বিমূর্ত প্রতিশোধ
পর্ব ৩
তারানা মরিয়ম খান (রিনি)
পিরিয়ডের কথা ভেবে সিয়াম আপাতত আমার কাছে আসছেনা। আমিও কিছুটা নিরাপদ। ঘুমানোর পুর্ব পর্যন্ত সোফাতেই দেখি কাজে ব্যস্ত।আমিও দেখে না দেখে আমার মত করে ঘুমিয়ে পরি।কেন জানি আমার আসা যাওয়ার পথে সিয়াম তাকিয়ে থাকে।আমার অবশ্য এ ব্যাপারে আবেগ, মোহ যাই বলি না কেন কোনটাই অনুভব হয়না।যেই ধোকা না সে আমাকে দিয়েছে!
দু’দিন পর ভাবীকে জানালাম,আমি কিছুদিনের জন্য বাবার বাড়ি যাব বেড়াতে। তিনিও অমত করেন নি বরং খুশিই হয়েছেন।আমি গোছ গাছ শেষে বের হতে নিলেই তিনি আমার হাত ধরে বলেন —বেশি দিন থেকোনা,তাড়াতাড়ি ই চলে এসো!সিয়াম আবার পাগলামি শুরু করবে।এমনিতেই মাত্র লজ্জা শরম কাটিয়ে তোমার কাছে যাওয়া শুরু করেছে।বুঝতেই তো পারছো নতুন বিয়ে করেছে!!
ইচ্ছে করছিলো মহিলার দু’গালে ঠাটিয়ে দু’টো চর মারি।কি মনে করেন তিনি, গ্রামের মেয়ে বলে সাত পাচ যা বোঝাবেন তাই বুঝবো!গ্রামের মেয়ে ছিলাম ঠিক আছে,কিন্তু মূর্খতো আর ছিলাম না!!ওনার মত ধূর্ত না হলেও পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি বুঝার ক্ষমতা তো আল্লাহ দিয়েছেন।৷ রাগ হলেও প্রকাশ করলাম না।মুখে হাশি ফুটিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে এলাম। চলে এলাম বড় আপার বাসায়।
সপ্তাহ খানিকের উপর লাগলো সাঈম ভাইকে বোঝাতে।আমি হাল ছেড়ে দিলেও বড় আপা হাল ছাড়েন নি।অনেক বুঝানোর পর সাঈম ভাই ভাবীকে ডিভোর্স দিতে রাজি হলেন।কিন্তু কোনো অবস্থাতেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলেন না।তিনি বার বার বলতে লাগলেন –সিয়ামের চেয়ে অনেক ভালো ছেলে দেখে আমায় বিয়ে দিবেন।
আমি আর শুনতে পারছিলাম না ওনার কথা।ওনার ভালো মানুষি আমার কাছে বিষের মত লাগছিলো।শেষে আমি চিতকার করে কান্না জুড়ে দিলাম।কান্না করতে করতে বললাম –আমরা দু’জনেই সেইমভাবে প্রতারিত হয়েছি এবং সেইম মানুষের কাছ থেকে।তো আমরা কি…। আমি বলার আগেই তিনি বলা শুরু করেন —কাঁদা ছুড়াছুড়ি করতে গেলে নিজের শরীরে শুধুমাত্র কাঁদা ভরবে।কোন ফায়দা হবেনা!আর তাছাড়া ভাসুর ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর বিয়ে জায়েজ নয়।উনার কথা শেষ হতেই আমি চেচিয়ে বলতে লাগলাম —ইসলাম ধর্মে চৌদ্দ জন নর নারী বিয়ে করা হারাম অর্থাৎ জায়েজ নয়।আমি বিরতি হীন ভাবে বলতে লাগলাম সেই চৌদ্দ জনের নাম।সাইম ভাই বিষ্ময়কর দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমার সেদিকে নজর নেই।আমি সবগুলো নামই বলে গেলাম।যেভাবে হোক আমার উনাকে রাজি করাতেই হবে।কারণ প্রতিশোধের আগুনে আমি দগ্ধ।আমার এতটুক বয়সে কোন ছেলের দিকে ভালো করে তাকাইনি শুধুমাত্র স্বামীকে দেখবো বলে। অন্তরে কারো জন্য বিন্দুমাত্র ভালোবাসা জাগাইনি স্বামীকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবো বলে।কিন্তু সে আমাকে ধোকা দিয়েছে।
অবশেষে আল্লাহর রহমতে আমরা সাইম ভাইকে রাজি করতে পেরেছি।বড় আপা আমাকে অ- নে- ক সাহায্য করেন এ ব্যাপারে। উনার সাহায্য করার যথেষ্ট কারণ ও আছে।উনি এখনও বিশ্বাস করেন উনার মা,আমার শাশুড়ী মা সিয়াম ও লীনা ভাবীর কুকির্তীর কথা জানতে পেরেই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান।তাই তিনিও চাচ্ছেন বিচার হোক দু’জনের। সবকিছু গুছিয়ে আট দিন পর বড় আপার বাসা থেকে ব্যাক করলাম।ঐ দিন রাতেই সিয়াম আমার উপর চড়াও হয়।আমাকে জোর করে কাছে টানতেই বললাম —অনেক বেশিই ক্লান্ত। রেস্ট করতে চাচ্ছি।৷ সে আমার কথা না শুনে জবরদস্তি শুরু করে।আমি নিজেকে ছাড়াতে জোরে ধাক্কা দিতেই সিয়াম বিছানা থেকে পরে যায়।বিষয়টি হয়তোবা তার ইগোতে লাগে।সে বিছানায় প্রচন্ড জোরে কয়েকটি লাথি মেরে রুম থেকে বের হয়ে যায়।সে বের হতেই আমি দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে ভালো ভাবে সাবান ঘষে ধুয়ে নিই তার স্পর্শ কৃত জায়গাগুলো।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাইম ভাই দুদিন পরই বাসায় আসেন।দেড় বছরের কাছা কাছি হয় তিনি বাসায় আসেন নি।এসেই নাম মাত্র অজুহাত দেখিয়ে ভাবীর সাথে ঝগড়া বাধিয়ে ফেলেন।দু’জনের তুমুল ঝগড়ার এক পর্যায়ে সাইম ভাই ভাবীকে মৌখিক তালাক দিয়ে ফেলেন।দু’দিনের মধ্যে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবেন এবং দ্রুত বাসা থেকে চলে যেতে বলেন।সাইম ভাই চলে যাবার দশ মিনিটের মধ্যেই সিয়াম হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে।বাসায় এসেই তাফালিং(তোরজোড়) শুরু দেয়।ভাবীকে জড়িয়ে ধরে বিভিন্নভাবে ভাবে বোঝাতে থাকে।ভাবীকে ছুয়ে কসমও খায়–সে যথেষ্ট সম্মান দিয়ে ভাবীকে এ বাড়িতে রাখবে,। কোথাও যেতে দিবেনা। ভাবীকে শান্ত করে কি মনে করে আমার রুমে আসে।আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলো —শালা ছোটো লোকের বাচ্ছা!!ঘরের বউকে অসম্মান!! সামনে থাকলে শালার মাথা ফাটিয়ে দিতাম!!
নিজের মা’র পেটের ভাইকে বলে ছোটো লোকের বাচ্ছা!!! আমারও মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।আমিও কথায় কথায় বলে ফেললাম —ভাইয়াতো ভাবীকে তালাক দিয়েছেন! আপনি কিভাবে সম্মান দিয়ে রাখবেন??
—মায়ের মত সম্মান দিয়ে রাখবো! তাছাড়া আমি তাকে মায়ের মতই মনে করি।
আমার মেজাজ তখন চরমে। সয্য করতে পারছিলাম না চোরের মুখে ধর্মের কাহিনী শুনে।মুখে তাচ্ছিল্য ভাব এনে বললাম —ওহ,এজন্য বুঝি ভাবীর সাথে দিনের পর দিন ব্যভিচার করে যাচ্ছিলেন!!! ঘরে নিজের বউ রেখে ভাবী মার সংগ এতো ভালো লাগে???
কথা শেষ হতেই সিয়াম আমার ঠোঁট চেপে ধরে রাখে রক্ত বের হওয়া না পর্যন্ত। চোখ লাল করে, মুখ আমার মুখের কাছাকাছি এনে বলে—চুপ্প!!”একদম চুপ!!জানে মেরে ফেলবো!! এই কথা যদি লিক করিস তাহলে তোকে তালাক দিব।চুপ……..
তাকে সুযোগ না দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে তার তলপেটের নিম্নাংশে লাথি মেরে দিলাম।সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে যায়।জায়গাটায় চেপে ধরে উঠার চেস্টা করতেই ফ্লাওয়ার ভাস দিয়ে সজোরে মাথায় আঘাত করি।আঘাত পেয়ে কাতরাতে থাকে সিয়াম। উঠার ব্যার্থ চেস্টা করছে।আমার মুখ তার মুখের কাছাকাছি নিয়ে বলতে লাগলাম —-তুই আমাকে কি তালাক দিবি!!তার আগে আমিই তোকে তালাক দিচ্ছি! এক তালাক!!!দুই… তিন….। আর তুই ভাবলিই বা কি করে, তোর অপবিত্র, নোংরা, জীবাণু যুক্ত দেহের সাথে আমার দেহ মেলাবো। ওয়াক থু!!মুখ ভর্তি থুথু ছিটিয়ে দিলাম তার মুখে।তারপর ও যেন মনের ঝাল মিটছিল না।শেষে শুধু একটি কথাই বললাম—এই মূহুর্তে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো!! কারণ তোদের দেখলেই আমার সেই প্রাণীর কথা মনে পড়ে যায় যারা মাঠে ময়দানে, বাজার -বন্দরে অবলীলায় তাদের সংগম চালিয়ে যায়।কুত্তা আর কুত্তী!!!!
সিয়াম চিতকারকরে ভাবীকে ডাকতে লাগলো। এই সুযোগে আমি ব্যাগটা নিয়ে বাসা থেকে দ্রুত বেরিয়ে এলাম।
.
চলবে…
(একেবারেই নতুন, অনেকটাই কাঁচা,তাই ভুল হওয়ার পসিবিলিটিই বেশি। আগেভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।)