আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৬
তানিশা সুলতানা
“ঢং দেখে বাঁচি না। তুমি আর আম্মুর পরে আমার জীবনে আর কোনো নারীর অস্তিত্ব নেই। জানা আছে আমার। ফ্রেন্ড লিস্টে কতো শত মেয়ে তার হিসেব নেই। আমাকে বোকা মনে করিয়েন না। আমি ভীষণ চালাক।
সায়ানের বুকের দিকে তাকিয়ে বলে তুলতুল। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সায়ান। ছেড়ে দেয় তুলতুলের কোমর।
” খেতে দিলে দে। নাহয় সামনে থেকে ফুট।
খাটে বসে বলে সায়ান। তুলতুল মুখ বাঁ কায়
“বেরিয়ে গেলো তো আসল চেহারা? ভালো টালো বাসা তো দুরের কথা পছন্দও করেন না আপনি আমায়। ঘরে সুন্দরী বউ রেখে আপনার নজর বাইরে।বলি আমি কি কম সুন্দর? কলেজের কত শত ছেলে আমার পেছনে ঘুর ঘুর করে তার হিসেব আমি নিজেও জানি না। আর উনি আসছে আমাকে ভাব দেখাতে।
সায়ান মহা বিরক্ত। দুই হাতে চুল খামচে ধরে। ভীষণ ক্লান্ত সে। অনেকটা জার্নি করে এসেছে। খিধেও পেয়েছে ভীষণ। দুপুরে খাওয়া হয় নি। তারপর এখন বউয়ের বকবকানি।
” বিরক্ত হচ্ছেন আমার ওপর? হবেনই তো। তখন ঝোঁকের বসে বিয়ে করেছেন। এখন আফসোস করছেন? তাই না? আমি জানি তো। হারে হারে চিনি আপনাকে। দুমুখো সাপ আপনি। আমার হলো অকালে কপাল পুড়লো। হবে কি এখন আমার? সারাজীবন এখন স্বামীর নিকনিকানি দেখতে হবে। আমিও কম চালাক না। ডিভোর্স দিয়ে দেবো আমি। বলে দিলাম।
সায়ান ভ্রু কুচকে তুলতুলের দিকে তাকায়। তুলতুল রাগে গজগজ করতে করতে খাবার বাড়তে যায়। সায়ান তুলতুলের ফোনটা হাতে নিয়ে নিজের আইডি লগইন করে দেয়।
“আইডি লগইন করে দিয়েছি। আর আমার একটাই আইডি। সিম তোরটা নিয়ে আমারটা তোকে দিয়ে যাবো।
ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলে সায়ান। তুলতুলের মুখটা খুশিতে চিকচিক করে ওঠে। প্রিয় মানুষটিকে হারানোর ভয় ঢুকে গেছে ওর মনে। সারাক্ষণ মনে হয় সায়ানের যদি অন্য কাউকে ভালো লেগে যায়? তখন কি হবে? যদি কখনো মুখ ফিরিয়ে নেয় তুলতুলের থেকে? বাঁচবে কি করে?
তারাহুরো করে খাবার সাজিয়ে ফেলে তুলতুল। বিরিয়ানি হাতে তুলে ফু দিতে থাকে ঠান্ডা হওয়ার জন্য।
তখনই সায়ান বের হয় মুখ মুছতে মুছতে।
” জলদি বসুন। আমি খাইয়ে দেবো। এখন যদি বলেন না “তুলতুল তোর হাতে খাবো না আমি” ট্রাস্ট মি আগুন জ্বালিয়ে দেবো আমি। আমার হাতেই খেতে হবে। আমি আপনার বউ। আর বউয়ের হাতেই বরদের খেতে হয়। যদি আপনার ঘৃণা লাগে না? তাহলে একদম নাক মুছবো আপনার নাকে। বলে দিলাম।
গাল ফুলিয়ে বলে তুলতুল। সায়ান বাঁকা হেসে তোয়ালে রেখে তুলতুলের পাশে বসে। তুলতুল মুখের সামনে খাবার ধরে। মুখে নেয় তুলতুল।
“এখন একদম বলবেন না বিরিয়ানি ভালো হয় নি। বললে মে*রে পুঁ*তে দেবো একদম। আমি কষ্ট করে রান্না করেছি মানে ভালো না হলেও ভালো হয়েছে। ভালোবেসে রান্না করলে সব খাবারই ভালো লাগে।
সায়ানকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলে তুলতুল।
” মুখটা বন্ধ রাখ। আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে৷
সায়ান খাবার চিঁবতে চিবতে বলে। তুলতুল ফুঁসে ওঠে।
“আমার কথায়,এখন মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে? হবেই তো। দু’চোখে সয্য করতে পারেন না আপনি আমায়। বাইরে নজর পড়েছে কি না? এখন তো ঘরের বউ
বাকিটা শেষ করতে পারে না তুলতুল। তার আগেই সায়ান তুলতুলের ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা চেপে ধরে।
চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে ফেলে তুলতুল। হাতে থাকা প্লেটটা শক্ত করে চেপে ধরে। এঁটো হাতটা চলে যায় সায়ানের পিঠে।
সায়ান প্রথমে সফটলি চু*মু খেলেও পরে খুব জোরে কা*মড়ে দেয়। তুলতুলের চোখ খুলে যায়। ছোটার জন্য ছটফট করতে থাকে। সায়ানের পিঠে কি*ল থা*প্প*ড় দিতে থাকে।
তাতে সায়ান আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরে। হাত গুলো নিষিদ্ধ জায়গায় চলে যায়। অবাধ্য হয়ে যায় ছোঁয়া গুলো। শিউরে ওঠে তুলতুল। হাত পায়ের কাঁপন বেরে যায়।
খানিকক্ষণ পরে সায়ান তুলতুলকে ছেড়ে দেয়। হাঁপাতে থাকে তুলতুল। সায়ান হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁট মুছে নেয়। তুলতুল মাথা নিচু করে জোরে জোরে শ্বাস টানছে।
” রা*ক্ষস একটা। খে*য়ে ফেলতে চাইছিলেন না কি। মানুষের র*ক্ত চু*ষে খাওয়াই তো ওনার কাজ। আর কিছু পারে না কি?
বিরবির করে বলতে থাকে তুলতুল।
“কি বিরবির করছিস? সাহস থাকলে জোরে বল।
সায়ান আড়মোড়া ভেঙে বলে। তুলতুল দাঁত কটমট করে তাকায়।
” জলদি খাওয়ানো শেষ কর। আমার রেস্ট দরকার। এতোটা জার্নি করে এসেও যতটা না ক্লান্ত হয়েছি তার থেকেও বেশি ক্লান্ত হয়ে গেছি তোর বকবকানিতে। আমার কি মনে হয় বল তো?
আল্লাহ তোকে ছাগল বানাতে চাইছিলো কিন্তু অনফর্চুনেটলি মানুষ হয়ে গেছিস।
তুলতুল রাগে ফুস ফুঁস করছে। কিন্তু কিছু বলবে না। কেনো কথা বলবে এই রা*ক্ষসের সাথে?
তুলতুল বড় বড় লোকমা করে সায়ানের মুখে ঢোকাতে থাকে। আর সায়ান টপাটপ গিলতে থাকে।
বিরিয়ানিটা যে খুব ভালো হয়েছে তা না। আনার খুব খারাপ ও হয় নি। গোল মরিচটা একটু বেশি হয়েছে। এইটুকুই সমস্যা। তাছাড়া বাকি সবটা ঠিকঠাক।
খাওয়া শেষে সায়ান জোরে ঢেকুর তুলে। তুলতুল মুখ বাঁকিয়ে নিজে খেতে শুরু করে। ততখনে সায়ান টানটান হয়ে শুয়ে পড়েছে।।
খাওয়া শেষে সব কিছু গুছিয়ে রেখে খাটের এক কোণায় বসে তুলতুল। পেটের মধ্যে কথা গুলো গজগজ করছে কিন্তু বলতে পারছে না। এই লোকটা ঠোঁট আর হাতে কোনো কন্ট্রোল নেই। কখন আবার কি করে বসে কে জানে?
“লাইট বন্ধ করে আমার পাশে শুয়ে পড়।
চোখ বন্ধ করে শরীরে কম্বল জড়িয়ে বলে সায়ান।
” আমি কারো চাকর না যে লাইট বন্ধ করার হুকুম দিবে আর আমি করবো।
মুখ বাঁকিয়ে বলে তুলতুল।
“আবার চুমু খেতে ইচ্ছে হইছে?
চোখ বন্ধ করে কোলবালিশ জড়িয়ে বলে সায়ান। তুলতুল দাঁত কটমট করে লাইট অফ করে দিয়ে আবার এসে বসে।
সায়ান এক টান দিয়ে নিজের পাশে শুয়িয়ে দেয় তুলতুলকে। তুলতুলের ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দেয়।
” আমাকে নিয়ে কখনো জেলাস হবি না। কাজ না থাকলে বসে বসে মুড়ি খাবি।
তুলতুল নাক ফুলিয়ে কিছু বলতে যায়। সায়ান তার আগেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
“কোনো কথা না। কন্ট্রোললেস হয়ে যাবো।
ফিসফিসে বলে সায়ান। চুপ হয়ে তুলতুল।
সকাল সকাল মনটা বিষন্ন হয়ে গেছে তুলতুলের। সায়ান চলে গেছে ঘন্টা খানিক হবে। সেই থেকেই তুলতুল বসে আছে। ফজরের আজানের সময়ই চলে গেছে সায়ান। আর একটু থাকলে কি হতো? কি এতো কাজ ওনার?
” তুলতুল ভাইয়া উঠলো?
রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে সুমু। তুলতুল মন খারাপ করে তাকায় সুমুর দিকে।
“ভাইয়া কোথায়?
সায়ানকে না দেখে বলে সুমু।
” তার কি আর আমার কাছে দুদণ্ড বসার সময় আছে? সে একজন সেলিব্রিটি লোক। তার কতো কাজ। আমার কাছে থাকবে?
অভিমানের সুরে বলে তুলতুল। সুমু বুঝতে পারে ঘটনা।
“তুলতুল মন খারাপ করো না। আবার আসবে।
” কে মন খারাপ করছে? আমি কারো জন্য মন খারাপ করি না। সে আমার কেউ না। তার কথা ভাবার সময় নাই আমার।
বলতে বলতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় তুলতুল।সুমু মুচকি হাসে।
চলবে