আমার তুমি
পর্ব ২৯
#তানিশা সুলতান
সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে ইশাকে। মাথায় একটু আঘাত পেয়েছে। হাত পা ছিলে গেছে। বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। শান বুঝতে পারছে না কি করবে?
ইনজেকশন পুশ করানো হয়েছে ইশাকে। বিকেলের আগে ঘুম ভাঙবে না। খবরটা বাড়িতে জানানো উচিত কি উচিত না এটাই বুঝতে পারছে না। তাছাড়া ইশা এমনটা কেনো করলো? এটাও জানতে হবে। সবাই চলে আসলে এটা জানা সম্ভব হবে না।
তাই শান গালে হাত দিয়ে বসে আছে দৃষ্টি ইশার দিকে।কয়েক ঘন্টায় মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। ঠোঁটে বাম পাশটা কেটে গেছে। সেখানে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। বন্ধ চোখ দুটো ফুলে আছে।
কপালে ব্যান্ডেস করা হয়েছে।
শান হাত বুলিয়ে দেয় ইশার মাথায়। বুকটা খাঁ খাঁ করছে। খুব ভালো বেসে ফেলেছে মেয়েটাকে।
ইশাকে দেখতে দেখতে কখন বিকেল হয়ে গেলো বুঝতেই পারে নি শান।
ইশা চোখ পিটপিট করছে। শানের টনক নরে। হাত ঘড়ির দিকে তাকায়৷ বিকেল চারটা বেজে গেছে।
ইশা পিটপিট করে চোখ খুলে শানকে পাশে দেখে এক লাফে উঠে বসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শানকে।
শান প্রথমপাঠ হকচকিয়ে গেলেও পরে শান্ত হয়ে যায়। ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
ইশা শানকে জড়িয়ে হাউমাউ করপ কেঁদে ওঠে।
“এই ইশা কি হয়েছে কাঁদছো কেনো?
শান ইশাকে শান্ত করতে পারছে না। মেয়েটা অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে।
” না বললে বুঝবো কি করে? বল কি হয়েছে? আমি কি কিছু করেছি?
ইশার দুই গালে হাত দিয়ে ইশার মুখটা বুক থেকে তুলে মুখোমুখি আনে।
চোখের পানিতে সারা মুখ ভিজে গেছে।
ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে ইশা।
“বলো না কি হয়েছে?
” আমি খুব ভালোবাসি আপনাকে।
কাঁদতে কাঁদতে বলে ইশা।
“আমিও তো ভালোবাসি।
মুচকি হেসে বলে শান।
” তাহলে ওই মেয়েটার সাথে কি করছিলেন? কেনো গেছিলেন ওই মেয়েটার সাথে? আমি সয্য করতে পারি না।
বলতে বলতে ঢলে পড়ে ইশা। চোখ দুটো বন্ধ করে শানের বুকে নেতিয়ে পড়ে।
সাদা শার্টটা একদম হাঁটু পর্যন্ত পড়েছে, ভেজা চুল, তুলতুল শার্টের হাতা গুটিয়ে কনুই পর্যন্ত উঠিয়েছে। বুকের কাছের দুটো বোতাম খুলে কলারটা পেছনের দিকে খানিকটা দিয়েছে। গলায় আগে থেকেই স্বর্নের চেইন ছিলো।
তুলতুলের ঠোঁটা এমনিতেই গোলাপি। তারপর আবার লেকমি বারো ঘন্টার লিপস্টিক নিয়েছিলো তাই এখনো হালকা হালকা লিপস্টিক আছে।
কাল লেপ্টে গেছে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে এক বার পরখ করে নেয় তুলতুল। লজ্জা পেয়ে দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলে।
“একদম হিন্দি মুভির হিরোইনদের মতো লাগছে।
আস্তে আস্তে দরজা খুলে তুলতুল। রুমের ভেতর উঁকি দেয়। সায়ান রুমে নেই। যাক বাবা বাঁচা গেলো।
লম্বা দম টেনে তুলতুল বের হয়।
হাঁটতেও কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। আচ্ছা এই রকম ড্রেস শর্ট ড্রেস পড়ে পাখি সবার সামনে দিয়ে হাঁটে কেমনে? শিখতে হবে পাখির থেকে।
কয়েকটা পিক তো তুলতেই হবে। নাহলে আর শার্ট পড়ে লাভ কি হলো? কিন্তু ফোনটা কোথায় রেখেছে? বালিশের নিচে ফোনটা পেয়ে যায় তুলতুল
চট করে বিছানার পাশ থেকে ফোন নিয়ে ফটাফট কয়েকটা সেলফি তুলে নেয় তুলতুল।
তারপর চোখ যায় বেলকনিতে। সায়ান ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। তুলতুল মুখ বাঁকায়। নিশ্চয় পাখি মেডামের সাথেই কথা বলছে। ইচ্ছে করে দুটোরই নাক ফাটিয়ে দিতে। দুটোই বজ্জাত। লজ্জা শরম কিছুই নেই। একটা বিবাহিত ছেলের সাথে রিলেশন রাখার কোনো মানে হয়?
এদের রিলেশনটা ভাংতেই হবে।
গাল ফুলিয়ে তুলতুল ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে থাকে। আর বিরবির করে সায়ান আর পাখির গুষ্টি উদ্ধার করছে।
ফোনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ রুমের দিকে চোখ যায় সায়ানের। বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটানো শুরু হয়ে যায়। গলা শুকিয়ে আসছে। এই মেয়ে এটা কি পড়েছে?
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বিরক্তি নিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে তুলতুল। বিরবির করে কিছু বলছে। মাঝেমধ্যে আবার ব্যাঙ্গ করে কথা বলছে। ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। শার্টের অনেকটা আংশ ভিজে গেছে। দৃশ্য মান হয়েছে ধপধবে সাদা পিঠের কিছুটা অংশ। চুল গুলো সামনে নেওয়াতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
ঢোক গিলে সায়ান।
” আমাকে পাগল না করে ছাড়বেনা এই ইডিয়েট টা।
কপালে দুই আঙুল দিয়ে স্মেইল করতে করতে বিরবির করে বলে সায়ান।
ফোনের ওপারে কেউ ছিলো এটা ভুলেই যায় সায়ান।তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আনুমানিক সাইড বাটনে চাপ দিয়ে ফোন বন্ধ করে ফেলে।
বেলকনিতে থাকা ছোট দোলনার ওপর ফোনটা ছুড়ে ফেলে।
একটু একটু করে তুলতুলের দিকে এগিয়ে যায়। তুলতুল খুব মনোযোগ দিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। কেমন এলোমেলো লাগছে সায়ানের। নেশা নেশা ধরে যাচ্ছে।
তুলতুলের পেছনে দাঁড়িয়ে যায় সায়ান। এক দৃষ্টিতে তুলতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
অদ্ভুত সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। একদম সিগ্ধ। এই নিষ্পাপ মুখটা দিকে তাকিয়ে ভুলেই যায় সায়ান মনোমালিন্যের কথা।
পেছনে সায়ানের উপস্থিত টের পেতেই হাত থেমে যায় তুলতুলের। চিরুনি নামিয়ে সায়ানের দিকে ঘুরে দাঁড়ায় তুলতুল। বুকটা টিপটিপ করছে। হার্ট জোরে জোরে লাফাচ্ছে।
সায়ান তুলতুলের কোমর জরিয়ে ধরে। কেঁপে ওঠে তুলতুল।
“এমনটা না করলেও পারতিস।
সায়ান ঘোর লাগা কন্ঠে বলে।
” কককি করছেন?
তুলতুল থেমে থেমে বলে।
“কককি করছি?
সায়ান তুলতুলের মুখের কাছাকাছি মুখ নিয়ে বলে।
” চচিপকে যাচ্ছেন কেনো?
ঢোক গিলে বলে তুলতুল।
“চোখের সামনে হট একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তো আমি চিপকাবো না?
মুচকি হেসে বলে সায়ান।
” দ দেখুন
তুলতুল কোমর থেকে সায়ানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে।
“সবই তো দেখে নিয়েছি। এবার কি কলিজাটা বের করে দেখাবি?
বাঁকা হেসে বলে সায়ান।
” বাজে লোক একটা
তুলতুল নিচের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে।
“আচ্ছা?
সায়ান কোলে তুলে নেয় তুলতুলকে। চোখ বড়বড় করে তাকায় তুলতুল। দুই ঠোঁটের মধ্যে কিঞ্চিত ফাঁকা হয়ে যায়। হঠাৎ এতো রোমান্টিক হলো কোথা থেকে?
তুলতুল মনে মনে বলে।
সায়ান তুলতুলের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলায়। তুলতুল লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে। ইসসস কি লজ্জা। ইচ্ছে করছে ফ্লোর ভেঙে এর ভেতরে ঢুকে যাই।
সায়ানের নিশ্বাস তুলতুলের মুখে আঁচড়ে পড়ছে।
“ছাড়ুন প্লিজ।
তুলতুল হাসফাস করে বলে।
” ইচ্ছে করছে না।
সায়ান ফিসফিস করে বলে।
“ভুলভাল কিছু করতে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
তুলতুলের শ্বাস আটকে আসছে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
” প্লিজ
অস্ফুণ কন্ঠে বলে তুলতুল।
“প্লিজ
সায়ান ঘোর লাগা কন্ঠে বলে।
তুলতুলের ওষ্ঠদ্বয়ের কাছে নিজের ওষ্ঠদ্বয় নিয়ে নেয় সায়ান।
” পপপাখিকে বলে দেবো।
তুলতুল সায়ানের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।
ধপ করে চোখ খুলে সায়ান। মুহুর্তেই চোয়াল শক্ত করে ফেলে।
বিছানায় ধাপ করে ফেলে দেয় তুলতুলকে।
তুলতুল নিজেকে গুটিয়ে নেয়। কোম্বল দিয়ে গলা ওবদি ঢেকে ফেলে।
সায়ান বেলকনি থেকে ফোন এনে অন করে। তুলতুলের পাশে বসে। তুলতুল ভয়ে সিঁটিয়ে গেছে। কি করতে চাইছে এখন সায়ান?
ফোন অন হতেই সায়ান কাউকে কল করে।
“পাখি এখন ই আমার রুমে চলে এসো। লেট যেনো না হয়।
বলেই কল কেটে দেয়।
” এবার যা হওয়ার পাখির সামনেই হবে।
তুলতুলের দিকে তাকিয়ে বলে সায়ান।
তুলতুল বড়বড় চোখ করে তাকায় সায়ানের দিকে।
এবার কি পাখির সামনে উল্টাপাল্টা কিছু
ছি ছি ছি ছি
কি হবে এবার? এই লজ্জার হাত থেকে বাঁচবো কি করে আমি?
চলবে…….