আমার তুমি
সিজন ২ পর্ব ৬
#তানিশা সুলতানা
গাল ফুলিয়ে বসে আছে তুলতুল। একটু আগেই আম্মু চিরুনি দিয়ে মে*রে*ছে রেডি হয় নি বলে। সবাই সেজেগুজে রেডি। এখন শুধু তুলতুল বাকি। সে জেদ ধরে বসে আছে যাবে না। আর এ নিয়ে একশত ঝাড়ি দিয়েছে আছিয়া বেগম।
তনুও সুন্দর করে সাজুগুজু করেছে। শাড়িও পড়েছে। তনু মনে মনে বুদ্ধি এঁটেছে আজকে ওই হিমালয়কে ইচ্ছে মতো ইগনোর করবে। দেখিয়ে দেবে ইগনোর কাকে বলে আর কতো প্রকার।
আছিয়া বেগম চুল আঁচড়াচ্ছে আর তুলতুলকে বকা দিয়েই যাচ্ছেন। পাপন ফোন দেখছিলো। স্ত্রীর বক বকে উঠে মেয়র রুমে যায়।
“আম্মাজান আপনি রেডি কেনো হন নি? বাবা যে অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
পাপন পানজাবির হাতা গুটাইতে গুটাইতে তুলতুলের রুমে ঢোকে। খাটের এক কোণায় গাল ফুলিয়ে বসে ছিলো তুলতুল। তুলতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে ওর পাশে বসে বলেন পাপন।
” আব্বু দাভাই আসুক। আমি ওর সাথেই যাবো।
তুলতুল বলে।
“তা বললে কেমন হয়? তোমার দাভাই কখন না কখন আসবে। তুমি এতোখন একা থাকবে কিভাবে?
” একা কেনো থাকতে পারবো না তুমি বলো আমায়? আমি কি ভীতু? একদম না। আমি তেলাপোকা দেখে ভয় পাই না। অন্ধকারেও ভয় পায় না। তাছাড়া তুমি দেখো
আমি যদি তোমাদের সাথে যাই তাহলে তো আমাকে কোলে করে নিতে পারবা না। গাড়িতে তে আমার জন্য সিট নিতে হবে। তাই না?
তো ভাড়া দিতে হবে না? বলো?
দিতে তো হবেই। শুধু শুধু টাকা খরচ হবে। আর যদি আমি দাভাইয়ের সাথে যাই। তাহলে বাইকে করে যেতে পারবো। এক্সর্টা ভাড়া দিতে হবে না। কতো টাকা বেচে যাবে বলো তুমি?
এখন বলো
দাভাইয়ের সাথে যাওয়া ভালো না কি তোমাদের?
অবশ্যই তুমি বলবে তোমাদের। কারণ তুমি আমার কথা বুঝতেই পারো নি। বুঝবে কি করে? ছোট বেলায়
“হইছে হইছে থামো তুমি
তুলতুলকে থামিয়ে বলে পাপন। এই মেয়ে এতো কথা বলতে পারে?
” আমি তন্ময়কে কল করছি। ও এখনই আসবে। আর সবাই এক সাথেই যাবো।
পকেট থেকে ফোন বের করে বলে পাপন। তুলতুল খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। দাভাই একদম যেতে না করে দেবে।
এদিকে সায়ান হাজারবার সরি বলেছে তন্ময়কে। বোনের পা ধরে হ্মমাও চাইবে বলেছে। ওর এতো আকুতি মিনতি শুনে গলে গেছে তন্ময়। তবে বলে দিয়েছে নেক্সট টাইম তুলতুলের সাথে চোখ রাঙিয়েও যদি কথা বলে তাহলে একদম ছেড়ে কথা বলবে না।
তন্ময়কে একটা কেনো দশটা থাপ্পড় দিলেও তন্ময় এতোটা কষ্ট পেতো না বা রেগে যেতো না। বোনের বেপারে খুব প্রসেসিভ তন্ময়।
সায়ানও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। তন্ময়ের সামনে একদম এরকম করা ঠিক হয় নি।
রিং হওয়ার সাথে সাথেই তন্ময় রিসিভ করে।
“হ্যাঁ বাবা বলো।
” জলদি বাসায় এসো। তুমি ছাড়া তোমার বোন যাবে না।
“আসছি
দশ মিনিটের মধ্যেই তন্ময় চলে বসে। তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে কারণ তন্ময় ওকে রেডি হতে বলছে। তুলতুল অসহায় চোখে ভাইয়ের দিকে তাকায়। তন্ময় চোখের ইশারায় শান্তনা দেয়।
গোলাপি একটা থ্রি পিছ পড়ে নেয় তুলতুল। ঠোঁটে গাড়ো গোলাপি লিপস্টিক নেয়।
খুব বেশি দুরে না এমপির বাড়ি। তুলতুলদের বাড়ি থেকে বিশ মিনিটের কম সময় লাগে। সিএনজিতে করে আসে ওরা।
তুলতুল সিএনজি থেকে নেমেই চারদিকে চোখ বুলাতে থাকে।
এমপিরা এতো বড়লোক হয়? তিন তালা বাড়ি। একদম অন্য রকম ডিজাইনের বাড়িটা। বাড়ির সামনে নাম না জানা না ফুলের গাছ। গেইটে দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে। গেইটের ওপর দিয়েও ফুল গাছ। তাতে গোলাপি ফুল ফুটে আছে।
তনু ফোনের স্কিনে নিজেকে দেখছে আর চুল ঠিক করছে। ভাব যেনো হবু শশুড় বাড়ি না বয়ফ্রেন্ডের সাথে মিট করতে আসছে।
বাবা মা আর কাকিমা আগে আগে হাঁটছে। তন্ময় ফোনে কথা বলতে বলতে হাঁটছে।
” আপি তুই এতো সেজেছিস কেনো?
তুলতুল জিজ্ঞেস করে।
“ওই হিমালয়কে ক্রাশ খাওয়া চাইছি।
কাটা চুল গুলো সামনে এসে বলে তনু।
” যদি ক্রাশ না খায়?
“জোর করে খাওয়াবো।
” জোর করেও খাওয়ানো যায়?
“হুমম যায়। আজকে আমার থেকে রেসিপি শিখে নিস।
এমপির বাড়িতে পা রাখতেই তুলতুলের বুক কেঁপে ওঠে। আজকে যদি সায়ান হাতের কাছে পায় তাহলে একরাম উগান্ডা পাঠিয়ে দেবে। কেনো যে এতো ভাব নিতে গেছিলো?
এতো মানুষ তুলতুল জীবনেও দেখে নি৷ একটা পরিবারে এতো মানুষও হতে পারে?
ওদের সোফায় বসতে দেওয়া হয়েছে। পাপনের সাথে কথা বলছে তিনটা ভদ্রলোক। যাদের মধ্যে একটা হলো তনুর হবু শশুড় মশাই হিমালয়ের বাবা আর একজন হলেন এমপি সাহেব সায়ানের বাবা। আর একজনকে চেনে না তুলতুল। তনু এক কোনায় চুপটি করে বসে আছে। তুলতুলকে আছিয়া বেগম নিজের পাশে বসিয়েছে আর শক্ত করে হাত ধরে রেখেছে। মেয়েটা বড্ড ছেলে মানুষ। অতিরিক্ত কথা বলে৷ ওর এতে কথা বলার জন্য যদি তনুর বিয়েটা ভেঙে যায়?
তন্ময় এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে৷ আর একটু পর পর একটা মেয়ের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। মেয়েটা তে তন্ময়ের থেকে চোখই ফেরাচ্ছে না।
তুলতুল মেয়েটার দিকে তাকায়। বয়সটা তুলতুলের মতোই হবে।
সাদা ফ্রক পড়েছে। একদম ধবধবে ফর্সা। সামনে ভ্রু সমান করে চুল কাটা। পেছনের চুলগুলো একদম কোমর পর্যন্ত।
দেখতে একদম পুতুলের মতো।
তুলতুল বেশ বুঝতে পারে এদের মধ্যে কিছু একটা চলছে।
” দাভাই তোমার কাছে যাবো।
তুলতুল ঠোঁট উল্টে বলে। আছিয়া বেগম চোখ পাকিয়ে তাকায়।
“আরে ভাবি ওকে যেতে দিন। ওই তো আমার মেয়ে ” সুমু মা তুলতুল আর তনুকে নিয়ে যাও। তোমরা আড্ডা দাও”
সালমান বলে। তুলতুল এক গাল হাসে। আছিয়া বেগুন স্বামীর দিকে তাকায়। পাপন চোখের ইশারায় যেতে দিতে হবে।
সুমু তুলতুলের সামনে আসে।
“এসো আমার সাথে।
তুলতুল খুশি হয়ে যায় সুমুর সাথে। তবুও যায়।
“আপনিও আসুন
সুমু তন্ময়কে ডাকে।
” সুমু তুমি আমার ভাবি হতে চাও রাইট? দাভাই পাত্তা দিচ্ছে না? আরে দেবে কি করে? ওয়ার্ল্ডের বেস্ট ভীতু হচ্ছে আমার দাভাই।
মাঝেমধ্যে ভাবি আমার মতো এতো সাহসী কিউট মেয়ের ভাই এমন ভীতু হলো কি করে?
তুলতুল হাঁটতে হাঁটতে বলে৷ সুমু মুচকি হাসে। তনু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। তন্ময় তুলতুলের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়।
“আমি কিন্তু একদম ভীতু না তুলতুল।
তন্ময়ের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে সুমু। তন্ময় শুকনো ঢোল গিলে।
” আচ্ছা? তাহলে এখন ভাইয়ের হাত ধরে তোমার রুমে চলে যাও। আমি পাহারায় আছি। কেউ ডিস্টার্ব করবে না। যতখন না লাভ ইউ বলছে একদম ছাড়বে না।
তুলতুলের বলতে দেরি সুমুর তন্ময়ের হাত ধরে টান দিতে দেরি নেই।
“কি কি করছো?
তন্ময় বলতে বলতেই সুমু নিয়ে যায়। তুলতুল খিলখিল করে হেসে ওঠে।
” তুই পারিস ও।
আমার ভাইটাকে ওই মেয়ের হাতে ছেড়ে দিলি? যদি মানসম্মান হাতে ধরিয়ে দেয়?
তনু বলে।
“আমি আছি তো।
কন্ঠটা শুনে তুলতুল কেঁপে ওঠে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে জামা খাঁমচে ধরে।
” ভাইয়া ভালো আছেন?
তনু এক গাল হেসে বলে।
“এতোখন ছিলাম না। তবে এখন খুব ভালো আছি।
তুলতুলের দিকে তাকিয়ে বলে সায়ান।
” তোমাকে হিমু খুঁজছে। একদম ভাব নিয়ে চলবা বুঝলা?
ওর সাহস কি করে হয় তোমার সামনে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলার। তুমি ওর সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করবা আর তোমার এক্স দের সাথে কথা বলবা ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে।
তনু বাঁকা হাসে। এতো সুন্দর বুদ্ধি কেউ কাউকে দেয়? এই ছেলেটা খুব ভালো।
“ধন্যবাদ ভাইয়া।
বলেই তনু চলে যায় হিমুর খোঁজে। তনু যেতেই সায়ান ফোঁস করে শ্বাস টানে।
তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে পালানোর রাস্তা খুঁজছে। কোন দিক দিয়ে দৌড় দেবে? চোখ বন্ধ করেই দৌড় দেবে না?
নাহহ পড়ে যাওয়ার চান্স থাকবে। চোখ খুলতে হবে। পিটপিট করে এক চোখ মেলতে যাবে তার আগেই ঝড়ের গতিতে সায়ান তুলতুলকে কাঁধে তুলে নেয়। স্তব্ধ হয়ে যায় তুলতুল। চিৎকার দিতে যাবে কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। কি হচ্ছে সেটাও মাথায় ঢুকছে না।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ধাপ করে নামিয়ে দেয় সায়ান। তুলতুল বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। সায়ান ধাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। কেঁপে ওঠে তুলতুল। মাথায় খেলে এতোখন কি হলো?
সায়ান দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। বুকে হাত গুঁজে সরু চোখে তাকায় তুলতুলের দিকে।
তুলতুল মাথা নিচু করে ফেলে। হাত পা কাঁপছে। গলা শুকিয়ে কাঁঠ হয়ে গেছে। গলা টাও কাঁপছে।
” আআআর এমন হবে না।
জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আমতা আমতা করে বলে তুলতুল। তুলতুলের কথা শেষ হতে না হতেই নিজের খুব কাছে সায়ানের অস্তিত্ব টের পায়। মাথা তুলে তাকাতে যাবে তার আগেই গলায় ঠোঁটের স্পর্শ টের পায় তুলতুল।
চলবে………..