আমার তুমি
সিজন ২ পর্ব ১৯
তানিশা সুলতানা
গালটা একদম ফুলে গেছে তুলতুলের। তনু ভীষণ রেগে গেছে। সায়ান সামনে থাকায় তখন রাগ দেখাতে পারে নি। লোকটা অসম্ভব ভয়ংকর। সুমুরও রাগ হয়েছে কিন্তু সেটা প্রকাশ করছে না।
সিএনজিতে বসে আছে ওরা। বাসায় যাচ্ছে।
“ওনার সমস্যা কি? আমাদের তুলতুল বেশি কথা বলে এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই৷ আমরা ভালোবাসি ওর বকবকানি। উনি কেনো গায়ে হাত তুলবে? এটা আমি মানবো না। আমার বোনুর গালটা লাল হয়ে গেছে।
তুলতুলের গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরি গলায় বলে তনু।
“ওই ব্যাঙের নানার বিচার আল্লাহ করবে দেখিস। এমন একটা বউ পাবে না সারাদিন ওনার লম্বা লম্বা ওই ঝুঁটি ধরে নাচাবে। তখন আমি মজা দেখবো, উৎসাহ দেবো, সিটি বাজাবো। হাতেও পোকা পড়বে দেখিস। চেনে না তুলতুলকে।
একদিন এমন হাল করবো না তুলতুল নাম শুনলে দৌড়ে পালাবে। বজ্জাতের হাড্ডি। তেলাপোকার চাচাতো ভাই, শয়তানের নানা, নিম পাতার বংশধর।
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে তুলতুল। সুমু শুকনো ঢোক গিলে। ভাইয়ের নামে এতো অভিশাপ মানতে কষ্ট হচ্ছে। তনু কানে হাত দেয়। বড্ড ভুল করেছে সিমপ্যেথি দেখিয়ে। এখন এই রেডিও বন্ধ হওয়া কঠিন বেপার।
” এভাবে বলতে নেয় সোনা।
সুমু তুলতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে রিনরিনিয়ে বলে।
“এভাবে বলবো না? কেমন মারটাই মারলো আমায়? শুধু কি আজকে? আরে আমি তো প্রমিজ করেই ফেলেছিলাম ওনার সামনে বকবক করবো না। কিন্তু এটা কি আর আমার নিষ্পাপ চামড়ার মুখ শুনবে?
ওনাকে দেখেই পেটের ভেতর থেকে একদম কথা গুলো দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসে। এতে আমার দোষ কোথায়?
আর কথা বললেই মা*র*তে হবে?
মানছি আমি একটু বেশি কথা বলি তাই বলে অসয্য রকমের না। অভিশাপ দিলাম ওই ছাগলের আমার থেকেও বেশি বকবক করা একটা মেয়ে হবে।
তখন দেখবো কি করে সামলায়। গায়ে হাত তুলে না কি?
একদমে বলে তুলতুল। শেষ করে জোরে জোরে শ্বাস টানে। আর একটু আস্তে বললেও হতো। সিএনজি ড্রাইভার কয়েকবার পেছনে তাকিয়েছে। তনু কানে হেডফোন গুঁজে নেয়। সুমু কপালে হাত ঠেকিয়ে শুনছে।
“ধুরররর আমিও না
এতো কথা বলতে হয়? বেশি কথা বললে হায়াত ঘেটে যায়। মনকে কতোবার বোঝায় বুঝতেই চায় না। কথা বলতে বলতে নিজের মাথা নিজেই ধরিয়ে ফেলছি। কি করে যে এতো কথা বলি আল্লাহ জানে?
অবশ্য কথা বললে মন ভালো থাকে। এই দেখো আমার ভীষণ মন খারাপ ছিলো কিন্তু এখন কথা বলতে বলতে কি নিয়ে মন খারাপ ছিলো সেটাই প্রায় ভুলে গেছি।
এক দিক থেকে ভালোই হয়েছে। ভুলেই যেতে চায় আমি। মনে থাকলে আবার ঠাস ঠাস করে দাভাইকে বলে দিবো আর দাভাই ওই জ*ল্লা*দের বাচ্চাটাকে টাস টাস করে মা*ই*র দেবে। আপাতত সেটা চাইছি না আমি।
কেনো চাইছি না? অবশ্যই তোমার জন্য। এতে তুমি কষ্ট পাবে। কতো কিউট তুমি। তোমাকে কষ্ট দিবোই না আমি।
সুমুকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে হেসে বলে তুলতুল। সুমুও হাসে। দুই হাতে আগলে নেয় তুলতুলকে। এটাই ভাবছিলো ও। তন্ময় জেনে গেলে ভীষণ রেগে যেতো। সায়ানকে ছেড়ে কথা বলতো না।
” তুলতুল রিভেঞ্জ নিতে চাও তুমি?
সুমু বলে।
“হ্যাঁ অবশ্যই চায়। ভেবেও ফেলেছি। আরেকবার সামনে আসলে ইচ্ছে মতো ঝেড়ে দেবো।
” এভাবে না রে পাগলি। নিরবতার চেয়ে বড় অপমান কিছু হতেই পারে না। তুমি ভাইয়াকে চুপ থেকে অপমান করবে। আর রিভেঞ্জ নিবে।
“কিন্তু আমি তো চুপ থাকতে পারি না।
তুলতুল মুখ গোমড়া করে বলে।
“তোমার চুপ করে থাকতে হবে না। শুধু ভাইয়ার কাছে চুপ থাকবা। মানে ইগনোর করবা। কথা বলবা না ওর সাথে। আশেপাশেও যাবে না।
পুরোটা বোঝাতে বোঝাতে বাড়িতে নিয়ে আসে সুমুকে। তুলতুল ভীষণ খুশি হয়। দারুণ বুদ্ধি দিয়েছে সুমু।
বাড়িতে ঢুকতেই দেখতে পায় তন্ময় আর পাপন এক সাথে ম্যাচ দেখছে। আছিয়া আর নাজমা রান্না করছে।
তুলতুল গিয়ে বাবার পাশে বসে পড়ে। তনু রুমে চলে যায়। সুমু হাতের ব্যাগ গুলো নামিয়ে তা থেকে একটা প্যাকেট উঠিয়ে পাপনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
” আম্মাজান আপনার চকলেট।
পাশ থেকে দুটো চকলেট নিয়ে সুমুকে দেয়। তুলতুলকেও দুটো দেয় আর দুটো রেখে দেয় তনুর জন্য।
তুলতুল উঠে ভাইয়ের পাশে বসে। বাবা বরাবরই তুলতুল আর তনুর জন্য চকলেট আনলেও তন্ময়ের জন্য আনে না। তার ধারণা তন্ময় চকলেট খায় না।
তুলতুল নিজের ভাগ থেকে একটা চকলেট সব সময় তন্ময়ের জন্য রেখে দেয়। কারণ সে জানে তন্ময়েরও চকলেট পছন্দ।
তন্ময় একদম মন প্রাণ দিয়ে টিভি দেখছে। তুলতুল চকলেট খুলে একটু তন্ময়ের মুখে তুলে দিচ্ছে আর একটু নিজে খাচ্ছে। তন্ময় এক হাত তুলতুলের কাঁধের ওপর দিয়ে খাচ্ছে আর দেখছে।
সুমু মুচকি হাসে।
“আব্বু এটা আপনার জন্য।
পাপন তাকিয়ে থাকে সুমুর দিকে। সকালে তিনিই আছিয়ার কাছে দশ হাজার টাকা রেখে গেছিলো সুমুকে দিতে। সে জানে সুমু দামি দামি জামা পড়ে অব্ভস্ত।
” আম্মাজান ওই কয়টা টাকা নিজের জন্য কিনতে। আমার জন্য আবার কেনো?
হাতে নিয়ে বলে।
“আব্বু অনেক গুলো টাকা ছিলো। ওই কয়টা না। কোনো কথা না। কালকে এটা পড়ে স্কুলে যাবেন।
পাপন মুচকি হাসে।
সুমু আরও দুটো ব্যাগ নিয়ে রান্না ঘরে যায়। আছিয়া আর নাজমা বেগমকেও দিয়ে আসে। ওনারা ভীষণ খুশি হয়। এতো বড়লোক বাড়ির মেয়ে এরকম হবে ভাবনার বাইরে তাদের।
বাকি ব্যাগ গুলো নিয়ে রুমে চলে যায় সুমু। তুলতুলের মন খারাপ হয়ে যায়। ওর জন্য কিছুই কিনলো না? মীরজাফরি করতে পারলো আপু?
মন খারাপ করে রুমে চলে যায় তুলতুল। তন্ময় বিষয়টা খেয়াল করে। মনে মনে রাগ হয় সুমুর ওপর। ভেবে ফেলে কালকেই বোনকে নিয়ে যাবে শপিং মলে।
টিভি বন্ধ করে রুমে চলে যায়।
“আপনি এসেছেন দেখেন আপনার জন্য এটা কিনেছি।
সুমু একটা শার্ট দেখিয়ে বলে তন্ময়কে। তন্ময় ফিরেও তাকায় না। চুপচাপ খাটের এক কোণায় বসে পড়ে। নিজের রাগ প্রকাশ করতে পারে না তন্ময়। রাগের মাথায় দুই চারটা ধমকও দিতে পারে না। এটাই পবলেম ওর। খুব রেগে গেলে একদম চুপচাপ থাকে।
সুমু মুচকি হেসে তন্ময়ের পাশে বসে।
” কি হয়েছে? পছন্দ হয় নি?
তন্ময় এক পলক তাকায় সুমুর দিকে। তারপর উঠে চলে যেতে নেয়৷ সুমু হাত ধরে ফেলে।
“কি করে ভাবলেন আমি তুলতুলের জন্য কিছু কিনবো না?
ফট করে তাকায় তন্ময়। সুমু মুচকি হাসে। তন্ময়ের সোজাসুজি দাঁড়ায়।
” আপনার বোনের একটা ড্রেস ভীষণ পছন্দ হইছিলো। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে নি আমি। আমি সেটা লহ্ম করে নিয়েছি ওর জন্য। সারপ্রাইজ দেবো বলে এখন দিলাম না।
তন্ময়ের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে। এই মেয়েটা কি ম্যাজিক জানে? মনের কথা খুব সহজেই বুঝে যায়।
এই মুহুর্তে ইচ্ছে করছে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু পারছে না।
“জানি খুশি হয়েছেন। আমাকে জড়িয়ে ধরতেও ইচ্ছে করছে। কিন্তু আপনি তো ভীতুর ডিম তাই পারবেন না।
কিন্তু কোনো বেপার না। আপনার বউ তো আছে
সুমু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তন্ময়কে। তন্ময় মুচকি হেসে মাথায় হাত রাখে।
আসলে ড্রেসটা সুমু কিনে নি। হাসিব কিনে দিয়েছে। হাসিব খেয়াল করেছিলো সেটা। তারপর সেটা সায়ানকে বলতেই সায়ান কিনতে বলেছিলো।
ভার্সিটির ভোট শেষ হয়েছে। জয় লাভ করেছে সায়ান। ভোট শেষে বিপক্ষ দল আক্রমণ করেছিলো। সায়ান মাথায় কিছুটা চোট পেয়েছিলো।
এটা আজ নিয়ে তিনদিন আগের কথা। তিনদিন হাসপাতালেই ছিলো সায়ান। তেমন গুরুতর আঘাত না হলেও সালমা বেগম আর মনির কান্না কাটিতে জোর করে রিলিজ নেয় নি।
আজকে তিনদিন পরে ব্যান্ডেস পাল্টে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে সায়ানকে।
ভাইয়ের খবর পেয়েই হাসপাতালে তন্ময়কে নিয়েই দেখতে এসেছিলো সুমু। দেখেই চলে গেছে। কারো সাথে কোনো কথা বলে নি।
তুলতুল এসবের কিছুই জানে না। সে তার মতো আছে।মাঝেমধ্যে একটু একটু মিস করেছে সায়ানকে। কিন্তু সেটাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজে মন দিয়েছে।
আজকে তিন ভাই গেছে সুমুকে আনতে। রাগ অভিমান মনের মধ্যে চাপা দিয়ে দিয়েছে। একটাই তো মেয়ে। হয়ত করেছে ভুল। তাতে এতোবড় শাস্তি দেওয়া ঠিক না।
অনেক রকমের খাবারের আয়োজন করেছে পাপন। তিন ভাই ই বেশ খুশি হয়। এরা মধ্যবিত্ত হতে পারে কিন্তু মন এক্কেবারে পরিষ্কার।
সুমুকে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে মুখ ভার করে ফেলে সুমু৷ একা কিছুতেই যাবে না সে তন্ময় না গেলে।
তন্ময় মায়ের দিকে তাকায়। মা ইশারায় অনুমতি দিয়ে দেয়।
আগামী কাল দাওয়াত দিয়ে দেয় পুরোপরিবারের সবাইকে।
সুমু তুলতুলকে সাথে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু তুলতুল কিছুতেই যাবে না। ওর এক কথা বাঘের গুহায় স্বেচ্ছায় যাবে না।
সালমান তুলতুলকে জোর করে যেতে। বাবা মা কাকিমা দাভাই সবাই যেতে বলছে। তুলতুল এখন আর না করার সাহস পায় না। যেতেই হবে।
তনু যাবে না তার কাল এক্সাম আছে।
তুলতুল মুখ গোমড়া করে রুমে চলে যায় রেডি হতে।
সুলাইমান সায়ানকে টেক্সট করে দেয় “তুলতুল আসছে”
চলবে………..