শিশিরের আদ্র পর্ব ২
#Neel
আদ্রের মুখে হাসি ফুটে উঠল ভয়ংকর হাসি। যেন এবার বাঘ তার শিকার কে ভাগে পেয়েছে।
ভাইয়ার কথায় আমার আত্মা বের হওয়ার উপক্রম হয়েছে…
শান্ত (শিশির এর ভাই)- বনু আমার, রাগ করিস না,ঐ আমি যা চকলেট এনেছি তা তো মিন্নাত আর মিন্নাহ নিয়ে গেছে, আদ্রের কাছে বল, ও এক ল্যাগেজ শুধু চকলেট ই এনেছে।
আমি অবাক হয়ে আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি, মুখ ফসকে বলে ফেললাম – এক ল্যাগেজ, এত্তো। এগুলো এত্তো দিয়ে সে কি করবে, সে ও কি চকলেট পছন্দ করে আমার মতো অনেক?
শান্ত – নারে অশি, এগুলো আদ্র তার প্রিয়তমার জন্য এনেছে, তুই চাইলে তোকে ও দিতে পারে । (শান্ত মুচকি হাসছে)
ভাইয়ার হাসি দেখে বুঝলাম নিশ্চিত কোন ঘাপলা আছে, থাক আমার চকলেট লাগবে না, ওফ্ এক ল্যাগেজ চকলেট, ইশ্ লোভ সামলাতে পারি কি করে, হুট করে মাথায় একটা আইডিয়া আসলো। মনে মনে কি খুশি যে লাগছে।
আদ্র আড়চোখে শিশির এর দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্র বুঝতে পারলো শিশির মনে মনে ফন্দি আঁটছে। আদ্র বিরবির করে বলল – ঘুঘু এবার তোমার রক্ষে নেই।
___
রাত ১০ টার উপর বাজে, সবাই ডিনারের শেষ এ আড্ডায় ব্যস্ত। কতদিন পর আদ্র ভাইয়াকে পেয়ে সবাই খুশি।এই তো সুযোগ, আমি এখন ল্যাগেজ থেকে কয়েকটি চকলেট চুরি করবো, না না কয়েকটি না, অর্ধেক, উফ্ অর্ধেক না, পুরো ল্যাগেজটাই।যদি জেনে যায়, ধেৎ আগে যাই তারপর ভাববো…যেই ভাবা সেই কাজ।
গেলাম সেই কক্ষটার কাজে, যেটাকে আমি ১০ বছর আগে খোলা পেয়েছিলাম। উফ্ ভয় লাগছে। আদ্র ভাইয়ের সেই কান্ডটার কথা ভাবতে ভয় লাগছে। শুধু শুধু যম বলি না।আদ্র ভাইয়াকে যখন এব্রোড পাঠানো হয় তখন আমি মায়ের গর্ভে ছিলাম। আদ্র ভাইয়ের যাওয়ার ১০ দিন পর আমি জন্ম হলাম। উন্নতমানের সব চিকিৎসা করিয়েছেন চাচারা। কোন কমতি রাখে নাই। ৫ বছর পর আদ্র ভাইয়াকে দেশে নিয়ে আসলো। তখন আদ্র ভাইয়ের বয়স ১৫/১৬ হবে হয়তো। আর আমার ৫ । আদ্র ভাইয়া নিজের বাড়িতে এসে নিজের একটা আলাদা জগত তৈরি করে ফেলল। মানে এই রুমের ভেতর ই দিন রাত পার করত। ডা. বলেছে আদ্র ভাইয়া ৫০ পার্সেন্ট ঠিক হয়েছে। কিন্তু আদ্র ভাইয়ের এই সাইকো স্বভাবটা থাকবেই। বড় হওয়ার সাথে সাথে আদ্র ভাইয়া ঠিক ও হতে পারে আর না ও হতে পারে।ছোট্ট আমি নাকি খুব দুষ্টু ছিলাম। আদ্র ভাইয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে আদ্র ভাইয়ের রুমে যাওয়ার জন্য সারাদিন কান্না করতাম। বাধ্য হয়ে আদ্র ভাইয়া আমাকে দাদির সাথে ঐ রুমে যেতে দিত। কিন্তু আদ্র ভাইয়া নাকি দাদিকে নাকি বলতো – সুযোগ পেলে এর প্রতিশোধ নাকি নিবে ই। তাছাড়া আমি নাকি তার পছন্দের জিনিস গুলো ধরার জন্য বাহানা করতাম, সেও দিত, তারপর ভেঙে ফেলতাম। আদ্র ভাইয়া নাকি চরম রেগে যেত, কিন্তু কিছু বলতো না, দাদিকে বলেছিল সেদিন এব্রোড যাওয়ার আগে, – তোমার নাতির সবচেয়ে প্রিয় জিনিস আমি ও কেড়ে নিব, ঠিকমতো দেখে রেখো।( সেদিন দাদি ভয় পেয়ে গেছিল আদ্র ভাইয়ের কথায়, এগুলো দাদি আমাকে গল্প শোনানোর সময় প্রায়ই বলতো।)
সেই কারনে আমি আদ্র ভাইয়াকে আমার যম বলি। যদি আদ্র ভাইয়ার ভেতর এখনো সাইকো স্বভাবটা থেকে যায়!!
এগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে আদ্র ভাইয়ের রুমে ঢুকে গেছি, খেয়াল ই ছিল না। খাটের উপর একটা ল্যাগেজ দেখে খুশি হয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি ল্যাগেজটা খুললাম। ল্যাগেজটা খুলতেই আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। এত্তো চকলেট দেখে । সবগুলো আমার প্রিয় চকলেট। দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না, খুলে খাওয়া শুরু করলাম। কতগুলো খেলাম হিসেব নেই। কিন্তু থামতেই ইচ্ছে করছে না, বেশি খেলে সমস্যা হতে পারে, এভাবে ই কাল ডেন্টিস্ট এর কাছে যেতে হবে।
পিছন থেকে একজন বলল – কিরে নিচে তো আমাকে সবার সামনে গুরুত্ব দিলি না, সবার সাথে গলায় গলায় ভাব, শুরু আমি ছাড়া। শান্ত কে নাকি বলতি আমি সাইকো। তো এখন সাইকোর রুম থেকে চুরি করতে ভয় পেলি না। আমাকে দেখলেই নাকি তোর যমের কথা মনে পড়ে, আমি নাকি তোর একমাত্র যম তাহলে , যমের রুমে প্রবেশ করতে কলিজা কাঁপে নাই??
যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। পিছনে ফিরতেই শক্ত কিছুর সাথে ধাক্কা খেলাম।
ব্যাথা পেয়ে বলে উঠলাম-ওফ্ বাবাহ্ এখানে , খাম্বা কখন গজাইলো? নাকটা বোচা হয়ে গেল রে।
আদ্র – আমি খাম্বা?
চোখ খুলে দেখি আদ্র ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। আমার আর তার মাঝে দুই এক ইঞ্চির মতো ফাঁকা জায়গা। আদ্র ভাইয়াকে এতো কাছে দেখে হৃৎপিণ্ড খুব জোরে বিট করা শুরু করলো। পিছনে চাপতে যেয়ে খাটের উপর চকলেট গুলোর মধ্যে পরে গেলাম। ভয়ে চোখ বুজে আছি।
আদ্র চেয়ে আছে শিশির এর কান্ডে। শিশির শুধু শারীরিক দিক থেকে ই বেড়েছে কাজকর্মে নয়। তবে শিশির কে আদ্রের কাছে বড্ডই লোভনীয় লাগছে। শিশির দেখতে চমৎকার। খুব ই মায়াবী। ডাগর ডাগর চোখ, উজ্জ্বল হলুদ রঙের গায়ের রং, লম্বা লম্বা চুল, গোলাপি রঙের ঠোঁট, সবদিক থেকেই যেন শিশির পারফেক্ট।
আদ্র দুহাত দুপাশে রেখে শিশির এর দিকে ঝুঁকে গেল , শিশির আদ্রকে না দেখে আবার উঠতেই আরেকটা মাথায় বারি খেয়ে , আবার ও বিছানায় পড়ে গেল।
আদ্র বলল – কিরে মাথা মোটা। এখন যে আমার প্রিয়তমার চকলেট গুলো তুই খেয়ে ফেললি, তোকে কি শাস্তি দেই এখন।
শাস্তির কথা ভাবতেই শিশির আদ্রের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকালো, শিশির কে খুবই কিউট লাগছে, আদ্রের কাছে ।
শিশির – শাস্তি? কিন্তু কেন? আমি ঠিক একই রকম চকলেট আপনাকে এনে দিব, প্রমিজ।আর আপনি আমাকে মাথা মোটা কেন বললেন।(রেগে)
আদ্র – একিইইই( অবাক হওয়ার অভিনয়) তুই যখন আমাকে খাম্বা বললি তখন? শোন , আমার অন্য চকলেট চাই না, এই চকলেট গুলো এখনি চাই।না হয় এখানে মোবাইল এ তোর চুরির ভিডিও করছি। ছোট মাকে দেখিয়ে দিব।
মায়ের কথা শুনে ই ভয় উঠে গেল। মা জানলে বকবে অনেক। চকলেট এর কারন এ দাঁত শেষ আমার।তাই আমতা আমতা করে বললাম -এগুলো তো আমি খেয়ে ফেলছি কেমনে দিবো। সেইম সেইম কাল এনে দিব। আপনি চকলেট এর পরিবর্তে যা চাইবেন তা ই দিব।প্রমিস।প্লিজ মাকে বলবেন না।
আদ্র মাথা নাড়িয়ে বলল – উঁহু, সেটা হচ্ছে না। তুই পেট থেকে বের করে দে।
শিশির পড়লো মহাবিপদ এ। ইশ্ চকলেট লোভে সে ফেঁসে গেছে।
আদ্র – পারবি না। জানতাম আমি। যা চকলেট লাগবে না। চকলেট এর পরিবর্তে আমাকে একটা লিপ কিস দে।
ছিঃ ছিঃ এগুলো কি বলছেন আপনি। আপনি আমার ভাইয়ের মতো, ওপস ভাইয়া ই। আপনার কি মাথার সাথে সাথে চরিত্রের সমস্যা হয়েছে। আপনার প্রিয়তমা জানলে..(বলার আগেই আদ্র ভাইয়া আমার ঠোঁট দুটো দখল করে নিলো)
আমি তো পুরো শকড। খেয়াল ফিরতে ই হাত পা আদ্র ভাইয়ের বুক বরাবর ছুড়তে লাগলাম।মিনিট পাঁচেক পর আদ্র ভাইয়া ছেড়ে দিয়ে আমার পাশে শুয়ে পড়লো। আমি কখনো কোন ছেলের স্পর্শে যাই নি। বিয়ের আগে এরকম কিছু ই করবো না, আদ্র ভাইয়া আমার প্রথম কিস নিয়ে গেছে। কান্না পাচ্ছে, বিছানা থেকে উঠে কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। সোজা আমার রুমে এসেই সোজা দৌড়ে ওয়াসরুমে গেলাম। আমি আর দাদি এক রুমে থাকি। দাদি আগে থেকেই রুমে ছিলো।
ঠোঁট দুটো পানি দিয়ে ধুয়েই চলছি।দাদি বিছানায় বসেই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো – ঐ ছেমরি, এতোক্ষণ কোথায় ছিলি রে? তোরে পেলাম না। আর এভাবে কাঁদতে কাঁদতে এলি যে কি হলো। কি হইছে তোর।
শিশির রুম থেকে বের হওয়ার মিনিট দুয়েক পর আদ্র ও বের হয়েছে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আদ্র বলল – ওর কিছু হয়নি। আমি দেখছি।
বলেই আদ্র….
চলবে…