বেপরোয়া ভালবাসা পর্ব ২৭
লেখনীঃ মনা হোসাইন
-“কে হই আমি আপনার..?
আদিবার মুখে প্রশ্নটা শুনে খানিক স্থীর নয়নে তাকিয়ে রইল আদি। এই উত্তর হয়ত মুখে দেওয়া যায় না তাই তো সে বলতে পারছে না।
আসলে এই সম্পর্কের কী নাম দেওয়া যায় আদির জানা নেউ… প্রেমিকা শব্দটা বড্ড গোলমেলে এই সম্পর্কের কোন ভিত্তি নেই যেকোন সময় বিচ্ছেদ ঘটতে পারে..তাই এই নাম বাদ। তবে কী বউ? নাহ সেও তো ছেড়ে যেতে পারে…তাহলে কি নাম দেওয়া যায় আত্মা..? না তাও দেওয়া যাবে না মরে গেলে আত্মা ছেড়ে চলে যায় আদিবার তো আদিকে ছেড়ে যাবার অনুমতি নেই। সে কখনো আদিকে ছেড়ে যাবে না কোন কারনেই যাবে না।
-‘কী হল বলুন আমি আপনার কে হই?
আদির ধ্যান ভাংগল। ভ্রুদ্বয়ের সংকোচিত করে জবাব দিল,
-“কঠিন প্রশ্ন ভেবে চিন্তে উত্তর দিতে হবে। এমন জটিল প্রশ্নের উত্তর হুটহাট দেওয়া যায় না।
আদিবা জানত আদি এমন কিছুই বলবে তাই গাঁয়ে মাখল না সে গিয়ে বিছানায় বসে পড়ল।
-“ভালবাসি বলতে এতই সংকোচ আপনার? এটা কেমন ভালবাসা যা মুখ ফুটে বলা যায় না?
।
।
।
দেখতে দেখতে বেলা গড়িয়ে গেল। সন্ধ্যা হতেই বাড়িতে একে একে মানুষজনের আগমন শুরু হল আদিবার ভীষন রকমের অসহ্য লাগছে. এসবের কী সত্যিই কোন দরকার ছিল? কে কি বলল কি ভাবল তাতে কি যায় আসে? আদির সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি..
আদিবা বাধ্য হয়েই খাবারের ব্যবস্থা করল। খাওয়া দাওয়ার পর আদি সবাইকে বলল সে অনেকদিন পর দেশে এসেছে তাই গ্রামে ঘুরতে এসেছে। রান্না বান্না আর তার দেখাশোনার জন্য আদিবাকে সাথে নিয়ে এসেছে। আদির কথা শুনে আদিবার গাঁ জ্বলে গেল। কিন্তু কিছু বলার সুযোগ পেল না। খাবারের পর সবাই চলে যেতে আদি এসে বলল,
-“যাক সব মিটে গেছে এবার আমাকে খেতে দে…
আদিবা খাবার দিয়ে রাগে গজ গজ করতে করতে গিয়ে উলটো ঘুরে এখন আর কিছু করতে পারব সোফায় শুয়ে পড়ল। রাগের কারন আদির অজানা তাই প্রশ্ন করল,
-‘ঘটনা কী…?
-“খেয়ে খাবারগুলো গুছিয়ে রাখবেন।আমি আর কিছু করতে পারব না। একবছরের কাজ একদিনেই করিয়ে দিয়েছেন তাই এখন আর একটাও কাজ দিবেন না আমাকে।
-“তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু বাজারে যাওয়ার সময় কি কথা দিয়েছিলি মনে আছে?
-“মনে থাকবে না কেন? বলেছিলাম রান্না করে খাওয়াব তো রান্না কি করিনি?খেয়ে উদ্ধার করুন
-“তা ত খবাই
বলই আদি উঠি এসে আদিবার হাত ধরব হ্যাচকা টানে তুলে দিল।
-“কী করছেন ছাড়ুন বলছি…
-“কথার খেলাপ একদম মেনে নিতে পারি না তাই মার খাওয়ার আগে উঠে চুপচাপ খেতে বস।
-“আমি খাব কি খাবনা তার কইফত আপনাকে দিতে হবে ?
-“তুই কিন্তু বেশি বাড় বেড়ে গেছিস আদিবা কথায় কথায় তর্ক করিস।
-“তাহলে আমার সাথে কথা না বললেই তো হয়।
-“ঠিক আছে কথা বলব না কিন্তু এখন খেয়ে নে।
-“খাব না বল্লাম তো..
-“ঠিক আছে খাস না কিন্তু আমাকে খায়িয়ে দিবি বলেছিলি খায়িয়ে দে।
কথাটা শুনে আদিবা চোখ বড় বড় করে তাকাল
-“খায়িয়ে দিব মানে কী? আপনি কি ছোট বাচ্চা যে খায়িয়ে দিতে হবে?
-“দিবি নাকি মার খাবি সেটা তো তোর সিধান্ত…
-“আপনি সবকিছুতে এত বাড়াবাড়ি…
কথাটা শেষ করার আগেই আদি বিছানার উপড় থেকে খাবার গুলো ছুড়ে ফেলে দিল।
আদিবা হতভম্ব হয়ে গেল।
-“কী করলেন এটা…?
-“কিছু না।
-“আপনি খাবারগুলো ফেললেন কেন?
-“জানি না যাইহোক বাদ দে রেডি হয়ে নে…
-“মানে..?
-“মানে আমরা ফিরে যাচ্ছি…
-“ফিরে যাব মানে? ফিরে যাওয়ার জন্য এসেছিলাম নাকি?
-“তো সারাজীবন এখানে থাকবি ভেবে এসেছিলি..?
এক থেকে তিন গুনব এর মধ্যে চেঞ্জ করে আসবি আর একটাও বাড়তি কথা বলবি না।
-“আমি যাব না। খবরদার আমাকে জোর করবেন না।
কে শুনে কার কথা আদি এগিয়ে এসে আদিবার কোন কথাই শুনল না টানটানতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
-“এসব কি করছেন? এভাবে কোথায় যাচ্ছেন আরে ছাড়ুন..
আদির কানে কিছুই ঢুকল না। সে একহাতে নিজের ব্যাগ অন্য হাতে আদিবাকে শক্ত করে ধরে নিয়ে হাঁটতে লাগল। স্টেশনে এসে চোখ পাকিয়ে বলল
-“লোকজনের সামনে একটু এদিক থেকে ওদিক করবি ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দিব।
সময়মত ট্রেন চলে আসল আদি টিকিট কেটে আনল আদিবাকে জানলার সাইডে বসিয়ে দিয়ে বাইরের দিকের সিটে নিজে বসল। ট্রেন চলতে শুরু করেছে আদির মুখে কথা নেই। চোখ মুখ কালো করে বসে আছে আদিবাও কিছু বলতে পারছে না ট্রেন একটা স্টেশন ক্রস করার পর ট্রেনের ক্যান্টিনের লোক এসে বলল,
-“স্যার আপনাদের কিছু দিব..?
আদি আদিবার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
-“একটা প্লেটার দিন আর এককাপ কফি।
ওয়েটার খাবার দিয়ে যেতেই আদি প্লেট টা হাতে নিয়ে আদিবার হাতে ধরিয়ে দিল আর নিজে কফির কাপে চুমুক দিল। আদিবা এখনো আদির দিকে তাকিয়ে আছে। আদি বিষয় টা লক্ষ্য করে বলল
-“খেতে ইচ্ছে না করলে জানলা খোলা আছে ফেলে দিতে পারিস।আর ওদিকে দরজাও আছে লাফাতে চাইলে লাফাতে পারিস।
আদিবা বুঝতে পারল আদির মেজাজ বেশিই খারাপ হয়ে আছে। যদিও আদিবা রেগে ছিল কিন্তু আদি এত শখ করে বাজার এনে কিছুই খেতে পারল না ব্যাপারটা তার খারাপ লাগছে। তার জন্য আদি সারারাত না খেয়ে থাকবে এটা হতে পারে না। সে প্লেট থেকে একটু খাবার নিয়ে আদির দিকে এগিয়ে দিল। আদি ব্যাপারটা ইগনোর করে বলল,
-“আমার খিদে নেই..
-“একটু খান…
-“বল্লাম তোন খিদে নেই।
বলে আদি সিট থেকে উঠে দরজার সামনে চলে গেল। আদিবা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে আদি কফির কাপে হাতে দরজার বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে…
-“এত জেদ..? কি এমন বলেছিল আদিবা? এইটুকুর জন্য এত রাগ দেখাতে হবে..? নাহ এমন মেন্টাল প্রেসার আর নেয়া যাচ্ছে না।
আদিবা তাকিয়ে থাকতে থাকতে আদি তার দিকে তাকাল। চোখে চোখ পড়তেই আদি খাবার খাওয়ার জন্য ইশারা করল। আদিবা আদিকে আর রাগাতে চায় না তাই খেতে শুরু করল। আদিবার খাওয়া শেষ হলে আদি এসে নিজের সিটে বসল..
-“আর কিছু খাবি..?
আদিবা মাথা নাড়ল।
-“তাহলে এখন ঘুমা…
-“ভ ভ ভাইয়া…
-“হুম
-” আ আ আ আ আমাকে…
আদিবা আমতা আমতা করছে দেখে আদি চোখ মেলে তাকাল…
-“কী সমস্যা ভয় পাচ্ছিস কেন?আমি কি তোকে মেরেছি নাকি? যা বলার সোজাসাপটা বল।
-“ভ ভ ভাইয়া আমাকে কিছু টাকা দিবেন?
আদি কিছুটা অবাক হলেও কোন আপত্তি করল না।
-“কত টাকা..?
-“পা পা পাঁচ হা হা হাজারের মত..
আদিবা হটাৎ টাকা দিয়ে কি করবে আদি বুঝতে পারল না কিন্তু প্রশ্ন করলে হয়ত আদিবা টাকাটা নিতে সংকোচবোধ করবে। তাই প্রশ্ন না করে ওয়ালেট টা আদিবার হাতে দিল আদি। আদিবা ওয়ালেট খুলে দেখল বেশ ভালই টাকা আছে…
সে ভয় ভয় চোখে আদির দিকে তাকাল আদি আদিবাকে অভয় দিয়ে বলল,
-“কিছু বলবি..?
-“আর একটু বেশি টাকা নিলে কী আপনি রাগ করবেন..?
আদি আদিবার মুখের দিকে তাকাল ভয়ে মুখটা একেবারে শুকিয়ে গেছে। কথা বলতে গিয়ে আমতা আমতা করছে দেখে আদির মায়া হল।ঝটপট উত্তর দিল
-” যত খুশি নিয়ে নে প্রশ্ন করতে হবে না ..কিন্তু তুই হটাৎ টাকা দিয়ে কি করবি..?
আদিবা উত্তর না দিয়ে ওয়ালেট থেকে দশ হাজার টাকা নিয়ে নিল। টাকা নিয়ে ওয়ালেট টা আদিকে ফিরত দিয়ে নিজের টাকা রাখার জন্য এদিক ওদিক কিছু খুঁজল।কিন্তু কিছু না পেয়ে বলল,
-“ভাইয়া আমি তো কোন ব্যাগ আনিনি আপনার ব্যাগে টাকাটা রাখি?
আদি,আদিবার কান্ডে অবাক হচ্ছে ঠিকি কিন্তু কিছু বলছে না কারন সে ইতিমধ্যে আদিবার সাথে যথেষ্ট খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে তাছাড়া আদিবা কখনো তার কাছে কিছু চায় না।কখনো এত সাবলিল ভাবে কথাও বলে না আজ সংকোচ ছাড়াই বলছে…তাই আদিত্য বাড়তি প্রশ্ন করল না।আদিবাকে আশ্বস্ত করে বলল।
-“আচ্ছা আমার কাছে দে এখন আমার কাছে থাকুক বাসায় গিয়ে যত লাগে নিয়ে নিস।
-“নাহ… আপনার কাছে রাখতে হবে না। কাপড়ের ব্যাগে রাখি?
-“আচ্ছা বেশ রাখ…
আদির বলতেই আদিবা হাত বাড়িয়ে ব্যাগটা নিয়ে টাকাগুলো রেখে ব্যাগটা নিজের কোলের উপড়
রেখে দিল। এত যত্ন করে রেখেছে যেন অনেক মূল্যবান কিছু। আদি আদিবার এমন করার কোন কারন খুঁজে পেল না। সময় যেতে লাগল
আদিবার ঘুম পাচ্ছে সে কিছুক্ষন জেগে থাকার চেষ্টা করে ব্যার্থ হল। চোখ আর মানছে না এবার ঘুমাতে হবে। আদিবা ইচ্ছে করেই আদির কাঁধে মাথা রাখল।সাথে সাথে আদি চমকে উঠল। আদিবা বুঝতে পারল আদি হয়ত এর জন্য প্রস্তুত ছিল না তাই তাড়াতাড়ি উঠে যেতে চাইল কিন্তু আদি তাকে টেনে এনে আবার নিজের কাঁধে শুয়িয়ে দিল তারপর নিচু হয়ে বসল যাতে আদিবার শুতে অসুবিধে না হয়।(গল্পটি সবার আগে পেতে মনা হোসাইন পেইজটি ফলো দিতে ভুলবেন না)
।
।
।
আনুমানিক ভোর ৫ টার দিকে ট্রেন এসে স্টেশনে থামল। চারদিকে এখনো আলো ছড়ায় নি। সময়টা আলো আঁধারের সন্ধিক্ষন। আদিবা ঘুমাচ্ছে দেখে আদি ডাকল না। সবাই নেমে গিয়েছে শুধু আদি আর আদিবা সিটে বসে আছে। আদিবা আদির কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত আদিবাকে দেখতে বড়ই শুভ্র লাগছে।আদিবা আদির শার্ট আঁখড়ে ধরে আছে। সে নিজেকে পুরোপুরি আদির উপড় এলিয়ে দিয়ে নিশ্চন্তে ঘুমোচ্ছে। গোলাপি ঠোঁট দুটো একটু একটু কেঁপে উঠছে। চুলগুলি উড়ে এসে বারবার আদির মুখে পড়ছে আদির ইচ্ছে করছে আলতো করে একবার চুল গুলো ঠিক করে দিতে কিন্তু পারছে কই? আজ হটাৎ কেমন যেন জড়তা এসে ভীড় জমিয়েছে আদির মাঝে যা এর আগে কখনো হয়নি।
আদিবার দিকে তাকাতেই বুকের বাঁ পাশে ঢিপঢিপ করে উঠছে। হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিময় ঠান্ডা পরিবেশেও কপালে ঘাম জমছে। হাত দুটি কাঁপছে,গলা শুকিয়ে উঠছে আদি কাঁপা কাঁপা হাতে কপালের ঘাম মুছে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
সে নিজেই বুঝতে পারছে না তার সাথে এমন হচ্ছে কেন? সেতো আরও আগেই আদিবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তার সাথে কতকিছু করে ফেলেছে কিন্তু এমন অনুভূতি তো কখনো হইনি। তবে কী একেই ভালবাসা বলে? জোর করে যা পাওয়া যায় সেটা ভালবাসা নয়..?
।
।
।
চলবে…!!!