- বিয়ের পর মিষ্টি প্রেমের গল্প
- বউয়ের রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প
- লাজুক বউয়ের ভালোবাসার গল্প
- দুষ্টু বউ রোমান্টিক গল্প
১.বিয়ের পর মিষ্টি প্রেমের গল্প
বাসর ঘরে ঢুকেই দেখি বউ নেই!আমি এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলাম।হঠাৎ বাথরুমের দরজা খুলে ঘরে ফিরলেন তিনি,আমি তাকে দেখে বটবৃক্ষের ন্যায় দন্ডায়মান হয়ে গেলাম।সারা জীবন ভাবছি বউ খাটে ঘোমটা টেনে জড়সড়ো হয়ে বসে থাকবে, আমি ঘোমটা আস্তে আস্তে উঠাবো সে লজ্জাবতি পাতার মতো চুপসে যাবে,নিমিলিতলোচনে তাকাবে,আমি তাকে আবিষ্কার করবো,তারপর হয়তো পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবে,আমি খুশি হবো কিন্তু বলবো না না থাক ইত্যাদি ইত্যাদি …..
-আপনি ফ্রেশ হবেন না?যান ঔসব জবড়জং পোশাক খুলে আসুন, রাত ১২.৩০ বাজে আমি ঘুমাবো।
নতুন বউয়ের কথায় আমি আবার পাথর বনে গেলাম।বিশ্বাস করতে পারছি না।নিজের বাড়িতে নিজেকে কয়েদি মনে হচ্ছে।
-আপনি যাবেন না লাইট অফ করবো?শোনেন বিয়ের সময় যাকে দেখেছেন ওটা নকল নীলা, এখন যাকে দেখছেন সে আসল,আটা-ময়দা ছাড়া।
আমি ভেবেছি কি? ভাবছি কি? আর হচ্ছে কি?
-যাচ্ছি, আপনি বসেন।
-শোনেন এইসব আপনি টাপনি না আমাকে তুমি করে বলবেন, আর আপনি আমার থেকে যেহেতু সাত বছরের বড় আমি আপনাকে কিছুদিন আপনি করে বলবো।যান দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসেন।
বাথরুম থেকে বের হতেও কেমন যেন লাগছে,দেরি হলে বকা দেয় কিনা? যা হোক বেরিয়ে খাটে গিয়ে বললাম –
-তোমার সাথে কিছু কথা বলার ছিল আমাদের সেটেল ম্যারেজতো একটু পরিচিত হতে চাই আর কি?হঠাৎ দেখলাম আমি তোতলাচ্ছি।
-শোনেন আমি আপনার বউ হয়ে এসেছি অতিথি নয়।আমার বয়স ২২ বছর আল্লাহ চাহেতো ষাটবছরের আগে মরবো না।তাতে কি আপনার কথা শেষ হবে না?
এবার একেবারে স্ট্যাম্প বোল্ড হয়ে গেলাম।একটু ইতস্ততভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম
-আমাকে তোমার পছন্দ হয়েছে?
-আমি আপনার বউ, খালাতো বোন হয়ে এ বাড়িতে তিনদিনের জন্য বেড়াতে আসিনি, জনাব।
-আপনি সবসময় কি এভাবে রেগে থাকেন?আপনাকে দেখলে কিন্তু ওরকম মনে হয় না।এতো সুন্দর আপনি! পরীর মতো, শুধু ডানা দুটো নেই।
-আবারো আপনি! আর আমি জানি আমি সুন্দরী। আর পরী ফালতু একটা জিনিস যা আমি জীবনেও দেখিনি।আপনি উপমা ঠিকঠাক এবং যেগুলো বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য সেগুলো ব্যবহার করবেন,কেমন?
-কি রকম সেটা?
-এই ধরেন বলবেন তুমি চাঁদের মতো সুন্দর। আমি চাঁদ দেখেছি, নিজেকে মেলাতে পারি, সিম্পল।
এখন আমার নিজেকে গ আকারে গা ধ আকারে ধা মনে হচ্ছে। আমার মেমোরি পুরোপুরি হ্যাং হয়ে গেছে,নিজেই মনে হচ্ছে লাইট অফ করি, ঘুমাই।হঠাৎ মনে পড়তেই বললাম
-শোন তোমার জন্য একটা গিফট আছে।
বলেই ভাবছিলাম বলবে কালকে দিয়েন তো ওসব।কিন্তু না, দেখি দেখি একটু স্মিত হাসি দিয়ে বললো
-আমার দিকে তাকিয়ে থাকবেন না গিফটটা দিবেন?
-আমি একটা রিং বের করলাম,বক্সের উপরে লেখা ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড।
-পরিয়ে দাও,তোমার হাত এতো ঘামে ক্যানো?ধন্যবাদ।
এই প্রথম তার হাতটা ধরলাম।বিশ্বাস করেন এতো ভয় জীবনেও পায়নি।আরো একটা স্বস্তির বিষয় আংটির মাপটা ঠিকঠাক ছিলো।আমি যেন রানে ফিরছি আস্তে আস্তে। আচ্ছা একটা কথা বলি
-তুমি দেখলাম একদমই কাঁদলে না বাবার বাড়ি থেকে আসার সময়?
-ন্যাকামি আমার একদম পছন্দ না।কাঁদলে কি হতো আমার বাবা-মা আমাকে রেখে দিত? না আপনি রেখে আসতেন?
-না তোমার কথায় যুক্তি আছে,কিন্তু সবাই কাদেঁতো।যারা বিয়েতে কাদেঁনা তারা নাকি অনেক নিষ্ঠুর হৃদয়হীন মনে হয়?না শুনেছি আর কি।
-আমাকে কি সবার মতো মনে হচ্ছে?আর ওসব হৃদয়-টিদয় বলে কিছু নেই একসাথে থাকতে থাকতে একটা অভ্যাস হয়ে যায় এই যা,আপনার সাথেও অভ্যস্থতা হয়ে যাবে। আর বাথরুমে স্যান্ডেল কই?আর বালিশ এতো শক্ত ক্যানো?
-আচ্ছা কালকে সব দেখি ঠিকঠাক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
-কালকে না আজকে, এখন রাত ১.৩০ মিনিট। সকালে উঠতে হবে,বড়ি ভর্তি লোক।
-আচ্ছা তুমি প্রেম-ট্রেম করোনি কখনো?
-আপনাদের ছেলেদের এই বাতিকগুলো খারাপ।আজকেই আমার জীবন কাহিনী সব জানতে হবে?হ্যাঁ ছিলো তাও তিনটা,তবে তিনমাসের বেশি টেকেনি কোনটা?
আমার মুখটা কালো হয়ে গেছে।ভাবছি আল্লাহ আমার এই বিয়ে টিকবেতো।আগে ভাবতাম লেখাপড়া সবথেকে কঠিন তারপর দেখলাম জব পাওয়া কঠিন এখন দেখি বিয়ে টিকিয়ে রাখা তার থেকেও শতগুণ কঠিন।যা হোক কালোমুখে জিজ্ঞেস করলাম
-কেন টেকেনি সম্পর্কগুলো?
-আচ্ছা আমি যদি বলতাম না না কি বলেন প্রেমতো দূরের কথা আমার ছেলে বন্ধুও ছিলো না আপনি নিশ্চয় অনেক খুশি হতেন।এখন আপনার লাল মুখ কালো হয়ে গেছে ওসব অনেক কথা, আাসেন ঘুমায়।
-আমরা কি সত্যি ঘুমিয়ে পড়বো?না মানে আমার অনেক প্ল্যান ছিলো।
-আচ্ছা বুঝতে হবেতো আমি অনেক ক্লান্ত আর ছেলেরা এমন ক্যানো জীবনের সব কিছু তারা বাসর রাতেই করতে হবে?
আমি হতভম্ব হয়ে বসে আছি হঠাৎ লাইট অফ হয়ে গেছে। আমি শুয়ে পড়লাম।হারানোর বেদনা জীবনে অনেক পেয়েছি।কিন্তু প্রাপ্তির মাঝেও অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা অন্যরকম।মনটা খুব খারাপ।হঠাৎ একটা হাত এসে আমার বুকে পড়লো………..
চলবে……………..
অন্যরকম বউ গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে
https://kobitor.com/category/uponas/bou/
২. বউয়ের রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প
সেদিন অফিস থেকে বাসায় আসার মধ্যে সাদিয়া ২৭ বার কল দিয়েছে। সে নাকি আমার প্রিয় খাবার চিংড়ি মাছ রান্না করছে। তাই তাড়াতাড়ি বাসায় আসা চাই আমার।
কিন্তু বাসায় এসে সম্পূর্ণ বাসায় চিংড়ির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে অবাক হলাম। যখন ওকে প্রশ্ন করলাম, আমার চিংড়ি কই? তখন তার সহজ ভাষায় উত্তর ” তরকারি অনেক মজা হয়েছিল “। তাই একাই সব খেয়ে নিয়েছি। কিছু মনে করো না। এবার তুমি নিজেই রান্না করে খাও। এর আগেও অনেকবার তরকারি ভালো হওয়াতে সব তরকারি সে একাই খেয়ে নিয়েছে। তাই মাঝেমধ্যে আমি দোয়া করি তরকারি যেন ভালো না হয়।নাহলে আমাকে নিজেই রান্না করে খেতে হবে।
জ্বী এটাই আমার আনরোমান্টিক বউ। জীবনে মানুষ যা শোনেনি। আর জীবনে মানুষ যা করেনি সেটাই আমাকে শুনতে হচ্ছে আর সেটাই করতে হচ্ছে।
সেদিন অফিস পর মার্কেট থেকে দুইটা গেঞ্জি কিনে নিয়ে আসছিলাম বাসায় পরবো বলে। কিন্তু বাসায় আসার পর যখন সাদিয়া গেঞ্জি দুইটা খুলে দেখল। তারপর থেকে বায়না শুরু গেঞ্জি দুইটা তার পছন্দ। তাকেই দিতে হবে। নাহলে চলবে না। বললাম একটা অন্তত আমাকে দেও। সে রাজি নয়। অগত্যা উপায় না পেয়ে তাকেই দিয়ে দিলাম। সে বিনিময়ে তার পুরাতন একটা ব্যবহৃত গেঞ্জি আমাকে গিফট করলো। গায়ে দিয়ে যখন দেখলাম গেঞ্জিটা আমার ছোট হয়। তখন সে টেনেই সেটাকে লম্বা বানিয়ে দিয়ে বললো ‘ এবার পারফেক্ট হয়েছে’।
ও বেশকিছু দিন থেকে বলছে কক্সবাজার যাবো। ব্যবস্থা করো। কিন্তু অফিসের চাপ থাকায় যেতে পারিনি। শেষমেশ অনেক চেষ্টা করে যখন বসের কাছে থেকে ৭ দিনের ছুটি ম্যানেজ করেছি। বাসায় এসে ওকে বললাম, বাচ্চাকাচ্চার সব কাপড়চোপড় গুছিয়ে নিতে। তখন ও বললো, আরে বাচ্চাকাচ্চা যাবে কেন? ওরা থাকবে। আমি বললাম, আমি নাই তুমি নাই ওরা কিভাবে থাকবে? সে সোজাসাপ্টা উত্তর দিল, কেন তুমি আছো না।আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললাম, আমি মানে? তার সহজ ভাষায় উত্তর ছিল, আরে বোকা তুমি ওদের বাসায় দেখবে বলেই তো কদিন থেকে তোমাকে অফিসে ছুটি নিতে বলছি।
বউ কক্সবাজার থেকে ছবি তুলে পাঠায় আর আমাকে সেগুলো এডিট করে দিতে হয়। একটা ছবি ভুলভাল এডিট করছিলাম বলে সে আমার ভুড়ি বের করা একটা ছবি তার একাউন্ট থেকে আপলোড দিয়ে ক্যাপশনে দিয়েছে ” জামাইয়ের ভুঁড়ি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে কি করবো বন্ধুরা”? সেখানে দেখলাম তার সব বান্ধবীরা হা হা রিএক্ট দিয়েছে। তারপর থেকে মনযোগ দিয়ে তার ছবি এডিট করছি।
আমার আনরোমান্টিক বউ কক্সবাজারে সমুদ্রের পাড়ে বসে ফেসবুকে ছবি আপলোড দেয়। আর আমি বাবুর ডায়াপার বদলাতে বদলাতে তার ছবিতে লাভ রিএক্ট দেই।
অফিস থেকে বস কাল রাতে কল দিয়ে বললেন, আরে রিফাত সাহেব ভাবীকে নিয়ে কক্সবাজার গেছেন। অথচ একটা ছবিও আপলোড দিলেন না? আমি আমতাআমতা করে বললাম, আসলে স্যার ব্যস্ত থাকায় দিতে পারিনি। এখনি আপলোড দিচ্ছি স্যার।
কাল রাতে বউয়ের সাথে দুইবছর আগেকার কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার ছবি আপলোড দিয়েছি। আজকে অফিসের বস সেটায় কমেন্ট করেছে “খুব আনন্দ করছেন রিফাত সাহেব”। আমি থালাবাসন মাজতে মাজতে রিপ্লাই দিলাম, ” হ্যাঁ স্যার, আসলেই খুব এনজয় করছি”।
আনরোমান্টিক বউ
রিফাত আহমেদ
৩.লাজুক বউয়ের ভালোবাসার গল্প
শ্রাবণী নামের মেয়েটা মাথা নিচু করে চুপচাপ আমার সামনে বসে আছে। আমি মুচকি হেসে শ্রাবণীকে বললাম,
–তরকারিতে লবণ বেশি দেওয়ার কারণে আমার বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়
শ্রাবণী অবাক চোখে আমার দিকে তাকাতেই আমি হেসে বললাম,
–কি! আশ্চর্য লাগছে বিষয়টা তাই না?
ঠিক আছে আমি তাহলে পুরো ঘটনাটা খুলে বলি…
আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়াশোনা করি। একদিন রাতে খেয়াল করি বাবা খুব রেগেমেগে বাসায় ফিরে মাকে বললো,
-“টেবিলে তাড়াতাড়ি খাবার দাও”
খাবারটা গরম করতে মা’র একটু দেরি হচ্ছিলো। আর এটা দেখে বাবা ডাইনিং টেবিলে রাখা কাচের দুইটা গ্লাস ভেঙে ফেললো।
মা শব্দ শুনে দৌড়ে রান্নাঘর থেকে এসে বাবাকে বললো,
-“রাগ করেন না যে। একটু অপেক্ষা করেন। খাবার গরম করছি তো তাই দেরি হচ্ছে”
বাবাকে টেবিলে খাবার দিয়ে মা ভাঙা গ্লাসের টুকরো গুলো ঝুড়িতে তুলছিলো। আমিও যখন মাকে সাহায্য করতে গেলাম তখন মা আমায় বললো,
-” তুই তুলতে পারবি না। হাত কেটে যাবে”
তখন বাবা মাকে বললো,
-“লবণ কি পুরোটাই তরকারিতে ঢেলে দিয়েছিলে”
মা তখন মাথাটা নিচু করে বললো,
-“তরকারিতে আসলেই লবণ একটু বেশি হয়ে গেছে। অল্প তরকারি নিয়ে একটু কষ্ট করে খেয়ে নেন। আসলে আমি বুঝতে পারি নি লবণ এতটা বেশি হয়ে যাবে।”
মায়ের কথা শুনে বাবা খাবারের প্লেটটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে বললো,
-” তুই বুঝবি কি করে? তোর মন তো এই সংসারে নেই। তোর মন তো সারাক্ষণ ভার্সিটির বন্ধু বান্ধবের দিকে পড়ে থাকে”
মা হেসে বললো,
-“আপনি নিশ্চয়ই বাহিরের কোন ঝামেলার কারণে রেগে আছেন। আর সেই রাগটা আমার উপর ঢালছেন। রাগ ঢালেন সমস্যা নেই কিন্তু দয়া করে অভদ্র মানুষদের মত নিজের স্ত্রীকে তুই তুকারি করেন না যে”
মা’র কথা শুনে বাবা আরো রেগে গিয়ে মা’র গালে একটা থাপ্পড় মারলো। মা একহাতে নিজের গালটা ধরে আরেক হাতে আমায় ধরে অন্য রুমে যেতে যেতে বাবাকে বললো,
-“আপনি এখন খুব রেগে আছেন। তাই এই ভুল কাজটা করে ফেলেছেন। আপনার রাগটা আগে কন্ট্রোল করেন তারপর সকালে আমায় একবার সরি বলে দিয়েন আমি আর কিছু মনে করবো না। কিন্তু নেক্সট টাইম আমার গায়ে হাত তুলার কথা চিন্তাও করেন না যে”
এইকথা বলে মা যখন আমায় নিয়ে অন্য রুমে যাবে তখন বাবা মাকে আরো একটা থাপ্পড় মেরে বললো,
-” তোকে আবারও মারলাম। এখন তুই কি করবি বল?”
থাপ্পড়টা খাওয়ার পর মা বললো,
-“কি আর করবো! তোকে ডিভোর্স দিবো”
যে মা বাবাকে আপনি বাদে কখনো কথা বলতো না সেই মা শেষ বেলায় বাবাকে তুই করে কথা বলে সেই রাতেই আমাকে সাথে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো…
ডিভোর্সের পরবর্তী জীবনটা আমার মায়ের কখনোই সুখে যায় নি। নানু সব সময় মাকে দোষারোপ করতো আর বলতো,
-“তোর মত জেদি মেয়েকে পেটে ধরে আমি ভুল করেছি। সংসার করতে গেলে স্বামী স্ত্রীর একটু ঝামেলা হয়। ভুল করে জামাই একবার তোকে মেরেছিলো বলে ডিভোর্স দিতে হবে নাকি? তোর বাবাও তো মাঝেমধ্যে আমার গায়ে হাত তুলতো। কই আমি তো তোর বাবাকে ডিভোর্স দিয়ে তোর মত সংসার ছেড়ে পালিয়ে যায় নি”
নানুর এই কথার উত্তরে মা সবসময় হেসে বলতো,
-“এই জন্যই তো তুমি এই সংসারে এতটা অবহেলিত। বাবা তো তোমাকে মানুষ বলেই মনে করে না। তুমি নিজে নিজেকে সম্মান করো না, অন্যজন তোমায় কি সম্মান দিবে বলো?”
একবার একটা ঘটনা ঘটলো। পাত্র পক্ষ আমার ছোট আন্টিকে দেখে খুব পছন্দ করলো। বিয়ে প্রায় ঠিকঠাক। তখন পাত্রের বাবা আমার নানাকে বললো,
-” আপনার বড় মেয়ের জামাই কি করে? আর তাকে দেখছি না তো”
নানা আমতা আমতা করে বললো,
-“বড় মেয়ের জামাই ব্যবসা করে। অনেক বড় ব্যবসা ওদের। ব্যবসার কাজে ব্যস্তত তাই আজ আসতে পারে নি”
মা তখন হেসে বললো,
-” কেন মিথ্যা বলছো বাবা? সত্যিটা ওদের বললেই হয়”
মা পাত্রের বাবাকে বললো,
-” আমার জামাই আগে ছিলো এখন নেই। ও আমার গায়ে একবার হাত তুলেছিলো আর এজন্য আমি তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেই”
মা’র কথা শুনে পাত্রের বাবা অবাক হয়ে বললো,
-“একবার হাত তুলেছিলো বলে ডিভোর্স দিতে হবে?”
মা তখন বললো,
-” ডিভোর্স দিবো না তো কি মরে লাশ হবার জন্য অপেক্ষা করবো? যে পুরুষ অন্যের রাগ নিজের স্ত্রীর উপর মিটানোর জন্য স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে পারে, সেই পুরুষ নিজের স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা করবে না তার কি গ্যারান্টি আছে?”
মা’র এইসব কথার ফলস্বরূপ ছোট আন্টির বিয়েটা ভেঙে যায়। আর নানা তখন মাকে সোজা বলে দিলো, মায়ের জন্য তার বাকি মেয়েদের জীবন নষ্ট করতে পারবে না। তাই বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বললো।
মা যেহেতু চাকরি করতো সে হিসাবে আমাদের তেমন কোন অসুবিধা হলো না। আমরা অন্য ফ্ল্যাটে উঠলাম। কয়েকদিন পর সেখানেও সমস্যা দেখা দিলো। বাড়িওয়ালা প্রায় সময় আমাদের ফ্ল্যাটে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতেন। মা যে বিরক্ত হচ্ছেন সেটা মা আকার ইঙ্গিতে উনাকে বুঝাতেন তবুও তিনি যেতেন না। একদিন মা সরাসরি বাড়িওয়ালাকে বললেন,
-” দেখেন ভাই, আপনি বাড়িওয়ালা আর আমি ভাড়াটিয়া। মাস শেষে আপনি আসবেন এককাপ চা দিবো খেয়ে টাকা নিয়ে চলে যাবেন। প্রতিদিন তো আসার দরকার নেই”
মা’র কথা শুনে বাড়িওয়ালা চুপচাপ মাথা নিচু করে চলে গিয়েছিলো আর তার ঠিক ৯ দিন পর আমাদেরও বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলো।
এইভাবেই একের পর এক কষ্ট সহ্য করে মা আমায় মানুষ করেছে। চাইলেই মেয়েরা মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে সেটা আমি আমার মাকে দেখেই বুঝেছি।
আমার কথা গুলো শুনার পর খেয়াল করে দেখি শ্রাবণীর চোখের কোণে পানি জমে আছে। আমি তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
— তোমায় দেখার আগে অর্পিতা নামের একটা মেয়েকে আমাদের পছন্দ হয়েছিলো। কিন্তু শেষে গিয়ে বিয়েটা ভেঙে গেলো
শ্রাবণী চোখের কোণে জমে থাকা জলটা মুছে বললো,
-“কেন?”
আমি হেসে বললাম,
— মা অর্পিতাকে বলেছিলো, ” তোমার স্বামী অন্যায় ভাবে তোমার গায়ে হাত তুললে তুমি কি করবে?”
অর্পিতা উত্তর দিয়েছিলো,
-” সংসারে টুকটাক ঝামেলা ভুল বুঝাবুঝি হবেই। আমি সহ্য করে নিবো”
এজন্যই মা বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলো…
আমাদের কথা বলার মাঝে হঠাৎ মা এসে আমায় বললো,
-” তোদের কথা বলা শেষ হলে আমি মেয়েকে একটা প্রশ্ন করতে চাই “
মা তখন শ্রাবণীকে বললো,
-” আচ্ছা মা, ধরো বিয়ের পর আমার ছেলে কোন কারণে অন্যায় ভাবে তোমার গায়ে হাত তুললো। তখন তুমি কি করবে?”
শ্রাবণী তখন বললো,
-” আমি কোন অন্যায় করলে আমায় বুঝাবে। তবুও যদি আমি না বুঝি তাহলে দ্বিতীয়বারও বুঝাবে। দ্বিতীয়বার না বুঝলে তৃতীয়বার একটু শাসন করবে আমি সেটা মেনে নিবো। কিন্তু অন্যায় ভাবে আমার গায়ে হাত তুললে আমি সেটা মেনে নিবো না। প্রথমে আপনার ছেলের মাথা ফাটাবো তারপর সাংসারকে লাথি মেরে চলে আসবো”
শ্রাবণীর কথা শুনে মা হাসতে হাসতে বললো,
-“আলহামদুলিল্লাহ, মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়ছে”
মা’র চোখে মুখে তখন বিজয়ের হাসি আর আমার চোখে মুখে তখন আতংক
মা শেষে কি না নিজের সন্তানকে জল্লাদের হাতে তুলে দিচ্ছে…
#মায়ের_মাথা_উঁচু_করে_বাঁচা
আবুল_বাশার_পিয়াস
৫.দুষ্টু বউ রোমান্টিক গল্প
অফিসে যাওয়ার জন্য যখন তৈরি হচ্ছিলাম তখন আমার স্ত্রী শ্রাবণী রান্নাঘর থেক কড়াই এনে আমার সামনে রেখে বললো,
-“বলো তো কড়াইয়ের মধ্যে কি আছে? “
আমি শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে কড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— পানিই তো মনে হচ্ছে।
শ্রাবণী আমার চোখে চোখ রেখে বললো,
-” হয় নি, এটা পানি না।এটা বসুন্ধরা সয়াবিন তেল। আমি ৩০মিনিট ধরে আগুনে রেখে গরম করে এনেছি। আমার কথার যদি সোজাসাপ্টা জবাব না দাও, তাহলে এই গরম তেল আমি তোমার শরীরে ঢেলে দিবো।”
শ্রাবণীর কথা শুনে আমি ওর সামনে থেকে দুইহাত সরে গিয়ে বললাম,
— কি সব পাগলে মতো কথা বলছো!
শ্রাবণী বললো,
-“আমি সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মতোই কথা বলছি। অর্পিতা কে?”
— কোন অর্পিতা?
-” যাকে নিয়ে ফেসবুকে আজকাল খুব লেখালেখি করছো?”
আমি মুচকি হেঁসে শ্রাবণীকে বললাম,
— আরে এই নামতো আমি এমনি ব্যবহার করেছি। তাছাড়া তুমিই তো সেদিন বলেছিলে আমার ছাইপাঁশ গল্পে তোমার নামটা যেন ব্যবহার না করি। তাই তো আর তোমার নাম দেই না
শ্রাবণী মুখটা মলিন করে বললো,
-“তোমারা স্বামীরা এমন কেন? স্ত্রীদের মন বুঝতে চাও না। আরে আমি মুখে না করেছি ঠিকিই কিন্তু মনে মনে চাই তুমি আমার নামটাই সব সময় ব্যবহার করো। শুনো আমি যদি কখনো মুখে না করি অথচ মাথা নিচু করে মিটমিট করে হাসি তাহলে ধরে নিবে আমি মনে মনে হ্যাঁ বলছি। মনে থাকবে কথাটা?”
আমি হেঁসে বললাম,
— মনে থাকবে শাহজাদী গুলবাহার।
আমার কথা শুনে শ্রাবণী বললো,
-“তোমায় না বলেছি আমায় এই নামে না ডাকতে..”
খেয়াল করে দেখি শ্রাবণী মুখে না করেছে ঠিকিই কিন্তু মাথা নিচু করে মিটমিট করে হাঁসছে। আমি বুঝেগেছি আমার বউয়ের মনের কথা। তার মানে সে মনে মনে চাচ্ছে আমি যেন তাকে এই নামে বেশি করে ডাকি। আমি সমানে শাহজাদী গুলবাহার, শাহজাদী গুলবাহার বলে ডাকতে লাগলাম। আর শ্রাবণী হাঁসতে লাগলো। এমন সময় কলিংবেলের শব্দ হলো। শ্রাবণী আমায় বললো,
-” তুমি তৈরি হও, আমি দেখছি কে এসেছে।”
আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের কলার ঠিক করতে লাগলাম। শ্রাবণী দরজা খুলে বললো,
-“কাকে খুঁজছেন?”
বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা বললো,
~”আসসালামু আলাইকুম ভাবী। আমি অর্পিতা, স্যারের অফিসে কাজ করি। পাশেই আমার ফুফুর বাসা। কাল একটা দরকারে এইখানে এসেছিলাম। আজ যখন অফিসে যাবো তাই ভাবলাম স্যারের সাথেই যাই। তা স্যার কি আছেন, নাকি অফিসে চলে গিয়েছেন?”
শ্রাবণী তখন উত্তর দিলো,
-” আপনার স্যার বাসায় নেই। কিছুক্ষণ আগে গরম তেল উনার শরীরে পড়ে গেছে। উনি এখন হাসপাতালে ভর্তি।”
শ্রাবণীর কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেলো। শ্রাবণী যখন রুমের দিকে আসতে লাগলো আমি তখন দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা লক করে বসে রইলাম। বাহির থেকে শ্রাবণী দরজা ধাক্কাতে লাগলো আর বলতে লাগলো,
-“তুমি দরজা খুলো বলছি, তা না হলে আমি কিন্তুু পুরো বাসায় আগুন লাগিয়ে দিবো।”
আমি তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ফোনটা বের করে আমার বন্ধু মামুনকে ফোন করে বললাম,
–তুই তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্স নিয়ে আমাদের বাসার সামনে আয়। আর আসার সময় হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে একটা সিট বুকিং দিয়ে আসিস….।
|
|
কয়েকদিন পর আমি আর শ্রাবণী আমার বন্ধু মামুনের বাসায় দাওয়াত খেতে গেলাম। খাওয়া-দাওয়ার এক পর্যায়ে মামুন শ্রাবণীকে বললো,
~”ভাবী আরো একপিস রোস্ট দেই?”
শ্রাবণী মুচকি হেসে বললো,
–না ভাই, আমি আর খাবো না।
তাকিয়ে দেখি শ্রাবণী মুখে না করছে ঠিকিই কিন্তু মিটমিট করে হাঁসছে। তারমনে শ্রাবণী আরো রোস্ট খেতে চায়। আমি তখন মামুনকে বললাম,
— আরে বেটা, জিজ্ঞেস করার করার কি আছে? একপিস না আরো দুইপিস রোস্ট দে…
আমার কথা শুনে মামুন শ্রাবণীকে দুইপিস রোস্ট দিলো। শ্রাবণী তখন আমার দিকে কেমন করে জানি তাকালো। একটু পর মামুন আবার শ্রাবণীকে বললো,
~”ভাবী, রোস্ট খেতে মনে হয় আপনার ভালো লাগছে না। আপনি একটু গরুর গোশত নেন
শ্রাবণী আবারও হেঁসে জবাব দিলো,
-” না ভাই, আমার পেট ভরে গেছে।”
খেয়াল করে দেখি শ্রাবণী আবার মুখে না করছে ঠিকিই কিন্তু ঠোঁটে হাঁসি লেগে আছে। আমি বউয়ের মনের কথা বুঝে গেছি। আমি মামুনকে তখন বললাম,
–আরে বেটা, এতো জিজ্ঞেস করার কি আছে? তুই তরকারি দে। আমার বউয়ের খেতে ইচ্ছে করছে ঠিকিই কিন্তু লজ্জায় না করছে কিন্তু আমি হলাম আমার বউয়ের আদর্শ স্বামী। আমি ঠিকিই আমার বউয়ের মনের কথা বুঝতে পেরেছি।
এই কথা বলে আমি মামুনের হাত থেকে তারকারির বাটিটা নিয়ে পুরোটা শ্রাবণীর প্লেটে ঢেলে দিলাম।
শ্রাবণী রাগে টেবিল থেকে উঠে বললো,
-“তুই আজ বাসায় আয়। বউয়ের মনের কথা কিভাবে বুঝতে হয় সেটা তোকে আমি নতুন করে শিখাবো।”
এইকথা বলে শ্রাবণী চলে গেলো। আমি মামুনকে বললাম,
— বন্ধু খাবারটা নষ্ট করে লাভ নেই। তুই প্যাকিং করে আমায় দিয়ে দে। অবস্থা যা দেখছি বাসায় দুইদিন ভাত-পানি পাবো না। এইগুলো খেয়েই বেঁচে থাকতে হবে….
বাসায় আসার পর শ্রাবণী রাগে লাল হয়ে বললো,
-“ছিঃ শেষে কি না নিজের বউকে বন্ধুর চোখে রাক্ষস বানালে। আমি খেতে পারছিলাম না দেখেও জোর করে আমার প্লেটে কেনো খাবার দিলে?”
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
— আমার কি দোষ! তুমিতো সেদিন বললে তুমি যদি মুখে না করো কিন্তু ঠোঁটে মিটমিট হাসি থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে তুমি মনে মনে হ্যাঁ বলছো।
শ্রাবণী তখন শান্ত হয়ে বললো,
-“আরে হাঁদারাম, এটা শুধু স্বামী -স্ত্রীর ক্ষেত্রে। অন্যদের বেলায় যদি আমি মুখে না বলি মানে না, আর যদি হ্যাঁ বলি মনে হ্যাঁ। মনে থাকবে এখন?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
— মনে থাকবে শাহজাদী গুলবাহার….।
|
|
মা অসুস্থ থাকার জন্য আমরা দুই ভাই স্ত্রীদের সাথে নিয়ে মাকে দেখতে যাই। শ্রাবণী মাকে বললো,
-” মা, আপনার শরীরটা এখন ভালো নেই। আপনি নাহয় এখন আমাদের সাথেই থাকবেন।”
মা হেঁসে বললো,
~”না বউমা, আমি শহরে থাকলে দম বন্ধ হয়ে এমনিতেই মরে যাবো।”
তারপর মা আলমারি থেকে একটা সোনার হার বের করে শ্রাবণীর হাতে দিয়ে বললো,
~”বউমা, আমার বয়স হয়েছে। কখন কি হয় কি জানি! তুমি আমার প্রথম ছেলের বউ। এই গলার হারটা তুমি রাখো।”
শ্রাবণী মাথা নিচু করে হেঁসে বললো,
-” না মা, আপনার জিনিস আপনার কাছেই রাখুন। আমি নিয়ে কি করবো?”
মা বারবার জোর করছিলো আর শ্রাবণী বার বার না করছিলো। আমি আমার স্ত্রীর মনের কথা বুঝতে পারি। শ্রাবণী বলেছিলো, স্বামী স্ত্রী বাদে অন্য কারো কাছে স্ত্রীর না মানে না আর হ্যাঁ মানে হ্যাঁ। তারমানে শ্রাবণী সত্যিই মন থেকে নিতে চায় না। আমি তো আর্দশ স্বামী স্ত্রীর মন বুঝি। আমি তখন মাকে বললাম,
— মা, বাদ দাও তো। শ্রাবণী যেহেতু নিতে চাচ্ছে না শুধু শুধু ওকে জোর করো না। তোমার এতই যদি দেওয়ার ইচ্ছে থাকে তোমার ছোট ছেলের বউকে দিয়ে দাও।
আমার কথা শুনে মুহূর্তের মধ্যে শ্রাবণীর মুখটা কেমন জানি হয়ে গেলো। বুঝতে পারছিলাম না ও রাগ করেছে নাকি খুশি হয়েছে….।
পরদিন যখন ঢাকায় ফিরি শ্রাবণী পুরো রাস্তা আমার সাথে একটা কথাও বলে নি। বাসায় যখন ঢুকতে যাবো শ্রাবণী রেগে বললো,
— তুমি বাসায় ঢুকবে না। তোমার এই গাধা টাইপের মুখটা আমি দুইদিন দেখতে চাই না….।
—
—–
রাত ১১টা বাজে। মামুন আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,
~” তুই ভাবীর সাথে কেন সংসার করছিস বল তো? প্রতিদিন তোদের ঝগড়া হয়। দুইদিন পর পর তোকে বাসা থেকে বের করে দেয়। এইসবের কোন মানে হয়?
আমি হেসে মামুনকে উত্তর দিলাম,
— কেন সংসার করি বলবো? তাহলে শোন, আমি যদি কখনো অসুস্থ থাকি রাত ৩টার সময়ও যদি আমার ঘুম ভেঙে যায় চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি শ্রাবণী জেগে থেকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে শ্রাবণী। বিয়ের আগে রান্না করবে তো দূরের কথা নিজের ভাত কখনো বেড়ে খায় নি।অথচ সেই মেয়েটা বিয়ের এত বছর পরেও আমাকে একবেলা না খাইয়ে রাখে নি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা একটা মেয়ে। চাইলেই নিজের মেধা খাটিয়ে জব করতে পারতো। কিন্তু সে জব করে নি। সংসারটা মন দিয়ে করছে।
এখন তুই বল, যে মেয়েটা আমার জন্য এতোটা সেক্রিফাইজ করছে তার সাথে সংসার না করে উপায় আছে?
আমার কথা শুনে মামুন তখন বললো,
~”তাহলে তুই কেন ভাবীকে বুঝতে পারিস না?”
আমি আবারও মুচকি হেসে বললাম,
— কে বলেছে আমি আমার স্ত্রীকে বুঝতে পারি না! আমি সব বুঝি। তবুও আমি ইচ্ছে করে গাধামি করি কারণ আমি চাই না আমি শ্রাবণীর চোখে পরিবর্তন হই। ভার্সিটি জীবনে শ্রাবণী আমাকে ভালোই ভেসেছিলো আমার বোকা বোকা কাজ দেখে।
মামুনের সাথে কথা বলে হাঁটতে হাঁটতে বাসার সামনে এসে গেলাম। মামুনকে তখন বললাম,
— একটা সিগারেট দে তো
মামুন সিগারেটের প্যাকেটটা আমার হাতে দিয়ে অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~” তুই তো সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলি। আবার ধরলি নাকি?”
আমি সিগারেটে আগুন ধরিয়ে বললাম,
–উপরে বেলকনিতে তাকিয়ে দেখ শ্রাবণী আমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি সিগারেট খেয়ে বাসায় যাবো। ও রেগে যাবে। আমায় প্রচন্ডরকম বকাঝকা করবে। ওর রাগী চেহারা আর ওর শাসনটা আমার খুব ভালো লাগে। তাই একটা সিগারেট খাচ্ছি আর কি….।
—
——
পিয়াস বাসার ভিতর ঢুকে গেছে আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে মামুন ভাবছে,
সময়ের বিপরীতে পিয়াস, শ্রাবণী হাঁটছে। যে সময়ে স্বামী- স্ত্রী টুকটাক কথা কাটাকাটি হলেই ডিভোর্স হয়ে যায়। সেখানে ওরা দিনের পর দিন রাগারাগি ঝগড়া করে ভালোবাসা খুঁজে বেড়াচ্ছে….
স্ত্রীর_মন_বুঝা
আবুল_বাশার_পিয়াস