#শারমিন আঁচল নিপা
[নোট- সবাই অবশ্যই কমেন্ট করবেন]
“অনন্যা চাচীকে পড়াশোনার কথা বলার কী দরকার ছিল? তোমাকে কেন আমরা পড়তে দিব আরও নষ্ট আর বেয়াদব হওয়ার জন্য? ভার্সিটি গিয়ে পতি/তাগিরি করার শখ তাই না? পই পই করে বলে দিচ্ছি বিয়ের আগে যা পড়েছো ঠিক আছে। এখন আর কোনো পড়াশোনার দরকার নেই। আমি বা আমার পরিবার কেউ চাচ্ছে না পড়াশোনা করো তুমি। আমার কোনো কিছুর অভাব নেই যে পড়াশোনা করে চাকুরি করতে হবে। এরপর এমন কথা মুখে আনলে মুখ ভেঙে দিব।”
আমি এবার শক্ত গলায় বলে উঠলাম
“বিয়ের আগে তো আপনি আমাকে এ শর্তে বিয়ে করেছেন। তাহলে এখন কেন শর্ত পাল্টাচ্ছেন? আমাকে জীবন মৃত করে দিয়েন না প্লিজ। এমনিতেও অনেক ঠকিয়েছেন। আমাকে আর ঠকিয়েন প্লিজ। আমাকে অন্তত পড়তে দিন। আমি আর কিছু চাই না। আমার স্বপ্ন পূরণ করতে দিন।”
দীপক এবার আমার গায়ে হাত তুলা শুরু করল। বেদরম কতক্ষণ পেটাল আমাকে। আমি কেবল মাই/র গুলো খেয়ে চুপসে রইলাম। গলা দিয়ে আওয়াজও বের হচ্ছে না। কেবল যন্ত্রণা হচ্ছে। সেদিন দীপক আমাকে মেরে বাইরে চলে যায়। আর ফিরে আসে না। বেহায়া মন তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে খেয়াল নেই।
আযানের শব্দ কানে আসছে। কোনোরকম উঠে অযু করলাম। তারপর নামাজে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লাম। নামাজ শেষে মোনাজাতে কান্নার জন্য আর কথা বলতে পারিনি। জানি না আমার এ কষ্টে আল্লাহর আরশ কাঁপে কি’না।
নামাজ শেষে লম্বা লম্বা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়তে ঘরের সাথে এটাচড থাকা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। অন্ধকার আকাশ ঘুচে আলোর দেখা মেলছে। মনে মনে আশা করতে লাগলাম হয়তো একদিন আমার জীবনের অমানিশা কেটে এভাবে আলোকিত হবে। সেদিন আমি হাসব প্রাণ খুলে হাসব। আমার ভেতরে থাকা সকল কষ্ট সেদিন ম্লান হয়ে যাবে।
বাইরে থেকে কেউ একজন ডাকছে মনে হচ্ছে। বারান্দা থেকে রুমের দিকে ছুটে এসে দেখলাম ফাতেমা ডাকছে। ফাতেমা এ বাড়ির কাজের মেয়ে। গ্রামে আসার পর থেকে ফাতেমায় এ বাড়ির সকল কাজ করে দেয়। ফাতেমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম
“ডাকছেন কেন?”
ফাতেমা বিরক্ত গলায় বলল
“আপা খালা কয়ছে এখন থেকে রান্না ঘরের সকল কাজ আপনি করবেন।”
আমি ফাতেমাকে বেশ স্বাভাবিক হয়েই জিজ্ঞেস করলাম
“এতদিন রান্না ঘরের কাজ কে করত?”
ফাতেমার মুখের বিরক্তি যেন আরও বেড়ে গেল। বিরক্তি নিয়েই বলল
“কেন? আমি করতাম। কিছু হয়ছে?”
আমি এবার একটু ব্যঙ্গ করে বললাম
“কী হবে। আমার তো কিছু হবে না। তবে তোমার যে কাজ কমাতে আনন্দ হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি। আমাকে তো তোমার অসহ্য লাগছে তাই না? তাই এত বিরক্তি নিয়ে কথা বলছো। আমি তো বাচ্চা তবে বোকা না। তোমার বিরক্তির কারণও আমি ধরতে পেরেছি। সহ্য হচ্ছে না বুঝি আমাকে? স্বপ্নের জায়গায় অন্য কাউকে দেখলে সহ্য হয় না। গতকাল রাতে কী হয়েছে সবই টের পেয়েছি। রুমে তো একা থাকো। তারপর জীন ভূতের নিঃশ্বাসের আওয়াজ বাইরে পর্যন্ত চলে এসেছে। একটু হলেও বুঝি সব।”
কথাটা বলেই রান্না ঘরে চলে আসলাম। গতকাল আমি কিছুই দেখিনি। তবে বিয়ের দিন সকালে আমি বুঝতে পেরেছিলাম ফাতেমার সাথে দীপকের কিছু একটা আছে। আর সেটা প্রকাশ পায় বৌভাতের সন্ধ্যায়। সন্ধ্যায় ফাতেমার রুম থেকে খালি গায়ে দীপককে বের হতে দেখে আমার আর বুঝার বাকি রইল না কিছু। তারপর আবারও নিশ্চিত হওয়ার জন্য যখন তার রুমে উঁকি দিলাম তখন খেয়াল করলাম ফাতেমা তড়িঘড়ি করে কাপড় পরছে। তাই ফাতেমারও আমাকে সহ্য হচ্ছে না। চায়লেই তো বাড়ির বউ হতে পারছে না। তবে ইচ্ছা তো ছিল ফাঁসিয়ে বউ হবে। সে ইচ্ছা এখনও পুষে রেখেছে। তাই আমাকে সরিয়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা তো তার মাঝে আছেই।
আমি রান্না ঘরে গিয়ে সকল রান্না করলাম। সবকিছু নিজ হাতে গুছালাম, পরিষ্কার করলাম। সব শেষ করতে করতে ৯ টা বেজে গেল। এবার আমি সকল কিছু শেষ করে চা বসালাম। এমন সময় পেছন থেকে মনে হলো কেউ জড়িয়ে ধরল। আমি ভয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। লক্ষ্য করলাম দুলাভাই দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে তিনিও হতচকিয়ে গেলেন। সবাই ঘুমন্ত ছিল তাই আমার চিৎকার সবার কানে পৌঁছায়নি। আমি জোর গলায় কিছু বলতে নিলে দুলাভাই আমার মুখ চেপে ধরে বলল
“আমি ভেবেছিলাম ফাতেমা দাঁড়িয়ে আছে। এখন যদি চিল্লাস তোর খবর আছে। আবার সবার সামনে অপমান করিয়ে ছাড়ব। “
আমি মুখ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম
“তা ফাতেমাকে যে এভাবে জড়িয়ে ধরেন সেটা কী আপা জানে? নাকি জানাব?”
দুলাভাই হেসে উত্তর দিল
“তোর কথা বিশ্বাস করলে তো।”
আমিও হেসে উত্তর দিলাম
“বিশ্বাস করবে না ঠিক। তবে মেয়ে মানুষ তো সন্দেহ আসবে মনে। তারপর নজরদারি বাড়বে। একসময় ধরা খেয়ে যাবেন। এ বাড়ির খেয়ে, এ বাড়ির পড়ে এত বড়ো বেইমানি কী তারা মেনে নিবে? ভালোই ভালোই বলছি এগুলো ছাড়ুন নাহয় নিজের পায়ের মাটি একদিন সরে যাবে। আমি অনেক ছোটো একটা মানুষ। তবে মনে রাখবেন ছোটো মরিচে ঝাল বেশি।”
দুলাভাই এবার আমতা আমতা করতে লাগলেন। মাথা নীচু করে চলে গেলেন। দুলাভাই যাওয়ার সাথে সাথে ফাতেমা ঢুকলো। আমার রাগ প্রচুর উঠে গেল। নিজেকে সংবরণ করতে পারলাম না। এক তো নিজের স্বামীর এত বড়ো নোংড়ামি নিজের চোখে দেখেছি তার উপর এ মেয়ের ত্যাজ। এ ত্যাজ কোথা থেকে আসে এখন বুঝতে পেরেছি। দীপকের সাথে এসব দেখে আমি এটা ভেবে চুপ ছিলাম হয়তো পরিস্থিতির শিকার হয়ে ফাতেমা এগুলো করতে বাধ্য হয়েছে। আর এখন হয়তো দীপককে ভালোবেসে ফেলেছে। তাই কিছু বলিনি। তবে দুলাভাইয়ের ঘটনার পর বুঝতে পারলাম ফাতেমার চরিত্রে সমস্যা আছে। সহজে ছাড় দিতে দিতে সবাই যেন মাথায় উঠে নাচছে। তাই প্রথমে শাড়িটা গুটিয়ে শাড়ির আঁচল কোমরে গুজে নিলাম। তারপর চুলগুলো খোঁপা করে ফাতেমার চুলের মুঠি ধরে আমার হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরলাম। এরপর বললাম
“মুখ দিয়ে যদি কোনো আওয়াজ বের হয় একদম আপার কাছে নালিশ চলে যাবে। আপার জামাইয়ের সাথে যে রঙ্গ লীলা চলে সেটা আপা জানলে তোকে জ্যা/ন্ত পু/তে ফেলবে। সুতরাং একদম চুপ। আর তোকে যদি দীপকের সাথে দেখি কখনও তোর চুল ছিড়ে দিব। মেরে হাড় ভে/ঙ্গে দিব। গাছের শক্ত ডাল ভেঙে অভ্যাস আছে। তোর মতো বেডির নরম হাড় ভা/ঙতে বেশি বেগ পুহাতে হবে না। আর আমি যখন কাজ করব সব কাজে সাহায্য করবি। তোকে কাজ করতে এনেছে রঙ্গলীলা করতে না। সাবধান করলাম, সাবধান হয়ে যা।”
বলেই চুলটা ছেড়ে রুমে চলে আসলাম। ভীষণ কান্না পাচ্ছে আমার। দীপকের বিয়ে চারিত্রিক সমস্যা এগুলো যেন মানতেই পারছি না। বয়সে বড়ো আশিক্ষিত এটা মানা কষ্টকর ছিল না। তবে চারিত্রিক দিক হয়তো কোনো স্ত্রী এই মানতে পারে না। এ কষ্ট কাউকে বলার মতো মানুষও নেই আবার সইবার মতো ক্ষমতাও যেন নেই। আজকের এ কষ্টের দহন যেন আমাকে পুড়িয়ে নিচ্ছে। ফাতেমার মতো যদি প্রতিটা মানুষকে এভাবে শাসন করতে পারতাম শান্তি লাগত। তবে সেটা সম্ভব নয়। দোষ তারা করলেও শালিস আমার নামেই বসবে। আমার বাবা মাও তাদের দোষ থাকলেও আমাকে দিয়েই পা ধরে মাফ চাইয়ে নিবে।
আমি খাটের উপর বসে হাটুঁ ভাজ করে দুই হাঁটুর মাঝখানে মাথাটা গুজে দিয়ে এসব ভাবছিলাম। এমন সময় ননাসের কর্কশ বাণীতে ননাসের দিকে তাকিয়ে আরও যেন ভয় পেয়ে গেলাম। কারণ
কপি করা নিষেধ
চলবে?
শারমিন নিপা
শারমিন আক্তার