বেপরোয়া ভালবাসা পর্ব ২৪
লিখনীঃ মনা_হোসাইন
আদিবা হন হন করে বেরিয়ে গেল একবার ঘুরেও তাকায় নি। আদি তার চলে যাওয়ার দিকে নিশ্চুপ চেয়ে তাকিয়ে রইল। চোখ দুটো ভরে উঠছে কিন্তু আদিবাকে সে বাঁধা দেওয়ার কোন প্রয়োজনবোধ করেনি। যে মেয়েটা তার কাছ থেকে দূরে গিয়ে শান্তি খুঁজতে চাইছে, যে মেয়েটা তাকে অসহ্যকর মনে করে তার জন্য এত উতলা হওয়ার আবশ্যকতা নেই ভেবে নিজেকে শান্তনা দিল।
আদিবা আদিকে যেভাবে দোষারোপ করল আদির জায়গা অন্য কেউ থাকলে তার নিশ্চুই অনুশোচনা হত কিন্তু আদির অনুশোচনা হচ্ছে না তার কষ্ট হচ্ছে। বুকের মাঝে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে। আদির চোখ ভরে এসেছে সে সবার সামনে কাঁদতে চায় না তাই শান্ত পায়ে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।
-“আচ্ছা তবে কি আদিবা সত্যিই আমায় চায় না? আমি এতই খারাপ, আমার মত ছেলেকে কেউই পছন্দ করে না তাইনা? আমিও জানি আমাকে পছন্দ করার মত কোন কারন নেই আমার আচারন স্বাভাবিক না। কিন্তু আদিবা কেন বুঝল আমি যেমনেই হই আমার ভালবাসায় কোন খাঁদ ছিল না। মানছি আমি অন্যদের মত ভালবাসতে পারি নি আমার ভালবাসা বেপরোয়া ছিল তাই বলে ও আমায় ছেড়ে চলে যাবে? আমার কাছ থেকে পালানোর জন্য ব্যকুল হয়ে পড়বে.?
-“আচ্ছা আদিবা তোর মনে কী একটা বারের জন্যেও প্রশ্ন জাগল না আমি কেন সেদিন বাসা ছেড়েছিলাম? সামান্য বকার জন্য কেউ বাসা ছেড়ে চলে যায় ? আমি তো তোর উপড় কিংবা বাবা মায়ের উপড় কারোর উপড় রাগ করে বাসা ছাড়ি নি, ছেড়েছিলাম নিজের উপড় রাগ।আমি নিজেকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম। তোকে সেদিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে ভিতর আত্মা কেঁপে উঠেছিল সিধান্ত নিয়েছিলাম তোর থেকে দূরে থাকব কারন আমি দেখতে পাচ্ছিলাম আমি নিজের রাগ সামলাতে ব্যার্থ হচ্ছি। মন থেকে না চাইলেও তোকে ঠিকি আঘাত করছি। তাই চেয়েছিলাম তোকে ছেড়স থাকতে নিজের যত কষ্টই হোক মেনে নিব তবুও তোর সাথে থেকে তোর উপড় অত্যা”চার করব না। ভেবেছিলাম তোর থেকে দূরে থাকলে হয়ত নিজের রাগকে বশে আনতে পারব।
শুধুমাত্র তোকে কষ্ট দিব না জন্যে নিজেকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর দিকে ঠেলে দিয়েছিলাম।
কি করব বল পৃথিবীর সবাই তো আর একরকম হয় না। সবাই যদি এক রকম হত তাহলে কি পৃথিবীতে এত খু*ন খা*রা*বি হত বল? সবাই এক হয় নারে কেউ রাগী হয় কেউ আবার কোমল আমাকে উপড়ওয়ালা এভাবেই গড়েছেন। তুই আমার অবাধ্য হলে মাথায় র*ক্ত চড়ে যায় আমি কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারিনা।আসলে তোকে আমার খুব আপন মনে হয় যাকে সবটা দিয়ে নিজের করে আগলে রাখতে চেয়েছিলাম। যে শুধু আমার হবে সারাক্ষন আমায় নিয়ে ভাব্বে তার পুরো পৃথিবী জুড়ে থাকব শুধুই আমি।আসলে আমার ভয় হত তোকে স্বাধীনতা দিলে অন্যদের সাথে মিশতে দিলে তুই যদি আমায় ছেড়ে চলে যাস?
তবে বিশ্বাস কর আদিবা এই ছয় বছরে আমি নিজেকে বদলানোর অনেক চেষ্টা করেছি, সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়েছি কিন্তু সবি বৃথা।কারন আমি প্রকৃতিগত ভাবেই এমবন। এত বছর পেরেও যেই তোর কাছি কাছি আসলাম সাথে সাথে আমার ছয় বছরের সাধনা বিফলে গেল আবারো সেই বেপরোয়া আদিতে ফিরে গেলাম সব যেন পাল্টে গেল মুহুর্তেই। তোর দিকে তাকানোর সাথে সাথে মনে হল তুই শুধুই আমার তোকে অন্য কারোর পাশে দেখা সম্ভব না।
কিন্তু আজ আমি সফল ছয় বছরে যা পারিনি আজ পেরেছি তুই আমার জীবন থেকে চলে যাচ্ছিস জেনেও আমি তোর বাঁধা দেইনি রাগো করিনি। কারন আমি বুঝে গেছি তোকে পাওয়ার যোগ্যত আমার নেইা নেই। তাই তোকে নিজের সাথে জড়িয়ে কষ্ট দিব না দেওয়ার মানে হয় না। তুই আজ থেকে মুক্ত আদিবা। আমি আর তোর পিছনে ছুটব না আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি আদিবা আজ থেকে তুই আমার কাছে মৃত….আমি আদিবাকে ছাড়া বাঁচতে শিখে গেছি।
।
।
।
রাত বারোটার ঘর ছুঁই ছুঁই আদিবা রাগে বের তো হয়ে এসেছে কিন্তু এখন যাবে কোথায়? হাতে টাকা পয়সা কিছুই নেই। আদিবা হাঁটতে হাঁটতে এসে রাস্তার পাশের বেঞ্চটায় বসল।মাথায় নানান চিন্তারা এসে ভীড় জমালো বেশ ভয়ও লাগছে এতটা সাহস দেখানো উচিত হয়নি। এখন কী করবে..? কার কাছে যাবে তেমন নিকটাত্মীয় তো কেউ নেই যার কাছে টাকা ধার পাওয়া যাবে।আদিবা বেশ চিন্তা করে পেল তার এক বান্ধবী আছে বাসা কাছেই তাই তার কাছে যাওয়া উচিত। টাকা চাওয়া না গেলেও রাত টা অন্তত কাটানো যাবে যেমন ভাবনা তেমন কাজ সে দু বাসা পেরিয়ে বান্ধবী তিন্নির বাসায় গিয়ে হাজির হল। বাসার সবাই তাকে দেখে অবাক হল।তিন্নি এগিয়ে এসে বলল,
-“আদিবা তুই এত রাতে?
-“তোর রুমে গিয়ে কথা বলি..
-“বেশ চল উপড়ে চল।
আদিবা তিন্নির ঘরে গিয়ে চেয়ার টেনে বসল।
-“আদিবা কিছু কি হয়েছে? এত রাতে তুই এখানে?
-“তিন্নি তোর যদি কোন আপত্তি না থাকলে আজ রাতটা তোর বাসায় থাকতে চাইছিলাম।
-“আমার আপত্তি তো নেই কিন্তু আদিত্য ভাইয়া এখন দেশে আছে আদিবা।
-“তো উনি দেশে আছেন বলে তুই আমায় জায়গা দিবি না? ঠিক আছে লাগবে না আমি চলে যাচ্ছি।
-“আরে তুই রেগে যাচ্ছিস কেন? জানি কোন ঝামেলা ছাড়া তুই বাসা থেকে বেরুস নি কিন্তু আদিবা তোর তো আর পাঁচজনের মত রাগ দেখানোর অধিকার নেই। বাসার কেউ কোন অন্যায় করলেও শেষ তোকেই মেনে নিতে হবে।
-‘কেন মানতে হবে আমি কি মানুষ নই?
-“অবশ্যই কিন্তু তুই আদি ভাইয়ের হবু বউ তাই তুই মানতে না চাইলে জোর করে মানাবে। আদি ভাই যদি জানতে পারে তুই এখানে উনি কি সেটা মানবেন? ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি তোর অন্যদের সাথে মিশা আদি ভাই পছন্দ করে না। অরিন আপুর এনগেইজমেন্টের দিন তোকে কেমন মাঝরাতে এসে নিয়ে গিয়েছিল?যে রাগী উনি…
-“উনার রাগে আমার আর কিছু যায় আসে না।তাছাড়া উনি জানবেন কী করে।
-“হাসালি আদিবা তুই ভুলে গেছিস ফয়সাল ভাই
আদি ভাইয়ের বন্ধু।ফয়সাল ভাই অবশ্যই বলে দিবে আর কিছুক্ষন পরে আদি ভাইয়া এসে তোকে টানতে টানতে নিয়ে চলে যাবে। ছোট বেলায় যখন খেলতে আসতি যেভাবে নিয়ে যেত ঠিক সেবাবেই
নিয়ে যাবে।
আদিবা আর তিন্নি কথা বলছে এদিকে ফয়সাল আদিত্য কে ফোন দিল ফোন তুলে আদিত্য শান্ত গলায় জবাব দিল
-“হুম বল…
-“কোথায় তুই
-“কোথায় থাকার কথা? বাসায়ই আছি।আর এটাও জানি তুই এত রাতে ফোন কেন দিয়েছিস কেন
-“জানিস তবুও বাসায় বসে আছিস?দেখ চাই মাঝরাতে এসে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেয়ে এখন নিয়ে যা।
-“না আমি আসভ না আজ রাতটা আদিবাকে তোদের ওখানে থাকতে দে।
-“এটাও সম্ভব?
-“হুন সম্ভব। আর শোন সকালে আদিবা চলে যাওয়ার সময় কিছু টাকা দিয়ে দিস।তোর হাত থেকে নিয়ে চাইবে না তিন্নিকে দিতে বলিস।
-“মানে বুঝলাম না।
-“এত মানে বুঝে তোর কাজ কি?যা বলেছি সেটা কর বলে আদি ফোন কেটে দিল।
আদিবা সারারাতে একবারো চোখ বন্ধ করতে পারেনি তাই সকাল হতে না হতেই বেরিয়ে যেতে চাইল তিন্নি এসে তালে আটকে দিয়ে কিছু টাকা দিল। আদিবা কথা বাড়ায় নি কারন রার এখন টাকার প্রয়োজন।
আদিবা এসে ট্রেনের টিকিট কাটল আর মোটামুটি পাঁচ ঘন্টা পর গ্রামের বাড়িতে পোঁছাল। নির্জন নিস্তব্ধ বাড়ি মানুষ তো দূর একটা কাক পক্ষীও নেই। পড়া বাড়ি এর চেয়ে বেশি আর কি হবে? কতবছর হয় কেউ আসে না।
আদিবা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই গা ছম ছম করে উঠল। আশে পাশে কোন বাড়ি ঘর নেই তাই পুরো বাড়িতে সে একা তবে যাই হয়ে যাক এবার আদিবা আর কোন পরাজয় মানবে না তাই কোমড় বেঁধে লেগে পড়ল কাজে।দীর্ঘদিনের অব্যবহৃত ঘরকে বসবাস যোগ্য করে তুলতে বেশ পরিশ্রম হয়েছে আদিবার তার পক্ষে আর কোন ঘর পরিষ্কার করা সম্ভব হয় নি একটাই পরিষ্কার করেছে।দেখতে দেখতে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে আদিবা এখনো খায় নি। খাবেই বা কি করে রান্না করার পরিবেশ এখনো করে উঠতে পারেনি।ঘরে না আছে চুলা আর না আছে রান্নার সামগ্রী তাই নিরুপায় হয়ে আদিবা একদিন না খেয়ে থাকার সিধান্ত নিল।
সন্ধ্যা হতে না হতেই দরজা লক করে শুয়ে পড়ল আদিবা। ঘরে আলোর তেমন ব্যবস্থা নেই একটা লাইট টিমটিম করে জ্বলছে হটাৎ দরজায় কড়া নাড়ায় ভয় পেয়ে গেল আদিবা।
-“ক ক কে ওখানে..?
উত্তর আসল না তবে আরও দুইবার কড়া নাড়ার শব্দ ভেসে আসল আদিবা গিয়ে দরজা খুলতে চোখ কপালে উঠস গেল,
-“আপনি এখানে কি করছেন..?
-“দাদার বাড়িতে ঘুরতে এসেছি তাছাড়া আমি কখন কোথায় যাব তার কইফত কি তোকে দিতে হবে..
-“দেখুন ভাইয়া যথেষ্ট হয়েছে আর না আপনি এখনী এখাম থেকে যান।আর কত জ্বালাবেন আমায়?আমি রেগে যাওয়ার আগে চলে যান
বলা শেষ হওয়ার আগেই আদিত্য আদিবাকে সামনে থেকে তাকে সরিয়ে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় শুতে শুতে জবাব দিল
-“রাগ কি শুধু তোর একার আছে?আমার নেই? চুপচাপ সহ্য করছি বলে মাথায় চড়ে গেছিস তাই না? আর একবার গলা উঁচু করে কথা বলে দেখ তোকে যদি এখানে পুঁ*তে রেখে না দেই…
-“আপনি এখানে কি চান? কেন এসেছেন?
-‘তুই নিজেকে কি ভাবিস রে আদিবা..? খুব সুন্দরী? কোন এংগেল থেকে তীর কাছে নিজেক্ব সুন্দরী মনে করিস আমাকে একটু বল তো। একে তো দেখতে খারাপ, দ্বিতীয় তো পড়াশোনার নামে খবর নেই, তয় তোর বয়স ২৫ বছরে ঘর ছুঁয়েছে।এমন মেয়ের সাথে প্রেম ত দূর তাকিয়ে দেখারো ইচ্ছা আমার নেই। এখানে এসেছি বিশেষ একটি কারনে তাই প্যান প্যান করবি না।যা আমার জন্য খাবার নিয়ে।
-“আমি কেন আনব?
-“কারন না আনলে তোর হাড়গোড় একটাও আস্ত থাকবে না। এখানে কিন্তু বাড়ির বড়রা নেই যে তোকে বাঁচাবে মাইন্ড ইট
.
।
।
।
চলবে.।