®রোজা রহমান
‘
” তুমি এখানে কি করছো এইসময়ে? আর তোমার হাতে কি ওটা? ”
কুয়াশার কথায় শিশির ঘুরল ওর দিকে। ঘুরে এক পল ও দেরি করল না তৎক্ষনাৎ দরজার সামনে থেকে বিদ্যুৎ বেগে কুয়াশার কাছে এসে ওর খুলে রাখা চুল জোরে টেনে ধরে নিজের বুকে এনে ফেলল পিছন ঘুরিয়ে৷ মানে কুয়াশার পিঠি শিশিরের বুকের সাথে লেপ্টে। কুয়াশা ব্যথায় ‘আহ’ বলে চেঁচিয়ে উঠল। শিশির বাম হাতে ধরে রাখা চুল ছেড়ে দিয়ে সেই হাত কুয়াশার গলার উপর দিয়ে গলিয়ে অর্থাৎ বামে থেকে ডানে গলিয়ে কুয়াশার ডান বাহু সহ কাঁধ চেপে ধরল। এমন ভাবে ধরল যেন কুয়াশার কাঁধ আজ ভেঙে দেবার পণ করেছে সে৷
কুয়াশা গুঙিয়ে উঠল৷ সেটা একচুল পরিমাণও পাত্তা দিল না শিশির৷ কারণ তার ধৈর্যের সীমা পাড় হয়ে গেছে। যে মেয়েকে সহ্য করতে পারে না তার থেকে হেনস্তা হয়েছে তাও আবার দুই দুই বার! সকলের সামনে অপমান করেছে। লোকের সামনে কিচ্ছু বলতে পারে নি বলে এখন ছেড়ে দেবে তার কোনো মানেই হয় না। সবাই তাকে নিয়ে আদিক্ষেতা করলেও সে কখনো এই মেয়েকে নিয়ে আদিক্ষেতা করবে না। এই মেয়েকে নিয়ে আদিক্ষেতা করতে সে নারাজ, প্রশ্নই আসে না৷
কুয়াশার ব্যথায় চোখ ভিজে এলো। গলা সহ কাঁধ চেপে ধরাতে অস্পষ্ট স্বরে বলল,
” ছাড় আমার লাগছে ”
” ছেড়ে দেবার জন্য তো ধরি নি তোকে। আমাকে নিমপাতা, বুনো ওল খাইয়েছিস না? এবার তোকে এই এক গ্লাস করলার শরবত খাইয়ে তবেই আমি আমার প্রাণ জুড়োব। খুব বাড় বেড়েছিস নাহ্? দুইদিন কিছু বলি না বলে? তোকে নিয়ে আদিক্ষেতা করার সময় আমার নেই। অন্যরা করলেও আমার কাছে খবরদা আদিক্ষেতা দেখাতে আসবি না। কেউ না তুই আমার, তবে কেন তোর জ্বালা আমি সহ্য করব? যারা সহ্য করে তাদের কাছে যাবি। ভাইয়ারা তোকে আদর দিয়ে বেয়াদবে পরিণত করেছে। আমার থেকে সেসব আশাও করবি না। ”
বলা শেষ করে ডান হাতের শরবতটা কুয়াশার মুখের সামনে আনতেই কুয়াশা মাথা নিচু করে শিশিরের হাতের কব্জার উপর কামড় বসিয়ে দিল। জোরে করেই দিয়েছে। শিশির তবুও ছাড়ল না কুয়াশাকে। দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করতে করতে কুয়াশাকে নিয়ের ড্রেসিংটেবিলের কাছে এগিয়ে গেল। হাতের গ্লাসটা রেখে সেই হাতে কুয়াশার চোয়াল চেপে ধরে। এতটা জোরেই ধরল মনে হলো কুয়াশার দাঁতের সাথে চোয়াল লেগে কেটে যাচ্ছে। আবার গুঙিয়ে উঠল সে। এবার চোখের পানি বেড়িয়ে এলো৷ শব্দহীন চোখের পানি ফেলছে৷ কিন্তু শরীরে তার জেদ। একচুলও ছাড় দেবে না। তাই দুই হাত দিয়ে শিশিরের হাতে নখ বসিয়ে দিল। যতটা যন্ত্রণা তার গালে হচ্ছে ঠিক ততটা জোর দিয়ে খামচি দিচ্ছে শিশিরের হাতে। ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশির সেটাকে পাত্তা দিল না।
‘
এখানে দু’জনের মধ্যে সমানতালে হাতাহাতি চলছে। কেউ কাউকে একচুল পরিমাণে ছাড় দিতে নারাজ। দুইজনের ঘৃণা যেন আজ সপ্তম আসমানে চলে গেছে৷ একে অপরকে রক্তাত্ব করে দিচ্ছে তবুও ছাড়ছে না। কিসের ছাড়া ছাড়ি? তারা কি একে অপরকে ছাড়তে ধরেছে? তাদের জন্মর পর থেকেই তারা একে অপরকে ধরতে ধরতে এত দূর এসেছে৷ সেই ছোটকালে যেমনটা ঘৃণা নিয়ে মা-রা মা-রি করত আজ ঠিক তেমন ভাবে হাড্ডা হাড্ডি মা-রা মা-রি করছে। ছোট কালে এমন মা-রা মা-রি বাড়ির লোকের সামনে করত না আজও ঠিক বাড়ির লোকের সামনে করছে না। কেউ বাঁধা দেবার মতো নেই। আবার মা-রা মা-রি করে দু’জনের একজনও বাড়ির লোককে জানতে দিত না আজও দেবে না।
এদের হৃদয়ে একে অপরের জন্য ঘৃণা, হিংসা ঠিক এতটায়। এরা কোনো আপস করে না। কিসের আপস? কার সাথে আপস? যাকে দেখলেই শরীর জ্বলে তার সাথে আপসের কোনো মানেই হয় না৷ কুয়াশার ভাবনা পৃথিবীর এই লোক তাকে সহ্য করতে পারে না আর শিশিরের ভাবনা পৃথিবীর এই একটা মেয়ে যাকে তার দু’চোক্ষেও দেখতে ইচ্ছে করে না৷
‘
শিশির এবার বাহু ধরে রাখা হাত টা নামিয়ে চোয়াল ধরে রাখা হাত সরিয়ে সেই হাতে গাল টিপে ধরে মুখ হা করাল কুয়াশার। কুয়াশার ঠোঁট জোড়া গোল হয়ে এলো। মুখ খুলে দিল শিশির তৎক্ষনাৎ গ্লাস তুলে নিয়ে কুয়াশার মুখে পুরে দিল। কুয়াশা এবার ছাড়া পাবার জন্য তড়পাতে লাগল। জঘন্য তেতো আর জঘন্য গন্ধ কাঁচা করলার। পেটের মধ্যে পাঁক দিয়ে উঠল৷ নাড়িভুড়ি সব উল্টে আসছে।
উম উম শব্দ করছে মুখে কিন্তু শিশির ওর কাজে ব্যস্ত। কুয়াশাকে পুরো গ্লাসের শরবত খাইয়েই সে ক্ষ্যান্ত হবে৷ শিশিরের বুকের সাথেই সে মোচড়াতে লাগল। সে ঐ কাঁচা করলার শরবতের গন্ধ এবং স্বাদ কোনোটায় নিতে পারছে না। ব্যথা এবং জঘন্য খাবার দু’টো মিলিয়ে তার ভেতরটা পর্যন্ত তেতো করে দিল। শিশিরের জন্য ঘৃণা, অভিমান আরো দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেল। চোখ থেকে টুপটুপ করে অনবরত পানি পড়ছে৷ আর সহ্য করতে পারছে না। একদম বরফের ন্যায় জমে গেল। শান্ত হয়ে গেল সে। আর মোচড়া মুচড়ি করছে না। বুঝে গেছে ছাড় সে পাবে না৷ মানুষটায় এমন, ছাড় সে দেবে না। নিজের কার্জসিদ্ধি হাসিল করেই সে ক্ষ্যান্ত হবে।
শিশির পুরোটা গ্লাস ফাঁকা করে কুয়াশাকে ঝটকা মেয়ে দূরে ঠেলে দিল৷ শরবত মেখে মুখ, গলা, বুক, জামা সব ভিজে গেছে। মেয়েটার চোখ মুখ উল্টে আসছে। নাড়িভুড়ি পেটের মধ্যে আর থাকতে চাইছে না। জঘন্য অনুভূতি হচ্ছে। লাল টুকটুকে মুখ ও চোখ ভয়ংকর ভাব লাগছে৷ চোখে সব ঘোলা দেখছে৷ কুয়াশার অবস্থা দেখেও একচুল পরিমাণও দয়া দেখাল না সে৷ বলল,
” এবার বুঝে নে আমি কি জিনিস! বলেছিলাম না? এখান থেকে বের হতে দে তোর ডানা ছাঁটার দায়িত্ব আমি নিজে নেব। দেখ, তোর ডানা ছাঁটা কেন পুরো তোর অবস্থায় বেহাল করলাম৷ ফারদার আর লাগতে আসবি না৷ আমার থেকে দূরে থাকবি”
যতই বলুক দূরে থাকবি, সত্যি দূরে থাকতে পারবে? নাকি থাকা যাবে? শিশিরের কথা শেষ হতে না হতেই কুয়াশা শিশিরের গা পুরো ভাসিয়ে দিল। হরহর করে সব তুলে দিল। সে আর সহ্য করতে পারে নি৷ দুপুরে তেল মসলার খাবার খেয়ে এসে সেই পেটে এমন জঘন্য তেতো আর জঘন্য গন্ধের জিনিস তার শরীর এবং পেট কোনোটায় নিতে পারল না।
বমি করল তো করল একদম শিশিরের উপর। ছিঃহ ছিঃহ কী জঘন্য কাজ হলো! শিশির আৎকে উঠল৷ দূরে সরে গেল। তবুও কুয়াশা আবার করল বমি। শিশির পুরো হতভম্ব হয়ে গেল। বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চোখ বর বড় করে শুধু দেখে গেল। এখন তার কী বলা উচিত? বা করা উচিত মাথায় এলো না। এই গোবর ঠাঁসাকে ঠাটিয়ে থাপ্পড় দিলে কি গায়ের জ্বালা মিটতো? মেজাজ টা তার শরীর ঘিনঘিনের সাথে বেড়ে লা’ভার ন্যায় জ্বলে উঠল৷ মাথায় রাগ উঠে কপালের রগ দপদপ করতে লাগল। একবার নিজের অবস্থা দেখতে লাগল এবার কুয়াশার।
এইরকম পরিস্থিতি দেখে তার নিজেরই বমি এলো। কুয়াশার সাথে কি তারও বমি করা উচিত? সেও কি বমি করে দিবে? নাড়িভুড়ি তো তার নিজেরও উল্টে আসছে এবার। বিস্ময় নিয়ে রাম ধমক দিয়ে উঠল,
” এ্যাই গোবর ঠাঁসার বাচ্চা..! এটা কী করলি তুই? ”
বলে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় দেবার উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেল কুয়াশার দিকে কুয়াশা মাথা নিচু করে এবার ফ্লোরে বমি করে দিল৷ আর কিছুই নেই পেটে৷ পেট একদম ফাঁকা হয়ে গেল৷ পেট ধরে আছে কুয়াশা। শিশির আবার দূরে সরে গেছে৷ এ বমি দিয়েই শিশিরকে শিক্ষা দিচ্ছে বুঝতে পারল শিশির। ফ্লোর ভেসে গেল বমিতে।
কুয়াশা পেট ধরে আর সহ্য করতে পারল না। শুধু অস্পষ্ট স্বরে ডাকল,
” ভাইয়া…! ”
তারপরই ঠাস করে উল্টে পরল। মাথাটা ফ্লোরে বাড়ি খেল। শব্দে বলে দিল অতি জোরে আঘাত লেগেছে মাথায়। ফেঁটে টেতে কি গেল মাথা? শিশির এবার বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। সব কিছু এত জলদি ঘটল যে সে চেয়েও কিছু করতে পারল না। কুয়াশার কান্না জড়ানো অস্পষ্ট স্বরে ভাইয়া ডাক তাকে নাড়িয়ে দিতে সক্ষম হলো৷ ঘৃণা রাগ, ঘিনঘিন অনুভূতি একপাশে রেখে সে সেকেন্ডের মাঝের ফ্লোরে বসে পড়ল কুয়াশার কাছে। মাথা দু’হাতে আজলাই নিয়ে দেখল ফেটেছে কিনা। নাহ্ ফাটে নি কিন্তু সাথে সাথে রক্ত জমাট বেঁধে ফুলে উঠল। শিশির এবার দিশাহারা হয়ে গেল। পার্লস চেক করে দেখল অজ্ঞান হয়ে গেছে। বমির ধাক্কা, শিশিরের চেপে ধরে রাখার ধাক্কা কোনোটায় নিতে পারে নি সে।
একের পর এক কুয়াশাকে ডাকতে লাগল। কিন্তু শুনল না কুয়াশা। উঠলও না কুয়াশা। রাগের মাথায় কি করে ফেলেছে এবার বুঝছে। কে বলবে দরদ নেই এই ছেলের মাঝে? কুয়াশার অজ্ঞান হওয়াতে তার মুখ শুকিয়ে গেছে৷ ভয় পেয়ে ঘাবড়ে গেছে। রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না।
‘
রাগটা এতটা তুলার দরকার ছিল না। এখন বুঝতে পারছে। এই রাগ মানুষকে যে কত কিছু করতে বাধ্য করে! রাগ মানুষকে খু- ন করাতে সক্ষম হয়, গড়া সংসার ভাঙাতে সক্ষম হয়, বিচ্ছেদ ঘটাতে সক্ষম হয়। জগৎ সংসারে রাগই একমাত্র সবকিছু ধ্বংসের মূল। রাগ যারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তারাই প্রকৃত ধৈর্যশীল।
আসলে এটা ঠিক রাগ উঠলে কিছু নিয়ন্ত্রণে আসে না৷ এমন রাগ না করাই উচিত যেটাতে সব কিছু ধ্বংস হয়।
‘
ডাকার পরেও যখন কাজ হলো না তখন আর কিছু না ভেবে কুয়াশাকে কোলে তুলে বাথরুমে নিয়ে গেল। এছাড়া আর উপায় নেই। আগে পরিষ্কার হতে হবে। এভাবে থাকলে সে নিজেও কখন বমি করে দেবে। ঘিনঘিন করছে শরীর। রাগ হচ্ছে আবার কুয়াশার করুণ অবস্থা দেখে মায়াও হচ্ছে। আর বাড়ির লোক যদি এসব জানে এই বিয়ের বাড়িতেই হুলুস্থুল বেঁধে যাবে৷ রাগারাগি করবে যেটা সে এখন চাচ্ছে না। নিজে যখন দোষী নিজেই সমাধান করুক।
বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে দিল। কুয়াশা এখনো কোলে শিশিরের৷ দুজনেই ভিজে গেল। ডাকতে লাগল কুয়াশাকে,
” কুয়াশা, এ্যাই কুয়াশা!! ”
সারা দিল না সে। এবার কোল থেকে নামিয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে দিল। কুয়াশার মাথা শিশিরের বুকে। এক হাতে পিঠের উপর দিয়ে বাহু চেপে ধরল অন্যহাতে গালের উপর আলতো থাপ্পড় দিতে দিতে ডাকল,
” কুয়াশা, এ্যাই কুয়াশা..! ওঠ। কুয়াশা! ”
অনবরত থাপ্পড় এবং মুখে চোখে ঝরনার পানি পরার দরুন জ্ঞান ফিরল। পিট পিট করে তাকাল। শিশির বলল,
” এ্যাই.. ঠিক আছিস তুই? ”
কথা বলল না কুয়াশা। শরীর কাঁপছে তার। থরথর করে কাঁপছে। মিনিটের মধ্যে শরীর গরম হয়ে এলো। জ্বর এসে গেল নাকি?
” কুয়াশা ওঠ, এ্যাই! ”
চোখ বন্ধ করে পড়ে রইল শিশিরের বুকে। তার পা ভেঙে আসছে। শরীরের জোর নেই। বমি করলে তো এমনই শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়! সেখানে আবার জ্বর এসে গেছে। কুয়াশার জ্বর শরীরের গরম পানি শিশিরে শরীরে প্রবেশ করছে। সে বুঝতে পারছে জ্বর বেশ ভালোভাবে হানা দিয়েছে। কুয়াশাকে বসিয়ে দিল শাওয়ারের নিচে, চোখ তার বন্ধ। এরপর নিজের শরীর থেকে বমিতে ভরা সাদা টি-শার্টটা খুলে ফেলল একটানে। আগে নিজেকে পরিষ্কার করে নিল। নিচের কালো টাউজার টা ভালো করে ধুয়ে সাবান দিল শরীরে। শাওয়ার বন্ধ করে বেড়িয়ে এলো কুয়াশাকে রেখে। নিজের ফোন নেই তাই কুয়াশার ফোন থেকে স্মৃতির নাম্বারে কল দিল৷ পাসওয়ার্ড দেয়া ছিল না। কারণ কুয়াশার কোনো গোপন জিনিস নেই যেটার জন্য পাসওয়ার্ড দিবে।
স্মৃতি কল ধরলে তৎক্ষনাৎ শিশির কিছু বলার সু্যোগ না দিয়ে বলল,
” স্মৃতি? তোমার আশেপাশে রিজভী আছে? থাকলে ফোনটা ওকে দাও তো জলদি! “
” কি হয়েছে ভাইয়া? আপনার কন্ঠে এমন কেন আর এটা তো কুয়াশার নাম্বার। ও ঠিক আছে? “
” সব বলছি আগে রিজভীকে দাও ”
কন্ঠটা এবার কঠিন শোনাল। স্মৃতি আর প্রশ্ন করল না। সে ফোন কানে রেখে আশেপাশে চোখ বুলাল। দেখল সোফায় অয়ন, নীহারের সাথে বসে কথা বলছে। সে একটু ইতস্তত করে এগিয়ে গিয়ে রিজভী কে ডাকল,
” রিজভী ভাইয়া..! ”
রিজভী তাকালে বলল,
” একটু দরকার ছিল “
রিজভী উঠে এলে একটু আড়ালে গেল৷ ফোন দিয়ে জানাল শিশির কথা বলবে৷ রিজভী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ফোন নিয়ে কানে ধরল৷ বলল,
” কিরে শিশির? ঠিক আছে সব? ”
শিশির সেটার উত্তর না দিয়ে বলল,
” সব বলব আগে স্মৃতিকে নিয়ে কুয়াশার ঘরে আয়৷ কেউ যেন না জানে৷ আর আসার আগে আমার ঘর থেকে টি-শার্ট আর টাউজার নিয়ে আসবি৷ জলদি আয় সময় পাঁচ মিনিট দিলাম ”
বলেই ফোন কেটে দিল৷ সে হতভম্ব হয়ে গেল। স্মৃতিকে ফোন দিতে দিতে শিশিরের বলা কথাগুলো বলল৷ এরপর দু’জন তৎক্ষনাৎ উপরের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরল। কারণ সময় পাঁচ মিনিট।
‘
কুয়াশার ঘরের কাছে এসে চারিদিকে নজর দিল নাহ্ কেউ দেখছে না। নক করতেই শিশির সাথে সাথে খুলে দিল দরজা। রিজভীন,স্মৃতি কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাত দিয়ে রিজভীকে টেনে নিয়ে স্মৃতিকে জলদি ঢুকতে বলল। স্মৃতি ঢুকতেই দরজা আবার বন্ধ করে দিল।
ওরা দুজন ঘরে ঢুকে হতবাক, হতবুদ্ধি হয়ে গেল। কারণ শিশিরের পরনে ভেজা টাউজার আর শরীরে কুয়াশার একটা সুতোর ওড়না জড়ানো এরপর ফ্লোরে চোখ দিয়ে দেখল ফ্লোরের অবস্থা খারাপ। দু’জনেরই একটু ঘৃণা এলো৷ চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল। রিজভী বিস্ময় কাটিয়ে বলল,
” এসব কি শিশির? আর তুই এই ঘরে এই অবস্থায় কেন? “
শিশির প্রশ্ন শুনে শর্টকাটে সব বিস্তারিত বলল। রিজভী শুনে বেজায় রেগে গেল৷ স্মৃতি শুনে হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল৷ রিজভী বলল,
” বা*** পাগল নাকি তুই? এইসব কি ধরনের কাজ? তুই কি অবুঝ? তোর থেকে এসব শুনতে হবে ভাবানায় আসে না আমার। কিরে তোরা হ্যাঁ? ”
শিশির কিছু বলল না। শুধু বলল,
” রাগের মাথায়… ”
কথা পুরো করতে না দিয়ে রিজভী বলল,
” বা*** রাগ তোর শা-লা। ছোট একটা মেয়ের সাথে সব সময় লাগিস! কবে বুদ্ধি সুদ্ধি হবে তোদের? ”
শিশির রিজভীর কথার উত্তর না করে স্মৃতিকে বলল,
” স্মৃতি, ঐ দেখো আলমারি ওখান থেকে কুয়াশার ড্রেস নিয়ে কাইন্ডলি ওকে একটু চেঞ্জ করিয়ে দাও। জ্বর এসে গেছে ভেজা শরীরে থাকলে সমস্যা হবে। আমরা বেলকুনিতে থাকছি হয়ে এলে বলো। ”
বলে চলে গেল শিশির রিজভীকে নিয়ে। সেখান থেকে শিশির চেঞ্জ করে নিল। রিজভী আরো কিছুক্ষণ তাকে বকে নিল আচ্ছামত। সেগুলো সে মুখ বুঁজে গিলল। অন্যসময় হলে গিলত না৷
‘
স্মৃতি ঢুকে কুয়াশার অবস্থা দেখে হা হয়ে গেল। মেয়েটা থরথর করে কাঁপছে। দাঁতে দাঁত লেগে গেছে। ঠোঁট দু’টো জড়িয়ে ছোট হয়ে আছে। গুটিশুটি হয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে ভেজা শরীরে। পরনে তার লেহেঙ্গা। কুয়াসা পাশে শিশিরের টি-শার্ট পরে আছে৷ সেদিকে একবার দেখে সে কুয়াশাকে ডাকল,
” কুশু..! এ্যাই কুশু? শুনতে পারছিস? দোস্ত একটু উঠে দাঁড়া তোর ড্রেস পাল্টাতে হবে। ওঠ ”
বলে সে কুয়াশাকে ধরে দাঁড় করাল৷ শরীর পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে৷ স্মৃতির শরীর স্বাস্থ্য ভালো হওয়াতে কুয়াশাকে টেনে তুলতে পারল৷ কুয়াশা পিটপিট করে তাকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলল,
” শীতত”
স্মৃতির খুব খারাপ লাগল মেয়েটার অবস্থা দেখে। মনে মনে শিশিরকে কয়েকটা খারাপ কথাও শোনাল। মেয়েটা নাহয় একটু মজা করেছেই!!
সে কুয়াশাকে পাশে থাকা টুলের উপর বসাল আপাতত। তারপর কোনো মতে খুব জোর খাটিয়ে কষ্টে চেঞ্জ করাল৷ শুকলো তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছিয়ে দিয়ে চুল জড়িয়ে দিল৷ এরপর আবার বেড়িয়ে এসে শিশিরকে ডাকল। বলল,
” ভাইয়া, ওর অবস্থা খুব খারাপ৷ শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে ”
শিশির তৎক্ষনাৎ কথা না বলে দ্রুত পায়ে বাথরুমে ঢুকে কুয়াশাকে কোলে নিয়ে বেড়িয়ে এলো। বিছানায় শুয়ে দিল৷ ওকে কোলে নিয়ে বুঝতে পারল শরীর পুড়ে যাচ্ছে। যে তাপ শিশির নিজেও অনুভব করল৷ কাঁথা টেনে শরীরে দিয়ে দিল৷ এরপর নিজের ঘৃণা একপাশে রেখে ফ্লোর পরিষ্কার করল৷ স্মৃতি রিজভীও সাহায্য করল৷ সব ঠিকঠাক করে শিশির বলল,
” ওকে কিছু খাইয়ে ঔষধ খাওয়াতে হবে। স্মৃতি বাড়ির কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। লোকজনের বাড়ি সব জানলে রাগারাগি করবে৷ আর কুয়াশা নিজেও কাউকে বলবে না। ও এমনই ”
স্মৃতি শুধু অবাক হয়ে শুনল। এরা এরকম কেন? এ বলে ও এমনই, আবার ও বলে এ এমনই! এরা একে অপরকে এতো চেনে? এতো চেনে তো মা-র মা-রি কেন করে? দু’জনের মাঝে পর্তা পড়ে না কেন! কখনো মা-রা মা-রি করে নিজেরা কাউকে বলেও না আবার কখনো এক দন্ড কথা না বলেও থাকে না৷ মা-রা মা-রি করে পরক্ষনেই আবার কথা বলে চুলোচুলি করার জন্য প্রস্ত হয়ে যায়! আশ্চর্য!
শিশির স্মৃতিকে সবটা বুঝিয়ে দিয়ে রিজভীকে নিয়ে চলে গেল৷ স্মৃতি বাহিরে গিয়ে আজমীরাকে জানাল কুয়াশার প্রচণ্ড জ্বর এসেছে। ব্যস এটুকুতেই হয়ে গেছে। তৎক্ষনাৎ সকলের কানে পৌঁছে গেল। কুয়াশার ঘর ভর্তি হয়ে গেল লোকালয়ে। ভাইরা ডক্টর ডাকতে উঠে পড়ে লাগল৷ জাকিয়া খাবার এনে কুয়াশাকে কোলের মধ্যে নিয়ে খাইয়ে দিল৷ ইয়াসমিন উঠে এসে কুয়াশাকে দেখে গেল। এরপর ঔষধ টষধ খাইয়ে ঠিকঠাক করে রাত দশটা পাড় হয়ে গেল। ইয়াসমিনকে অনি, বৃষ্টিরা মিলে ঘরে দিয়ে এলো। বেচারি আর কতক্ষণই বা বসে থাকবে?
| চলবে |
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click
আসসালামু আলাইকুম,
সকলকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা
ঈদ মোবারক সকলকে
| গতকাল গল্প না দেবার কারণ আমার চাচতে চাচা মা-রা গেছিলেন। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন৷ উনার জন্য খতমের কুরআন পড়া নিয়েছিলাম৷ এইসবের জন্য দিতে পারিনি |