আমার তুমি
সিজন ২ পর্ব ২৩
তানিশা সুলতানা
রীতিমতো ঘাবড়ে গেছে তুলতুল। এ এখানে কি করে আসলো? আর দেখলোই বা কি করে? এখন কি হবে? থা*প্প*ড় তো গাল লাল করে দেবে। বাঁচাবে কে?
তুলতুল এদিক সেদিক তাকিয়ে বাড়ির লোকজনদের খুঁজতে থাকে। কিন্তু নাহহহ কোথাও কেউ নেই।
শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করে ফেলে তুলতুল। সায়ান ধপ করে তুলতুলের পাশে বসে পড়ে। সোফা সহ কেঁপে ওঠে তুলতুল। বুকে হাত দেয়।
“কে ছিলো ছেলেটা?
শক্ত গলায় আবারও জিজ্ঞেস করে সায়ান। তুলতুল জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। মুখের ওপর পড়ে থাকা ছোট চুল গুলো কানের পেছনে খুঁজে নেয়।
” ততিথির ভাই তিয়াস ভাইয়া।
আমতা আমতা করে রিনরিনিয়ে জবাব দেয় তুলতুল। কপালে তিনটে ভাজ ফেলে সায়ান। চোখের সাদা অংশ লাল হচ্ছে ধিরে ধিরে।
“ক্লাস বাদ দিয়ে তিথির ভাইয়ের সাথে ঘুরতে যেতে হবে তোর?
পাখনা গজিয়ে গেছে? উড়তে শিখে নিয়েছিস?
দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে সায়ান। তুলতুল ফাঁকা গলায় ঢোক গিলে। রাবণ ধীরে ধীরে তার রূপে ফিরে যাচ্ছে। বেড়াল থেকে বাঘ হচ্ছে। যখন তখন হালুম করে উঠবে। ছোট্ট তুলতুলকে কাঁচা গি*লে খাবে। কেউ বাঁচাতে পারবে না।
” বলেছিলাম না? খালাতো মামাতো কাকাতো ফুপাতো পাড়াতো যত প্রকার ভাই আছে তাদের থেকে দূরে থাকতে?
বলেছিলাম কি না?
ধমক দিয়ে বলে সায়ান। কেঁপে ওঠে তুলতুল। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে। গলাটা আবারও শুকিয়ে গেছে।
“কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি।
শক্ত গলায় আবারও বলে ওঠে সায়ান। তুলতুল দ্রুত চার পাঁচবার মাথা নারায়।
” মুখে বল
“হ্যাঁ
জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে তুলতুল।
” তাহলে কেনো গিয়েছিলি? আত্মায় ডর ভয় নাই? না কি সব গি*লে খেয়েছিস?
তুলতুলের ডান হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে সায়ান। তুলতুল ব্যাথা পায়। হাতির মতো হাত দিয়ে ওর ছোট্ট হাতটা মুঠো করে ধরলে ব্যাথা পাবে না? ভীষণ ব্যাথা পাচ্ছে। মনে হচ্ছে ভে*ঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে। দুচোখ বেয়ে পানি গড়াতে থাকে তুলতুলের। ভেজা চোখ জোড়া দিয়ে এক পলক সায়ানের রক্ত চহ্মুর দিকে তাকিয়ে নেয়। কি ভয়ংকর লাগছে। সাথে সাথে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
“কেনো গিয়েছিলি তুই? কার পারমিশন নিয়ে গিয়েছিলি? ছেলে দেখলেই ঢলাঢলি করতে মন চায়?
তুলতুলের গালটা শক্ত করে চেপে ধরে দাঁত কটমট করে বলে সায়ান।
তুলতুল ডান হাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করে সায়ানের হাত কিন্তু পারে না।
” আর কখনো যাবো না।
খুব কষ্টে বলে তুলতুল। সাথে সাথে গাল ছেড়ে দেয় সায়ান। তুলতুল গালে হাত বুলিয়ে কান্না করতে থাকে।
“একশো বার যাবো। তুই বলার কে? তোর কথা আমি শুনবো কেনো? শুনবোই না।
মনে মনে বলে তুলতুল।
সায়ান তুলতুলের চেপে ধরা হাতটা ঢিলে করে ধরে। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে দুটো শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
” তুই কি চাস তোর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাক? অবশ্যই চাস না। তো কোনো দিকে মন না দিয়ে পড়ালেখায় ফোকাস কর। আমি তোকে বিয়ে করবো। নেহাৎ বয়সটা কম তাই ছাড় দিয়েছি। নাহলে এখুনি তুলে নিলে কবুল বলিয়ে ছাড়তাম।
তো নেক্সট টাইম যদি তোকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেখি আর কোনো ছাড় দেবো না। এজ এ ক্লিয়ার?
সায়ান খুব শান্ত গলায় বলে। তুলতুল অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আপাতত কান্নার কথা ভুলে গেছে। বাই এনি চান্স লোকটাকি বিয়ের প্রপোজাল দিলো?
“আপনি কি আমায় প্রপোজ করলেন? কি করে প্রপোজ করতে হয় সেটাও দেখি জানেন না। জীবনে শিখলেন টা কি? আমাকে বলতেন আমি সুন্দর করে কিছু প্রপোজের টিপস আপনাকে শিখিয়ে দিতাম। এরকম গুন্ডা টাইপের প্রপোজ তুলতুল হ্যাঁ বলবে না।
আমি হলাম নায়িকা। তো আমাকে পেতে হলে হিরো সেজে এসে হাতে গোলাপ নিয়ে প্রপোজ করতে হবে। নাহলে আমি গলছি না। আগে ভাগেই বলে দিলাম।
তুলতুল সোফায় পা তুলে আয়েশ করে বসে বলে। সায়ান এক পলক তুলতুলের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
” প্রপোজ করি নি। জাস্ট সিদ্ধান্তটা জানিয়ে দিলাম।
দুই আঙুল দিয়ে কপালে স্মাইল করতে করতে বলে সায়ান। তুলতুল মুখ বাঁ কায়।
“ইহহহহ প্রপোজ করি নি। আসলে প্রপোজই করেছিলেন। আমি বলেছি ভালো হয় নি তাই কথা ঘুরাচ্ছেন। হারে হারে চিনি আপনাকে। আপনি হলেন শয়তানের নানা, হাতির ছোটমট বাচ্চা, শিয়ালের চাচাতো ভাই। আর আস্ত শয়তান। চিনি না ভেবেছেন?
হুহহহ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। বিয়ে করবো আপনাকে? থা*প্প*ড় খাওয়ার জন্য? জীবনেও না। দরকার পড়লে সারাজীবন চিরকুমার থুক্কু চিরকুমারী হয়ে থাকবে তবুও আপনাকে বিয়ে করবো না। এটা হলো আমার সোজাসাপ্টা কথা।
বুঝলে বুঝ পাতা না বুঝলে তেজপাতা।
বা হতের এনগ্রেসমেন্ট আঙ্গুলে থাকা সাদা পাথরের আংটিটা ঘোরাতে ঘোরাতে বেশ ভাব নিয়ে বলে তুলতুল। সায়ান কপাল চওড়া করে তাকায় তুলতুলের দিকে।
সায়ানের দৃষ্টি খেয়াল করে তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে। হাত দুটো নামিয়ে ফেলে। সায়ান একটু তুলতুলের দিকে ঝুঁকতে যেতেই তুলতুল পেছাতে যায়। আর ঠাসসস করে ফ্লোরে প*ড়ে যায়। একদম কিনারায় বসেছিলো কি না৷
ও মাগো বলে চিৎকার করে ওঠে তুলতুল। বেকায়দায় পড়ে ব্যাথা পেয়েছে কোমরে। সায়ান ফোঁস করে শ্বাস টেনে বাঁকা হাসে।
” আল্লাহ গো মে*রে গেলাম গো। আমাট কোমরটা ভে*ঙে গুড়িয়ে গেলো রে। আমাকে ধরার মতো কেউ নাই। সামনে পাষাণ হৃদয় হীন হার্ট লেস একজন বসে আছে। আল্লাহ দেখে রাইখেন। উনিও পড়ে গেলে আমি ধরবো না। আগে ভাগেই বলে দিলাম।
ও আম্মু বাঁ*চাও গো। এম্বুলেন্স কল করে। ডাক্তারের আসতে বলো।
তুলতুল বকবক করতেই থাকে। সায়ান উঠে চলে যায়। তাকায়ও না তুলতুলের দিকে। অভিমানে তুলতুলের চোখে সত্যি সত্যিই পানি চলে আসে।
ততখনে নাজমা আছিয়া সুমু চলে আসে।
“কিভাবে পড়ে গেছি? বড় কবে হবি তুই? জানটা জ্বালিয়ে খাস সারাক্ষণ।
আছিয়া আর সুমু টেনে তুলে তুলতুলকে। পায়ে বেশ ব্যাথা পেয়েছে।
” কোথায় ছিলো তোমরা?
গা ফুলিয়ে বলে তুলতুল।
“সুমুর ভাইয়েরা এসেছে ওদের সাথেই কথা বলছিলাম। তুই ডাকবি না?
নাজমা বেগম বলে। তুলতুল ফুলানো গাল আরও একটু ফুলিয়ে ফেলে। ডাকে নি আবার? শুনে নি তো কেউ। গল্পে মজে ছিলো কি না?
” এসো আমার সাথে
সুমু তুলতুলকে ধরে রুমে নিয়ে যায়।
“তোমার ভাই কেনো আসলো আমাদের বাড়িতে? কেনো এসেছে বলো? সেই তো আমাকে ফেলে দিলো। নাহলে কি পড়তাম। একদম খারাপ লোকটা। আমার পিছু কেনো ছাড়ে না। আবার বলছে সে না কি আমায় বিয়ে করবে।
শুনো আমি কাঠ কাঠ বলে দিলাম ” আমি কচু গাছের সাথে ফাঁ*সি দিয়ে ম*রবো তবুও তাকে বিয়ে করবো না”
জল্লাদ একটা। জীবনটা ছারখার করে দিলো আমার।
খাটে বসে রাগে ফুসফুস করতে করতে তুলতুল।
“এভাবে বলে না সোনা। আমার ভাই ঢাকায় চলে গেছিলো। অনেকদিন পরে গ্রামে আসলো। আবার কালকেই চলে যাবে। এখন তুমি রুমেই থাকো। সন্ধার পরেই চলে যাবে।
একটু কষ্ট করে সয্য করে নাও।
মিষ্টি করে হেসে বলে সুমু। তুলতুল কিছু বলে না। লোকটা এতোদিন পর ফিরলো? তুলতুল তো কোনো খোঁজই রাখে না। ওই অসুস্থ শরীর নিয়েই ঢাকায় ছিলো। মনে মনে চিন্তা করে।
” তুমি চেঞ্জ করে নাও আমি খাবার নিয়ে আসছি।
সুমু তুলতুলের হাতে জামাকাপড় দিয়ে চলে যায়।
সন্ধায় এমপি বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য চলে আসে তুলতুলদের বাড়ি। মাসের শেষের দিকে। এই সময় হাত ফাঁকাই থাকে। এতো গুলো মানুষ দেখে বেশ হিমশিম খেয়ে যায় পাপন আর আছিয়া। ফ্রিজে মাংস নাই। কি খেতে দেবে? শরবত দেবে চিনি টুকুও নাই। হাতে টাকাও নাই। তন্ময়ের রুমের খাট কিনতে গিয়ে আরও হাত ফাঁকা হয়ে গেছে। তিনদিন পরেই নতুন মাস শুরু হবে। বেতনও পাবে।
তন্ময় সুমুর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়। বাবা মায়ের চিন্তার কারণ সে জানে।
সায়ান আরামসে তন্ময়ের রুমের খাটে টানটান হয়ে শুয়ে আছে। হিমু চুল টেনে দিচ্ছে আর হাসিব হাত ম্যাসাজ করে দিচ্ছে।
সোনা সবেই ঢুকেছে।
“সায়ান কোথায় ছিলো? কতো কল করলাম রিসিভ কেনো করো নি?
সায়ানের পাশে বসে বলে সোনা।
” ছিলাম আশেপাশেই।
সায়ানের সোজা জবাব। সোনা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এর থেকে বেশি কিছু আশা করেও নি সে।
“বাড়িতে যাচ্ছো তো?
” মুডের ওপর ডিপেন্ড করছে।
হাই তুলে বলে সায়ান। সোনা মুখ গোমড়া করে বসে থাকে।
চলবে………………