আমার তুমি
সিজন ২ পর্ব ১১
তানিশা সুলতানা
তুলতুল হা হয়ে গেছে। চোখের সামনে এসব কি দেখছে? এসব তুলতুল লিখেছে? কবে? কখন? কয় তারিখ? কোন সময়? এই লোকটাকে ভালোবাসার থেকে তো কচু গাছের সাথে ফাঁ*সি দেওয়াই ভালো।
“তুলার বাচ্চা আমাকেও বললি না?
তনু তুলতুলের মাথায় গাট্টা মেরে বলে। সায়ানের কাজটা পছন্দ হয় না। তুলতুল তো ব্যাথা পেলো। তনু অপমানিত হবে বলে কিছু বললো না নাহলে দুটো কথা শুনিয়ে দিতো।
” বোন তুই আমাকে তো বলতে পারতি।
তন্ময় গম্ভীর গলায় বলে। তুলতুল ভেবে পাচ্ছে না কিভাবে সবাইকে বিশ্বাস করাবে এখন? তুলতুল ইনোসেন্ট এরা কেনো বুঝছে না?
“প্রেমে পড়ে বড় হয়ে গেছিস?
তনু বলে।
” বিশ্বাস কর আপি। এই সব মিথ্যে। আমি এই লোকটাকে এসব কিছুই বলি নি। এই যে হেলমেট ছুঁয়ে বললাম (সায়ানের হাতের হেলমেটে হাত দিয়ে বলে) এখানে গরবর আছে। আমাকে বিশ্বাস করো তোমরা। এই লোকটা কলকাঠি নারছে। আমার মানসম্মান নষ্ট করার ধান্দা এর।
সবার তুলতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কিছু বলছে না। সায়ান ভ্রু বাঁকিয়ে তাকিয়ে আছে। তুলতুল সায়ানের দিকে তাকাতেই থমথমে খেয়ে যায়। এই লোকটার চাহনি এমন যে একটু একা পেলেই হালুম করে গি*লে ফেলবে।
তুলতুলের ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। ভীষণ ভাবে পানির অভাব অনুভব করতে পারছে।
“আচ্ছা বাদ দাও। ভালোবাসা তো অপরাধ না। তাছাড়া আমার ভাই লাখে একটা।
তুলতুল যখন ডেকেছে তখন ওদের একটু প্রাইভেসি দেওয়া দরকার।
সুমু আলতো হেসে বলে। সায়ান বোনের দিকে তাকায়। ফট করেই মনের কথা বুঝে ফেলে বোনটা।
” পার্লারে যাবো না?
তনু বলে।
“হ্যাঁ চলো। তুমি আমি যাই।
” আমিও যাবো।
তুলতুল কাঁপা-কাঁপি গলায় বলে।
“আমি আশেপাশেই আছি। তনু কল করিস। সায়ান জলদি দিয়ে যাবি আমার বোনকে।
আর একটা কথা তোর দ্বারা আমার বোন কোনো কষ্ট পেলে একদম কে*টে রেখে দেবো তোকে।
তন্ময় বলে।
” বিশ্বাস রাখতে পারিস। একদম সোজা করে দেবো তোর ঘাড় ত্যা*ড়া বোনের।
শেষের কথা বিরবির করে বলে সায়ান। তন্ময় চলে যায়। সুমু আর তনুও ঢুকে যায় পার্লারে। তুলতুলের অভিমান হয় ওদের ওপর। একটু তো বিশ্বাস করতে পারতো তুলতুলকে। বা*ঘের মুখে ছেড়ে যেতে একটুও কি বুক কাঁ*পলো না ওদের?
এখন না জানি বাঘটা কখন যানি টুপ করে গি*লে ফেলে বাঘটা।
তুলতুল জোরে জোরে শ্বাস টেনে নেয়। সায়ানকে দুটো কড়া কথা শোনাবে। এতে কপালে যা আছে থাকুক। তবুও বলবে তুলতুল।
“আপনার পবলেম কি?
তুলতুল কোমরে হাত দিয়ে সায়ানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে।
” তুই
সায়ান শার্টের কলার উপরে টেনে সোজাসাপ্টা উওর দেয়
“এটা করতে পারেন না আপনি। কোন জন্মের শত্রুতা আমার সাথে আপনার? একদম মানসম্মান নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিয়েছেন। বলি কেনো?
এমনটা কেনো করলেন? জানি আমি সুন্দরী। তাই বলে এভাবে আমাকে হেনস্তা করবেন?
ছি ছি ছি
এতোবড় মিথ্যে বললেন অথচ আপনার ঠোঁটটাও কাঁপলো না।
তুলতুল ফুসফুস করতে করতে বলে।
” ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ছিলি বুঝি?
থমথমে খেয়ে যায় তুলতুল। কোন লেভেলের ঘ্যাড় ব্যাঁকা এই লোকটার? অসব্ভ্যের মতো কথাবার্তা।
“আআমার আর কাজ নেই যে আপনার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থাকবো? কি বিশ্রী ঠোঁট আপনার। যেনো বিরির প্যাকেট লেগে আছে। লিপস্টিক লাগিয়ে লাল করে রাখেন এটাও জানি আমি। বলি লজ্জা করে না মেয়েদের মতো লিপস্টিক লাগাতে?
অসব্ভ্য, ইতর, হনুমান।
আপনাকে তো আমার এতোটুকুও ভালো লাগে না। ইহহহহহ আবার ওনার প্রপোজ করতে যাবো?
শখ দেখে বাঁচি না। বলি এতো শখ নিয়ে ঘুমান কিভাবে? অসুবিধা হয়
বাকিটা শেষ করার আগেই ঠাসসস করে একটা থা*প্প*ড় পড়ে ডান গালে।
তুলতুল গালে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
” সব কথা কানের মধ্যে গেঁথে রাখলাম। একটু ফাঁকা মানসম্মত জায়গা পায় উসুল করে নেবো।
সায়ান গম্ভীর গলায় বলে।
“সব সময় শুধু থা*প্প*ড় আর থা*প্প*ড়। রসকষহীন মানুষ। ওনার থা*প্প*ড় খেতে খেতেই আমার দাঁত গুলো নরে চরে গেলো। কবে জানি
সায়ানের চোখে চোখ পড়তেই থেমে যায় তুলতুল। ঠোঁটের মাঝখানে আঙুল রেখে ফুঁপাতে থাকে। বাঁকা হাসে সায়ান।
” গুড গার্ল
পেছনে বস।
সায়ান হেলমেট মাথায় পড়ে বাইল ঘুরিয়ে নেয়। তুলতুল এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
“আরেকটা খেয়ে মন চাইছে বুঝি?
সায়ানের কথা শুনে বড়বড় পা ফেলে সায়ানের পেছনে বসে পড়ে তুলতুল। সায়ানের পিঠে হাত না দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে।
” শক্ত করে ধর আমায়।
সায়ান বাইকের আয়নায় তুলতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে।
তুলতুল কোনো রকমে সায়ানের কাঁধে হাত দিয়ে বসে। সায়ান বাইক চালাতে শুরু করে।
“বজ্জাত লোক একটা। সারাক্ষণ শুধু মা*রবে। এই লোকটাকে পঁচা নর্দমায় চু*বা*নি দিতে পারলে মনের জ্বালা মিটো আমার। দেখতে ফিটফাট কিন্তু ভেতরে সদরঘাট। পেত্নীর মতো বউ জুটবে তোর কপালে। সারাক্ষণ তোর ঘাড়ে বসে র*ক্ত চু*ষে অভিশাপ দিলাম। তুলতুলের অভিশাপ হারে হারে লেগে যায়। চিনিস না তো আমাকে?
শুধু একটু সাহসের অভাবে জোরে বলতে পারছি না। জীবন তো একটাই। এখন যদি ঠাস করে বাইক থেকে ফেলে দেয় তাহলে আমার নেইমার বিধবা হয়ে যাবে। তাই মনে মনে অভিশাপটা দিলাম। নাহলে তুলতুল ভয় পাওয়াটা মেয়ে নয়।
বিরবির করে বলে তুলতুল। সায়ান শুনতে পায় সবটাই। তবুও চুপ থাকে।
কথায় আছে না ” ওস্তাদের মা*ইর শেষ রাতে”
পার্লার থেকে বের হতে হতে সন্ধা হয়ে যায়।তন্ময় দাঁড়িয়ে ছিলো ওদের জন্য। তনুকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে সুমুকে নিয়ে ওদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয় দুজন। ইচ্ছে করেই তন্ময় রিকশা ডাকে নি। হেঁটেই যাবে। যদিও রাস্তাটা অনেকখানি। যেতে এক ঘন্টার মতো সময় লাগবে। তন্ময় অপেক্ষায় আছে সুমু মুখ ফুটে কিছু বলুক। কিন্তু সুমু কিছুই বলছে না। তন্ময়ের আগে আগে হাঁটছে। তন্ময় সুমুকে দেখছে।
“হেঁটেই যাইবা?
তন্ময় বেশ কিছুখন উসখুস করে সুমুর সমান সমান হয়ে বলে। সুমু তাকায় এক পলক তন্ময়ের দিকে।
” আপনার হয়ত সমস্যা হবে আমার সাথে এক রিকশায় বসতে। তাই হেঁটেই যাওয়া উত্তম।
সুমু মুচকি হেসে বলে।তন্ময় চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস টানে।
“পবলেম কি তোমার? এরকম অচেনা অচেনা বিহেব কেনো করছো?
তন্ময় সুমুর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে বলে।
” গুড ফর নাথিং তো তাই।
সুমু হাত তাচ্ছিল্য হেসে হাত ছাড়িয়ে নেয় নিজের। তন্ময় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
“অবহেলা তো পাথরকেও পানি বানিয়ে দেয় আর সুমু তো মানুষ “
“সুমু আই এম সরি সেদিন বিহেভিয়ারের জন্য। মাথা ঠিক ছিলো না আমার। সায়ান তোমার ভাই। তাছাড়া আমাদের সম্পর্ক কেউ মেনে নেবে না।
সামান্য স্কুল টিচারের ছেলের সাথে কি আর এমপির মেয়ের বিয়ে দেবে বলো?
আমরা তো ফ্রেন্ড হয়ে থাকতে পারি বলো?
এই কথাটা সেই দিন তোমায় বললো বুঝতে না তুমি। উল্টে সাত পাঁচ বলতে শুরু করতে।
সুমু তন্ময়ের কথা গুলো মন দিয়ে শোনে।
” উমমমমমম ফ্রেন্ড হতে পারবো না। ভাইয়া ঠিক আছে। ভাইয়ের বন্ধ তো আপন ভাইয়ের মতোই। তাই না?
তন্ময় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
বাকিটা পথ কেউ কোনো কথা বলে না। চুপচাপ সুমু আগে আগে হাঁটতে থাকে আর তন্ময় পেছন পেছন যেতে থাকে।
সায়ান তুলতুলকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে সবটাই অজানা তুলতুলের। গ্রাম ছাড়িয়ে শহরের দিকে ঢুকছে বাইক। সন্ধা হয়ে গেছে। চারদিকে অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে। ডিসেম্বর মাস হওয়াতে ভালোই শীত পড়ে গেছে। বাতাসে জমে যাচ্ছে তুলতুল। বাড়ি থেকে জ্যাকেট না পড়ে আসার ঝাল বুঝতে পারছে বেশ।
তুলতুলের ভীষণ ভয়ও করছে। লোকটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?
নিশ্চয় নাম্বার আর ফেসবুক থেকে ব্লক করে দেওয়ার জন্য মে*রে বুড়ি গঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দিতে নিয়ে যাচ্ছে। যাতে কেউ কখনো জানতে না পারে?
ঘামতে শুরু করে দিয়েছে তুলতুল। ভয়ে হাত পা কাঁপছে।
কি দরকার ছিলো তখন হাই স্পিডে মুখ চালানোর? তখন চুপচাপ সরি বলে দিলে এসব কিছুই হতো না। এখন বাঁ*চাবে কে? কেউ নেই বাঁ*চা*নোর মতো। অকালে একটা হনুমানের হাতে প্রা*ণ হা*রাবে তুলতুল?
“আল্লাহ এই যাত্রায় বাঁ*চিয়ে দিন। এই যে তওবা করে বলছি এই লোকটার সামনে আর কখনো মুখ চালাবো না। কসটিউব লাগিয়ে রাখবো মুখে।
তুলতুল বিরবির করে বলছে।
চলবে………….