠাস করে একজনের গালে চড় মারলো , আমি চমকে গেলাম, ওদের মা বের হয়ে গেছে দশ সেকেন্ড হয়নি । আমি তখন মিলিকে কিছু বলতে পারি নি সত্যিই তো, বাচ্চারা মায়ের কাছেই থাকবে এমন তো কোন কথা নেই আমি এমন অনেক বাবাকে দেখেছি বাচ্চার জন্য কোর্টে গিয়ে কেস করতে।
দুই দিন পরে কফিশপে বসে আছি সাথে রত্না
-তাহলে তোমার ঝামেলা মিটে গেল, কি বলো? রত্না মিটি মিটি হাসছে
-হ্যাঁ মিটে গেছে, এখন কাগজপত্র পাঠিয়ে দিলেই হবে
-তোমার কি হয়েছে বলোতো তোমার মধ্যে আমি কোন উচ্ছ্বাস দেখতে পাচ্ছি না।
-রত্না একটু সমস্যা হয়ে গেছে
-আবার কি ঝামেলা?
-দেখো আমরা যে অনেক কিছু প্ল্যান করেছিলাম এখানে ওখানে বেড়াবো কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাচ্চা দুটোকে দেখবে কে?
-মানে কি বাচ্চা! বাচ্চা কোথা থেকে এলো! ওরা মিলির সাথে যায়নি?
-না আমার বাচ্চা, আমারও দায়িত্ব আছে আমি দৃঢ় কন্ঠে বললাম
-তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছো আমাকে এখন দুই বাচ্চার বাপের সাথে সংসার করতে হবে!
-কেন তুমি জানতে না যে আমার দুটি বাচ্চা আছে?
-জানতাম কিন্তু ডিভোর্স হয়ে গেলে বাচ্চা মায়ের সাথেই যায় এটাও জানতাম। আমি দুই বাচ্চার মা হতে পারবো না । আমার এখন ঘোরাফেরা করার বয়স আর আমি চাইনা আমাদের প্রাইভেসি নষ্ট হোক
-তুমি আমাকে ভালোবাসো নি!
-বেসেছি, তার মানে এই না যে তোমার বাচ্চা আমি মানুষ করবো। আমি এখন উল্লাস করে বিয়ে করবো, হানিমুন করবো, বিভিন্ন ট্যুরে যাবো, নিজের বাচ্চার কথা ৫-৬ বছর পরে চিন্তাভাবনা করবো আর তুমি এখনই আমার মাথায় দুটো বাচ্চার বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছো
-আমার বাচ্চারা তোমার কাছে বোঝা!
-অবশ্যই অন্যের বাচ্চা আমি পালতে যাবো কেন?
-তাহলে অন্যের বরকে কি করে নিজের বর বানাতে চাচ্ছো? আমার মেজাজ গরম হয়ে গেল।
রত্না কোন জবাব দিল না, ব্যাগ হাতে নিয়ে গটগট করে উঠে চলে গেল, শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে বললো যদি বাচ্চাদেরকে বিদায় করতে পারো তাহলেই আমাকে পাবে, নয় তো না।
কেটে গেল এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহ আমি কাজে যেতে পারিনি । দুটি বাচ্চা লালন পালন করা খুব সহজ কথা না তাছাড়া রান্নাবান্না, বাজার, ঘর পরিষ্কার, বাচ্চাদের স্কুল হাজার ঝামেলা সবকিছু মিলি কিভাবে এত সুন্দর ভাবে ম্যানেজ করতো আমি বুঝতেই পারিনি। আমি শুধু দিনশেষে অফিস থেকে এসে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে টিভি দেখতাম। মিলির জন্য মনটা কেমন করে উঠলো। আচ্ছা এই মন কেমন করে ওঠাটাই কি ভালোবাসা? এই এক সপ্তাহে রত্নার কথা আমার একবারও মনে পড়েনি, বারবার মিলির কথাই মনে পড়েছে। রত্না কি তবে আমার মোহ ছিল ! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না রাতে মিলিকে বেশ কয়েকবার ফোন করলাম কিন্তু ফোনটা বন্ধ।
পরদিন সকালে ওদের বাড়ি গেলাম, দারোয়ানের কাছে জিজ্ঞেস করে জানলাম ওরা নাকি সপরিবারে কক্সবাজার ঘুরতে গেছে । আমি খুব অবাক হলাম এটা কি সত্যি! আমার মনে পড়ে গেলো বিয়ের পরপর আমরা একবার কক্সবাজার গিয়েছিলাম তখন মিলি বলেছিল আমরা প্রতিবছর একবার কক্সবাজার আসবো কিন্তু আর কখনো ওকে নিয়ে যাওয়া হয়নি, মিলি রিকশায় ঘুরতে পছন্দ করতো আমার আবার এসব ছেলে মানুষী পছন্দ না ,রাস্তার পাশের ফুচকা দেখলেই আমার বমি পায়, মিলির ফুচকা খাওয়ার শখ আমার কারণেই মরে গেল। আমি জানি এগুলো খুব ছোট ছোট চাহিদা কিন্তু এগুলো এক ধরনের সেক্রিফাইস যেটা মিলি বছরের পর বছর আমার জন্য করে এসেছে আর আমি কিছুই করতে পারিনি । দিনের পর দিন শুধু অবহেলাই করেছি ।বাচ্চা গুলো হয়ে যাওয়ার পর মিলি শরীরের তেমন একটা যত্ন নিতে পারেনি। একটু মোটা হয়ে গেছে তার আগের সেই গ্ল্যামার টা আর চোখে পড়তো না। বাইরে চোখ ধাঁধানো সুন্দরী মেয়েদেরকে দেখে আমার মন একটু কেমন করে উঠতো, সেই ভাবনা থেকেই রত্নার সাথে আমার সম্পর্ক কিন্তু সেদিন আমি রত্নার আসল রূপটা দেখেছি।
আরো এক সপ্তাহ পর মিলির বাসায় গেলাম
-আরে তুমি !হাসিমুখে বললো মিলি, কাউকে দিয়ে কাগজটা পাঠিয়ে দিলেই তো হতো, তোমার আসার দরকার কি ছিল?
আমার শ্বশুর শাশুড়ি আর মিলির ভাই বের হয়ে এলো
-মিলি আমাকে কি মাফ করে দেয়া যায়?
-কেন বলোতো, তুমি তো কোনো ভুল করোনি। আমাকে ভালো লাগেনি সরাসরি বলেছো, ভালো না লাগলে জোর করে সংসার করতে হবে এমন কোন কথা কি কোথাও লেখা আছে?
-তা নেই কিন্তু আমি তোমার অনেক অবহেলা করেছি
মিলি এবার জোরে হেসে উঠলো।
– আমি বুঝতে পারছি আসলে বাচ্চাগুলোকে রেখে এসেছি সেজন্যই তোমার এই ধরনের পরিবর্তন ।তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া গিয়ে ওদের দুজনকে নিয়ে আসবে, তুমি সুখে শান্তিতে তোমার দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে সংসার করো। আমার কোন অসুবিধা নেই আমি শুধু তোমাকে এতোটুকুই বোঝাতে চেয়েছিলাম আমি সারাদিন ঘরে বসে থাকি না, যে সৌন্দর্যের পিছনে তুমি ছুটেছো সেই সৌন্দর্য এক সময় আমারও ছিল, তোমার সংসারের শ্রম দিতে গিয়েই সে সৌন্দর্য আমার নষ্ট হয়েছে। যাই হোক এত কথা বলার দরকার নেই ভাইয়া কাল সকালে গিয়ে ওদের দুজনকে নিয়ে আসবে।
আমি প্রায় মিলির পায়ের কাছে গিয়ে বসলাম। কেন যেন খুব কান্না পাচ্ছিলো, একটু জড়ানো কন্ঠেই বলে উঠলাম
-আমাকে প্রথম এবং শেষবারের জন্য মাফ করে দাও আর কিছুই বলতে পারলাম না কেন যেন কেঁদে ফেললাম।
আমি মিলিকে নিয়ে ফুচকা খাচ্ছি। আমি খাচ্ছি না ও খাচ্ছে, আমি পাশে ওর ভ্যানিটি ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের রিকশা দাঁড়িয়ে আছে একটু দূরে । মিলির চোখেমুখে অদ্ভুত এক লাবণ্য ফুটে উঠেছে। কি অপূর্ব সুন্দর যে তাকে লাগছে দেখতে। আচ্ছা এতদিন আমার চোখ তাকে দেখেনি কেন? আমি চোখ ফেরাতে পারছি না।
END
.২.মেয়েরা পরকীয়া করে কেন
সেলিম রুমডেইট করতে গিয়েছে তার প্রেমিকার সাথে। রুমডেইটের ঘনিস্টমুহূর্ত শেষকরে ওয়াশরুমে যেতেই দেখে প্রেমিকার স্বামীর লাশ। লাশ দেখে সেলিম আঁতকে উঠলো। ওয়াশরুমের একটি কোনায় সেলিম পরে রয়েছি আর আরেকটি কোনায় লাশটি পরে রয়েছে। কাঁপাকাঁপা শরীর নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে প্রেমিকা তাকে দেখে হাসছে। হাসতে হাসতে বলে উঠলো-
. -কি ভয় পেয়েছো সেলিম?
সেলিমঃ-তোমার হাজব্যান্ডকে কে মেরেছে
দীপ্তিঃ-বাসায় কে থাকে তার সাথে?
সেলিমঃ-তুমি!
দীপ্তিঃ-তাহলে…?
সেলিমঃ-আমি যাই…
দীপ্তিঃ-কই যাবে?
সেলিমঃ-শহর ছেড়ে চলে যাবো… দেখো আমি কিছুই দেখিনি…
দীপ্তিঃ- শুনো … এই লাশটা গায়েব করার জন্য তুমি আমাকে হেল্প করবে।
সেলিমঃ-পারবোনা?
সেলিম তার শার্ট খুঁজছে। শার্ট বিছানা থেকে নিয়ে পরেনিলো। মোবাইল এবং মানিব্যাগ বালিশের পাশ থেকে নিয়ে পকেটে ভরতেই দীপ্তি হেসে বলে উঠলো
তুমি কি জেলে যেতে চাও?
সেলিমঃ-মানে?
দীপ্তিঃ-হাহাহা… শুনো তুমি যদি লাশটা গায়েব করতে হেল্প না করো আর আমি যদি পুলিশের কাছে ধরা খাই… আমি বলবো তোমার সাথে ঘনিষ্টমুহূর্ত কাটানোর সময় স্বামী দেখে ফেলে…তাই তুমি আর আমি তাকে মেরেফেলি…
সেলিমঃ-এসব মিথ্যা কথা দীপ্তি!
দিপ্তিঃ-শুনো… ফিজিক্যালরিলেশন হয়েছে… সেটি টেস্টে ধরা পরবে… আর বাকিটা প্রমাণ করতে কি পারবে?… ধরে নিলাম ২-৩ বছর লাগলো… জেলে রইলে… সামাজিক মর্যাদা কই যাবে তোমার?
সেলিমঃ-দেখো… আমার সাথে এমন করোনা… আমিতো আজকে প্রথম এসেছি তোমার বাসায়… আমি ইনোসেন্ট…
দীপ্তিঃ-বাহ! পরকীয়া করার জন্য আসতে পারো আর তুমি ইনোসেন্ট…? হাহাহা…
সেলিমঃ-দেখো এমন করোনা আমার সাথে… কেন এমন করছো?
দীপ্তিঃ-আমার স্বামী খুব জ্বালাতো আমাকে… সে বহুনারীতে আসক্তছিল… আমাকে মারতো।তাই প্ল্যানটা করি… ওর দেহতো আমি একা গায়েব করতে পারবোনা, তাইনা?
দিপ্তির স্বামীরলাশ একটি লাগেজে ভরে তার সাথে গাড়িতে উঠলাম।দীপ্তি ড্রাইভ করছে আর এই সময় কল দিয়েছে স্ত্রী। তার কল আমি ধরছিনা। দীপ্তি কলটি ধরে লাউডে দিতে বললো। আমি রিসিভ করেই বললাম–হ্যালো সাথি…
-তুমি কই জানু?
-আমিতো অফিস থেকে গাজীপুরের ফ্যাক্টরিত-আমিতো অফিস থেকে গাজীপুরের ফ্যাক্টরিতে যাচ্ছি….
-দেখে যেও হ্যা… আর শুনো জানু টাইমলি লাঞ্চ করে নিও…
-সিওর জানু…
কলটি কাটার পর থেকেই দীপ্তি হাসছে। সে এক নাগাড়ে হেসেই চলেছে।দীপ্তি বললো-
দিপ্তিঃ-তোমার বউয়ের মতো স্বামীকে অন্ধ বিশ্বাস করতাম আমি! আচ্ছা তোমরা ভাদ্রমাসের কুকুর টাইপের ছেলেগুলা বউদের সামনে ফেরেশতা কীভাবে সাজো?
সেলিমঃ-দেখো দীপ্তি আমার কি হয়েছিল জানিনা… আমি কেন তোমার সাথে প্রেম করলাম আর আজ তোমার বাসায় গেলাম বুঝতে পারছিনা!
দীপ্তিঃ-ওরে আমার নবজাতক শিশু… কিছুই জানেনা সে! শুধু জানে বিছানা কীভাবে কাঁপাতে হয়… বউয়ের ছবি দেখি…
আমি মোবাইলের গ্যালারিতে গিয়ে সাথির ছবি বের করে মোবাইলটি দীপ্তিকে দিলাম।দীপ্তি ছবি দেখে বললো-
-ঘরে এত সুন্দরী বউ থাকতে তোদের মন ভরেনা? তোর মোবাইলনে…
সেলিমঃ এখন কী করবে… তোমার উদ্দেশ্য কি?
দীপ্তিঃ-উদ্দেশ্য কি! উদ্দেশ্য নেই। পুলিশ যতদিন না ধরে তোমার সাথে থাকবো… যতক্ষণ গাড়িতে তেল আছে গাড়িতে ঘুরবো।
সেলিমঃ-মানে?
দীপ্তিঃ-তোমার কি মনে হয় আমার স্বামী গায়েব হয়ে যাবে… তার পরিবারের মানু্ষ কি বুঝবেনা? তার অফিসের মানুষ কি বুঝবেনা? তুমি আর আমি কি ধরা খাবোনা!
সেলিমঃ-তুমি ধরা খেলে খাও… আমার কোনো আপত্তিনাই… আইডোন্টকেয়ার! আমাকে কেন ফাঁসাচ্ছো? আমার সুন্দর একটা ম্যারিড লাইফ আছে… বউ আছে…
দীপ্তিঃ-তাহলে আমার ডাকে সাড়া দিলে কেন? বউয়ের দেহে মন ভরেনা?
সেলিমঃ-শয়তান ভর করেছিল মাথায়!
দীপ্তিঃ-শয়তান তোমরা! শয়তানও তোমার কথা শুনে লজ্জা পাচ্ছে! চলো মাওয়া ফেরিঘাটে চলো… তোমাকে নিয়ে ইলিশ খাবো…
দীপ্তি গাড়িটি মাওয়া ফেরি ঘাটে নিয়ে যাচ্ছে। আর আমি মনে মনে নিজেকে গালিদিচ্ছি। আমি একদম ফেঁসে গেলাম।
মাওয়াতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ৫টা বেজে গেল। শীতকাল তারাতারি সন্ধ্যা হয়। সূর্য ডুবে যাচ্ছে। দীপ্তি মনের সুখে ইলিশ খাচ্ছে আর আমি হতাশ মনে বসে আছি। দেড় ঘণ্টা সেখানে কাটানোর পর দীপ্তি আমাকে নিয়ে গাড়িটি স্টার্ট দিলো। আমি তার পাশে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি। এদিকে দীপ্তির শ্বাশুরি তাকে কল করলো। তার ছেলে কেন ফোন ধরছেনা। দীপ্তি বলে দিলো যে, তার ছেলেকে মেরে লেইকের পানিতে ফেলে দিয়েছে। আমি হতবাক! মেয়েটা কি করলো এটা। দীপ্তির সাথে গাড়িতে আমার ধস্তাধস্তি বেজেগেল। গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সাথে ধাক্কা খেল।
৩০মিনিট পর…
চোখ খুলে দেখি আমার মাথা দিয়ে ব্লিডিং হচ্ছে। পাশে দীপ্তি নেই। গাড়ির সামনে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। দীপ্তি মেয়েটা কই? আমি মাথা ধরে গাড়ি থেকে বের হয়ে দেখি মেয়েটি রাস্তার ধারে বসে আছে। মেয়েটিও অনেক আঘাত পেয়েছে। আমি তার কাছে গিয়ে বললাম-
-তুমি কি পাগল?.
দিপ্তিঃ -শ্বাশুরি তো এমনিও জানতো… ওমনিও জানতো… তাই আগেই জানিয়ে দিলাম…
সেলিমঃ-এখনতো পুলিশ ধরবে… মাঝখান থেকে কিছু না করে আমিও ফেঁসে গেলাম…
দিপ্তিঃ -যাও তোমার কথা বলবোনা…
সেলিমঃ-তোমার বাসায় আমার ফুটপ্রিন্ট আছে… তার মধ্যে ঐ দেহ একা তুমি সড়াতে পারবেনা… জিজ্ঞাসা বাদে আমার নাম আসবেই… আচ্ছা এইটা কোন জায়গা?…
দিপ্তিঃ -কি জানি…
সেলিমঃ-একটা গাড়ি-ঘোরাও নেই… আমাদের তো হাসপাতালে যেতে হবে…
দিপ্তিঃ-কোন গাড়ি দেখলে তুমি লিফট নিয়ে চলে যাও ….
সেলিমঃ তুমি আমাকে কেন ফাঁসালে?
দীপ্তিঃ-তুমি নিজে ফেঁসেছো… চরিত্র দোষে…
সেলিমঃ-আমার বউটা আমাকে অনেক ভালোবাসে… খুব সহজ সরল মেয়ে… তাকে আমি প্রতারণা করলাম… তার অভিশাপ লেগেছে… দীপ্তি তুমি তোমনে হয় ৩বছরের বড় আমার তাইনা?
দীপ্তিঃ-হুম….
সেলিমঃ-এসব শুনে মেয়েটা আরো কষ্ট পাবে… যে তাকে রেখে ৩ বছরের বড় মেয়েকে….
দীপ্তিঃ-তোমাকে কেন বেছে নিয়েছি জানো সেলিম…?
সেলিমঃ-কেন?
দীপ্তিঃ-আমার স্বামীতো বহুনারীতে আসক্ত ছিলই… কিন্তু বেশি সময় কাটাতো তোমার স্ত্রীর সাথেই!
সেলিমঃ-ফাউল কথা বলবানা….
দীপ্তি তার মোবাইলের গ্যালারিতে গিয়ে আমার সামনে বের করলো আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। আমি দীপ্তিকে বললাম-
-শুরুতেই জানাতে…
দীপ্তিঃ-হাহাহা… বউকে ঠকিয়েছ, সারাদিন ভরে সেই অপরাধ বোধে ছিলে, … সেটি চলে গেল তাইনা?
সেলিমঃ-একদম….
দীপ্তিঃ-কি করবে সেলিম এখন?
-কি আর করবো বসে থাকি… অনেক কুয়াশা… রাস্তার ধারে, ধীরে ধীরে সব ঝাপসা হয়ে গেল।।
{ আসলে এটা একটা শুধু মাত্র ছোট গল্পইনা এটা আমাদের জন্য একটা সতর্কবার্তা, আমরা কারো অবর্তমানে যা কিছুই করিনা কেন সে কর্মফল আমাদের নিকটই ফিরে আসে.love become now savage love }
কেউ কথা রাখেনা।সবাই খুব সহজেই ভুলে পারে
অন্য কাউকে জড়িয়ে ধরতে পারে।আবার কেউ পারেনা, তারা হয়তো স্মৃতিগুলো আঁকড়ে বাঁচতে পায়।
END.
৪.স্ত্রী পরকীয়া করলে বোঝার উপায়
#পরকীয়া
কয়েকদিন ধরেই খেয়াল করছি বউটা বেশ অন্যমনস্ক। অফিসের কাজের চাপে তেমন সময় দিতে পারি না বলেই অভিমান করেছে কি না- কে জানে??
আজ শুক্রবার, ছুটির দিন। তাই ভাবছি একটু বাইরে যাব বৌ টাকে নিয়ে, কিন্তু ও রাজিই হচ্ছে না।অদ্ভুত তো,যে মেয়ে আমার সঙ্গ পাওয়ার জন্য সব ছাড়তে পারে সে কেন আমাকে এভয়েড করছে? কিছুটা সন্দেহ্ ও হচ্ছে।অন্যকিছু নেই তো আবার। আজকাল পেপার খুললেই শুধু পরকীয়া। ডাঃ আকাশের সুইসাইডাল কেসের কথা মনে পড়ে গেলো!!
বৌটা আবার লুকিয়ে লুকিয়ে অন্য কিছু না তো…এক্সটা ম্যারিটাল এফেয়ার্স!!!
দ্রুত ওর কল রেকর্ড চেক করলাম।তেমন কিছু পেলাম না।ফেসবুক আইডির এর পাসওয়ার্ড ও আমি নিয়ে নিলাম।বৌটা মানে রিনি অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাল।ও হতবাক, আমার তাতে কিছু আসে যায় না। ওর প্রাইভেট পার্টের খবর পর্যন্ত জানি পাসওয়ার্ড জানলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হবে শুনি?? কিন্তু ফেবুতে ও তেমন কিছু পেলাম না।ও কি আগে বুঝে সব ডিলেট করে ফেলল নাকি!
মেইল, এসএমএস, টেক্সট সব তন্ন তন্ন করে ও কিছু পেলাম না।
উহ্, গাধা, বৌটা এত্ত চালাক কবে হল??
অফিস থেকে ফোন দিলাম,রিসিভ করেি বলল বাইরে,পরে কথা বলব বলেই লাইন কেটে দিল।মনে হলো কারো সাথে শপিং করছে ও।রাতে ও আমার সাথে তেমন কথা বলল না,ডায়রিতে কি যেন লিখে যাচ্ছে,প্রেম পত্র না তো!আমাকে দেখেই ডায়রীটা আলমারিতে তালা দিয়ে রাখল!নিজেকে বিশ্বাস হচ্ছে না,একি আমার রিনি! দুঃখে কান্না চলে আসল। ওর এত পরিবর্তন আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না।
সন্ধ্যা বেলায় কার সাথে যেন মোবাইলে ফিসফিস করে কথা বলছে। আমি কাছে আসতেই আমাকে দেখেি ফোন কেটে দিল।আর সহ্য করতে পারলাম না, বলেই বললাম, বাহ্ রিনি, নতুন প্রেমিক জুটিয়ে ফেলছ? তা কতদিন ধরে এত রং ঢং চলছে শুনি বলেই তুমুলঝগড়া শুরু করলাম। রিনি বিস্মিত মুখে তাকাল। কোন কথা না বলে বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে শুরু করল।আমি মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লাম।সকালে দেখি রিনি ডাইনিং টেবিলে নাশতা নিয়ে মলিন মুখে বসে আছে।নাশতা না খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ওর হাতের নাশতা খাওয়ার ও রুচি নেই আমার।
সন্ধ্যায় ফিরলাম।অনেকক্ষণ কলিং বেল বাজালাম, দরজা খোলার নাম নেই। চাবি বের করে খুলতে গিয়ে দেখি দরজা খোলা কিন্তু ভেতরটা অন্ধকার।রিনি কি তবে প্রেমিকের হাত ধরে বাড়ি দরজা খুলে রেখেই পালিয়ে গেলো নাকি!!
হাতরে হাতরে কোনমতে লাইট টা অন করতেই চিৎকার, হ্যাপি বার্থডে টু শামীম, হ্যাপি বার্থ ডে টু ইয়ু !
মনে হচ্ছিল ঘোরের মধ্যে আছি।সামনে দাড়িয়ে আমার মা, বাবা,ভাই,ভাবী, ছোট বোন,আমার বন্ধু,বন্ধুর বৌ আর ওদের বাচ্চা কাচ্চা! ঘর ভর্তি মানুষ।বুঝতে পারলাম এটা রিনির কাজ ও আমাকে surprised gift দেওয়ার জন্যই ওই ভাবে ফিসফিস করে কথা বলেছিল।আমার চোখ পানিতে ভরে গেল। রিনি আমার কাঁধে হাত রাখে।ভেজা কন্ঠে বলি আমি ফ্রেশ হয়ে আসি আর রিনি তুমি কি একটু আসবে আমার সাথে?? রিনি বেডরুমে আসতে না আসতেই দরজা বন্ধ করে ওকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকি। রিনিও ও কেঁদে ফেলে।ক্ষমা চাইতে যাব ততক্ষণে রিনি ওর ঠোঁট দিয়ে আমার মুখ বন্ধ করে দেয়।
©Mansura Mou
১.স্বামী পরকীয়া করলে স্ত্রীর করণীয়
নন্দিতার সাথে আমার তালাক হয়ে যেত ৫-৬ বছর আগে ই কিন্তু আমরা একে অপরকে তালাক না দিয়ে নামে মাত্র সংসার করে যাচ্ছিলাম আমাদের একমাত্র আদরের ছেলে শুভ্রের জন্য। শুভ্র বয়স যখন দশ বছর তখন ই আমি ও নন্দিতা এই সংসার জীবনে একদম অসুখী হয়ে উঠি। শুভ্র জানতো না যে আমি ও নন্দিতা এক বিছানায় ঘুমাতাম না, আমরা কথা বলতাম শুধু শুভ্রের সামনে ই, আমরা একসাথে ঘুরতে বের হতাম শুভ্রের জন্য ই।
.
এক মাস হলো আমাদের ছেলে শুভ্র মারা গিয়েছে। সেদিন আমাদের ছেলেটা কলেজে যাচ্ছিল। সবে মাত্র প্রথম বর্ষে উঠেছিল আমার ছেলেটা। শুভ্র মারা যাওয়ার পর থেকে নন্দিতা একদম চুপচাপ একটা মানুষ হয়ে গিয়েছে। এমনি ই সে চুপচাপ কিন্তু এখন আরো চুপচাপ। ছেলের জন্য আমরা জীবন ত্যাগ করেছি। কিন্তু যার জন্য ত্যাগ করলাম সেই বেঁচে নেই।
.
দুইদিন হলো নন্দিতা ও বাবার বাড়িতে। এখনো ফিরেনি। জানি না আর ফিরবে কি না। কারণ, এখন আর আমাদের স্বামী স্ত্রীর নাটক না করলেও চলবে। ৩ বছর হলো পায়েল আর আমার সম্পর্ক। আমিও দুইদিন ধরে পায়েলের বাসাতে ই আছি। এখন সকাল ৮ টা বাজে। পায়েল নাস্তা বানিয়ে আনলো। আমার জন্য দুটো পরোটা, একটা ডিম অমলেট ও সবজি। সেগুলো ডাইনিং টেবিলে রেখে পায়েল বললো –
.
.
-মুয়ীদ, চা খাবে?
.
-নাহ…
.
পায়েল পাশে বসে পরলো। সে পরোটা মুখে দিয়ে চাবাতে চাবাতে বললো –
.
-আমার মনে হয় যে এখন তোমার ফ্যামিলিকে সত্যটা জানিয়ে দেওয়া উচিত।
.
-পায়েল, আব্বা আম্মা বেঁচে নাই। আছে আমার ছোট ভাই। ওকে আর কি জানাবো?
.
-তারপরো জানানো উচিত। আগে বিয়ে করে ফেললে মাইন্ড করবে। বাট জানিয়ে করা উচিত।
.
-ঠিক আছে জানাবো ওকে। তোমার ফ্যামিলিকে জানাবা না?
.
-মা বলছে যে বাবা বলেছেন আমি যা খুশি তাই করি না কেন তার কিচ্ছু যায় আসে না। হাজার হলেও বাবার পছন্দ বিয়ে দেওয়া ডাক্তার পাত্রকে আমি নিজে তালাক দিয়ে ইন্ডিপেনডেন্ট লাইফ লিড করছি। আমার মত বেহায়া মেয়ের জন্য তার কিচ্ছু যায় আসে না। জানো মুয়ীদ বাবাকে আমি খুব ঘৃণা করি। এই লোক আমার মা থাকা অবস্থায় কত নারীর সাথে সম্পর্ক ছিল। সে ছেলে মানুষ তারগুলো কিছু ই না। বাট আমি তো তার মত করছি না। তার পছন্দের ছেলে আমার পছন্দ ছিল না। মানিয়ে নিতে পারিনি সংসারে। তোমার সাথে সম্পর্কে জড়াইছি তালাকের পর আগে না।
.
-আরে বাদ দাও। তোমাকে কি কাল অফিসে ছুটি দিবে?
.
-কেন?
.
-ভাবছি যে কাল তোমাকে নিয়ে ছোট ভাই সাজ্জাদের বাসায় যাবো।
.
-সোনা, ডিনারে যাই। তাহলে ছুটি টা নিতে হবে না। নেক্সট উইকে আমানের বিয়ে। ওখানেও তো আমাদের থাকতে হবে তাই না?
.
-হুম…
.
ঠিক সেই সময় মোবাইল বেজে উঠলো। আমি টেবিল থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি যে স্ত্রী নন্দিতা কল করেছে। আমি কল রিসিভ করে বললাম –
.
-হ্যাঁ , নন্দিতা বলো…
.
-কই তুমি?
.
-পায়েলের বাসায়…কিছু বলবে?
.
-না কিছু না। এমনি ই খোঁজ নেওয়ার জন্য কল দিয়েছিলাম।
.
-বাসায় কি আসবে?
.
-নাহ, আসবো না। আবা আম্মাকে সব জানানোর সময় এসে গেছে। ভাবছি আজ আমি বলে দিবো।
.
-তাহলে তো ভালো ই হয়।
.
নন্দিতা আর কোন কথা না বলেই কল কেটে দিলো। বোধ হয় ব্যালেন্স শেষ। আমি কল ব্যাক করলাম কিন্তু ধরলো না। এদিকে পায়েল বললো –
.
-নন্দিতা আপু কি বললো?
.
-বললো যে বাসায় সব জানাবে। কিন্তু আবার হুট করে কল কেটে দিলো।
.
-তুমি যেভাবে জিজ্ঞাসা করলা বাসায় আসবে কি না। সে আসলেই বাসায় আসার জন্য ই কল দিয়েছিল। মুয়ীদ এক কাজ করো, তার কাছে যাও।
.
-কেন?!
.
-সে আসলে তোমার সাথে একটু সময় কাটাতে চাইছে।
.
-পায়েল দেখো একদিন আগে বা পরে সত্যটা ওকে জানাতে হতো ই।
.
-মুয়ীদ, আমি বলতেছি যাও তাকে একটু সময় দাও। আমি বাকি মেয়েদের মত না। সে এখনো তোমার ওয়াইফ। নাস্তাটা শেষ করে বের হই, তুমি উনার বাসায় যাও আর আমি অফিসে যাই।
.
-আচ্ছা।
.
-আমি নামিয়ে দিয়ে আসবো উনার বাসার সামনে। প্যারা খেও না।
.
নাস্তা শেষ আমি রেডি হয়ে পায়েলের সাথে বের হলাম।মেয়েটা আমাকে নন্দিতাদের বাসা ধানমন্ডিতে নামিয়ে দিয়ে আসলো। আমি বাসায় যেতে ই শ্বাশুরি দরজা খুললেন। আমি সোফায় বসলাম। কিছুক্ষণ পর শ্বশুর আসলেন। আমার শ্বশুর আগে একজন জাজ ছিলেন। এখন রিটায়ার। আমায় দেখে উনি বললেন –
.
-নন্দিতার মা, মুয়ীদের জন্য নাস্তা আনো।
.
-আব্বা আমি নাস্তা করে এসেছি।
.
-শোনো মুয়ীদ, আমারো তো নাতি মারা গিয়েছে। আমিও অনেক কস্টে আছি। বাট আমি বুঝতে দিচ্ছি না নন্দিতাকে। এখন দেখো তোমরা আরেকটা সন্তান নিতে পারো কি না।
.
আমি শুধু চুপচাপ মাথা নাড়ালাম। নন্দিতা এখনো কিছু বলেনি। শ্বশুর একটা করে পরামর্শ দিচ্ছেন আর আমি মাথা নাড়াচ্ছি। এদিকে শ্বশুর আমাকে বললেন যে নন্দিতা বারান্দায় বসে আছে। আমি উঠে সেই বারান্দার উদ্দেশ্যে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি যে মেয়েটা চুপচাপ বসে আছে। সেন্টার টেবিলে এক কাপ চা, সেইটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। আমাকে দেখে নন্দিতা ঘুরে বললো –
.
-তুমি আসবে এইটা আমি কল্পনাও করিনি। সিওর পায়েল পাঠিয়েছে। তাই না?
.
-নাহ আমি নিজে এসেছি। ভাবলাম তোমাকে সময় দিই।
.
আমি নন্দিতার পাশে বসলাম। নন্দিতা আমাকে বললো –
.
-তুমি না একটা বড় মাপের সেলফিস মুয়ীদ। আমি মাঝে মাঝে ভাবি যে আমি তোমার মত সেলফিস কেন হতে পারলাম না। আমার একটা ব্রাইট ফিউচার ছিল মুয়ীদ। আমি ছিলাম খুব স্টুডেন্ট। বাট তোমার মত মানুষের ভালবাসায় পরলাম আমি। এতটায় ভালবাসায় পরে গেলাম যে নিজের ক্যারিয়ারকে ভুলে গেলাম। আমি ভাবতাম যে তুমি আমাকে ভালবাসো, বাট পরে বুঝলাম যে আমার বড় ভাইকে তুমি বিজনেস আইডল মানতে। আমাকে বিয়ে করো তার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য।
.
-নন্দিতা, আমি অস্বীকার করবো না যে আমি একজন প্র্যাক্টিক্যাল পুরুষ। আমি এক ঢিলে দুই পাখি মারি। কারণ, আমার কম বয়সে আমি খুব কঠিন বাস্তবতা দেখি। যা আমার তখন দেখা উচিত ছিল না। আমি না একটা সময় খুব ইমোশনাল ছেলে ছিলাম। কিন্তু আমি যে কখন হারটলেস হয়ে উঠি আমি বুঝিনি। কিন্তু এইটুকু বলবো যে তোমাকে আসলেই ভালবাসতাম। আমাকে নিয়ে তো অনেক অভিযোগ নন্দিতা কিন্তু একটা কথা বলি, কেন আমি পালটিয়ে যাই তা তোমার জন্য জানা দরকার। আজ সেই সময়, সেই দিন। এতদিন আমি বলিনি কারণ, আমার ছেলে ছিল। তোমার সাথে সংসার টিকে থাকার দরকার ছিল। আমি তোমার আর সাব্বিরের সম্পর্কটা জেনে যাই। তারপর ই আমি অন্য নারীদের কাছে যাই। আমি তোমাকে বলিনি যে জানতাম তার কথা। তুমি যখন আমার সাথে এইসব নিয়ে রাগারাগি করতে এদিকে আমি ভাবতাম যে মানুষ নিজে যা খুশি তাই করবে লুকিয়ে কিন্তু সে অন্যের ক্যারেক্টার সারটিফিকেট দিবে। তুমি আমায় ক্যারেক্টারলেস বলতে বাট …থাক বাদ দেই। শুরুটা তোমার দিক থেকে আগে ছিল। সাব্বির যদি ব্রেকাপ না করতো তাহলে আমার সংসারে থাকতে না। অনেক আগে বোধ হয় চলে যেতে। দেখো, তুমি ধরেই নিয়েছো যে আমি সেলফিস, আমি লাভ ছাড়া কাজ করি না। কিন্তু এইটা কোনদিন দেখোনি যে আমি পরিবারের বেলায় উলটো। আমি তো বাহিরের মানুষদের কাছে উদাড় হতে আসি নাই। আমার পরিবারের কাছে উদাড় হতে এসেছিলাম। তোমার জটিল চিন্তায় আজ আমাদের সংসারকে শেষ করে দিয়েছে নন্দিতা।
.
নন্দিতা একদম চুপ হয়ে গেল। আমি উঠে সেখান থেকে চলে আসলাম। বাহিরে এসেই আমি উবারে রিকুয়েস্ট দিলাম। মিনিট দশেক পর কার এসে পরলো। আমি সেটাতে চেপে বাসার দিকে যাচ্ছি। আমার চোখ দিয়ে পানি পরছে। আমি আসলে হার্টলেস না। আমি শুধু আমার আবেগ লুকাতে এক্সপার্ট। আমি এখনো আগের মত আবেগী মানুষটায় আছি। আমি ড্রাইভারকে বললাম –
.
-আমি কি গাড়িতে একটা সিগারেট ধরাতে পারি।
.
আমার অবস্থা দেখে উনি শুধু বললেন, “হ্যাঁ”। আমি প্যাকেট থেকে একটা ডানহিল সুইচ বের করে ধরিয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি। কিছুক্ষন সময় লাগলো নিজেকে সামলাতে। এরপর এসে পরলাম বাসার সামনে। আমি ভাড়াটা দিয়ে নেমে পরলাম। বাসার দরজা খুলতে ই চোখটা গেল দেওয়ালের দিকে। দেওয়ালে আমাদের ফ্যামিলি ফটো। নন্দিতা, আমি ও শুভ্র কি সুন্দর একটা হাঁসি দিয়ে আছি। আমি দরজাটা আটকিয়ে আরেকটা সিগারেট ধরালাম। সিগারেট টানতে টানতে ই ছেলের রুমে গেলাম। সব আগের মত ই আছে কিন্তু আমার ছেলেটা নেই। আমার ছেলের জামা, আমার ছেলের স্কুল ইউনিফর্ম, পিসি, বই খাতা অসব আছে। দেওয়ালে আমার ছেলের মেডেলগুলো ঝুলছে। মনে হচ্ছে যে আমার ছেলে ওয়াসরুমে, এই বের হয়ে বলবে, বাবা… হুট করে ছেলের বক্সের দিকে চোখ গেল। এই বক্সটা ক্লাস ফাইভে কিনেছিলা। কিনে দিচ্ছিলাম না বলে শপের ফ্লোরে ই বসে পরেছিল। সেই থেকে এই একটা বক্স ই আমার ছেলে ব্যবহার করলো। আমি সিগারেট জোরে একটা টান দিয়ে বক্সটা হাতে নিলাম। বক্সটা খুলতে দেখি একটা কাগজ। আমি সেটি খুলে দেখি যে একটা চিঠি। আমি চিঠিটা খুলে দেখি যে আমার আর নন্দিতার উদ্দেশ্যে লিখা। সেখানে লিখা –
.
-আব্বু ও আম্মু…
.
আমি এক বছর ধরে জানি যে তোমরা এই সংসার করছো শুধু মাত্র আমার জন্য। আমি না চাইতাম যে তোমার মিল করিয়ে দিতে। কিন্তু আমি খেয়াল করলাম যে আমার মা ও বাবার সম্পর্ক এমন একটা স্টেজে চলে গিয়েছে যেখানে মিল আর কখনো ই সম্ভব না। আমি খেয়াল করলাম যে আমার জন্য দুইটা মানুষ একে অপরকে কস্ট করে সহ্য করছে। আমি না এইসব মেনে নিতে পারছি না। আমার মনে হয় যে আমার চলে যাওয়ার উচিত। আমি তোমাদের আমার জন্য কস্ট করে একসাথে থাকার যন্ত্রণা দিবো না। আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দিও।
.
তোমাদের শুভ্র
.
আমি চিতকার করে কান্না করছি। আমাদের শুভ্র কোন রোড অ্যাক্সিডেন্ট করেনি, সে সুই সাইড করেছে। ছেলে আমাদের সুই সাইড করেছে। এই সত্যটা জানতে একটা মাস লেগে গেল। আমি ও আমার স্ত্রী ই দ্বায়ী আমাদের শুভ্রের মৃত্যুর…আমার কান্না যেন থামছে ই না। আমার চিতকারের আওয়াজ শুধু ভাড়ি হচ্ছে।
.
কয়েক মাস পর…
.
আজ নন্দিতাকে নিয়ে বসে আছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ক্লাস বাঙ্ক দিয়ে আমরা গুলসান লেইকে বসে থাকতাম। আমরা সেখানেই এসেছি। বসে আছি দুইজন। আমরা আমাদের সম্পর্ককে আমার পূর্ণরায় সচল করার চেস্টায়। শুভ্রের মৃত্যুর কারণ জানার পর থেকে আমরা সিদ্ধ্যান্ত নিই যে আবার আগের মত এক হয়ে যাব। জীবিত শুভ্র আমাদের এক করে রাখতো কিন্তু মৃত শুভ্র আমাদের এক করে ছেড়েছে। আমাদের ছেলেটার মৃত্যুর কারণ আমরা এই গিল্টিনেস নিয়েই আমাদের একত্রে বাঁচতে হবে। ক্ষমা করে দিস বাবা… তোর মা ও বাবা দেড়িতে হলেও লাইনে এসেছে। পায়েলের জন্য আজীবন আমার রেসপেক্ট থাকবে। পায়েল ই সবার আগে বলে যে আমাদের একত্রে থাকতে হবে শুভ্রের জন্য। আমরা মা ও বাবারা ছেলেদের আদর যত্নে কমতি রাখি না, কোন চাহিদার কমতি রাখি না। কিন্তু এর ফাঁকে ই একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আমরা ভুলে যাই সেইটা হলো ছেলে ও মেয়েদের মেন্টাল হেলথের ব্যাপারটা। আমাদের ছেলে ও মেয়েদের মাথায় কি ঘুরছে, তারা কি মানুষিকভাবে সুখে আছে এই জিনিসটার ব্যাপারে ই আমার ভুলে যাই।
.
(কাল্পনিক)