আমার তুমি ২ পর্ব ৪৪
তানিশা সুলতানা
যখনই তনু হিমুরকে হ্যাঁ বলতে যাবো ঠিক তখনই একটা মেয়ে হিমু বলে ডেকে ওঠে। চমকে ওঠে হিমু। কি সুন্দর একটা মুডে ছিলো। তনু ছোট ছোট চোখ করে হিমুর দিকে তাকায়।
হিমু শুকনো ঢোক গিলে পেছন ঘুরে তাকায়। দুটো মেয়ে এগিয়ে আসছে ওদের দিকে। এই মেয়েদের চেনে
হিমু। একজন হচ্ছে হিমুর স্টুডেন্ট আর একজন হলো স্টুডেন্টের বড় বোন। আর হিমুর বান্ধবী।
তনু নাকের পাটা ফুলিয়ে তাকিয়ে আছো হিমুর দিকে। হিমুর হাতে ছিলো কিছু গোলাপ। হিমু দাঁড়িয়ে যায়।
“ওয়াও ফুল গুলো কি সুন্দর। একদম তরতাজা।
রিয়া (হিমুর বান্ধবী) হিমুর হাত থেকে ফুল নিয়ে বলে। রুপা হা করে তাকিয়ে আছে হিমুর দিকে।
” সাথে কে? সুমু? ও মা ছোট বেলায় তো পুরো অন্য রকম ছিলো। কতোটা পাল্টে গেছে। তবে এখন কিন্তু বেশি কিউট লাগছে। একদম গোলুমলু
তনুর গাল টেনে দিয়ে বলে। তনু রাগে ফুঁসছে। হিমুর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। ঝড় যে একটা আসবে সেটা ঢের বুঝতে পারছে।
“তততোরা এখানে?
তুঁতলিয়ে বলে হিমু।
” এখান দিয়েই যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম তুই সুমুকে নিয়ে বসে আছিস। তাছাড়াও তোর সাথে একটু দরকার ছিলো। আসলে কি হয়েছে বল তো?
রুপা তুই ছাড়া অন্য কারো কাছে পড়বেই না। তাই ছিলাম তুই যদি ওকে টিউশনি পড়াতিস। একঘন্টা না পরলেও আধঘন্টা পড়াবিই। কোনো না শুনবো না আমি।
একদমে বলে যায় রিয়া। হিমু আড়চোখে এক পলক তনুর দিকে তাকায়। বেচারা তনু রুপার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো মনে হচ্ছে রুপাকে গি”লে খাবে।
“আসলে হইছে কি আমি না
হিমু আমতা আমতা করে বলতে যায়। তার আগেই রুপা বলে ওঠে
” স্যার আপনাকে আজকে দারুণ লাগছে।
কেশে ওঠে হিমু। রুপা মুচকি মুচকি হাসছে। তনুর রাগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যায়।
“এক্সকিউজ মি
স্যারকে সুন্দর লাগছে তাতে তোর কি? খাচ্চর ছেমড়ি। আমার ব্যক্তিগত বেডার দিকে নজর দিলে তোর চোখ আমি তু”লে কাঁ”চের গু”লি ঢু”কিয়ে দিবো বলে দিলাম। চিনিস না তো আমাকে। তনু আমার নাম।
ভরকে যায় রিয়া আর রুপা। হিমু বড়বড় চোখ করে তাকায়। তনু ফুঁসছে
” তুমি কি বলছো এসব? পাগল টাগল হয়ে গেছো না কি?
রিয়া বলে।
“একদম ঠিক আছি আমি। আমি হিমালয় লুচ্চার বউ। তিন মাসের প্রেগন্যান্ট আমি। বলেনি আপনাকে? বলবে কিভাবে? নিকনিক করাই তো এনার স্বভাব। বললে তো আর নিকনিক করতে পারতো না। তাই না? বে”হায়া লু”চ্চা খারাপ একটা লোক।
কতো বড় বুকের পাটা ভাবেন একবার? বাচ্চার মাকে সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে আপনাদের সাথে নিকনিক করতে যাচ্ছে।
মামলা করবো আমি। এমনি এমনি ছাড়বো না।
এই বেডারে বিয়ে করবোই না। ম*র তুই। শা*লা ইডিয়েট
এগুলো বকা দিয়ে চলে যায় তনু। হিমু মাথায় হাত দিয়ে বডে পড়ে। রিয়া আর রুপা একপলক হিমুর দিকে তাকাচ্ছে তো আরেক পলক তনুর চলে যাওয়ার দিকে তাকাচ্ছে।
” কপাল পুড়লো আমার।
রাত আনুমানিক কয়টা বাজে খেয়াল নেই। বারোটা ছুঁই ছুঁই বোধহয়। পুরো রুম জুড়েই বইছে পিনপিনে নিরবতা।
তন্ময় প্রস্তুতি নিচ্ছে। বারোটার পরই প্রপোজ ডে। আজকের দিনেই মনের কথা জানিয়ে দেবে সুমুকে। আর অপেক্ষা নয়।
বলতেই হবে আজ।
সুমু থালাবাসন রাখতে গেছে। রাত অনেক হয়েছে। সবাই ঘুমিয়ে গেছে।
তন্ময় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দুই চারবার প্রাক্টিজ করে নেয়। এক বুক সাহস নিয়ে হাতে গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। সুমু আসলেই প্রপোজ করে দেবে।
সুমু দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই তন্ময় হাঁটু মুরে বসে পড়ে। আর তখনই ঘড়ির কাটা টিকটিক করে জানান দেয় বারোটা বেজে গেছে।
” ভালোবাসা কি আমি জানি না। সাজিয়ে গুছিয়ে মনের অনুভূতিও প্রকাশ করতে পারি না। জাহির করে নিজের ইচ্ছে প্রকাশ করতে পারি না। সময় লাগে আমার। তোমার প্রতি আমার ভালো লাগা টা প্রথম থেকেই ছিলো। তোমার চোখে চোখ রাখার ইচ্ছে টা প্রথম দিনই হয়েছিলো কিন্তু বিবেক বাঁধা দিতো। কেনোনা তোমার সাথে আমার কখনোই মেচিং হয় না। কিন্তু তুমি যখন পাগলামি করে আমাকে বিয়ে করলে ট্রাস্ট মি মনের কোথাও একটা ভীষণ লাফাচ্ছিলো খুশিতে। কিন্তু প্রকাশ করতে দিচ্ছিলো না বিবেক।
ধীরে ধীরে তোমার সাথে মিশে গেলাম। হৃদপিণ্ডের একটা অংশ হয়ে গেলে তুমি। এখন তোমাকে ছাড়া একটা মুহুর্ত চলে না আমার। একটু চোখের আড়াল হলে পাগল পাগল লাগে। এটাকে কি ভালোবাসা বলা যায়? না কি অন্য কিছু? যেটাই হোক। আমার তোমাকে চাই। শুধু বউ হিসেবে না আমার বৃদ্ধা সময়ের লাঠি হিসেবে। আমার বাচ্চার মা হিসেবে।
ফুল গুলো সুমুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে তন্ময়। সুমু এতোটা আশা করে নি। জাস্ট হা হয়ে গেছে।
খুশিতে চোখে পানি চলে আসছে। মৃদু হেসে তন্ময়ের হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে নেয়। তারপর তন্ময়ের হাত ধরে দাঁড় করায়।
তন্ময় পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে। তাতে স্বর্নের চেইন ছিলো।
“বিয়ের পর থেকে তোমাকে সেভাবে কিছু দিতে পারি নি। এটা আমার নিজের উপার্জনের টাকায় গড়িয়েছি তোমার জন্য।
তন্ময় সুমুর দিকে চেইনটাও এগিয়ে দেয়।
সুমু চুল সরিয়ে তন্ময়ের দিকে পেছন ঘুরে দাঁড়ায়।
” পরিয়ে দিন।
তন্ময় মুচকি হেসে পড়িয়ে দেয়। সুমু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তন্ময়কে।
“ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে।
” আমিও
তন্ময় সুমুকে কোলে তুলে নেয়। খাটের মাঝখানে বসিয়ে দেয়।
“তোমাকে দারুণ লাগছে।
সুমুর থুতনিতে হাত দিয়ে মাথাটা উঁচু করে বলে। সুমু লজ্জা পায়। আবার মাথাটা নামিয়ে নেয় লাজুক হেসে৷ তন্ময় হেসে ফেলে।
” এতো লজ্জা পেলে হবে? লজ্জা কমাও। না পারলে বলো আমি কমিয়ে দিচ্ছি। দিবো না কি?
সুমু থা*প্প*ড় মারে তন্ময়ের বুকে। তন্ময় হেসে লাইট অফ করে দেয়।
তুলতুলের বিরক্তির শেষ নেই। বারোটা বেজে গেলো এখন সায়ান প্রপোজ করলো না? খুব তো গোলাপ দিয়ে রুম সাজিয়েছে। এদিকে যে প্রপোজ ডে চলে আসছে সেদিকে খেয়াল নেই। আস্ত একটা গর্ধব লোকটা।
সায়ান টানটান হয়ে শুয়ে আছে। তুলতুল খানিকক্ষণ বই নারাচারা করে চেয়ারে বসে। এক্সাম শেষ তবুও বই নিয়ে বসে আছে। বেপারটাও কি খেয়াল করছে না বাজে লোকটা?
“খাবেন না?
তুলতুল আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে।
সায়ান চোখ খুলে তুলতুলের দিকে এক পলক তাকায়।
” যা খাবার নিয়ে আয়।
“খালি অর্ডার আর অর্ডার। বললে কি হতো খাবো না? বাজে লোক একটা
বকতে বকতে চলে যায় সায়ান। সায়ান অবাক হয়। এর আবার কি হলো? এই তো জিজ্ঞেস করলো খাবেন না কি?
“ছেলেরা বউয়ের কাছে বাঘ থেকে বেড়াল হয়ে যায়” কথাটা যে বলেছে সে ঠিকই বলেছে। তাকে একবার দরকার ইচ্ছে হচ্ছে সায়ানের।
একটু পরেই খাবার নিয়ে চলে বসে তুলতুল। তুলতুলের পেছনে খুকি বেগমও আসে।
“এতো রাত হয়ে গেছে এখন তুমি খাবার দিচ্ছো আমার নাতিকে? এই তোমার বিবেক? অসুস্থ ছেলেটা। তাকে অনেক আগেই খাইয়ে ঔষধ খাওয়ানো দরকার ছিলো।
মুখ বাঁকিয়ে বলে খুকি।
” তো আপনি খাওয়ালেন না কেনো? নাতি তো আর আমার কাছে বিক্রি করে দেন নি যে অধিকার নেই।
তুলতুল দাঁতে দাঁত চেপে বলে। খুকি বড়বড় চোখ করে তাকায়। সায়ান ফিক করে হেসে ফেলে।
“উড়ানো জবাব
“যেমন জামাই তার তেমন বউ। এদের সাথে কথা বলতে আসাই উচিৎ না। দুইটাই লেজ ছাড়া বাঁদর।
” তো তোমাকে আসার জন্য হাতে পায়ে কে ধরে?
সায়ান বলে। খুকি দাঁত কটমট করতে করতে চলে যায়। তুলতুল ভেংচি কাটে।
চলবে…………