বিমূর্ত প্রতিশোধ
অন্তিম পর্ব
তারানা মরিয়ম খান (রিনি)
দুপুরের খাওয়া দাওয়া ও বিশ্রাম শেষে সবাইকে স্টেজের কাছে যেতে বলা হলো। বিশাল আকারের
স্টেজের সামনে সারি সারি চেয়ার পাতা।সেখানেই এক পাশে সাইম আমাদের নিয়ে বসলো। বড় আপা ও দুলাভাই আমাদের সাথেই বসেছেন।স্টেজের মধ্যে বাদ্যযন্ত্রও দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে নাচ গানও হবে।আসলেই নাচ,গান,কবিতা, কৌতুক ইত্যাদির সমন্বয়ে ই অনুষ্ঠান এগিয়ে যাচ্ছে। কাউকে জোর করা হচ্ছে না।যার যার ইচ্ছে অনুযায়ী নিজ নিজ পারফরম্যান্স দেখিয়ে যাচ্ছে।তবে প্রত্যেকের জন্য তিন থেকে চার মিনিট সময় ফিক্সড করে দেওয়া হয়েছে। নাচ,গানের
পর্ব শেষ হতেই মাইক্রোফোনে ঘোষণা হল আজকে পরিবার মেলার সেরা তিনজন দম্পতির নাম।যাদেরকে সারাদিন ধরে সবার অজান্তেই অবজারভেশনে রেখেছিল একদল অবজারভারস।একে একে তিনজনের নাম ঘোষিত হলো। প্রথম হয়েছে সাইমের বড় ফুপুর মেয়ে সুমনা আপু ও তার হাবি।দ্বিতীয় হয়েছে ছোট চাচার ছেলে সিফাত ইসলাম খান। যার কিছু দিন আগেই বিয়ে হয়।তৃতীয় সাইম মাহমুদ খান। মাইক্রোফোনে সাইমের নাম উচ্চারিত হতেই আমি আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম সাইমের দিকে। দুজনের হাত দিয়ে তালি বাজাতে লাগলাম। এতেও যেন আমি সন্তুষ্ট হতে পারছিলাম না।আমি সাইমকে জড়িয়ে ধরে লাফাতে লাগলাম । আমাকে এত্তো খুশি হতে দেখে উপস্থাপক হাসতে হাসতে বলেন –আভি কুছ বাকি হে, ভাবী সাহেবা!! স্টেজে আসতে হবে,পারফরম্যান্স দেখাতে হবে,অনেক অনেক প্রশ্নের সুন্দর সুন্দর জবাব দিতে হবে।তবেই বেস্ট কাপল এওয়ার্ড পাওয়ার গৌরব অর্জন করা যাবে।হা হা হা!!সো বুঝতেই পারছেন আরো কত পথ বাকি!!
উপস্থাপকের কথা শুনে মনটা খারাপ হতেই সাইম আমার হাত চেপে ধরে আর কানে কানে বলে—ডোন্ট ওরি!!তুমি দেখে নিও আমরাই কম্পিটিশনে জিতবো!ইনশাআল্লাহ!!
একে একে দুজন সেরা কাপলদের পারফরম্যান্স শেষে আমাদের ডাকা হলো স্টেজে। আমরা স্বপরিবারেই স্টেজে উঠলাম।
মিঃ এন্ড মিসেস!! আর ইউ রেডি ফর কম্পিটিশন???
মাইক্রোফোনে উপস্থাপক জিজ্ঞেস করতেই দুজন একসাথে জবাব দিলাম –ইয়াহ!!উই আর রেডি!!
প্রথম প্রশ্নোত্তর পর্ব। আপনাদের মোট দশটি প্রশ্ন করা হবে।আশা করছি সবগুলোর সন্তোষজনক জবাব পাব!তারপর পরের পর্বে যাব।আমরা মাথা ঝাকিয়ে সায় জানাতেই উপস্থাপক প্রশ্ন করা শুরু করেন।
প্রশ্ন নং ১ঃ-কাপলের নাম ও পদবি—-
—–সাইম মাহমুদ খান,সফট ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।
——তাহিয়া তাবাসসুম খান,গৃহিনী।
প্রশ নং ২ঃ-ভালোবাসার ক্যাটাগরি? অর্থাৎ, আফটার মেরেজ না বিফোর মেরেজ??
—-আফটার মেরেজ।এক সাথেই জবাব দেই।
প্রশ্ন নংঃ–খেতাবি নাম???
—-সেটা আবার কি???সাইম জিজ্ঞেস করতেই —
— বা রে!!! সাত সাতটি বছর সংসার করলে!! অথচ একজন আরেকজনের নামই সিলেক্ট করোনি!!কি যা-তা ভালোবাসা তোমাদের!!!
—আরেহ, জুবায়ের, বুঝিয়ে বলবি তো!!!
—আরেহ সাইম ভাই!!দেখো না দু,দিনের সম্পর্কেই একজন আরেকজনকে কতো শতো সুন্দর সুন্দর নামে ডাকে। এই যেমন ধরো–জানু,ফানু,চিনু,মিনু।আবার দেখা যায় বাবু,হাবু,ডাবু,সাবু।অর্থাৎ আদুরে নাম!!মানে আদর করে একজন আরেকজনকে কি নামে ডাকোএবং ডাকার কারণ?
সাইম আর আমি জোরে জোরে হেসে উঠি। হাসতে হাসতেই সাইম বলে –আগে বললেই হতো আদর করে কি নামে ডাকি!!খেতাব খুতাবের কোনো দরকারই ছিল না!!
—-ঐ একই কথা!! এবার বলো, কি নামে ডাকো এবং কেনো???
—টুনটুনি বউ!সারাক্ষণ টুনটুনি পাখির মত নাচানাচি, ছোটাছুটি করে।খুব চঞ্চল!! (সাইম)
—-খরগোশ বর!!প্রাণীকুলের সবথেকে জেন্টেল প্রাণী। ওর মধ্যে জেন্টেল বিহেভিয়ার এর পরিমাণই বেশি।(তাহিয়া)
প্রশ্ন নং -৪ঃ-দুজনের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কার অবদান কতটুকু??
—-ফিফটি ফিফটি! দু,জন দু,জনকে ইশারায় দেখিয়ে।
প্রশ্ন নং৫ঃ— কোন কারনে একজন আরেকজনের উপর রাগ হলে কে কিভাবে অভিমান ভাঙান?মানে অভিমান ভাঙানোর ধরন?
—–পেছন পেছন ঘুরে ঘুরে বেসুরো গলায় ভালোবাসার গান গেয়ে।শেষে একপ্রকার রাগ হয়েই তাহিয়া অভিমান ভেংগে ফেলে।হা হা হা! “(সাইম)
——সে খুব কমই অভিমান করে।তারপরও যখন মাঝেমধ্যে করেই ফেলে তখন শুধু একটি বাক্যই যথেষ্ট তার অভিমান ভাঙাতে,” আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কার সাথে অভিমান করবে”ব্যাস শুরু হয়ে যায় তার আবেগী আচরণ এবং পেছন পেছন ঘুর ঘুর করা । (তাহিয়া)
প্রশ্ন নং ৬ঃ-একে অন্যের কোন গুণটি ফেভারিট? কেন?
—–যথেষ্ট পরিমাণ কেয়ারিং। আমার, আমার বাচ্চাদের প্রতি ও এতোটাই কেয়ারিং যে,ওর মতো অমন কেয়ারিং মেয়ে আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি!! মাঝেমধ্যে আমার প্রতি তার কেয়ার দেখে আমি নিজেই আশ্চর্য হই।কারণ আমার চোখের দিকে তাকাতেই সে আমার সমস্যা, চিন্তাভাবনা, চাওয়া পাওয়া সবকিছুই বলে দিতে পারে।(সাইম)
—–প্রচন্ড ধৈর্যশীল!!!পুরুষ মানুষ এতটা ধৈর্যশীল হতে পারে সাইমকে না দেখলে হয়তো বুঝতামই না।আমার মেয়েটা ডেলিভারির সময় পেইন উঠার ১৪ ঘন্টা পর সে ভূমিষ্ঠ হয়।আমাদের দেশে হয়তোবা কখনোই এতক্ষন সময় অপেক্ষা করতো না।সিজারিয়ান অপারেশনে বেবি ডেলিভারি করিয়ে নিতো। কিন্তু সুইজারল্যান্ডে আমাকে ১৪ ঘন্টা অবজারভেশনে রেখেছিলো। আমাকে অবজারভেশনে রেখে ডক্টর, নার্স সবাই পালাক্রমে রেস্ট করেছে। সাইমকেও রেষ্ট করতে রিকুয়েষ্ট করেছে।কিন্তু সাইম এক মুহুর্তের জন্যও লেবার রুম ছেড়ে যায়নি। সারাক্ষণই আমার মাথার কাছে দাড়িয়ে থেকে সাহস যুগিয়েছিল।আমি নিজেও তাকে রিকুয়েষ্ট করি।কিন্তু সে একটা কথাই বারবার বলেছিল—মাতৃত্বের কষ্ট হয়তো আমি কিছুতেই নিতে পারবো না,কিন্তু পাশে থেকে তো কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারবো! সে কোনো অবস্থাতেই আমাকে ফেলে যায়নি। রিয়েলি ইট ওয়াজ এমেইজিং!!!আই সেলুট হিম ফর হিজ এক্সট্রাঅর্ডিনারী এট্রিবিউট!!আই এম সো হেপ্পি বিকজ সাইম ইজ মাই হাসব্যান্ড!! আই অলসো প্রে টু আল্লাহ ফর সাইম’স লং লাইফ!!!
প্রচন্ড আবেগে আমি কেদে ফেলি।সাইমও কেদে দেয়।সাইম এসে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে তার চোখের পানিও মুছে নেয়।ঐ মুহূর্তে উপস্থাপকের সাথে সাথে আরো অনেকের চোখে পানি চলে আসে।হাসতে হাসতে উপস্থাপক বলেন—-কাজটা কি ঠিক করলেন!!এক্কেবারে সবাইকে কাদিয়েই ছাড়লেন!!!
আচ্ছা!!!এতক্ষণ তো বরের গুন গাইতে গাইতে কেদেও দিলেন আবার সবাইকে কাদিয়েও দিলেন!এখন দেখি ভাবীসাহেবা কি করেন??রেডী???
—হুম!দুজনেই একসাথে।
প্রশ্ন নং-৭ঃ—যদি কখনো জানতে পারেন ভালোবাসার মানুষটি পরকীয়ায় জড়িত তাহলে কিভাবে সেটার সমাধান করবেন??
—–প্রথমত বলবো, তাহিয়া আর যাই করুক না কেনো।এই জঘন্য কাজটি কখনোই করবে না।তার প্রতি আমার এই বিশ্বাস অটল। তবে যেহেতু প্রশ্নটাই এমন! কিছুতো একটা জবাব দেওয়া লাগবে!তাহিয়া অমনটি করলে আমি এক গাদা ঘুমের ঔষধ খেয়ে
চিরদিনের মতো ঘুমিয়ে পরবো।আরতো দেখছি না কোন করার মতো!!! (সাইম)
—–সাইমের সাথে সাত বছর সংসার করার পর আমি অন্তত এতটুকু বুঝতে পেরেছি যে,সাইম আমাকে কখনো ধোকা দিবে না,বিশ্বাসঘাতকতা
করবে না!তবুও যদি কখনো এমন হয়,সাইম পরকীয়ায় জড়িত।তাহলে আমি আগে জানার চেষ্টা করবো পরকীয়ায়রত ব্যাক্তিটি সাইম আমার জীবনে আসার পূর্বের না পরের। যদি পূর্বের হয় তাহলে নিজ থেকেই সাইমের জীবন থেকে সরে আসবো। আর যদি পরের হয় তাহলে তো বুঝতেই পারছেন!!
কথাগুলো বলতে বলতে হঠাৎ করেই আমার দৃস্টি সিয়ামের দৃষ্টির সাথে মিলে যায়।সিয়াম করুণ চাহনিতে তাকিয়ে থাকে। আমি সাথে সাথেই আমার দৃস্টি সরিয়ে নেই।উপস্থাপকের দিকে তাকিয়ে আবার বলা শুরু করি।–মেরে ফেলবো!!! একদম মেরে ফেলবো!! মেরে মমি বানিয়ে রেখে দিবো!! তারপরও কাউকেই দিবোনা আমি আমার সাইমকে।সাইম আমার!!শুধুমাত্র আমার।তাই মেরে ফেলবো তবুও কাউকেই দিতে পারবো না।কোনদিনও না!!!
—-ওরে বাপরে!!! সাইম ভাই সাবধানে থাইকো!!ভুলেও পরকীয়ায় যাইয়ো না!!বুঝতে পারছো তোমার বউ কি জিনিস!!!
—-হুম!!!জুবায়ের, ভালোবাসলে এভাবেই বাসা উচিৎ! ঠিক তোর ভাবীর মত!!
আমার দিকে তাকিয়ে —-কি বলো টুনটুনি পাখি!!!
প্রশ্ন নং -৮ঃ-এবার একটু ঠান্ডা প্রশ্ন।ভাবীসাহেবা অনেক গরম হয়ে গেছেন।–ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
সাইম আমাকেই ইশারা করে বলতে।কারণ পরিবারের সব ব্যাপারেই সে আমার পরিকল্পনা গ্রহন করে। তাই আমিই বলি–
আগে থেকেই কোনো পরিকল্পনা করতে চাইনা।আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন তাতেই ভরসা করে থাকি।তবে বাচ্চা কাচ্চা বড়ো হলে বুড়ো বুড়ী ভ্রমণে বেরিয়ে যাবো। বিশ্ব ভ্রমণ!!
সাইম আমার কথায় সায় জানাতেই জুবায়ের বলে ওঠে —-আমরা চাইনা, এই দম্পতি কখনো বুড়ো হোক।থাকুক না চিরকাল চিরনতুন ও চিরসবুজ। অনেকেই জুবায়েরের কথায় সিটি বাজিয়ে ওঠে।
প্রশ্ন নং ৯ঃ—এমন যদি হয়, স্বামী /স্ত্রী অথবা সন্তান। দুজনের একজনকে বেছে নিতে হবে।কাকে নেবেন??
—–স্ত্রী এবং সন্তান দুজনকেই নিবো।যদি সম্ভব না হয় তবে তাদের পরিনতিতে নিজেকে শামিল করে নিবো।(সাইম)
—-উত্তর দেবার আগে আপনাকে ছোট্ট একটা কথা বলি জুবায়ের ভাই।–আপনাকে যদি অপশন দেওয়া হয় যে দুটোর একটা নিয়ে বাচতে হবে।হয় হার্ট নয় ব্রেইন কোনটা নিবেন?? অবশ্যই আপনাকে দুটোই নিতে হবে বাচতে হলে!!ঠিক তদ্রূপ আমিও দুজনকেই বেছে নিবো।
—-উফফ ভাবী!!ইউ আর জিনিয়াস!!সত্যিই অনেক সুন্দর জবাব!
সর্বশেষ প্রশ্ন ঃ–দুজন দুজনকে নিয়ে শেষ ইচ্ছা??
—-জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাহিয়াকে নিয়েই বাচতে চাই।এর মধ্যে যদি মরণ এসে যায়,তবে আল্লাহর কাছে শুধু একটাই প্রার্থনা -আমার সাথে সাথে তাহিয়া কেও যেনো মরণ দেন।কারণ তাহিয়া কে ছাড়া আমি মরে গিয়েও মরে যাবো! “(সাইম)
—-আমার জীবনে, মরনে,ইহকালে,পরকালে, জান্নাত, জাহান্নামে সব জায়গায়ই আমি সাইমকে চাই!অর্থাৎ আমার স্থান যেখানেই হোক না কেনো,সাইম যেনো আমার পাশেই থাকে।(তাহিয়া)
—-উফফ!!!অনেক ভালো বলেছেন!!দুজনের জবাব শুনে মন চাচ্ছে নতুন করে কারো প্রেমে পরি!নতুন করে কাউকে ভালোবাসতে শুরু করি।
আর বেশিক্ষণ রাখছি না।প্রতিযোগিতার ধারাবাহিকতা রক্ষার্তে দুজনকে চার লাইন করে গান গাইতে হবে।গানে অবশ্যই দুজন দুজনের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ থাকবে।
সাইম গাইতে না জানলেও কম্পিটিশনে জিততে গায়—চিরদিনই তুমি যে আমার
যুগে যুগে আমি তোমারই।
আমি আছি সে যে তোমার,
তুমি আছো সেই আমারই।
সংগী,সংগী
আমরা অমর সংগী।
আমি গাইলাম—
অনেক বৃস্টি ঝরে, তুমি এলে
যেনো এক মুঠো রোদদুর
আমার দুচোখ ভরে!
তুমি এলে–
আমাদের পর্ব শেষ হলে ওদের তিন ভাই বোনের সাথেও কথা বলে।আমার পুচকে গুলা সুন্দর ভাবেই কথার জবাব দেয়।তারপরও জুবায়ের ফাজলামোর উদ্দেশ্য বাচ্চাদের বিব্রতকর প্রশ্ন করে —কে বেশি আদর করে??
—পাপা।
—কে বেশি মারে??
—মাম্মা।তাহ রীম কথাটা উচ্চারণ করতেই তামজিদ বলে উঠে —এখন আর মারতে পারে না।
—কেনো????
—-মারতে আসতেই বলি, আমরা তো তোমার আর পাপার ভালোবাসার ধন। তখন মাম্মা নিজে নিজেই রাগ হয়ে চলে যায়। পাপাই আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে।
বাচ্চাদের কথা শুনে উপস্থিত সকলেই উচ্চস্বরে হাসতে থাকে।
এই মুহূর্তে সাইমের উপর প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে। বাচ্চাদের ফুলের টোকাও দেওয়া যাবে না।আমিতো মা,আমি জানি কতটা শাসন করা প্রয়োজন। বাচ্চাদের ছাইপাঁশ শিখিয়ে মুখ এনে ফেলছে। এখন!!! এখন লজ্জা কে পাচ্ছে!! আমি সাইমের দিকে রাগী মুডে তাকাতেই সাইম চ্যাপ্টার ক্লোজ করতে জুবায়ের কে ধমক দেয়।তার আগেই মেয়েটা এসে সাইমের কোলে উঠতে প্যান্ট ধরে টানাটানি করে। সাইম কোলে নিতেই মেয়েটি তার পাপার কানে কানে যেন কি বলে। জুবায়ের জিজ্ঞেস করতেই সাইম বলে —কি আর বলবে!!! ঐ ভাইদের গানাই গাইছে!!!!এবার তুই খুশি!!!
—-আরেহ বাহ!!!রোমান্টিক কাপলদের ছানাপোনাও রোমান্টিক হয়ে উঠছে। হা হা হা!!হা হা হা!!হা হা হা!!ফাজিল টার হাসির মধ্যেই আমরা স্টেজ থেকে নেমে আসি।
প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণার আগে সচিব মহোদয় সবার উদ্দেশ্য কিছু বলেন।যার সারমর্ম ছিলো আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।প্রতি দু’বছর কিংবা তিন বছর পর পর তিনি পরিবার মেলার আয়োজন করার ঘোষণা দেন এবং প্রত্যেককেই অংশ গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন।সাইমকে দেখিয়ে বলেন–ওনার পরিবর্তে সাইম সে দায়িত্ব পালন করবে সুদুর সুইজারল্যান্ড থেকে।তবু্ও আমি চাই বছর দুবছর পরে হলেও যেনো সবার সাথে সবার দেখা সাক্ষাৎ হয়।খান পরিবারের আত্মীয়তার সম্পর্ক যেনো আজীবন অটুট থাকে, মজবুদ থাকে।
ফলাফল চলে এসেছে বড় ভাইয়ের কাছে।তিনি সেরা দম্পতির নাম ঘোষণা করলেন “” সাইম এবং তাহিয়া “” দম্পতি।মাইক্রোফোনে আমাদের নাম ঘোষিত হতেই আমি ও সাইম একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠলাম।
আনন্দে আমি সাইমকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কাদতে লাগলাম। এই কান্না কোনভাবেই দুঃখের কান্না হতে পারে না!! এতো সুখের কান্না!! চরম সুখের কান্না!!
বড়ো ভাই ডেকে স্টেজে নিয়ে গেলেন আমাদের। সাইমকে বুকে জড়িয়ে আদর করলেন। সামনে থেকে অনেকেই চিৎকার করে অভিনন্দন জানাতে লাগলো। সচিব মহোদয় আমাদের হাতে এওয়ার্ডটি তুলে দেন।স্টেজের সামনে প্রত্যেকই করতালির মাধ্যমে অভিনন্দন জানায়।কি সুখের মুহূর্ত!!!
আমরা আজ অনেক খুশি!! সত্যিই নিজেদের অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।আল্লাহ ইচ্ছে করলে কি না করতে পারেন! প্রিয়জনের কাছ থেকে প্রতারণার শিকার দুজন মানুষ আজ সবার সেরা প্রিয়জন হিসেবে মনোনিত হলাম।শ্রেষ্ঠ দম্পতির এওয়ার্ড পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করলাম! এত্তো খুশি কোথায় রাখি??
সচিব মহোদয় আমাদের দুজনকে সবার উদ্দেশ্য কিছু বলতে বলেন।আমি সাইমকে ইংগিত করতেই সে বলে—তুমিই বলো!
—–স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আল্লাহর দেওয়া এক বিশেষ নেয়ামত। কারণ এই সম্পর্কের মধ্য দিয়েই বাকী সম্পর্কগুলো পূর্ণতা পায়।পুর্ণতা পায় ভালোবাসা।আর যে ভালোবাসা দিয়ে অনায়াসেই গড়ে তোলা সম্ভব একটি সুখী পরিবার, একটি সমাজ,একটি রাস্ট্র, সর্বোপরি সুখ সমৃদধ বিশ্ব।তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিৎ সম্পর্কটার যত্ন নেয়া,ভালোবাসা এবং যথাযথ সম্মান দেয়া।
আমি কথাগুলো সিয়াম ও লীনার দিকে তাকিয়েই বলছিলাম আর তৃপ্তির হাসি হাসছিলাম। আমার দৃস্টি অনুসরণ করে সাইমও তাকায়। তারপর সাইম আমায় সবার সামনেই ডানহাতে আগলে নিয়ে অনেকটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে দাড়ায়। বাচ্চাগুলানরে সামনে দাড় করিয়ে এমন ভাব করে তাকিয়ে হাসছিলো।মনে হচ্ছে সে প্রাক্তনদেরই জ্বলন সৃষ্টির উদ্দেশ্যই কাজটি করে। হঠাৎ সাইমের এহেন আচরণ আর আমাদের দৃস্টি অনুসরণ করে অনেকেই সেদিকে তাকায়।সবাই তাদের দিকে তাকাতেই আমরা দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম।আমাদের কাজ শেষ। ব্যাস!!! অতটুকুন যথেষ্ট!!
আজ অনেক অনেক খুশি লাগতাছে সিয়াম ও লীনার অসহায় চাহনি দেখে। আমার অন্তরটায় কেমন যেনো শান্তি শান্তি লাগছে!বুকের ভেতরটায় অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছে!আমি পেরেছি!! পেরেছি প্রতিশোধ নিতে!!সাইমের বলা সেই””বিমূর্ত প্রতিশোধ “””
(সমাপ্ত).
(তাহিয়ার মতো আমারও মনে হচ্ছে, অতটুকুনই যথেষ্ট। তাছাড়া আল্লাহর কাছ থেকে তারাতো চরম শাস্তিই পেয়েছে। আমাদের চারপাশে অমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। আমি আমার অনেক পরিচিত মানুষের কাছ থেকেও অমন নোংরা কাহিনী শুনেছি। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আমার এই ছোট্ট লিখনি। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকেই এমন নোংরা অপরাধ হতে বাচিঁয়ে রাখুন।আর ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। আল্লাহ চাহেন তো খুব শীগ্রই, আসছি, সামাজিক প্রেক্ষাপটে লেখা নতুন গল্প নিয়।সবাই ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন এমনই দোয়া কাম্য।
———-০০০০———
.