অফিসে যাওয়ার জন্য যখন তৈরি হচ্ছিলাম তখন ছোটবোন অবনী আমার রুমের সামনে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি ওকে বললাম,
— কিরে, কিছু বলবি?
অবনী তখন বললো,
-“ভাইয়া আজ কিন্তু মাসের ৫তারিখ। তুমি বলেছিলে এই মাসের ৫তারিখ বেতন পেলে আমায় ফোন কিনে দিবে।”
আমি হেসে বললাম,
— যা সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময় তোর জন্য মোবাইল কিনে আনবো
অবনী আনন্দে উত্তেজিত হয়ে বললো,
-“তোমায় যে ফোনের কথা বলেছিলাম সে ফোনটাই কিনে দিতে হবে। অন্য ফোন দিলে আমি কিন্তু নিবো না।
আমি মুচকি হেসে বললাম,
— ঠিক আছে এটাই কিনে দিবো..
অবনী হাসতে হাসতে চলে গেলো। আমাদের ভাই বোনের কথা গুলো মনে হয় মা রুমের বাহিরে থেকে শুনেছিলো। মা তখন আমায় বললো,
-” তুই অবনীকে কিসের ফোন কিনে দিবি?”
আমি মাকে বললাম,
— কম দামী একটা একটা ফোন কিনে দিবো মা। ইন্টারে পড়ে একটা মেয়ে ফোন তো এখন লাগেই।
মা রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“সত্যি করে বল তো অবনী তোর কাছে কতটাকা দামের ফোন চেয়েছে?”
আমি মাকে কখনো মিথ্যা বলি না। তাই মাথা নিচু করে মাথা নিচু করে মাকে বললাম,
— বেশি না, যে ফোনটা চেয়েছে সেটার দাম ২২হাজার টাকার মতো।
আমার কথা শুনে মা আমায় বললো,
-“তুই ২৫হাজার টাকা বেতনের চাকরি করিস তার তোর বোন কিনা তোর কাছে ২২হাজার টাকা দামের ফোন চেয়ে বসে আছে। বাপ মরা মেয়ের এতো শখ কেন? দাড়া আমি জমিদারের মেয়েকে বুঝাচ্ছি।”
এই কথা বলে মা যখন চলে যাচ্ছিলো তখম আমি পিছন থেকে মায়ের হাত ধরে বললাম,
— মা তুমি অবনীকে কিছু বলবে না। ছোট বোন আমার কাছে একটা আবদার করেছে। আমি যদি সেটা পূরণ না করি তাহলে আমি কিসের বড় ভাই
মা মুখটা মলিন করে বললো,
-“কিন্ত তুই”–
— কোন কিন্তু না মা। টাকা আমি কোন না কোন ভাবে জোগাড় করে ফেলবো। তবুও আল্লাহর দোহাই লাগে তুমি আমার বোনকে কিছু বলো না…
এইকথা বলে আমি অফিসে যাওয়া উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলাম। একটা খালি রিকশা দেখে আমি ডাকতে চেয়েও ডাকলাম না। শুধু শুধু ২০টাকা রিকশাভাড়া দেওয়ার চেয়ে কিছুটা পথ না হয় হেঁটে গেলাম।
অফিসে ঢুকার আগ মুহূর্তে আমার আরেক ছোটবোন লাবণী আমায় ফোন দিয়ে বললো,
-“ভাইয়া মেসের ভাড়া বাড়িয়েছে, তাছাড়া এইমাসে আমার কিছু বই কিনতে হবে। তুমি এইমাসে আমায় ৫হাজার না ৮হাজার টাকা পাঠিও।”
আমি শান্তগলায় বললাম,
— ঠিক আছে তোকে ৮ হাজার টাকাই দিবো। তুই শুধু ভালো করে পড়াশোনা করিস। আর তোর যা যা লাগবে আমায় বলিস….
সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পথে লাবণীকে ৮হাজার টাকা পাঠালাম। বাসায় এসে অবনীকের হাতে ওর পছন্দের ফোনটা তুলে দিলাম। ফোনটা হাতে পেয়ে ছোটবোনের হাস্যেজ্জ্বল চেহারাটা দেখে আমার চোখে জল এসে গেলো। অবনী ফোন নিয়ে অন্য রুমে চলে গেলে মা আমার হাতটা ধরে বললো,
-“আমি তোর মা আমার কাছে মিথ্যা বলিস না। তুই এতো গুলো টাকা কোথায় পেলি?”
আমি মুচকি হেসে মাকে বললাম,
— আমার ফোনটা বিক্রি করে দিয়েছি।
মা তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-” তোর বাপ তো মরে গিয়ে বেঁচে গেছে। আর এই সংসার আর দুই বোনের দায়িত্ব তোর কাঁধে দিয়ে গেছে।”
আমি মাকে বললাম,
— তুমি শুধু দোয়া করো মা। আমি যেন ভাই হয়ে বাবার দায়িত্ব পালন করতে পারি।
পরেরদিন সকালে আমি আর ছোট বোন নাস্তার টেবিলে নাস্তা করছি আর মা অন্যরুমে ছিলো। হঠাৎ ছোট বোন আমার দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-“দেখো ভাইয়া আমরা এইখানে সবজি দিয়ে রুটি খাচ্ছি আর আপু ঐখানে বান্ধবীদের চাইনিজ খাওয়াচ্ছে”
অবনীর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে দেখি লাবনী ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছে আর ক্যাপশনে লেখা, “বান্ধবীদের আজ চাইনিজ খাওয়ালাম”
আমি অবনীকে বললাম,
–তোকেও চাইনিজ খাওয়াবো যদি এই কথাটা মাকে না বলিস
আমি আমার জায়গা থেকে সব সময় চেষ্টা করেছি আমার ছোট দুইবোনের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে। নিজে সল্প বেতনের চাকরি করার পরেও বোনদের পড়াশোনা করিয়েছি ভালো জায়গায় বিয়ে দিয়েছি।কখনো নিজের কথা ভাবি নি। একদিন মা আমায় ডেকে বললো,
-“অনেক তো এই সংসারের জন্য করলি। বোনদের বিয়েও দিলি। এইবার নিজের কথা ভাব। বয়সতো কম হয় নি। এইবার বিয়ে কর”
আমি তখন মাকে বললাম,
— মা, আমি চাচ্ছিলাম এই চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করতে। কিন্তু ব্যবসা করতে লাখ পাঁচেক টাকা লাগবে। কিন্তু এতো টাকা কোথায় পাবো সেটাই ভাবছি।
আমার কথা শুনে মা বললো,
-“গ্রামে যে তোর বাবার জায়গা আছে সেগুলো বিক্রি করে দে”
— কিন্তু মা এই জায়গাগুলোতে তো আমার বোনেরও হোক আছে। ওরা সম্মতি না দিলে আমি একা কি করে বিক্রি করবো?
মা আমায় বললো,
-“যে বোনদের জন্য তুই এতো কিছু করলি ওরা কখনোই আপত্তি জানাবে না দেখিস।”
পরের দিন মা আমার দুই বোনকে ফোন দিয়ে বাসায় এনে সম্পত্তির বিষয়টা বললো। ওরা দুইজনেই এক সাথে বলে উঠলো আমরা কেন আমাদের বাবার সম্পত্তির হোক ছাড়বো? আমাদের প্রাপ্য সম্পত্তি আমাদের হিসাব মতো বুঝিয়ে দিতে হবে।
মা অবাক হয়ে ওদের বললো,
-” তোদের বাপ মারা যাবার পর তোদের ভাই তোদের জন্য এতো বছর এতো কষ্ট করলো। তোরা কি পারিস না এইটুকু ছাড় দিতে৷ তাছাড়া তোদের স্বামীদের অবস্থা ভালো। সামান্য সম্পত্তির জন্য তো কিছু কমে যাবে না”
তখন ছোটবোন অবনী বললো,
-” কি এমন করেছে আমাদের ভাই আমাদের জন্য? আমরা অভাবেই বড় হয়েছি। তাছাড়া বড় ভাইয়ের কর্তব্য বড় ভাই পালন করেছে। তাই বলে আমাদের সম্পত্তি তাকে দিয়ে দিতে হবে নাকি?”
আর লাবণী বললো,
-“আমি হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করার সময় ভাই আমার খরচের বাহিরে একটাও বেশি দেয় নি। দরকার হলে আমার পিছনে ভাই যতটাকা খরচ করেছে আমি সব শোধ করে দিবো। তবুও বাপের সম্পত্তির ভাগ আমি ছাড়বো না।”
আমি বোনদের কথা শুনছিলাম আর নিরবে চোখের জল ফেলছিলাম। এতো কিছুর পরেও আমি বোনদের জন্য নাকি কিছুই করি নি।
আমি তখন মাকে বললাম,
— ওরা ঠিকিই বলেছে মা। আমি শুধু বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করেছি। এর জন্য তো আমি ওদের কাছে ওদের হোক দাবি করতে পারি না। আমি ওদের প্রাপ্য সম্পত্তি ওদের বুঝিয়ে দিবো
বোনরা চলে গেলে মা আমার হাতটা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-“বোনদের জন্য এতকিছু করে তুই কি পেলি বাবা?”
আমি কান্নাভেজা চোখে মুচকি হেসে মাকে বললাম,
–কিছু পাওয়ার জন্য তো আমি ওদের জন্য কিছু করি নি। আমি শুধু বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করেছি…
★★বড়ভাইয়ের_দায়িত্ব
★★আবুল_বাশার_পিয়াস
(সমাপ্ত)
ভালোবাসার আরেক নাম বড় ভাই “ভাবীর সংসার”
ভাবীর সংসার ১ম পর্ব।
কলি এই নিয়ে তিনবার ভাবীর রুমে গেল। তিনি হাত ইশারা করে বলছেন, এখান থেকে চলে যেতে, পরে আসতে। এই দিকে কলির কলেজ যাওয়ার দেরী হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভাবী ফোনে কথা বলেই যাচ্ছেন।
কলি এবার রুমে এসে তার বোন পলিকে বললো আপা, বাদ দেয় আজ কলেজ যাবো না। ভাবী ইচ্ছে করেই এসব করছে যাতে, আজ কলেজ যাওয়ার রিকশা ভাড়া টা না দিতে হয়।
– তাহলে চল, হেঁটে রওনা দেই।
– তুই কি পাগল হয়েছিস আপা?তিন কিলোমিটার দূরে কলেজ, কেমনে যাবো?
– তাহলে অপেক্ষা কর!
– আচ্ছা আপা, ভাইজান কি সকালে আমাদের হাতে চল্লিশ টাকা দিয়ে যেতে পারেনা? প্রতিদিন ভাবীর হাত থেকে চেয়ে নিতে হয়!
– এটা ভাবীর সংসার কলি। আর ভাইজান আমাদের টাকা দেন, এটা ভাবী পছন্দ করেন না।
কলির ভাবী, শারমিন জাহান, খুব অহংকারী একজন মানুষ। অহংকারের কারণ অনেক গুলোর মধ্যে প্রধান কারণ হলো উনার বাবা শফিক সাহেব, জেলা কৃষি কর্মকর্তা। তাছাড়া বাবার ছয়তলা বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে শহরের মধ্যেখানে, চার বোনের মধ্যে শারমিন সবার বড়, এবং আদরের। বাকি তিন বোনের মধ্যে আইরিন কলেজে, এবার এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিবে। তারিন পড়ছে ক্লাস টেনে, ছোট বোন আয়মন ক্লাস সেভেনে।
অন্যদিকে শারমিনের স্বামী, সৈয়দ সাঈদুজ্জামান হলেন কৃষি অধিদপ্তরের একজন অফিসার। ভদ্র এবং মেধাবী সাঈদ কে শফিক সাহেবের বেশ পছন্দ হয়। তাই তিনি সরাসরি সাঈদ কে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে বলেন সাঈদ তুমি কি আমার মেয়েকে বিয়ে করবে?
সাঈদ বেশ অবাক হলো এই কথাটি শুনে! কারণ শফিক সাহেবের মেয়ে এই বার মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছে। তাছাড়া সাঈদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা সুবিধার নয়, সাত ভাই-বোনের সংসার। স্কুল শিক্ষক বাবার সামান্য পেনশন আর তার বেতনের টাকার কিছু অংশে কোন রকম টেনেটুনে চলে সংসার। সেখানে তিনি হঠাৎ করে সাঈদকে কেন পছন্দ করলেন? এটা সাঈদ কোনভাবেই মেলাতে পারছেনা। তাছাড়া বয়স বত্রিশ হয়ে গেলেও সাঈদ বিয়ের ভাবনা এখনো ভাবেনি।
সাঈদ বললো আমার মা-বাবার কাছে আপনি প্রস্তাব দিয়ে দেখতে পারেন, তাছাড়া আমার পরিবারের আমি বড়।
– আমি গত মাসে তোমার বাড়ী দেখে এসেছি।
সাঈদ আরও অবাক হয়, তার বাড়ী দেখেও তিনি পছন্দ করেছেন! কারণ তাদের বাড়ীর অবস্থা তেমন সুবিধার নয়, বহু বছর বাড়ীর মেরামত হয়না। দুই কক্ষের টিনের একটা বাড়ী। যদিও গ্রামে সৈয়দ বাড়ীর আলাদা সুনাম আছে।
মাস দুয়েকের মধ্যে বিয়ে হয়ে যায় সাঈদের। বিয়ের পরে, শ্বশুড়ের বাসার পাশেই একটা বাড়ী ভাড়া নেয় সাঈদ। আর তার দুই বোন কলি আর পলি কে এনে ভর্তি করিয়ে দেয়, সরকারি মহিলা কলেজে। আর ছোট ভাই নাহিদ এস.এস.সি পাশ করার পর, ঢাকার কলেজে চান্স পেলেও টাকার হিসেব মিলাতে না পেরে তাকেও সরকারী কলেজে একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি করে দেয় সাঈদ।
বিয়ের তিন মাস পরেই সাঈদের বাবা স্ট্রোক করে মারা যান, তার মা রাহেলা বেগম বাকি তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে বাড়ীতেই থাকেন। স্বামীর পেনশন আর মেজ ছেলের টিউশনিতে চলছে সংসার। বিয়ের পর থেকে সাঈদ টাকা দিতে একদম পারছেনা। পলি, কলি আর নাহিদ কে সাঈদ, তার বাসায় রেখে পড়ার সুযোগ দিয়েছেন তাতেই খুব খুশি রাহেলা বেগম।
কলি জামা কাপড় বদলে বসে আছে, মন খারাপ করে। পলি এখনো কাপড় পরেই আছে। শারমিন এসে রুমে ঢুকে বললেন, কি কলি? বার বার রুমে যাচ্ছিলে কেন? মামীর সাথে কথা বলছিলাম।
– ভাবী,
– কি?
– ভাড়ার জন্য…
– দুই বোন গল্প করতে করতে হেঁটে হেঁটে চলে যাবে। প্রতিদিন রিকশা করে যেয়ে কি লাভ?
কলি তখন বললো আজ আর যাবো না ভাবী, থাক ভাড়া লাগবেনা।
– ওহ, তাইতো কলেজে প্রতিদিন গিয়ে কি করবে? অনার্সে কেউ রেগুলার কলেজ যায় নাকি!
– জি ভাবী।
পলি আসো আমি মুরগী রান্না করবো, আমার একটু ঝামেলা হয়ে যায়, তুমি দেখিয়ে দিবে।
– কাপড় টা বদলে আসি?
– আচ্ছা। তাড়াতাড়ি এসো।
পলি, ভাবী যাওয়ার সাথে সাথে বললো এই কলি কেন বললি আজ যাবিনা? এখনো গেলে আরও দুটি ক্লাস করা যেতো।
– শোন, আপা আমি তোর মতো এতো বেহায়া না, দেখেছিস ভাবী চল্লিশ টাকা বেঁচে যাওয়ায় কি খুশি হয়েছে।
– আমি বেহায়া না হলে, তিন বার আব্বা আমার পড়া বাদ দিলেন। এখন দুই বছর গ্যাপ দিয়ে তোর সাথে অনার্সে ভর্তি হই?
– যা, যা। মুরগী রান্না কর।
– মন খারাপ করিস না, কাল কলেজ যাবো। এখন পারলে একটু পড়। নাহিদ আসবে কখন?
– জানিনা।
পলি রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে আছে, আর বলছে হলুদ দুই চামচ দেন ভাবী, মরিচ দুই চামচ দেন। পলি যেভাবে বলছে সেভাবেই রান্না করছে শারমিন। সে রান্নার কিছুই পারেনা। ঘরের কাজের মেয়ে মারুফা ফিক করে হেসে বললো মামী দেহি কিচ্ছু ফারেনা।
– তুই হাসিস কেন? একদম চড় দিমু।
– আইচ্ছা হাসতাছিনা।
নাহিদ ঠিক দুপুর একটায় বাসায় এসে ঢুকলো, এসেই কলি কে বললো ছোট আপু যা, কিছু খাবার নিয়ে আয়। খুব ক্ষিধা লাগছে, পেট মুচড়ে যাচ্ছে।
– রান্না শেষ হয়নি।
এর মধ্যে পলি এসে বললো কি রে তুই চলে এসেছিস দেখছি।
– আপা, পারলে কিছু খাবার দেয়, ক্ষিধা লাগছে। বিস্কুট মুড়ি, খই। যা থাকে নিয়ে আয়।
পলি রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো ভাবী নেই।মারুফা বসে বসে লেবু কাটছে।
কি রে মারুফা মিট সেইফে তালা দিল কে? বিস্কুট নিতে চেয়েছিলাম।
– মামী দিয়েছে তালা।
– ওহ। আচ্ছা।
পলি রুমে গিয়ে বললো, নাহিদ কিচ্ছু নাই রে।
– কিছুই নাই?
– না।
কলি বললো কেন কাল দেখলাম ভাইজান, এক প্যাকেট বিস্কুট, চানাচুর আর মুড়ি এনেছে। এগুলো শেষ হয়ে গেল?
– হ্যা।
নাহিদ শোন, গত কাল কিছুদূর হেঁটে রিকশায় আসায় ৫ টাকা কম ভাড়া দিয়েছিলাম। এই নেয় পাঁচ টাকা, মোড়ের দোকান থেকে একটা বনরুটি খেয়ে আয়।
– না, থাক। একটু পরে ভাত খেয়ে নিব।
– ভাত, এখনো ভাবী বসায় নি। তরকারি হচ্ছে।
– তাহলে দেয়, বন রুটি খেয়ে আসি।
নাহিদ যাওয়ার পর পলি বললো ভাবী মিটসেইফ তালা দিয়ে রেখেছে।
– কেন আমরা সব খেয়ে নিব এজন্য?
– সেটা জানিনা।
– তুই বুঝেও চুপ করে থাকিস। আর শোন ইচ্ছে করে ভাত সবার শেষে রান্না করে। যাতে, আমরা আগে নিয়ে খেতে না পারি।
– কলি, মা কি বলেছে ভুলে গিয়েছিস? মা বলেছে চুপ করে থাকতে, এটা ভাবীর সংসার।
থাকছিস, খাচ্ছিস এটাই বেশি।
– আমাদের ভাইজানের তো টাকা।
– ভাইজান এখন বিবাহিত, সুতরাং তার সংসার এটা। আমি ভাত বসাতে পারি কিনা, দেখি। পাগলার ক্ষিদে লাগছে।
– আপা, তুই বড় মিথ্যুক। কাল কখন রিকশাওয়ালা পাঁচ টাকা কম নিল?
– এটা না বললে নাহিদ টাকা নিতো না। এজন্য বলেছি। আচ্ছা আমি যাই।
পলি ভাত বসানোর পরে শারমিন এসে বললেন মাত্র দেড়টা বাজে, এখন ভাত বসিয়ে দিলে? তোমার ভাইজান আসে চারটায়, আমি তার সাথে খাই। আমি ঠান্ডা ভাত খেতে পারিনা।
পলি ভাতের বলকের উঠা দেখছে আর ভাবছে, কবে মেজ ভাইজানের চাকরী হবে? বড় আপার বিয়ে হবে? তাদের পড়াশোনা শেষ হবে? কত দিন ভাবীর সংসারের আগাছা হয়ে থাকতে হবে? বাবা কেন এতো তাড়াতাড়ি মরে গেলে!
নাহিদ পিছন থেকে এসে বলছে, তাড়াতাড়ি ভাত রান্না শেষ কর, গোসল করেই খাবো।
পলি ভাবছে নিজে নিজে ভাত নিলে, ভাবী যদি রাগ করে? মুরগীর কোন পিস নাহিদ কে দিবে? কাচের প্লেটে ভাত বাড়লে কি ভাবী রাগ করবে? একদৃষ্টিতে দূরের মাটের দিকে তাকিয়ে কত কিছু ভাবছে পলি…..
চলবে….
আন্নামা চৌধুরী।
সকল পর্ব একসাথে পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন
https://kobitor.com/category/uponas/vabirsongsar/