আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৪০
তানিশা সুলতানা
সায়ানকে দেখে তুলতুলের কান্না পায়। কিন্তু কান্না করে না। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকায়। কোলবালিশের ওপর দুটো পা তুলে পেছনে বালিশ দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে।
সায়ানকে ঘিরে আছে হাসিব হিমু সোনা আর খুকি বেগম। ওরা এটা সেটা নিয়ে কথা বলে যাচ্ছে আর সায়ান চোখ বন্ধ করে আছে।
তুলতুল দরজা সামনে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। দেখতে থাকে সায়ানকে। অনেকটা শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। সুন্দর দাঁড়ি গুলো কেটে ফেলা হয়েছে। চুলগুলোও একদম ছোটছোট করা। পরনের সাদা শার্টের বোতাম খোলা। বুকে লম্বা সাদা ব্যান্ডেজ দিয়ে মোড়ানো।
হাঁটুর ওপর ওবদি শর্ট প্যান্ট পড়া। হাঁটু সহ পায়ের পাতা পর্যন্ত ব্যান্ডেজ।
এতো মারাক্তক ভাবে আঘাত পেয়েছে লোকটা? না চাইতেও চোখের কোণে পানি জমে তুলতুলের। সাথে সাথে হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে ফেলে। কাঁধের ব্যাগটা শক্ত করে চেপে ধরে।
“এখনো ভেতরে যাও নি যে?
চমকে ওঠে তুলতুল। সায়ান ধপ করে চোখ খুলে দরজার দিকে তাকায়। আপাতত সবার নজর দরজার দিকে। তুলতুল মাথা নিচু করে পেছনে ফেরে। সালমা হাতে বাটি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
” এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
তুলতুলের থেকে উওর না পেয়ে আবারও জিজ্ঞেস করে সালমা।
“এই তো যাচ্ছি আন্টি।
রিনরিনিয়ে বলে বড়বড় পা ফেলে ভেতরে ঢুকে তুলতুল। সায়ানের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে। ইসস কতোদিন পরে এই মুখটা দেখতে পেলো। সালমাও তুলতুলের পেছনে ঢুকে একদম সায়ানের পাশে সুপের বাটি রাখে।
” আরে তুলতুল যে, অবশেষে আসলে?
হিমু এক গাল হেসে বলে।
তুলতুল কাচুমাচু হয়ে যায়। মাথা উঁচু করার সাহস নেই।
“আর আসলো? কতো কীর্তি করে আনতে হলো। হঠাৎ এতো বড় আর জেদি হলে কিভাবে তুলতুল? আগে তো এমন ছিলে না?
হাসিব বলে। তুলতুলের রাগ হয়। এসব প্রশ্ন করতেই হবে? বুঝতে পারছে না তুলতুল নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে? প্রশ্ন করে আরও নার্ভাস করে দিতে হবে? ইচ্ছে করছে কড়া কিছু কথা শুনিয়ে দিতে। কিন্তু মুখ খোলা যাবে না। সামনেই আ*জরা*ইল বসে আছে।
” তো কীর্তি করবে না? লাই পেয়ে পেয়ে তো মাথায় উঠে গেছে। জানেই তো আমি বেকে বসলে আমার শশুড় বাড়ির সবাই পা জড়িয়ে ধরবে। তাই তো এমন ঢং করে।
মুখ বাঁকিয়ে বলে খুকি। তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ভীষণ বিরক্ত।
“আহহ মা হচ্ছে টা কি? আমার আব্বা অসুস্থ। আপনি চলুন এখান থেকে।
সালমা সায়ানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে।
” হ্যাঁ তাই তো
তোমার আব্বা অসুস্থ। এখন যে যদি বলে এই মাইয়াকে মাথাই তুলে নাচতে সেটাই করতে হবে আমাদের। আর তো কিচ্ছু করার নাই।
খেঁকে উঠে বলে খুকি।
“সত্যিই আন্টি। তুলতুল হাসপাতালেই যদি সায়ানকে দেখতে যেতো তাহলে তো আর এখন বাড়িতে আসতো না। তাই না? কতোটা রিক্সে এসেছে বেচারা।
সোনা বলে ওঠে।
তুলতুল হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। সায়ান সেটা খেয়াল করে মুচকি হাসে।
” সোনা তুমি বুঝবা না। তুলা হাসপাতালে গেলেও আমি বাড়ি চলে আসতাম। কেনো বলোতো? হাসপাতালে তো আর প্রাইভেসি নাই। যখন তখন ডাক্তার নার্স চলে আসে। তুলার সাথে তো মন খুলে প্রেম করতে পারতাম না বলো?
এতোদিন বউ ছাড়া থাকা যায় বলো?
লজ্জায় কান গরম হয়ে যায় তুলতুলের। চোখ বন্ধ করে কয়েকবার ছি বলে ওঠে মনে মনে। সোনা হকচকিয়ে যায়। সালমা হাসিব আর হিমু বিনা বাক্যে রুম ত্যাগ করে। খুকি খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে।
“দিনকে দিন চরম ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস তুই।
খুকি রেগে বলে।
” ওহহহ ডার্লিং এটাকে ফাজিল বলে না রোমান্টিক বলে। এরকম মধুর মতো মিষ্টি বউ থাকলে আমার মতো মৌমাছি বরের মধু খাওয়ার লোভ চরম লেভেলের হবে না বলো? তারপর আমাদের আবার মধুমাস চলছে।
খুকি সায়ানকে চোখ রাঙিয়ে চলে যায়। সোনা দুই কানে হাত দিয়ে এক দৌড় দেয়। তুলতুল চোখ মুখ খিঁচে দুই হাতে শক্ত করে ব্যাগ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। এতো বেহায়া মানুষ হয়?
“এতো ফিলিং উড়াতে হবে না। জলদি স্বাভাবিক হয়ে আমার পাশে এসে বস।
ধমক দিয়ে বলে সায়ান। মুহুর্তেই ফিলিং উঠে যায়। চোখ খুলে মুখ বাঁকিয়ে নিজের ব্যাগ সায়ানের পড়ার টেবিলের ওপর রাখে। তারপর চেয়ার টেনে সায়ানের থেকে খানিকটা দুরে বসে।
বিরক্ত হয় সায়ান।
” তুই কি আসবি? না কি এই ভাঙা পা নিয়েই আমাকে যেতে হবে তোকে আনতে?
আড়মোড়া ভেঙে বলে সায়ান। তুলতুল দাঁতে দাঁত চেপে সায়ানের পাশে বসে।
সায়ান হাত বাড়িয়ে তুলতুলের গাল চেপে ধরে শক্ত করে। সায়ান ব্যাথা পায়।
“খুব সাহস তোর তাই না? আমাকে এটিটিউট দেখাস তাই না? গাল ভে*ঙে একদম পেটে ঢুকিয়ে দেবো।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে। তুলতুল সায়ানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না।
চলবে
ছোট্ট হওয়ার জন্য আর দেরিতে দেওয়ার জন্য দুঃখিত। এখন থেকে রেগুলার দেবো।