বাবা নতুন স্মার্টফোন কিনেছেন। আমায় ডেকে বললেন, “মুখবুকটা খুলে দে তো।” মুখবুক বুঝতে সময় লাগছে পাক্কা পাচ মিনিট। বুঝে বললাম,” ও ফেসবুক আইডি খুলবেন?”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ ফেসবুক।”
“ফেসবুক খুলতে দুহাজার টাকা লাগবে।”
“কী বলিস! শুনলাম ফ্রী? “
“ফ্রীই তো। চালাতে তো টাকা লাগে না। শুধু খোলার সময় টাকা লাগবে দুই হাজার। “
“ফ্রী হলে দুহাজার লাগবে ক্যা!”
“বাবা এ সব কমার্শিয়াল বিজ্ঞাপন বুঝলা না। এই যে গ্রামীণফোন মাঝে মাঝে কত ফ্রী অফার দেয় শুধু নিচে ছোট করে লিখে রাখে শর্ত প্রযোজ্য এটাও তেমন।”
“ও আচ্ছা। ঠিক আছে খোল।”
মনে মনে জুকার কে ধন্যবাদ দিলাম বেটা পকেটে দুহাজার এনে দিলো।
কয়দিন পর বাবা আবার বললেন, “ফেসবুকে বলে গল্প পড়া যায়?”
“যায় তো বাবা অনেক লেখকের গল্প পড়া যায়।” বাবা আবার পড়তে খুব ভালোবাসে, টুকটাক লিখেও।
“তাই নাকি!”
“টাকা লাগবে পাঁচ হাজার। “
“কী পাঁচ হাজার! “
“ওমা এতগুলো লেখকের গল্প পড়বা টাকা লাগবে না? তবে এখানে একটা সুবিধা আছে বারবার কিনতে হয় না। একবার কিনলে সারাজীবন পড়তে পারবা।”
“তাহলে তো ভালোই। “
দিলাম ক্যানভাস গ্রুপে ঢুকিয়ে।
এখন দেখি বেশিভাগ সময় ক্যানভাস গ্রুপে থাকে। সেদিন আমায় ডেকে বললেন,” কীরে এরা তো ভালোই, গল্পের সাথে গান আর সুন্দর সুন্দর ছবিও দেখায় ফ্রী! “
“হ্যাঁ, বাবা এরা খুব ভালো!”
কয়দিন পরে বাবার নিজের লেখা ক্যানভাসে দেয়ার শখ হলো। আমায় বলল, “আমার লেখাটা এখানে দেয়া যায় না?”
“অবশ্য যাবে কিন্তু —?”
“কত টাকা লাগবে? “
“খুব বেশি নেয় না! একটা গল্পে পাচঁ শো করে।”
বাঃ! কত টাকা আয় করার সুযোগ চারদিকে, একটু শুধু মাথা খাটাতে হয়। কয়দিন পর পর বাবার একটা গল্প পোস্ট দিই আর পকেট ভারি হয়।
বাবার লেখা ভালো। দেখা যায় প্রতি গল্পে হাজার হাজার লাইক পড়ে, অনেকেই কমেন্ট করে ভালো লিখেছেন! বাবা মোটামুটি ক্যানভাসে পরিচিত হয়ে গেছেন। আমার আয় ভালোই হচ্ছে। কেমনে জানি ক্যানভাসের আ্যডমিন প্যানেলের একজন বাবার ফ্রেন্ড লিস্টে ঢুকে পড়েছে। মনে হয় ঘোষণা দেখে বাবা বুঝতে পেরেছেন এরাই হর্তাকর্তা। বাবা তাকে মেসেজ দিছেন,” আমি তো অনেকদিন থেকেই গল্প দিই আমার জন্য একটু ছাড় দেয়া যায় না?”
© Nabil Mahmud