আমার তুমি
সিজন ২ পর্ব ১৪
#তানিশা সুলতানা
পড়তে গিয়ে নিজেকে সামলে নেয় সুমু। টলমল চোখে তাকায় আনোয়ার চৌধুরীর দিকে। ভরকে যায় উনি। মেয়ের এই রূপ কখনো দেখা হয় নি।
“কেনো করলে এমনটা? কি চাও তোমরা? আমি ম*রে যাই?
চিৎকার করে বলে সুমু। সালমা বেগম চুপ থাকতে পারেন না। এগিয়ে আসতে নেয়। হামিদা (হিমুর মা। আনোয়ার চৌধুরীর বউ)
হাত ধরে সালমার।
“দেখ কি হয়। সুমুর ভালোই হবে।
মনি মুখ বাঁকায়। (সুলাইমানের বউ) তার কোনো সন্তান নেই৷ ছোট থেকেই সুমুকে বড় করেছে তিনি। শশুড় শাশুড়ী অনেক করে বাচ্চা দত্তক দিতে বললে তিনি নাকোচ করে দিয়েছে। তার কথা সুমু তার নিজের মেয়ে।
” কি যে ভালো করবে জানা আছে আমার।
মনি মাথায় গোমটা টেনে এগিয়ে যায়।
“আব্বু আমার মেয়েটাকে কেনো কাঁদানো হচ্ছে? সায়ান বোনের কান্না বসে বসে দেখবি? ওর হাত ড্রেসিং করাতে হবে।
বোনকে বুঝিয়ে হাতের ঔষধ লাগানোর দায়িত্বটা তোকে দিলাম।
সুমুর সামনে হাঁটু মুরে বসে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলেন উনি।সায়ান নরে চরে বসে। সুলাইমান রেগে যায়। এতো বড় একটা কান্ড করে বসলো মেয়েকে শাসন না করে আহ্লাদ করা হচ্ছে?
” দুনিয়া উল্টে গেলেও ওই ছেলের সাথে সুমুর বিয়ে আমরা মেনে নেবো না।
আব্দুল্লাহর সোজা কথা। ফোঁস করে শ্বাস টানে মনি। এরা ঠান্ডা মাথায় কথা বলতেই পারে না। সব সময় মাথা গরম।
সুমু একটু কান্না থামিয়ে ছিলো। আবারও ঠোঁট উল্টে কান্না করে দেয়। মোমের মতো মেয়েটার চোখ মুখ ফুলে গেছে। নাকটা টকটকে লাল হয়ে গেছে। সব সময় পরিপাটি করে রাখা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। সাদা জামাটায় র*ক্ত লেগে গেছে কিছু জায়গায়।
“আমি তন্ময়কেই বিয়ে করবো।
সুমুও চিৎকার করে দাঁড়িয়ে বলে।
সালমান এবার ভীষণ রেগে যায়। রাগে গিজগিজ করে উঠে দাঁড়ায়। আস্ত বেয়াদব হয়ে গেছে মেয়েটা।
মেয়ের সামনে গিয়ে ঠাসিয়ে থা*প্প*ড় মেরে দেয় মেয়ের গালে।
সুমু সিঁটকে গিয়ে মনির বুকে এসে পড়ে। দুই হাতে আগলে নেয় উনি সুমুকে।
” খুব বড় হয়ে গেছিস না? মুখে মুখে তর্ক করতে শিখেছিস? আদর করতে করতে মাথায় উঠিয়ে ফেলেছি। মেরে সোজা করবো তোকে আমি।
কেউ প্রস্তুত ছিলো না এটার জন্য। হাত কাঁপছে সালমানের। দাঁড়িয়ে গেছে সবাই। সালমা হামিদা ছুটে আসে সুমুর কাছে। সুমু শান্ত হয়ে পড়ে আছে। মাথা ঘুরছে গালটা জ্বলছে। কান্না করার শক্তি নেই।
“আপনি আমার বোনের গায়ে কেনো হাত তুলবেন? হাত লম্বা হয়ে গেছে আপনার?
সায়ান বাবার দিকে তেরে এসে বলে। চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে ওর।
” এইটা কি করলি তুই সালমান? সাহস দিলো কে তোকে?
আব্দুল্লাহ রেগে বলে।
সবাই সালমানকে এটা সেটা বলেই যাচ্ছে। মনি ফুঁপিয়ে কাঁদছে। সুমু কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে সামলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
বাবার দিকে এক পলক তাকিয়ে টেবিলের ওপরে থাকা ফলে কাটার ছু*ড়িটা হাতে নেয়। সুমুর দিকে কারো খেয়াল নেই।
হিমু বসে বসে মাথার চুল টান ছিলো। এবার ও খেয়াল করে সুমুকে।
বড়বড় চোখ করে উঠে দাঁড়ায়।
“বুড়ি হাত থেকে ওটা ফেলে দে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে হিমু। সবার দৃষ্টি সুমুর ওপর পড়তেই আতঙ্কে ওঠে।
সুমু ছু*ড়িটা হাতের সিড়ায় ঠেকায়। সবাই হতদম্ভ হয়ে যায়।
” আমার পেছন পেছন একজনও আসলে আমি টা*ন দিয়ে দেবো।
দরজার দিকে এগোতে এগোতে বলে সুমু। কারো সাহস হয় না এগিয়ে যাওয়ার।আব্দুল্লাহ বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ে। কি হয়ে গেলো এই টুকু সময়ের মধ্যে?
সালমান চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস টানে।
সায়ান পকেট থেকে ফোন বের করে মেসেজ করে দেয় তন্ময়কে।
হিমুর খুব হাসি পাচ্ছে। মানতেই হবে এটা হিমু আর সায়ানের বোন। কি লেভেলের ভালোবাসা? ভাবা যায়? ভাইদের থেকেও এক কাঠি এগিয়ে।
এবার যে এই ছু*ড়ি দেখিয়েই বিয়েটা করে ফেলবে এটাও জানা হিমু। হাড়ে হাড়ে চিনে বোনকে।
সুমু মেইন দরজা টপকে বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয় দরজা। যাতে কেউ বেরতে না পারে।
সুমু যেতে কান্না করে ওঠে তিন মা। সায়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমে চলে যায়। হিমু শীষ বাজাতে বাজাতে ছাঁদে যায়। বোনের বিয়েটা দেখতে হবে তো?
ছাঁদের টপকে বের হবে।
হাসিব এতখনে বাড়ির মেইন গেইট বন্ধ করে গেইটের ওপর বসে ছিলো। যাতে তুলতুল আর তন্ময় বের হতে না পারে। কারণ ও জানতে সুমু আসবেই। তন্ময় এতখন ধরে কথা কাটাকাটি করে গেছে হাসিবের সাথে। তুলতুল নিজের ব্যাগে ফুল ভর্তি করে ফেলেছে এই বাড়ির ফুল বাগান থেকে। আরও কিছু ফুল ছিঁড়ে নিচে রেখেছে। হাসিবকে বলেছেও যখন গেইটের ওপর থেকে নামবে তখন একটা বড় পলিথিনের ব্যবস্থা করে দেবে।
তুলতুলের কথা হলো ভাইয়ের শশুড় বাড়ি এতো ফুল থাকতে ভাইয়ের বাসর কেনো টাকা খরচ করে ফুল কিনে সাজাবে? টাকার কি দাম নাই?
তন্ময় সুমুকে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে। হাসিব গেইট থেকে নেমে পড়ে।
সুমু মাথা নিচু করে কাঁদছে৷ এখনো বাম হাতের সি*ড়ার ওপর ছু*ড়ি বসানো।
তন্ময় সায়ানের মেসেজ দেখেছে তাই কোনো প্রশ্ন করে না।
হাসিব দরজা খুলে দেয়। তন্ময় আগে আগে বের হয়। তার পেছনে সুমু।
তুলতুল যাওয়ার সময় হাসিবকে বলে দেয় ফুল গুলো তুলে ওদের পেছনে আসতে। হাসিব ভদ্র ছেলের মতো মাথা নারায়।
গেইটের কাছেই একটা সিএনজি অপেক্ষা করছিলো।
সায়ানই এটা এখানে এনেছে। সুমু আর তুলতুল দুজনই ঠান্ডায় কাঁপছে। তন্ময় নিজের জ্যাকেট খুলে তুলতুলকে পড়িয়ে ডাইভারের পাশে বসে পড়ে। সুমু মাথা নিচু করে পেছনে বসে তুলতুলও বসে পড়ে।
সিএনজি চলতে শুরু করে।
মাথা জট পাকিয়ে যাচ্ছে তন্ময়ের। কি করবে না করবে হিসাব মেলাতে পারছে না। ভাগ্যকে দোষারোপ করছে। নাহলে এরকম একটা পাগলের পাল্লায় কিভাবে পড়লো?
তন্ময়দের বাড়ির সামনে সিএনজি থামে। তন্ময় ভাড়া দিতে চাইলে নেয় না উনি। তন্ময় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করে।
তুলতুল সুমুর দিকে তাকিয়ে আছে। এখনো হাতের ওঠে থেকে ছু*ড়ি ফেলায় নি সুমু।
“দাভাই
তন্ময় থেকে যায়। তাকায় তুলতুলের দিকে।
” এভাবে ভেতরে গেলে আব্বু তোমায় সোজা জে*লে ঢুকিয়ে দেবে।
তুলতুল বলে। তন্ময় ফোঁস করল শ্বাস ফেলে। এগিয়ে এসে সুমুর সামনা সামনি দাঁড়ায়। সুমু এখনো কেঁদেই চলেছে।
“পবলেম কি?
তন্ময় বুকে হাত গুঁজে সরু চোখে তাকিয়ে বলে। সুমু চার পাঁচবার মাথা নারায়। মানে কোনো পবলেম নেই।
” তাহলে হাতের ওপর ওটা ধরে আছো কেনো? কপাল তো খেয়েছোই। এখন কি বাবার হাতে মা*ইরও খাওয়াতে চাও?
আজাইরা
কর্কশ গলায় বলে তন্ময়। সুমুর ফুঁপানো বেরে যায়।
“এটা সরালে যদি বিয়ে না করেন?
ফুঁপাতে ফুপাতে বলে সুমু। তন্ময় বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এ থাকতে পাবনার ছিট খালি কিভাবে?
তুলতুল মিটমিট হাসছে। এই মেয়ের সাহস দেখে রীতিমতো অবাক ও।
” যে ফাঁদে ফেলেছো তাতে তোমাকে বিয়ে না করে রহ্মে নেই আমার।
সুমুর হাত থেকে ছু*ড়িটা ফেলে দিয়ে হনহনিয়ে চলে যায় তন্ময়। তুলতুল এক হাতে জড়িয়ে ধরে সুমুকে।
“কিউটি কান্না করো না। বিয়েটা হচ্ছে বুঝলা? এখনই হবে। বাসাটাও হবে। আমার নেক্সট বার্থডের আগেই কিন্তু ভালো খবর শুনতে চাই।
সুমু লজ্জা পেয়ে যায়। মাথা নিচু করে হেসে ফেলে। সুমুকে হাসতে দেখে তুলতুলে খিলখিল করে হেসে ওঠে।
তুলতুল সুমুকে নিয়ে এগোতে থাকে।
সোফায় বসে আছে পাপন। তার এক পাশে সুমু আরেক পাশে তনু। পায়ের কাছে তুলতুল বসে আছে।
আছিয়া বেগম আর নাজমা বেগম ওনাদের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তন্ময় মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
” আছিয়া সত্যি করে বলো এই ছেলে কার? আমার ছেলে এতো ভীতু হতেই পারে না। কার ছেলের সাথে বদলি করেছো আমার ছেলেকে? সত্যি করে বললে হ্মমা করে দিবো।
গম্ভীর গলায় বলেন পাপনে। হতদম্ভ হয়ে যায় সবাই।
চলবে…………..