আমার তুমি ২ পর্ব ৪৩
তানিশা সুলতানা
“আআপনি কে? না মানে আমি কে?না মানে এটা কোথায়? ইয়ে মানে আসলে
সুমু মিষ্টি হেসে তন্ময়ের দিকে এগোতে থাকে। আর তন্ময় শুকনো ঢোক গিলে পিছতে পিছতে বলে। বেচারা ভীষণ নার্ভাস হয়ে গেছে।
” আপনি তন্ময়। আমি সুমু। আর এটা আমাদের বাসর ঘর। আপনি চিনতে পারছেন না?
সুমু ভ্রু কুচকে বলে। তন্ময় হাতের উল্টো পিঠে মাথার ঘাম মুছে ফেলে।
“আমি পানি খাবো।
সুমু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। তন্ময়ের হাত ধরে খাটে বসায়। তারপর টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাস এনে তন্ময়ের হাতে ধরিয়ে দেয়।
তন্ময় এক নিশ্বাসে পুরো পানিটা শেষ করে ফেলে। সুমু তন্ময়ের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে আবার আগের জায়গায় রেখে আসে।
” আমার দিকে ভালো করে তাকাচ্ছেন না কেনো?
তন্ময়ের পাশে বসে বলে সুমু।
“না তাকিয়েই মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাকালে আমি ফিনিস হয়ে যাবো।
বিরবির করে বলে তন্ময়। কিন্তু শুনে ফেলে সুমু।
” ফিনিস হতে পবলেম কি? আপনারই তো বউ।
মুচকি হেসে তন্ময়ের হাতের ওপর হাত রেখে বলে সুমু। তন্ময় শুকনো ঢোক গিলে।
“আজকে রোজ ডে। একটা গোলাপও তো আনতে পারতেন আমার জন্য। আনেন নি কেনো? বউকে কিছু দিতে ইচ্ছে করে না? এতো কিপ্টা কেনো আপনি?
মুখ গোমড়া করে বলে সুমু।
” এএএনেছি তো
রিনরিনিয়ে বলে তন্ময়।
“সত্যি? (খুশিতে লাফিয়ে উঠে) কোথায় আমার গোলাপ?
” খেয়ে তারপর দেই?
তন্ময় সুমুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।
“আচ্ছা
সুমু নিজের ফোনটা হাতটা নিয়ে তনুকে মেসেজ করে। সাথে সাথে দরজায় নক করে তনু। সুমু উঠে গিয়ে দরজা খুলে খাবারের ট্রে নেয়।
” ফ্রেশ হয়ে আসুন। খাবার বারছি আমি।
তন্ময় ফ্রেশ হতে চলে যায়। সুমু খাবার সাজাতে থাকে।
আজকে রোজ ডে। সায়ান নিজের রুম গোলাপে গোলাপে সাজিয়ে ফেলেছে। গোলাপের গন্ধে ম ম করছে চারপাশ। সায়ান আজকে নিজের চেষ্টায় হুইল চেয়ারেও বসতে পেরেছে। ব্যান্ডেজ পাল্টে দিয়ে গেছে আজকে।
তুলতুল এক্সাম শেষে বাড়ি ফিরে পুরো অবাক হয়ে যায়। এতো গোলাপ পেলো কোথায়?
সায়ানকে বিছানায় না দেখে আরও অবাক হয়। কোথায় গেলো লোকটা?
খানিকটা ভয়ও পেয়ে যায় তুলতুল। হাতে ফাইল নামিয়ে ওয়াশরুম চেক করে। নাহহ ওখানেও নেই।
“শুনছেন? কোথায় আপনি?
তুলতুল ডাকে।
” এখানে আমি।
বেলকানি থেকে বলে সায়ান। তুলতুল দৌড়ে বেলকনিতে চলে যায়। সায়ান দিব্যি হুইল চেয়ারে বসে কফি খাচ্ছে। বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস টানে তুলতুল।
“সমস্যা কি আপনার? একা একা এখানে কেনো এসেছেন? আস্তে আস্তে সুস্থ হচ্ছেন এটা ভালো লাগছে না। তাই না? আমার ঠ্যাং ভাং*তে ইচ্ছে করছে? তাহলে আমাকে বলুন। একদম হাঁ”টু থেকে আলাদা করে দেই।
সায়ান হাসে।
” এভাবে মুখে মুখে তর্ক করতে থাকলে তো তোকে আমি বৃন্দাবন পাঠিয়ে দেবো।
“পাঠান না। ওইখানেই থাকতে চাই আমি। এখানে থাকতে আমারও ভালো লাগছে না। এতো এতো ঝামেলা সত্যিই আর ভালো লাগছে না। একদম ত্যানাত্যানা করে দিচ্ছেন জীবনটাকে। আর
বাকিটা বলার আগেই সায়ান তুলতুলের হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
তুলতুল বুঝে উঠতেও পারে না কি হয়ে গেলো। বুঝতে সময় লেগে যায় কয়েক সেকেন্ড। বড়বড় করে থাকা চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। দুই হাত চলে যায় সায়ানের চুলে। সায়ান এক হাত তুলতুলের কোমরে দিয়েছে তো আরেক হাত চুলের ভাজে।
কয়েক মিনিট পরে তুলতুল ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে। কিন্তু বেচারা ছাড়া পায় না। শেষমেশ বাধ্য হয়ে সায়ানের বুকের কাটা জায়গায় আস্তে করে চিমটি কাটে।।সায়ান ব্যাথা পেয়ে ছেড়ে দেয়। তুলতুল লাফিয়ে খানিকটা দুরে সরে গিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকা। আর একটু থাকলে বোধহয় জানটা বেরিয়ে যেতো। সায়ান বুড়ো আঙুল দিয়ে নিজের ঠোঁট মুছে তুলতুলের দিকে কপাল কুঁচকে তাকায়।
” বেয়াদব লোক। আপনি এতো খারাপ? ছি ছি ছি মানুষ এরকম কি করে হতে পারে? আমাকে ভালো লাগছে না? এটা বলতে না পেরে মা*রার প্লানিং করছেন। তাই না? সব বুঝি আমি। আমাকে মে*রেই আপন বিদেয় করতে চাইছেন। খারাপ লোক। মা*রতে হবে না। ভালো লাগছে না বললেই আমি চলে যাবো। জোর করে থাকার মতো মেয়ে আমি নাহ।
তুলতুল বকবক করতেই থাকে। সায়ান ফোঁস করে শ্বাস টানে।
“সামান্য কিসটাও ঠিকঠাক করতে পারিস না। আবার বড়বড় কথা। সর সামনে থেকে। বিরক্ত লাগছে তোকে।
সায়ানের কথায় তুলতুল ক্ষেপে যায়।
” আমাকে কিস করতে কে বলেছে আপনাকে? আমি বলেছিলাম? আপনার ওই বিরি খাওয়া নোংরা কিসস আমি কখনোই চাই না। আমাকে বিরক্ত লাগছে? আমারও আপনাকে বিরক্ত লাগে। কথাই বলবো না আপনার সাথে।
তুলতুল বকতে বকতে চলে যায়।
“যাক ফাইনালি মেডাম নিজের আসল রুপেয়া চলে আসলো।
হিমু আর তনু আজকে ঘুরতে এসেছে। পার্কের এক কোণায় দুজন বসে আছে। তনুর মাথায় ফুলের মুকুট দেওয়া। এটা অবশ্য হিমুই কিনে দিয়েছে।
হাজার বার সরি বলে মেডামের রাগ ভাঙিয়েছে হিমু।
” তনু তোমার হাতটা ধরি?
অনেকখন যাবত তনুর হাতটা ধরতে চাইছে হিমু। কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। কেনো জানি এই মেয়েটার সামনে আসলেই দুর্বল হয়ে পড়ে।।
তনু ভ্রু কুচকে হিমুর দিকে তাকায়। ভীষণ হাসি পাচ্ছে ওর। তবুও হাসি আটকে রাখে।
“হুমম
ছোট্ট করে বলে তনু। হিমু সময় না নিয়েই তনুর হাতের ওপর নিজের হাতটা রাখে। এক অদ্ভুত ভালো লাগা সারা শরীরে ছেয়ে যায়।
বেশ খানিকক্ষণ দুজনই চুপচাপ থাকে।
” আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি তনু।
হঠাৎ করেই বলে হিমু। কিছু একটা ছিলো হিমুর কন্ঠে। বুকটা ধক করে ওঠে তনুর। চোখ বন্ধ করে বার কয়েক নিজের মনে আওড়াতে থাকে হিমুর বলা কথাটা।
“আমিও আপনাকে ভালোবাসি।
মাথা নিচু করে বিরবির করে বলে তনু। হিমু শুনতে পায়। ঠোঁট টিপে হাসে। হাতের আঙুলের ভাজে তনির আঙ্গুল নিয়ে নেয়। আরো একটু কাছাকাছি এসে নিজেদের মধ্যে দুরত্ব ঘুচিয়ে নেয়।
” আমি যদি তোমার কপালে একটা চুমু খাই। তাহলে কি তুমি রাগ করবে?
অদ্ভুত আবদার। কি বলবে তনু? লজ্জা শরম ভুলে বলে দেবে রাগ করবো না? না কি চুপ করে থাকবে?
চলবে………