®রোজা রহমান
‘
মালিথা ভিলাতে সকলের স্বাভাবিকতায় প্রতিবেশী ক্ষণে ক্ষণে আশ্চর্য হচ্ছে। তাদের আশ্চর্য হবার মূল কারণ হলো মালিথা বাড়ির সকলে যে এমন একটা ট্রাজেডির মধ্যে দিয়ে সময় পাড় করেছে সেটা যেন কারোর মাঝেই চুলপরিমাণ প্রভাব ফেলেনি। তারা অতি স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করছে। কোনো প্রকার ট্রমা কাজ করছে না কুয়াশার। কুয়াশা মেয়েটা যে জীবন নিয়ে নরক থেকে পঁচিশ ঘন্টা বাদে ফিরে এসেছে সেটার একচুল পরিমাণও তার মনে প্রভাব ফেলতে পারেনি।
প্রথমে বাড়ির সবাই-ই এটা নিয়ে অতি চিন্তায় ছিল যে তাদের মেয়ে এই দূর্বিষহ ঘটনার পর নিজেকে না গুটিয়ে নেয়। মেয়েটার মাঝের চঞ্চলতা না হারিয়ে ফেলে তারা। সারাদিন চড়ুইপাখির ন্যায় কিচিরমিচির করা পাখিটা নিজের বুলি না হারিয়ে ফেলে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এসব কিছুই হয়নি। কোনো প্রকার দাগ কুয়াশার মনে কাটতে পারেনি, সে ভেঙে পরেনি। সে নিজেকে অতিশয় স্বাভাবিক ভাবে উপস্থাপন করছে এবং করে যাচ্ছে। কুয়াশাকে স্বাভাবিক আচরণ করতে দেখে তারা অতি সন্তুষ্ট, নিশ্চিন্ত।
বাড়ির সকলে আরো বেশি আশ্চর্য হয়েছে কুয়াশার কথা শুনে তার কথা ছিল,
” আমি নিজেকে কেন গুটিয়ে নেব? আমি নিজে ইচ্ছেতে ওখানে গিয়েছিলাম? আমার সাথে কি খারাপ কিছু হয়েছে? এসবের কোনো কিছুই হয়নি আমার সাথে। তবে আমি কেন নিজেকে দূর্বল মনে করে সকলকে কথা বলার সু্যোগ করে দেব? আমি নিজেকে যত গুটিয়ে নেব, যত দূর্বল ভাবব তত সাহস পাবে পিঠ পিছের মানুষগুলো। আমি নিজে যখন ঠিক আছি মানুষ কী বলবে না বলবে তা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। আমি গায়েও মাখতে চাই না। তারা বলবেই তো বলুক না! একসময় হাঁপিয়ে গেলে নিঃশ্চুপ হয়ে যাবে৷ তোমরা আমার পরিবার আমার পাশে আছো আমার ঢাল হয়ে এতেই আমার যথেষ্ট আর কিছু লাগবে না। প্রতিবেশী, সমাজ আমাকে এক বেলা খেতে দিয়ে উদ্ধার করবে না যে আমি তাদের কাছে আমার বিষয়ে কৈফিয়ত দিতে যাব৷ তারা নিজেরা যা ভাবে ভাবুক আমার যায় আসে না৷ ”
এমন সব কথা বলে বাড়ির সদস্যদের মুগ্ধ করেছে সে। মেয়েটা নিজেই যে বুঝদারের মতো কথা বলেছে এতেই সকলে মুগ্ধ, সন্তুষ্ট। কারোর কোনো সান্ত্বনাবাণীর প্রয়োজন পরেনি তাকে সুস্থ, স্বাভাবিক করতে। বরং প্রতিবেশীরা আরো অবাক হয়েছে কুয়াশার পুরো ঘটনা শুনে। এই ছোট মেয়ের মনোবল ও সাহস দেখে। পঁচিশ ঘন্টা যে একটা পতিতালয়ে ছিল সে সেখান থেকে ফিরে আসার মনোবল ছাড়ে নি। কোনো উপায় না থাকা সত্বেও সে উপায় বের করে নিয়ে নিজে একা না পালিয়ে সকলকে উদ্ধার করা জন্য ভাইদের জানিয়েছে, সাহায্য করছে।
ছোট্ট মেয়েটা বাড়িতে যতটা আহ্লাদী হয়ে থাকে বাহিরে ততটায় মুখের উপর জবাব দেয়া মেয়ে। বুঝদার মেয়ে সে। সহজে কেউ কাবু করতে পারে না। তার ভাবনা সে আহ্লাদী তার ভাইদের কাছে, চাচুদের কাছে মায়েদের কাছে। সেসব আহ্লাদগুলো বাইরের লোকের কাছে দেখিয়ে তার ভালোবাসার উপর কটুবাক্য, হিংসার সুযোগ সে কেন দেবে? মানুষের নজর অতিশয় ভয়ংকর। তারা অতিরিক্ত ভালোবাসার উপরও নজর দেয়। তার ভাইদের ভালোবাসা লোকসমাজে হিংসার কারণ হোক সে কখনো চায় না৷ যেগুলো একান্তই তার।
‘
সেদিনের পরে মাঝে চলে গেছে বেশ কয়েকদিন। কুয়াশা বেশ হাসিখুশি হয়ে বেড়ায়। সব সময় যেমন বেরোই তেমন৷ ভাবিদের সাথে গল্প করা, ঝগড়া করা, পড়াশোনা মন দিয়ে করা, কলেজে যাওয়া সবই করে৷ একমাত্র বোনকে ভাইরা উৎফুল্ল হয়ে বেড়াতে দেখে আনন্দ পায় ,হৃদয় শীতল হয়, ঠোঁটে হাসির রেখা দেখা দেয়।
কলেজেও তাকে নিয়ে বেশ কলহ সৃষ্টি হয়েছিল। চাপা উত্তেজনা ছাত্র-ছাত্রী ও টিচারদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছিল। সঠিক ঘটনা কারোর জানা ছিল না। কানাঘুষাতে ছেয়ে গেছিল কলেজ। সেসব নিপুণতার সাথে এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে মেয়েটা হ্যান্ডেল করেছে। ভাইদেরও সাহায্য নেয়নি। তুষার চেয়েছিল কুয়াশার কলেজে কথা বলতে কিন্তু কুয়াশা নিজেই সব বলবে বলে ঠিক করে৷ পরেরদিনই সে কলেজে গিয়েছিল৷
________
ভোর ছয়টা। শুক্রবার আজ৷ বসার ঘরে বসে আছেন জাকির মালিথা ও জাহিদ মালিথা। জাহিদ মালিথা সেদিন পাবনায় ফিরে গেছিলেন রাতেই৷ নামাজ শেষ করে দুইভাইয়ের মাঝে কিছুকথা সেরেছেন। এখন আজমীরাকে বলা হয়েছে তুষার, তুহিন, নীহার কে ডেকে আনতে। কিছু কথা বলবেন চাচুরা৷ কথা অনুযায়ী তিনভাইকে ডাকা হয়েছে। বৃষ্টি, ইয়াসমিন রান্নাঘরেই আছে৷ চা,কফি বানানো হচ্ছে।
‘
একটু পর তুষার, তুহিন নেমে এলো ফ্রেশ হয়ে৷ বাবাদের সামনের সোফায় বসল৷ জাহিদ মালিথা তিন জা কেও এসে বসতে বললেন। সকলে ভ্রু কুঁচকে আছে। কেউ কিছুই বুঝছে না আসলে এখানে কী বলা হবে!! মুখ বুজে বাড়ির দুই কর্তার কথা মানছেন সকলে৷ নীহারও ঢুলতে ঢুলতে ঘর থেকে তাড়াহুড়ো করে নেমে এলো। তিন জা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এসে দাঁড়ালে জাহিদ মালিথা নিজের মাঝে কথা সাজিয়ে নিলেন৷ এরপর গলা পরিষ্কার করে ঝেরে কেঁশে নিয়ে ভাইয়ের দিকে ও সকলের দিকে একবার করে নজর দিয়ে বললেন,
” আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ”
সকলে উৎসুক নজরে চেয়ে আছে জাহিদ মালিথার দিকে৷ জাকির মালিথা বাদে সকলের মনে প্রশ্ন,’ কি এমন সিদ্ধান্ত??’ তবে কেউ প্রশ্নটা করল না৷ সকলে পরেরটুকু শোনার জন্য অপেক্ষায় রইল। জাহিদ মালিথা ভাইয়ের দিকে আবার তাকালেন। তিনি আশ্বাস দিলেন। এরপর বললেন,
” ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি শিশির আর কুয়াশার বিয়ে দেব”
কথাটায় সেখানের সকলের কান অবধি শ্রবণ হতেই বড়সড় বজ্রপাত ঘটল। হিম মাত্রই উপর থেকে নিচে নামছিল কাঁধে ব্যাগ নিয়ে তার সাড়ে ছয়টায় কোচিং আছে। উপরের সিঁড়ি ভেঙে একদম নিচে চলেই এসেছিল বসার ঘরের ফ্লোরে পা দেয়া মাত্র মেজো চাচুর বলা কথাটা কানে পৌঁছায় অমনি ব্যাগ সমেত সে ধপাসস..। পড়ে গিয়ে আর উঠতে পারল না বিস্ময় নিয়ে সেখানে বসেই কথাটা হজম করতে ব্যস্ত হলো।
নীহার নিচ থেকে এসে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বসে বাবার কথাটা শুনবে বলে মাত্রই ঘুম ঘুম চোখে ঢুলতে ঢুলতে সোফায় বসতে যাচ্ছিল ঠিক তখনি বাবার কথাটা কানে আসে। কানে আসার পর পরই তার আর সোফায় বসা হয়নি সে-ও সোফা বাদে নিচে ধপাস দিয়ে বসেছে অর্থাৎ ফ্লোরকে সোফা বানিয়ে ফেলেছে কথাটা শ্রবন হতেই। তার ঝিমানো ঘুম এক্কেবারে বাপ বাপ করে পালিয়েছে। কোমড়ও বোধহয় গেছে গা বেচারার। কিন্তু সেদিকে খেয়াল না দিয়ে সে বাবার বলা কথাটা হা করে চোখ বড় বড় করে হজম করতে ব্যস্ত হলো।
তুষার মাত্রই বৃষ্টির হাত থেকে কফি নিয়ে কফিতে চুমুক দিয়েছিল কিন্তু চাচুর বলা কথাটা শ্রবণ হতেই সেটা আর গলা দিয়ে নামে নি ফুড়ুৎ করে বেড়িয়ে গেছে৷ মুখেচুকে কফির প্রলেপ নিয়ে কথাটা হজম করতে লাগল।
ইয়াসমিন হাতে গরম কফি ছিল মাত্রই বেচারী বেচারা তুহিনের হাতে দিতে যাচ্ছিল কিন্তু সেটা আর দেয়া হয়নি। তুহিনও হাত বাড়িয়ে তা নিতে যাচ্ছিল তারও আর কফির মগটা নেয়া হয়নি ইয়াসমিনের শ্বশুড়ের কথাটা কানে আসতেই তুহিনের হাতে কফি দিতে গিয়ে তার কোলের উপর ফেলেছে আর তুহিন বাবার কথাটা শুনে কফির মগটা না ধরে হা হয়ে গেছে। তৎক্ষনাৎ কফি কোলের উপর পড়লে সে গড়মের ঠেলায় এক লাফে উঠে তো গিয়েছে কিন্তু ভাবে লাগছে গরম কফির থেকে বাবার কথাটাই বেশি গরম। সেটাই সে হজম করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইয়াসমিন স্বামীকে পুড়িয়ে দিয়েও বিন্দুমাত্র অনুশোচনায় নেই মূলত সে-ও পুড়িয়ে দেয়ার থেকে শ্বশুড়ের বলা কথাটা হজম করতে ব্যস্ত হয়েছে হা করে।
বৃষ্টি বেচারী মাত্রই শাশুড়ীকে চা দিতে পাশে গিয়েছিল কিন্তু তার হাতেও আর চা’য়ের কাপটা শোভা পেল না। সে নির্মম ভাবে ফ্লোরে পড়ে খানখান হয়ে গেল৷ সে-ও হা করে হজম করতে লাগল কথাটা।
তিন জায়ের অবস্থা আর কি বলব? তারা হা করে কর্তাদের মুখের দিকে চেয়ে রইল। যেন এই মূহুর্তে জাকির মালিথা ও জাহিদ মালিথা অষ্টম আশ্চর্য। কিন্তু জাকির মালিথা ও জাহিদ মালিথা নির্বিকার। জাকির মালিথা পত্রিকা পড়ছেন আর চা’য়ের চুমুক দিচ্ছেন।
জাহিদ মালিথা কথাটা বলে চা’য়ে চুমুক দিচ্ছেন এবং বাড়ির সকলের এক্সপ্রেশন দেখছেন৷ দেখলেন, এরা কেউ আর এই দুনিয়ায় নেই। সবার এমন এক্সপ্রেশন দেয়াটা স্বাভাবিক-ই মনে করলেন তিনি। কারণ কথাটাই যে তিনি অতিশয় আশ্চর্য হবার মতো বলেছেন কিছু মূহুর্ত আগে৷
সকলে হা করে কথা হজম করছে আর একটা বুলি আওরাচ্ছে মনেমনে তা হলো,
” বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুলের বিয়ে!! এ কী করে সম্ভব!! তাদের বিয়ে মানে তো যেচে পারমাণবিক
বো||মা বিস্ফোরণ ঘটানো! ”
জাকির মালিথা এবার অতিশয় বিরক্ত হলেন। এরা এমন ভাব করছে যেন জাহিদ মালিথা এলিয়েন আর তাদের বিনা টিকিটে মঙ্গলগ্রহে নিয়ে যাবার কথা বলেছেন। আশ্চর্য!! তাকিয়ে আছে দেখো যেন তারা দু’জনি এলিয়েন। ধমকে উঠলেন,
” কি হয়েছে? ওভাবে সব কি দেখছ? কি এমন বলা হয়েছে শুনি? ”
গুরুগম্ভীর, রূঢ়, কাটকাট ধমকে সকলে বাস্তবে ফিরে এলো। নড়েচড়ে উঠল। সকলে বাস্তবে এসে কিছু মুহূর্ত আগের কথাটা ধারণ করতে সক্ষম হলো মস্তিষ্কে। এটা যে কোনো প্রকার জোক্স বলে নি সেটা সকলেই দুই ভাইয়ের নির্বিকার অবস্থা দেখে বুঝেছে। সকলে একসাথে অতিশয় আশ্চর্য কন্ঠে মৃদু চেঁচিয়ে বলে উঠল,
” এটা কী করে সম্ভব!!”
জাকির মালিথার উত্তর,
” কেন সম্ভব নয়? ”
জাকিয়া বললেন,
” সেটা তুমি, আমরা সকলেই জানি। কেন সম্ভব নয় ”
আম্বিয়া বললেন,
” ওরা একে অপরকে চাচাতো ভাই বোন বলেই মানেই না সেখানে বিয়ে কি করে সম্ভব? ”
জাহিদ মালিথা উত্তর করলেন,
” চাচাতো ভাই-বোন মানে না বলে যে অন্য কিছু মানবে না তার কোনো মানে আছে?
চাচাতো ভাই-বোন মানতে হবে না। আমরা যেটা মানাতে চাচ্ছি সেটা মানলেই হবে। ”
আজমীরা এবার মুখ খুললেন। তিনি কখনো ভাশুড়দের মুখের উপর কথা বলেন না। তবুও সাহস নিয়ে বললেন,
” কিন্তু ভাইজান, ওরা একে অপরকে সহ্যই করতে পারেনা, ঝগড়া মা-রা মা-রি, একে অপরকে চক্ষুশূল ভাবে সেখানে অন্য সম্পর্ক বা বিয়ের মতো বন্ধন কোনোটায় মানবে বলে আমার মনে হয় না৷ একটু ভেবে দেখলে হয় না? “
তুষার চাচির সাথে একমত হয়ে বলল,
” চাচু, ছোট আম্মু কিন্তু ঠিকই বলেছে৷ ওরা জিন্দেগীতেও রাজি হবে না। লঙ্কাকাণ্ড বাঁধাবে তবুও রাজি হবে না৷ তোমরা ভেবে দেখো একটু। ”
তুহিনও একই মত দিল। বৃষ্টি, ইয়াসমিন চুপ করে শুনছে শুধু। এতক্ষণ পর নীহার নিচ থেকে উঠল। হিমও উঠল৷ এসে দাঁড়াল বড়দের কাছে। তার আর কোচিংএ যাওয়া হলো না। নীহার বলল,
” বাবা, ওরা এই কথা শুনলে এখানে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধাবে তবুও এই সম্পর্ক মানবে না। ”
জাহিদ মালিথা এবার রেগে গেলেন। সকলের এক কথা শুনে। তিনি রেগে বললেন,
” তোমাদের কে বলেছে ওরা সম্পর্ক মানবে না? একে অপরের সহ্য করতে পারে না? ওরা যেমনটা দেখায় তেমনটা ওরা নয়। যেটা দেখায় সেটা ওদের স্বভাব, অভ্যাস। ছোট থেকে করে আসছে বলে স্বভাবের দোষ হয়ে গেছে। এজন্য হাজার বকেও ঠিক করা যাইনি। কিন্তু ওদের এই একে অপরকে দেখতে না পারার মাঝেই ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। সেটা ওরা বুঝতে পারে না বিধায় এমন শত্রুতা। সেদিন ঐখানে তো তোমরা সকলে উপস্থিত ছিলে সবটা দেখেছ৷ যে ছেলে, মেয়ে একে অপরের চক্ষুশূল সেখানে সবার মতো কষ্ট কিন্তু শিশিরও পেয়েছিল। বরং দেখে মনে হয়েছিল বেশি পেয়েছিল। ওরা ঝগড়া বিবাদ ঠিকই করে কিন্তু আমরা বিনা ওরা একে অপরকে ভরসা মানে। সেটা সেদিন দেখেছ নিশ্চয়ই? আমরা ভবিষ্যতে ওদের জন্য না থাকলেও ওরা দায়িত্ববোধ থেকে, সম্পর্কের জোর থেকে কখনো সরবে না দু’জন দু’জনের জন্য ভরসা, ঢাল হয়ে থাকবে। “
এই টুকু বলে থামলেন তিনি৷ সকলে জাহিদ মালিথার কথাগুলো মন দিয়ে শুনল। বুঝলও। জাহিদ মালিথা আবার বললেন,
” এছাড়া আমরা এই সিদ্ধান্ত এইজন্য আরো নিয়েছি যে আমাদের মেয়ে আমরা কোথাও দেব না। নিজেদের কাছেই রেখে দেব৷ কোথায় দেব, কীভাবে থাকবে, কেমন ছেলের হাতে তুলে দিতে পারব, কতটুকু সুখে থাকবে সেসব কিছুই আমরা জানি না৷ কিন্তু মেয়েটাকে যদি নিজের কাছে রেখে নিজেদের চোখে দেখে বড় হওয়া ছেলের কাছে সম্প্রদান করতে পারি এতে মরেও শান্তি পাব আমরা। চিরকাল তো আর বেঁচে থাকব না আমরা! আর তোমরাও মেয়েটাকে চিরকাল আগলে রাখতে পারবে না। বিয়ে ওকে দিতেই হবে যেখানেই হোক৷ আজ হোক আর কাল হোক৷ তো সেই বিয়ে যদি আমাদের ঘরের ছেলের সাথে দিই ক্ষতি কি ? ঘরের মেয়ে ঘরে থাকবে আদরে থাকবে, নিজেদের চোখের সামনে থাকবে৷ এখন মানতে না পারলেও আমি জানি শিশির কখনো দায়িত্ববোধ এরিয়ে চলবে না। আর কুয়াশাও জ্ঞানহীন নয় যথেষ্ট বুদ্ধিমতি সেটা আমি এই কয়দিনে টের পেয়েছি। তার অধিকার ঠিকই বুঝে নেবে। ওরা যতই জেদ দেখাক না কেন দিন শেষে দু’জন দায়িত্ববোধ ঠিকই পালন করবে৷ আর রইল কথা রাজি না হবার। সেটা আমরা বড়রা দেখব। ছেলে মেয়েদের আমরা এতটা বেপরোয়া করে বড় করিনি যে বাবা-মায়ের উপর কথা বলবে। “
থামলেন তিনি। সকলের বোধশক্তি খুলল বোধহয়। সকলেই জাহিদ মালিথার বলা কথাগুলো মস্তিষ্কে নেড়েচেড়ে বুঝতে ব্যস্ত হয়েছে। তিনি কথাগুলো যা বললেন একটা ভুল নয় কিংবা ফেলে দেবার মতো নয়। সকলে এটা দেখেছে এবং খেয়াল করেছে সেদিন। শুধু সেদিন না অনেক ভাবেই খেয়াল করেছে৷ হাজার শত্রুতা থাকলেও দায়িত্ববোধ ঠিকই পালন করে৷ এই দায়িত্ববোধ থেকে অধিকারবোধ হলে ক্ষতি কি? সেটা হতেও সময় লাগবে না। সম্পর্কের জোরে অধিকারবোধও ঠিকিই দেখাবে৷ ভালোবাসাও ঠিকই হয়ে যাবে৷ আর সব থেকে বড় কথা চিরকাল মানুষ তো আর একরকম থাকে না! যেমন; সময়, দিন, মাস, বছর পাল্টায় ঠিক তেমনি মানুষের মনও পাল্টায়। এখন নিজেদের এমন শত্রু ভাবে, ভালোবাসা দেখায় না, জেদ দেখায় বিয়ের পর তো সেগুলোও হয়ে যাবে, পাল্টে যাবে৷
সকলের গভীর ভাবনায় ভাটা পরল জাকির মালিথার কথায়।
| চলবে |
সকলে পড়বা একটু,
কি? এবার বুঝেছ তো সবাই? কেন আমি ভালোবাসা দিই নি? ঠিক এই পর্বটা লিখার জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম সেই গল্পের শুরু থেকে অধীর আগ্রহে ছিলাম। কিন্তু সকলে বড্ড অধৈর্য হয়ে গেছিলে। অধৈর্য হওয়া পাঠকগুলো কই?
আমি শুরু থেকে এমনটা ভেবে আসছি৷ কারণ তোমরা যে মনে করেছিলে ওদের এমনিই ভালোবাসা হবে সেটা ভুল ছিলে। কারণ ওরা অধিকারবোধ ছাড়া কখনো নিজেদের অনুভূতি, ভালোবাসা বুঝবে না কারণ ওরা জন্মের শত্রু। ওদের মাঝের প্রণয় বুঝতে হলে ওদের পরিণয় আগে হতে হবে৷ তবেই প্রণয় বুঝবে৷ বুঝলে তো?
এখন দেখতে থাকো এসব শুনে বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুল কী করে৷
আর হ্যাঁ অগ্রীম দাওয়াত দিয়ে রাখলাম। তখন আবার বলবে লেখিকা আপু বিনা দাওয়াতে বিয়ে দিল ওদের
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click