আমার তুমি
সিজন ২ পর্ব ২৯
তানিশা সুলতানা
“আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আপনার ভাঙা গাড়ি থামান বলছি। আমি কোথাও যাবো না। আপনি একটা গুন্ডা। কাল আমাকে খু*ন করার হুমকি দিয়েছেন। ওহহ হো এখন বুঝতে পারছি। কাল খু*ন করার হুমকি দিয়েছেন। আর আজকে খু*ন করতে নিয়ে যাচ্ছেন? মায়া দয়া নেই শরীরে? হাতির মতো শরীর, বাঘের মতো মন, জলহস্তির মতো কথা বার্তা। শয়তান বেডা। আমাকে ছেড়ে দিন বলছি। আমি ম*রতে চায় না। এখনো এগারো বাচ্চার মা হওয়া বাকি আমার। বিয়েটাও হয় নি এখনো। বয়ফ্রেন্ড সাথে ঘুরতেও যাওয়া হয় নি। ফুসকা খাওয়া হয় নি। জামাইয়ের টাকায় শপিং করা হয় নি।
কাঁদতে কাঁদতে বলে তুলতুল। সায়ান তুলতুলের পাশে মাথায় দুই হাত ঠেকিয়ে বসে আছে। মাথার মধ্যে টেনশন ঘুরপাক খাচ্ছে। ওই দিকে সুমুর কি অবস্থা কে জানে? বোনটা যে বড্ড নরম মনের। তন্ময় যদি খারাপ কিছু বলে?
নিলয় ড্রাইভ করছে।
সায়ানের রিয়াকশন না পেয়ে কান্নার শব্দ বারিয়ে দেয় তুলতুল।
” বোবা হয়ে গেছেন না কি? বোবা হন আর কালা হন। আমার কি? আমাকে দয়া করে নামিয়ে দিন। আমার কাছে টাকা পয়সা কিচ্ছু নেই। আমার বাবারও টাকা নেই। আপনি যদি আমার আব্বুকে কল করে বলেন “১০ লাখ টাকা দিলে আপনার মেয়েকে ছেড়ে দেবো। নাহলে ছাড়বো না”
আমার আব্বু কি বলবে জানেন? বলবে “আপনি পারলে আমার মেয়েকে বিয়ে করে নিন। তারপর ধরে রাখুন। আমার কাছে টাকা নেই। দিতে পারবো না”
আমাকে কেউ ভালোবাসে না। আমার জন্য এতো টাকা কেউ দেবে না। তার থেকে এক কাজ করতে পারেন। তিথিকে কিডন্যাপ করেন। ওর বাবার প্রচুর টাকা। তিয়াস ভাইয়াও খুব ভালোবাসে বোনকে। আপনি কল করলেই টাকা দিয়ে দেবে। যদি না দেয় তাহলে নাহয় আমাকে আবার ধরে আনিয়েন।
কথা গুলো বলে শুকনো ঢোক গিলে তুলতুল মনে মনে বলে “আল্লাহ আল্লাহ করে ডপটা গিলে ফেললে আমি মুক্ত। তারপর পুলিশকে বলে দিবো। ঝামেলা চুকে যাবে”
সায়ান কটমট চোখে তাকিয়ে আছে তুলতুলের দিকে। ঠান্ডা মাথায় একটু চিন্তাও করতে দিচ্ছে না।
তুলতুল ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় সায়ানের দিকে। সিংহের মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
“না কি থা*প্প*ড় দিবেন। একটু সময় দিন। আমি একটু জোরে জোরে শ্বাস টেনে নি। আসলে কি হয় বলেন তো? আপনার এই গন্ডারের হাতের থা*প্প*ড় খাওয়ার পরে আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। লোহা দিয়ে বানানো কি না হাত।
রিনরিনিয়ে বলে তুলতুল। সায়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। গাড়ির পেছন থেকে কসটিউব নেয়। তারপর তুলতুল গলা থেকে টান দিয়ে ওড়নাটা কেড়ে দেয়। চমকে ওঠে তুলতুল। বড়বড় চোখ করে তাকায় তুলতুল৷ মতলব বুঝতে পারছে না। সায়ান তুলতুলের দৃষ্টিতে নজর দেয় না। সো তুলতুলের হাত দুটো টেনে নিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয়।
” আরে আরে করছেন টা কি? হাত পা বেঁধে বুড়ি গঙ্গায় ফেল*বেন না কি? দেখুন এমনটা করবেন না। আমি আর কথা বলবো না। বাবার টাকা দেবে। সত্যি বলছি দেবে। আমার ভীষণ ভালোবাসে। দাভাইও ভালোবাসে। আমি বললেই টাকা দিয়ে দেবে। মা*র*বেন না আমায়। আমি খুব ভালো মেয়ে। কথা কম বলি। আমার
বাকিটা শেষ করার আগেই দুই ঠোঁট কসটিউব দিয়ে আটকে দেয়। তুলতুল উমমম করতে থাকে৷ এবার সায়ানের তুলতুলের দিকে নজর যায়। বিরক্ততে চোখ ফিরিয়ে নেয়। আবার গাড়ির পেছনের সিট থেকে নিজের ব্লেজার নিয়ে তুলতুলের গায়ে দিয়ে দেয়।
“পাগল করে দিবি আমায়।
বিরবির করে বলে সায়ান। তুলতুল গাড়ির জানালায় মাথা৷ ঠেকিয়ে ফুটপাতে থাকে।
সুমুকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় হাসিব আর হিমু। যেতে চায় নি জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে সুমু।
কাঁপা কাঁপা হাতে বাড়ির মেইন দরজা ঠেলে ভেতরে পা রাখে সুমু। হাত পা অসম্ভব ভাবে কাঁপছে।
সোফায় বসে টিভি দেখতে ছিলো তন্ময়। চাকরিটা হয়ে গেছে। ভীষণ খুশি ও। মিষ্টিও এনেছে সাথে। পাপন অন্য পাশে বসে মিষ্টি খাচ্ছে। আর আছিয়া মুড়ি মাখাচ্ছে আর পাপনকে বকা দিচ্ছে। ডাক্তার পই পই করে বলেছে মিষ্টি খাওয়া যাবে না। তবুও সে খাবে। আর আজকে তো একটা রিজন পেয়ছেই। নাজমা এখন নিজের রুমে। ঘরে গোছাচ্ছে উনি।
” সুমু তুমি একা কেনো? বোনু কোথায়?
সুমুকে একা বাড়িতে ঢুকতে দেখে তন্ময় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে। কেঁপে ওঠে সুমু। মাথা নিচু করে ফেলে। পাপন আর আছিয়াও তাকায় সুমুর দিকে।
“চুল কেনো সুমু? আমার বোন কোথায়?
তন্ময় ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে। সুমু হাত কচলাচ্ছে।
” মা আমার তুলতুল কোথায়?
পাপন সুমুর কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে। পাপনের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে কেঁদে ওঠে সুমু। জাপ্টে জড়িয়ে ধরে পাপনকে। সুমুর কান্না দেখে ভয় পেয়ে যায় আছিয়া আর তন্ময়। নিশ্চয় তুলতুল ঠিক নেই।
তন্ময় বড়বড় পা ফেলে সুমুর সামনে যায়। হাত ধরে টান দিয়ে পাপনের বুক থেকে সুমুকে সোজা করে দাঁড় করায়।
“আমার বোন কোথায়? ভনিতা ছাড়া সরাসরি বলবা। যাতে ওর কোনো ক্ষতি হওয়ার আগেই আমরা ওকে ফেরাতে পারি।
খুব শান্ত গলায় বলে তন্ময়। সুমু শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।
” কেউ কিডন্যাপ করেছে? ছেলে ধরা? বা
তন্ময় সুমুর দুই গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করে। সুমু মাথা নারিয়ে না বোঝায়। আছিয়া কেঁদে ফেলে। পাপনের বুক কাঁপছে।
“স্পষ্ট করে কেনো বলছো না আমার বোন কোথায়?
সুমুকে ধাক্কা দিয়ে চিৎকার করে বলে তন্ময়। পড়তে পড়তে নিজকে সামলে নেয় সুমু। ভয়ে বুক কাঁপছে।
” তন্ময় হচ্ছে কি?
পাপন তন্ময়কে ধমক দিয়ে বলে।
“ভাইয়া তুলতুলকে খুব ভালো বাসে।
সুমু থেমে থেমে বলে। আতঙ্কে ওঠে ওরা। বোঝা হয়ে গেছে সায়ান তুলে নিয়ে গেছে তুলতুলকে। পাপন ধপ করে বসে পড়ে। আছিয়া হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। চেঁচামেচিতে নাজমা বেরিয়ে এসেছে। সে আছিয়াকে ধরে আছে।
” তুই আমার বোনকে তোর ভাইয়ের কাছে দিয়ে এসেছিস? আমার বোনের পায়ে ব্যাথা। এতোটা স্বার্থপর তুই?
তন্ময় সুমুর চুল গুলো মুঠো করে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে। সুমু ব্যাথায় কুঁকিয়ে ওঠে।
“তোর ভাই একটা গুন্ডা। তোর কলিজা কাঁপলো না আমার ওই টুকুনি বোনটাকে বিপদে ফেলতে? মানুষ তুই?
তন্ময় কষিয়ে থা*প্প*ড় বসিয়ে দেয় সুমুর গালে। ছিটকে পড়ে যায় সুমু। দেয়ালের সাথে মাথা লেগে কে*টে যায় খানিকটা।
” তন্ময় হা বলো গেছে তোমার? বাবার সামনে বউয়ের গায়ে হাত তোলা হচ্ছে? বেয়াদবি পছন্দ করি না আমি।
পাপন চোখ পাকিয়ে বলে। উঠে সুমুকে ধরার মতো শক্তি তার নেই৷ আছিয়ার কানে কিচ্ছু ঢুকছে না। সে তার মেয়ের চিন্তায় বিভোর।
“মা তুমি রুমে যাও। তন্ময়ের হয়ে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
বড়বড় শ্বাস টেনে বলে পাপন।
” ও এখন এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে। কোনো অধিকার নেই আমার বউ হয়ে থাকার। ওর ভাইয়ের কথায় আমার বোনকে বাড়ি ছাড়া করেছে৷ আমি আমার বোনের কথা ভেবে ওকে বাড়ি ছাড়া করবো। ওর সাথে সংসার করা কখনোই সম্ভব না। স্বার্থপর মেয়ে। বের হ আমার বাড়ি থেকে।
সুমু চোখ বন্ধ করে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে মাথা ধরে বসে আছে। তন্ময় এক টানে সুমুকে তুলে টে*নে হিঁ*চড়ে বাড়ির বাইরে ছুঁড়ে ফেলে। রাস্তায় পড়ে যায় সুমু। তন্ময় ঠাস করে মেইন দরজা বন্ধ করে দেয়।
সুমু হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। কতো বড় ভুল করে ফেলেছে এখন বুঝতে পারছে। আহহা এই জীবনে তন্ময়ের ভালোবাসা আর পাওয়া হলো না। আর কখনো কি দেখতেও পারবে না তন্ময় কে? শশুড় শাশুড়ীর মতো নিষ্পাপ ভালো মানুষ দুটোর মনও ভেঙে ফেললো সুমি।
নিয়তি কোথায় এনে ফেললো?
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো তুলতুল। তখন সায়ান মুখ থেকে কসটিউব খুলে হাতও খুলে দিয়েছে। এখন একটা ফাঁকা জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়েছে। নিলয়কে পাঠিয়েছে খাবার আনতে। তুলতুলের যে খুব খিধে পেয়েছে এটা সায়ান ভালোই বুঝতে পারছে। তাছাড়া পা টাও করাতে পারছে না।
মাথা ঝুঁকে পড়ে যেতে নিলে ঘুম ভেঙে যায় তুলতুলের। কোনো রকমে নিজেকে সামলে নেয়। পিটপিট করে চোখ খুলতেই অন্ধকার দেখতে পায়। মস্তিষ্কে চাপ দিতেই মনে পড়ে যায় ও সায়ানের সাথে আছে। কিন্তু লোকটা কোথায়?
ওকে একা ফেলে চলে গেছে কি? ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে তুলতুলের।
“শশুনছেন? আছেন আপনি?
কাঁপা কাঁপা গলায় ডাকে তুলতুল।
” আছি
গম্ভীর গলায় বলে সায়ান। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তুলতুল। ফট করে গাড়ির লাইট জ্বলে ওঠে। গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে সায়ান।
“এখানে কেনো আমরা? বাড়ি যাবো না?
তুলতুল জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে জিজ্ঞেস করে।
” হুমমম
ছোট করে জবাব দেয় সায়ান। খুশিতে লাফিয়ে ওঠে তুলতুল।
“সত্যি বাড়ি যাবো? কখনো যাবো? এখন আমি আমরা বাড়ির আশেপাশেি আছি? তাই হবে? এখনে গাড়ি কেনো দাঁড় করিয়েছেন? নিশ্চয় আপনার ভাঙা গাড়ি আরও ভেঙে গেছে। চলছে না? ইসসস কি একটা অবস্থা। তার জন্যই আপনার মন খারাপ তাই না? আপনার বাবা নিশ্চয় কান মলে দেবে? আহহহারে
এক কাজ করিয়েন আজকের রাতটা আমাদের বাড়িতে থেকে যাইয়েন। কালকে আমি বাবাকে বলবো গাড়ি ঠিক করে দিতে। তখন না হয় গাড়ি নিয়ে বাড়ি যাবেন।
আইডিয়াটা দারুণ না?
এক গাল হেসে বলে তুলতুল।
সায়ান ফোঁস করে শ্বাস টানে।
চলবে…………