#দ্যা ব্লাক বুক
পর্ব ৩
#লেখক- Riaz Raj
————————–
লেখাগুলো পড়া শুরু করতে যাবো,ঠিক তখনি বইয়ের ভিতর থেকে দুইটা হাত বের হয়ে আসে। আগের বার ছিলো একটা হাত।এবার দুইটা। বের হয়েই আমার মুখ চেপে ধরে ভিতরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । একটু পরই আমাকে বইটি নিয়ে যাবে।কিন্তু কোথায়…?
আমি জানি বইটি কোনো অলৌকিক শক্তির অধীনে আছে। আগেরবার যেহেতু আমাকে অতীতকালে নিয়ে গিয়ে, বর্তমানের পরিস্থিতি পাল্টালতে সাহায্য করেছে। এবারও হয়তো তেমনি কিছু ঘটবে,যা বাস্তব জগতে মানুষ কখনোই বিশ্বাস করবেনা।
বইটি আমাকে অনেকে জোরে টেনে নিচ্ছে, তার অলৌকিক হাতের মাধ্যমে। পূর্বের ঘটনার মত হয়তো এবারও আমাকে ভালো কিছু উপহার দিবে। তাই আমিও আর জোর খাটালাম না। এবার নিজের ইচ্ছাতেই বইয়ের ভিতর মাথা ঢুকিয়ে দিয়েছি।বইটির ভিতরে যখন আমি প্রবেশ করতেছিলাম, তখন চোখের সামনে শুধু সাদা একটা আলো দেখতে পেয়েছি। এরপর চোখে শুধু সাদা রঙের আলো ছাড়া কিছুই দেখতে পাইনি। চোখটা খানিকক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায় আমার। কিছুক্ষন পর চোখ মেলে দেখি, আমি একটা মরুভূমিতে আছি। এইটা কোথায়? আর আমি কেনো এখানে এসেছি? বুঝে আসলো সেই বইয়ের কথা। নিশ্চয় সব কিছু সে বইয়ের কারসাজি। তবে আমি এখানে কেনো। এখানে নিয়ে আসার কারণ বা কি। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সে বইটি খুজতে লাগলাম। তবে কিছুই দেখতে পারছিনা আমি। হুট করেই চোখে পড়ে, অনেক দূরে একটা বসতবাড়ি দেখা যাচ্ছে। তাও গাছপালা সহ। হতে পারে এই মরুভূমির শেষ প্রান্ত ওখানেই হবে। মাথার উপর সূর্যের তাপ যেনো মাথা ছিদ্র করে ঢুকে যাচ্ছে। প্রচণ্ড রকমের গরম। ঘামে দেহের শার্ট ভিজে একাকার। তবুও কি বা করার। আমাকে যে লোকালয়ে যেতেই হবে। বিসমিল্লাহ্ বলে হাটা শুরু করি। পথ যেনো শেষ হবার নয়। আর সে লোকালয় যেনো ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। অনেকদূর হাটার পর প্রায় ক্লান্ত হয়ে যাই আমি। শরীর খুব দুর্বল বুঝতে পারছি। এদিকে গলা শুকিয়ে কাট হয়ে গেছে । আশেপাশে পানিও নেই। কিন্তু হেরে গেলে চলবে না। সামনের এলাকায় হয়তো পানির সন্ধান পাবো। আর এইটাও জানতে পারবো,যে আমি কোথায়। পায়ের পর পা চালিয়ে যাচ্ছি। হাটতে হাটতে অবশেষে আমি সেই এলাকার দ্বার প্রান্তে এসে পৌছাই। আর তখনি দেখি , কিছু মানুষজন সে লোকালয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছে। ওদের দেখতে বনমানুষ এর মত লাগে। কালো দেহ,তারউপর বডি বিল্ডার। আর গায়ে বড় বড় কয়েকটা পাতা দিয়ে লজ্জাস্থান ঢেকে রেখেছে। লম্বাতেও বেশ বড় মনে হচ্ছে । কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের মাফা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমার উচিৎ তাদের সাথে সাক্ষাৎ করা। যদি কোনো ভাবে আমি বাসায় ফিরতে পারি।তবেই মঙ্গল।
আমি পা চালাতে লাগলাম। উনারা আমার থেকে মাত্র ২০০-৩০০ হাত দূরে। তাদের দেখে কিছুটা শান্তনাও পেয়েছি। অবশেষে মানুষের দেখা তো মিলেই গেলো। আমি হেটে হেটে ওদের কাছে যেতেই, এক বৃদ্ধা লোক কু.. করে শব্দ করতে লাগলো। যেনো কিছু একটা ইঙ্গিত করছেন উনি । উনার কু কু কু শব্দের পর, এবার সবাই অর্থাৎ বৃদ্ধ লোকের পিছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো থাকা লোক গুলোও শব্দ করতে লাগলো। তারাও এক সাথে তাল মিলিয়ে কু কু কু করে শব্দ করে যাচ্ছে। উনাদের এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে বিস্মিত হয়ে গেলাম। এরা কি মানুষ? নাকি অন্য কিছু। সন্দেহ তো হচ্ছেই। হুট করে আবার পা থামিয়ে,দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি। আমি থেমে যাওয়ার সাথে সাথে,উনারাও চুপ হয়ে গেছে। ভারি অদ্ভুত তো? এরা কি ইঙ্গিত দিচ্ছে আমাকে। কিছুই তো বুঝতে পারছিনা। এই বই তো দেখছি আমাকে মহা বিপদে ফেলে দিলো। তবে বইয়ের ব্যবস্থা বেচে ফিরলে করবো । আগে আমি বাসায় যাই। কিন্তু এখন কি করবো আমি? এগিয়ে গেলে ওরা শব্দ করে উঠে।আর দাঁড়িয়ে থাকলে রৌদ্রে শুকিয়ে তকতা হয়ে যাবো। তবে এগিয়েই যাওয়া যাক। যা হবার পরে হবে। আগে আমায় পানি খেতে হবে,তারপর ভাগ্যে যা আছে,তাইই হবে। ভেবেই আবার পা চালাতে লাগলাম। সাথে সাথে ওরাও আবার কু কু কু শব্দ করতে লাগলো। অবাক হলেও আমি তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। এবার ওরা সবাই আবার চুপ হয়ে যায়। সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে, যেনো চিড়িয়াখানায় কোনো নতুন প্রানী এসেছে। সাহস করে আমিই তাদের বলছি,” ভাইয়ারা, এই জায়গার নাম কি? কেও বলবেন প্লিজ?”। ওরা আমার কথা শুনে নিজেদের মধ্যে হাবিজাবি কি সব বলে যাচ্ছে। যা আমার মাথার উপর দিয়েই যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ওদের মধ্যে সেই বৃদ্ধা লোক এসে আমাকে বলল,” হাওগা হিং হিং মৌ পা ইদারিসিং”। জিব্বা এক হাত বের করে আমি শুধু কথাটা শুনে গেলাম। এইটা কোন ভাষায় কথা বললেন উনি। এরা কি আসলেই মানুষ কিনা,সেটাই সন্দেহ হচ্ছে। আবার মনে পড়লো সে বইয়ের কথা। বইটা আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছে, তা ঘড়িতেই দেখা যাবে। হুট করে আমি ঘড়ির দিকে তাকাই। ঘড়িতে টাইম আর ডেট দেখে মাথার চুল খাড়া হয়ে যায় আমার। এ আমার কি সর্বনাশ হলো। ঘড়িতে সময় ০৩:২৪ pm, আর তারিখ হচ্ছে ০৫/০৮/১৫৮৮ সাল। প্রায় ৪৩২ বছর আগে চলে এসেছি আমি। এত বছর আগে এসে কি করবো আমি। সে বইটি আমার সাথে কেমন গেম খেলে যাচ্ছে। আর এই মানুষ গুলোও হচ্ছে আদিবাসী। এরা তো আমার সাথে কথাও বলতে পারবেনা। লোকটিও বা আমাকে কি জিজ্ঞেস করছে। উত্তর না দিলে আবার কি থেকে কি করে বসে কে জানে। এখন আমার একটাই রাস্তা আছে,তা হচ্ছে পালানো। এদিকে লোক গুলোও আমার দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। আবার সে লোক বলল,” ইয়াংগি হাল গাল মাল কিলা আচানিহা”?। আমি জানিনা ওরা কি বলছে, তবে তাদের মত আমিও বললাম,” আমিং এখং পালাবোং”।
এইটা বলেই দিলাম এক দৌড়। পানির পিপাসা পেয়েছিলো খুব। কিন্তু এখানে তো আমার জীবন হারানোর ভয় আছে। আমি দৌড়াচ্ছি,ওরাও আমার পিছু পিছু আসছে। একদিকে আমি ক্লান্ত,অন্য দিকে সাইজে তাদের থেকে ছোট। আমি ১ মিনিটে যতদূর যাচ্ছি,তারা ৪০ সেকেন্ডে ততদূর আসছে । অবশেষে ৫ মিনিট পর,একজন মহিলা,বিশাল বড় এক লাঠি দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। এরপর চোখে শুধু তারা দেখেছি।
চোখ খুলে দেখি আমি কোথাও যেনো ঝুলে আছি। চোখে অতটা স্পষ্ট দেখছিনা কিছু। ধীরে ধীরে চোখ স্পষ্ট হতেই খেয়াল করি, আমার হাত আর পা একটা লাঠির সাথে বাধা। তাও উপরের দিকে। আর আমার নিছে আগুন জ্বলছে। অর্থাৎ দুই পাশে দুইটা খুটি মাটিতে পুতে, উপরে একটা লাঠি বেধে দিয়েছে। আর আমাকে সেই লাঠির সাথে বেধে রেখেছে। আরো ভালো করে খেয়াল করে দেখি, আমাকে ঘিরে চারপাশ জুড়ে বনমানুষ গুলো ডান্স করতেছে। হাউ গাউ শাও এর মত একটা গানের তালে। নিজেরা মুখে গাচ্ছে,আর ডান্স করতেছে। বুঝে ফেলেছি, আজকে এরা আমাকে খাবার হিসেবে চালিয়ে দিবে। এ আমি কোথায় এসে পড়লাম। ১৫৮৮ সালে এসে আদিবাসীর খাবার হবো? আমি কি ফিরে যেতে পারবোনা..?
চলবে….?