আমার তুমি ২ পর্ব ৩৯
তানিশা সুলতানা
এম্বুলেন্স এ যাবে না সায়ান। সে জিপ এ করে যাবে। তার কথা সে অসুস্থ না। তাহলে এম্বুলেন্সে কেনো যাবে? এ নিয়েও সবার আপত্তি কিন্তু সায়ান সেটা শুনবে না।
তাকে হুইল চেয়ারে বসানো হয়েছে। বসতে খুব কষ্ট হচ্ছে তবুও সে একটা আওয়াজও করছে না।
গাড়িতে পা মেলে দিয়ে সালমার কোলে মাথা রাখে সায়ান।
পেছনে বসেছে হাসিব হিমু হামিদা মনি। ড্রাইভ করছে সুলাইমান আর তার পাশে সালমান বসেছে।
“সব কিছুতেই তোমার ছেলের বাড়াবাড়ি। ওর কথায় সব হবে না কি?
সালমান রেগে বলে।
” তুমি চুপ করে থাকো
চোখ রাঙিয়ে বলে সালমা।
“হ্যাঁ সব সময় তো চুপ করেই থাকি। আমি কথা বললে তো আর ছেলে মেয়ে এতো বেহায়া হতো না। দুটোই একদম বখে গেছে। সবটা তোমার জন্য।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সালমান। সালমা বেগম রেগে গাল ফুলায়।
” তাহলে বলে দাও। আমি আমার ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যাবো।
সালমান চুপসে যায়।
“বউ ছাড়া থাকার কষ্ট তুমি কি বুঝবা? তোমার বউ তো সারাক্ষণ সাথে সাথে থাকে তাই তুমি বুঝবা না।
সায়ান আড়মোড়া ভেঙে বলে। সালমান একদম চুপসে যায়। কাচুমাচু হয়ে বসে। হিমু কেঁশে ওঠে।
” বেয়াদব ছেলে।
বিরবির করে বলে সালমান।
সুমু আর তন্ময় বাসে করে যাচ্ছে। ওদের গাড়িতে যাবে না তন্ময়।
বাসে পাশাপাশি বসে আছে তন্ময় আর সুমু। তন্ময় একটু পরপর তাকাচ্ছে সুমুর দিকে। ইচ্ছে করছে সুমুর হাতটা শক্ত করে ধরতে। কিন্তু পারছে না। মনের মধ্যে দ্বিধাবোধ কাজ করছে।
“সুমু
তন্ময় ডাকে। সুমু জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলো তন্ময়ের ডাকে ওর দিকে তাকায়।
” কিছু বলবেন?
“আমড়া খাবে? ভালো লাগবে।
একটু হাসার চেষ্টা করে বলে তন্ময়। সুমু মাথা নারায়। খুশি হয় তন্ময়। একটা আমড়া কিনে। সুমুর হাতে দেয়। সুমু মন দিয়ে আমড়া খেতে থাকে।
” তোমায় ভীষণ মিস করেছি আমি।
তন্ময় হঠাৎ করেই বলে। চমকে ওঠে সুমু। মুখে আমড়া পুরে তাকায় তন্ময়ের দিকে।
তন্ময় অনেকটা সাহস নিয়ে সুমুর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নেয়। আরেক হাত দিয়ে সুমুর মাথাটা নিজের কাঁধের ওপর রাখে।
“প্রতিটা সেকেন্ডে অনুভব করেছি তোমায়।
সুমু মনে মনে খুশি হয় কিন্তু প্রকাশ করে না। চুপচাপ মুহুর্তটা অনুভব করতে থাকে।
” তুমি আমার মিস করেছো?
তন্ময় জিজ্ঞেস করে।
“যার পুরো চিন্তা ভাবনা জুড়েই আপনি থাকে সে আপনাকে মিস করবে হা এটা হতে পারে?
তন্ময় মুচকি হাসে। ঠোঁট ছুঁয়ায় সুমুর মাথায়।
সায়ানের জিপ মানিকগঞ্জে ঢুকতেই সায়ান বলে ওঠে সে তুলতুলদের বাড়িতে যাবে
গাড়ি থামিয়ে ফেলে সুলাইমান।
” ভাই কি বলছিস তুই? এই অবস্থায় তুলতুলদের বাড়িতে যাবি কিভাবে?
হাসিব বলে।
“যেভাবে এতোটা পথ এসেছি সেভাবেই যাবো।
সায়ানের স্পষ্ট জবাব। বিরক্ত হয় সালমান।
” তোমার দুটো পা ভে*ঙে ঝুলে আছে। কারো সাহায্য ছাড়া একটু নরতেও পারো না। এই অবস্থায় কেউ আত্নীয়ের বাড়ি যায় না ঝাঁড়ু পিটা করে তাড়াবে ওনারা।
রেগে বলে সালমান।
“তাহলে আমার বউকে এনে দাও। ওকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারছি না।
লজ্জা পেয়ে যায় সালমান। মনি আর হামিদা মুখে আঁচল দিয়ে বলে আছে।
সায়ানের লাগাম ছাড়া কথাবার্তা ভাসুরের সামনে শুনে তারা লজ্জা পেয়ে যাচ্ছে।
” হাসিব ওই মেয়েকে আমাদের বাড়িতে আনার ব্যবস্থা করো।
সুলাইমান বলে।
“কিন্তু ছোট বাবা। তুলতুল তো তন্ময়ের সাথেই হাসপাতালে আসলো না। আমার সাথেও তো মনে হয় আসবে না।
মাথা নিচু করে বলে হাসিব।
” আসবে না। ওকে একবার সামনে পাই আমি। চাপকে যদি ওর দাঁত ফেলে না দিছি না আমিও সায়ান না। আমার সাথে ভাব দেখানো হচ্ছে? পা ভে*ঙে রেখে দেবো ওর।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।
“তোমরা যাও। আমি ওই মেয়েকে নিয়ে যাবো।
গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলে সালমান। হাসিবও নামে।
তুলতুল নিজের রুমে বসে পড়ছে। রাত বাজে দশটা। একটু আগে তন্ময় আর সুমু বাড়িতে ফিরেছে। তুলতুলের সাথে দেখা করে গেছে।
” তুলতুল হিমু কল করেছিলো। তোর শশুড় মশাই আসছে তোকে নিতে। রেডি হয়ে থাকতে বলেছে।
তনু তুলতুলের পাশে দাঁড়িয়ে বলে। তুলতুল বইয়ের দিকেই মনোযোগ রাখে। তনুর কথা কানেই তুলে নি। বিরক্ত হয় তনু। তুলতুলের হাত থেকে বই নিয়ে রাখে।
“পবলেম টা কি তোর? এমনিতে তো সায়ান ভাইয়াকে খুব বকিস। এখম এতো অভিমান কিসের? তোকে জানালে কি এমন হতো? তুই কি সারিয়ে তুলতে পারতিস? উল্টে হাইপার হয়ে সবার টেনশন বাড়িতে দিতিস।
” আজিব তো। তোকে কে বললো আমি অভিমান করেছি? আমি এসব বুঝি না কি? ওনার প্রতি আমার এতোটুকুও ইন্টারেস্ট নেই।
তুলতুল আবার বই খুলে বলে।
“তাহলে এভাবে চুপচাপ হয়ে গেলি কেনো? কি হয়েছে? এভাবে তোকে দেখতে ভাল্লাগছে না আমার।
” আমি বেশি কথা বললেও তোর পবলেম আবার চুপ থাকলেও তোর পবলেম। করতে বলিস টা কি আমায়?
বিরক্ত হয়ে বলে তুলতুল। তনু তুলতুলের দুই গালে হাত রাখে।
“আর কখনো বকবো না তোকে। একটু স্বাভাবিক হয়ে যা তুই। ভীষণ কষ্ট হয় রে। আগের মতো হাসিস না। কথা বলিস না। এভাবে ভাল্লাগছেনা তোকে দেখতে। প্লিজ বোনু
তুলতুল তনুর হাতের ওপর হাত রাখে।
” চল খাবো আমরা।
তনু হেসে ফেলে।
সাড়ে দশটার দিকে সালমান আর হাসিব তুলতুলদের বাড়িতে এসে পৌছায়। সুমু আর আছিয়া অনেক কিছুই রান্না করেছে। কিন্তু সালমান খাবে না। সে তুলতুলকে নিয়েই চলে যাবে।
তুলতুল পড়ছিলো এমন সময় পাপন ডাকে তুলতুলকে। বই রেখে মাথায় ঘোমটা টেনে বসার ঘরে যায় তুলতুল। সালমান বসে আছে আর তার পাশে হাসিব।
তুলতুল গিয়ে সালাম দেয়।
“রেডি হয়ে নাও। তোমাকে নিয়ে যাবো আমি।
” কিন্তু আংকেল। কালকে আমার এক্সাম আছে। আমি যেতে পারবো না।
তুলতুল মাথা নিচু করে নরম সুরে বলে।
“সমস্যা হবে না। হাসিব পৌঁছে দেবে তোমায়।
” এক্সাম শেষ হলে যাবো আমি।
তুলতুল স্পষ্ট গলায় বলে।
“দেখো আমার ছেলেটা অসুস্থ। তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়তে চাই ছিলো না। জোর করে চলে এসেছে। তুমি যদি আজকে তন্ময়ের সাথেই যেতে তাহলে কখনোই আমার ছেলে এই অবস্থায় হাসপাতাল ছাড়তো না। কতোটা কষ্ট হয়েছে ওর জার্নি করতে কোনো আইডিয়া আছে তোমার?
এখনও যদি তুমি না যাও তাহলে আমার ছেলে এখনই ছুটে আসবে তোমাদের বাড়িতে। সেটা ভালো হবে? তুমি কি সেটাই চাও?
সালমানের কন্ঠে রাগ স্পষ্ট। তুলতুল চুপচাপ নিজের রুমে চলে যায়। জামা পাল্টে কলেজ ব্যাগে দুটো জামা ভরে বেরিয়ে আসে।
যাওয়ার সময় মা বাবা তন্ময় সুমু কারো দিকে এক পলকও তাকায় না। চুপচাপ সালমানের আগে আগে বেরিয়ে যায়।
চলবে…….