আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১৭
তানিশা সুলতানা
কোনো খোঁজ নেই সায়ানের। খুব করে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে তুলতুল। কিন্তু ফলাফল শূন্য। না কল ধরছে না মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছে। ভীষণ অভিমান হয় তুলতুলের। একটু কথা বললে কি খুব হ্মতি হয়ে যাবে? আর যদি কথায় না বলবে তাহলে কেনো এসেছিলো ঘেসাঘেসি করতে?
তন্ময়ের খাট ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে একদম মন দেয় না তুলতুল। ভালোই লাগছে না কিছু।সকাল থেকে রুমের বাইরে বের হয় নি। বুকের বা পাশটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এখন বেলা দশটা বেজে গেছে। এমনিতে প্রতিদিন ছয়টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে সারা বাড়ির সবাইকে জাগিয়ে তুলে তুলতুল।
কম্বল মুড়ি দিয়ে সারাটা সকাল শুয়ে ছিলো। কিন্তু এখন নিজের ওপর নিজেই বিরক্ত হয়ে যায়। এতোখন একা একা থাকা যায়?
ধাপ করে কম্বল ফেলে উঠে বসে।
“ওই লোকটার সাথে আমি জীবনেও কথা বলবো না। জীবনেও না। আস্ত একটা খাটাশ ওই বেডা। আমাকে ফাঁসাতে চাই ছিলো?
ফাঁসবো না আমি। মন থেকে একদম মুছে দেবো ওনার নাম। কেউ না উনি। কতো সুন্দর সুন্দর ছেলে আছে দুনিয়ায়। তাদের রেখে এই গুন্ডাটাকে ভালো বাসতে বয়েই গেছে আমার। ভালোবাসার কাঁ*থায় আ*গুন।
এলোমেলো চুল গুলো হাত খোঁপা করে বিছানা থেকে নেমে পড়ে তুলতুল। সব সময় চিল থাকতে হবে।
কোনো রকমে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়। সুমু আছিয়া বেগমের পেছন পেছন ঘুরছে কাজ করার জন্য। নাজমা সিরিয়াল দেখছে। রাতে দেখতে পারে নি বিয়ের জন্য।
তুলতুল গিয়ে কাকিমার পাশে বসে। তনু কলেজে গেছে। তন্ময় বেরিয়েছে একটু। পাপন হাত ঘড়ি পড়তে পড়তে তার রুম থেকে বের হয়।
” আম্মাজান কলেজে যাবে না?
তুলতুলের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে পাপন।
“ভালো লাগছে না আব্বু।
নাজমা বেগমের কোলে মাথা রেখে বলে তুলতুল।
পাপন এগিয়ে এসে মেয়ের কপালে হাত রাখে। নাহহ জ্বর আসে নি।
” আচ্ছা তাহলে খেয়ে নাও। আমি আসছি।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যেতে নেয় পাপন। সুমু এক দৌড়ে সামনে এসে দাঁড়ায়।
“আমাকে আদর করে দিন।
হাসি মুখে বলে সুমু। পাপনের মুখের হাসি ফুটে। হাত বুলিয়ে দেয় সুমুর মাথায়।
“আমার জন্য চকলেট আনিয়েন।
পাপন মাথা নারিয়ে বেরিয়ে যায়।
নাজমা বেগম তুলতুলকে খাইয়ে দেয়। সুমু শাশুড়ীর পেছনে ঘুরেও কোনো কাজ করতে পারে না। কারণ আছিয়ার সাফ কথা তোমার কোনো কাজ করতে হবে না।
___
বিকেলে সুমু তনু আর তুলতুল প্ল্যান করে বাইরে ফুসকা খেতে যাবে। তন্ময় এখনো ফেরে নি। ফিরলে তন্ময়ের কাছে আবদার করতো নিয়ে যাওয়ার জন্য। সাথে সুমুর কিছু কেনাকাটাও করতে হবে। জামাকাপড় তো নেই।
আছিয়া দশ হাজার টাকা দেয় সুমুর হাতে। নিজের ইচ্ছে মতো জামাকাপড় আনতে বলে। সুমু মুচকি হাসে।
তুলতুলের একটা থ্রি পিছ পড়ে নেয় সুমু। দুজনের হাইট ওয়েট সব কিছুই এক রকম। শুধু তনু খানিকটা লম্বা আর ওদের থেকে একটু গোলুমলু।
সায়ানের বেপারটা একদম মাথা থেকে বের করে ফেলেছে তুলতুল। যে তুলতুলের খোঁজ নেয় না তুলতুলও তার খোঁজ নেবে না।
সারা বিকেল তিনজন ঘোরা ঘুরি করে। সুমু হাসিবকে কল করে নিজের ক্রেডিট কার্ড আনিয়ে নেয়। বকবক করতে করতে মাথা খে*য়েছে তুলতুল ওদের দুজনের।
তনু আর সুমু এদিক ওদিক দেখছে আর হাঁটছে। তুলতুলের একটা ড্রেসের দিকে নজর পড়ে। কালো ফ্রক। দেখতে দারুন লাগছে।
ড্রেসটা দেখতে দেখতে ওদের থেকে অনেকটা পিছিয়ে যায়। হঠাৎ করে কারো সাথে ধাক্কা খায়। তুলতুল পড়েই যাচ্ছিলো একটা ছেলে হাত ধরে দাঁড় করায় তুলতুলকে।
তুলতুল বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস টেনে সামনের লোকটির দিকে তাকায়। দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
“ধন্যবাদ ভাইয়া।
তুলতুল মিষ্টি হেসে বলে।
” ওয়াও
হাত ধরলে ধন্যবাদ ও পাওয়া যায়? ওই সাগর চল তাহলে দুজনে দুই হাত ধরি। দুজনকেই ধন্যবাদ দেবে।
শয়তানির হাসি দিয়ে বলে ছেলেটা। কপালে ভাজ পড়ে তুলতুলের। খেয়াল করে দেখে আগে পাছে তনু আর সুমু নেই।
তুলতুল কোনো কথা না বলে চুপচাপ চলে আসতে নেয়।
“ভাই এটা সায়ানের মা*ল। একে হা*তাতে পারলে আমাদেরই কপাল খুলবে।
অন্য ছেলেটা তুলতুলের পথ আটকে বলে। তুলতুল অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় ছেলেদের দিকে। তারা এখনো তুলতুলকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখেই যাচ্ছে বাজে নজরে।
সাথে কেউ থাকলে একদম ছেড়ে দিতো না ওদের তুলতুল। দুটো থাপ্পড় তো লাগিয়েই দিতো।
” তাহলে যেতে দিচ্ছি কেন? তুলে নিয়ে চল।
ছেলেটা খপ করে হাত ধরে তুলতুলের। তুলতুল ফুঁপিয়ে ওঠে। হাত ছাড়ানোর জন্য মোচরামুচরি করতে থাকে। ভীষণ অসহায় লাগছে।
তখনই হাসিব এসে হাত ছাড়িয়ে নেয় তুলতুলের। তুলতুল হাসিবকে দেখে আশার আলো দেখে। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে ভরসার হাসি ফুটে ওঠে। হাসিবের সাথে আরও কয়েকজন ছেলে ছিলো। তাদের মধ্যে কেউ সায়ানকে কল করে
“হ্যালো সায়ান ভাই”
ব্যাস এই এটুকুই। আর কিছুই শুনতে পায় না তুলতুল। ছেলে দুটো কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ায়। হাসিবের চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে।
“তুমি যাও ভেতরে সুমু আর তনু আছে।
নরম গলায় বলে হাসিব। তুলতুল মাথা নিচু করে শুকনো ঢোক গিলে। এই খবর আবার সায়ানের কারনেও যাবে না কি? ভয়ে বুক কাঁপছে তুলতুলের। মাথা নিচু করেই আল্লাহ আল্লাহ বলতে বলতে চলে যায়।
তুলতুল ওদের কাউকে কিছু বলে না। তুলতুল সারাক্ষণ টেনশনে থাকে।
ঘোরাঘুরি কেনা কাটা শেষ করে শপিং মল থেকে বের হতেই দেখতে পায় সায়ান একটা ছেলেকে হকিস্টিক দিয়ে খুব মা*রছে। চমকে ওঠে তুলতুল।
পাশে লোক জড় হয়ে গেছে। তুলতুল খেয়াল করে দেখে ওই ছেলে দুটোর মধ্যে একজন। আরেকজন কই গেলো? আতঙ্কে ওঠে তুলতুল। মা*রা*মা*রি ভীষণ ভ*য় পায় তুলতুল।
সুমুর হাত চেপে ধরে। সুমু এসবের সাথে পরিচিত। ছোট থেকে একরকম মা*রা*মা*রি দেখেই বড় হয়ে সে। তনু শুকনো ঢোল গিলে সুমুর পেছনে দাঁড়ায়। তুলতুল কাঁপছে।
ছেলেটা র*ক্তা*ক্ত হয়ে গেছে। নাক মুখ দিয়ে র*ক্ত বের হচ্ছে। কেউ থামানোর সাহস পাচ্ছে না সায়ানকে। হিমু আর হাসিবও ঘাবড়ে যায়। সায়ানের গায়ের সাদা শার্টটা একদম ঘামে ভিজে জবুথবু হয়ে গেছে। কপালের ওপর দিয়ে একদম নাকে এসে পড়া চুলগুলো নরছে মা*রের তালে তালে। কপালের রগ ফুটে উঠেছে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। হাতা গুটিয়ে কনুই ওবদি উঠিয়েছে। পায়ে জুতো নেই।
হিনু কল করে সুলাইমানকে। এ ম*রে গেলে পুলিশ কেচ হয়ে যাবে। সামনে নির্বাচন। সুলাইমান ছাড়া কেউ সাহস পায় না সায়ানের সামনে যেতে রেগে গেলে।
কয়েক মিনিটের মধ্যে একটা জিপ গাড়ি এসে থামে। ঝড়ের গতিতে নেমে আসে সুলাইমান।
এগিয়ে গিয়ে হকিস্টিক নেয় সায়ানের হাত থেকে। তবুও সায়ান লা*থি দিচ্ছে। তুলতুল ঘেমে নেমে একাকার হয়ে গেছে। বারবার ঢোক চিপছে।
হাত পায়ের কাঁপন বেরে যাচ্ছে। সুমু শক্ত করে ধরে রেখেছে তুলতুলকে।
“সায়ান থেমে যা। ম*রে যাবে তো।
সায়ানকে টেনে কিছুটা দুরে নিয়ে এসে বলে সুলাইমান। এতখনে হিমু আর হাসিবের সাহস পায়। দুই ভাই এগিয়ে গিয়ে সায়ানকে ধরে।
সায়ান কোমরে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। সুলাইমান তার সাথে আসা গার্ডদের চোখের ইশারায় ছেলেটাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। তারা সাথে সাথে ছেলেটাকে নিয়ে চলে যায়।
সায়ান চোখ খুলতেই চোখ পড়ে খানিকটা দুরে দাঁড়িয়ে থাকা সুমু তুলতুল আর তনুর দিকে। চোয়াল শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ঝাড়া দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় ওদের হাত থেকে।
তারপর এগিয়ে যায় তুলতুলদের দিকে। তুলতুল সায়ানকে আসতে দেখে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। সুমুও ভয় পেয়ে যায়। দুই হাতে আড়াল করার চেষ্টা করে তুলতুলকে।
কান্না পাচ্ছে ভীষণ তুলতুলের। ভয়ং*কর লাগছে সায়ানকে। মনে হচ্ছে এগিয়ে এসে হালুম করে গি*লে ফেলবে।
“তোর চোখ আজকে আমি গে*লে দেবো।
দাঁতে দাঁত চেপে তুলতুলকের হাত ধরে টান নিয়ে সুমুর থেকে খানিকটা দুরে নিয়ে এসে বলে সায়ান। তুলতুল ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সায়ানের বুকে ঢলে পড়ে। সুমু আর তনু শুকনো ঢোক গিলে।
চলবে…….