®রোজা রহমান
‘
বৃষ্টিকে ঘরে এনে তুষার প্রায় আধাঘন্টা ধরে জড়িয়ে ধরে আছে৷ সে বৃষ্টিকে এনে প্রথমে খাটে বসিয়ে হেলিয়ে আধশোয়া করে শুইয়েছে৷ এরপর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা না করে বৃষ্টিকে জড়িয়ে বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে৷ কোনো কথা-ই বলছে না। শুধু চোখ বন্ধ করে অনুভূতিটাকে প্রকাশ করছে। বৃষ্টি এই পাগলামোকে কি বলবে? সে নেতানো শরীর নিয়ে স্বামীর চুলে হাত চালাচ্ছে। আর মুচকি মুচকি হাসছে৷ এবার বৃষ্টি বলল,
” এ্যাই যে এএসপি অফিসার সাহেব তোমাকে এই মূহুর্তে বাচ্চা ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না। “
” আমি বাবা হব এটার আনন্দ কি দিয়ে প্রকাশ করব বৃষ্টি?”
বৃষ্টি কী বলবে বুঝল না। তুষার আরেকটু গভীর হলো বলল,
” আমার বুক ঢিপঢিপ করছে। শুনতে পারছ না? “
” হুঁ, আমার পুলিশ অফিসার স্ট্রোং পারসোনালিটির স্বামীর উত্তেজনা আমি গভীর থেকে বুঝছি। সে বাবা হবে। ডানা থাকলে উড়ত কি? “
তুষার এবার দাঁত বের করে হাসল নিঃশব্দে৷ বৃষ্টি ঠোঁট টিপে দুষ্টু হাসল। তুষার বৃষ্টির গ্রীবাদেশে একটা গভীর চুমু দিল। এরপর মাথা তুলে বৃষ্টির দিকে তাকাল। কী সুন্দর মুখ! সে মুচকি হেসে বলল,
” থাকলে উড়তাম তোমাকে নিয়ে “
বলে কপালে চুমু খেল। এরপর হাতের পিঠে খেল৷ বলল,
” বেস্ট অনুভূতি হচ্ছে। তাই বলে আর প্রকাশ করব না৷ কাল সকালে রেডি থেকো। তোমাকে ডক্টরের কাছ থেকে রেখে তবেই আমি যাব। “
বৃষ্টি মুগ্ধ চোখে দেখেই গেল শুধু স্বামীকে। প্রত্যুত্তর করল না। তার নিজেরও মা হবার আনন্দ ভেতর প্রর্যন্ত নাড়িয়ে তুলছে। মা হবার স্বত্বাটাকে জাগিয়ে তুলছে।
_________
” তা যাক এখন আমি বাইরে যাব কিকরে সেটা বল আগে? আজ বাবা, চাচুরা বাড়িতে”
শিশিরের কথায় কুয়াশা মুখ তুলে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। বোঝার চেষ্টা করল বললটা কি শিশির? কুয়াশাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শিশির আবার বলল,
” এই যে আমার গালে যে বাইটটা দিলি এটাকে কি বাইট ধরব? লাভবাইট নাকি এ্যাঙ্গরিবাইট? “
কুয়াশা এবার বুঝল বিষয়টা৷ নজর দিল শিশিরের কামড় দেয়া গালে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির মাঝে কামড় দেয়ার দাগটা স্পষ্ট হয়ে আছে। দাঁত বসে তা স্পষ্ট। জোরে যে দিয়েছে কামড়। এই জন্য দাগটা স্পষ্ট। বিষয়টা বুঝতে পেরে একটু বিব্রত হলো কুয়াশা। বাইরে যে লজ্জাজনক পরিস্থিতি তৈরি হবে এটা নিশ্চিত। তবুও দমল না। এটাকে শিক্ষা দিতে পেরে আনন্দিত সে। বলল,
” তা আমি কি জানি? তোমার দায় তুমি বুঝো গিয়ে। আমার দেখার নেই। “
” আচ্ছা? “
” হুঁ “
শিশির বলল,
” সকলে জিজ্ঞেস করলে বলব, তোমাদের আহ্লাদী কামড়েছে “
কুয়াশা থতমত খেয়ে তাকাল শিশিরের দিকে। বুনো ওলটা মজা নিচ্ছে। শিশির কুয়াশার পানে চেয়ে দুষ্টু চোখে দুষ্টু ঠোঁটে হাসছে৷ কুয়াশা তা দেখে মুখ ঝামটা দিয়ে ঘরের দরজা খুলে বাইরের পথ ধরল। যেতে যেতে বলে গেল,
” আর হ্যাঁ, ওটা অবশ্যই এ্যাঙ্গরিবাইট। তোমাকে লাভবাইট দিতে আমার বইয়ে গেছে, হুহ”
” তোর দিতে হবে না আমি দিলেই হবে ”
কুয়াশা সে কথা শুনেও না শোনার মতো করে মুখ ঝামটিয়ে চলে গেল। কুয়াশা যেতেই শিশির সশব্দে হেসে ফেলল। বউ জিনিসটা তো ভালোই! মনে মনে ভেবে আরো হাসল। এরপর মিররের সামনে দাঁড়িয়ে দেখল স্পষ্ট দাঁতের দাগ। করেছেটা কী গোবর ঠাঁসা! এটা নিয়ে এখন বাইরে যাবে কিকরে এটা ভেবেই বিরক্ত হচ্ছে সে। ঠিক পেলে নির্ঘাত মজা উড়াবে।
ভাবতে ভাবতে ঘড়ি দেখল৷ সকাল দশটা পাড় হয়েছে, তাই সে বাথরুমে ঢুকল। জুম্মার নামাজ আছে৷ গোসল করে ফেলা যাক৷ গোসলের পর যদি একটু দাগটা মেশে!
‘
জাকির মালিথা ও জাহিদ মালিথা নতুন অতিথির কথা শুনে আনন্দে আটখানা হয়ে গেছেন৷ জাকির মালিথা জানিয়েছেন বিকেলে মিষ্টি বিলাতে। পরের শুক্রবারে এতিম বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের জন্য খাবার আয়োজন করবেন। আর মসজিদে মিলাদ পড়িয়ে মিষ্টি বিলাবেন। এসব শুনে বাড়ির সকলে খুশি হলো। নতুন অতিথির আগমনী বার্তায় একটু সকলের কাছে দোয়া না নিলে হয়!!
‘
শিশির এতক্ষণ নিজের ঘরেই ছিল৷ আযান দিয়ে দিয়েছে এইজন্য নিচে যেতেই হবে এখন৷ উপায় না পেয়ে নিচে গেল। দাগটার উপর পাউডারের প্রলেপ দিয়েছে। যদিও কোনে কালে এসব দেয় না। এখন বউয়ের পাল্লায় পড়ে এসবও করতে হচ্ছে। কী দিন এলো তার!! ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। বুকে, গলায় কামড়েছে আগে সেসব শার্ট, টিশার্টেই ঢাকতে পেরেছে৷
নিচে গিয়ে দেখল বাবা, আর চাচু বাদে ভাইরা সব রেডি হয়ে বসে আছে। সে-ও পাঞ্জাবি পড়ে রেডি হয়ে নেমেছে৷ একটু পর সকলে মিলে নামাজে যাবে। বিরক্ত মুখে, বিব্রত ভাব নিয়ে গিয়ে বসল। নীহারের পাশে। এই ছেলে টের না পেলেই হবে৷ এ টের পাওয়া মানে সকলের নজরে পড়া৷ ভাগ্যক্রমে নীহারের সাইট-ই কামড়ের পাশটা পড়েছে৷ নীহার কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু মুখটা তৎক্ষনাৎ বন্ধ করে শিশিরের গালের দিকে চেয়ে রইল৷ জহুরী নজর দিয়ে বলল,
” মেকআপ করা কবে থেকে ধরলি তুই? “
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল শিশির। মেকআপ! সে মেকআপ কবে, কখন করল? ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,
” তোর মনে হচ্ছে আমি মেকআপ করা? “
” হ্যাঁ এই তো স্পষ্ট ভেসে উঠেছে। সাদা সাদা কি যেন! “
শিশির আবার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। কোথায় ভাবল পাউডারের প্রলেপে এদের হাত থেকে বাঁচবে আজকের মতো। তবুও এই ঈগলটার চোখে পড়ে গেল!!
শিশিরকে কিছু বলতে না দেখে নীহার কিছু বোঝার চেষ্টা করছে৷ এই ছেলেটা পাক্কা পাঁজি। সব তালে থাকে৷ এক ভাই হিসেবে ট্রিট করবে আবার বন্ধুর মতো মজা নেবে সব বিষয়ে। সে এবার একটু জোরেই বলল,
” তোকে কুশু কামড়েছে? তাও গালে? “
তুষার, তুহিন, হিম এবার ওদের দিকে নজর দিল অপর পাশ থেকে। শিশির কপাল চাপড়ে বসে রইল। মাইন ইজ্জত এরা দুই ভাইবোন মে-রে দিল তার। একজন কামড়েছে তো একজন ঢোল পি’টি’য়ে ষোলকলা পূর্ণ করছে। জীবনটা তার ত্যানা ত্যানা এরা দু’টোই করল। তুষার, তুহিন চোখ মুখ কাঁচুমাচু করে ফেলল। এ দু’টো এত ফা’জিল কেন! নীহার ঠোঁট টিপে হাসছে৷ ভালোই মজা নিতে পারছে৷ সেই সময়ে ইয়াসমিন আর কুয়াশা বৃষ্টিকে নিয়ে নেমে এলো। বৃষ্টির গোসল করার পর একটু ভালো লাগছে। তাই ঘরে আর থাকল না। নীহার ওদের আসা দেখে কিছু বলতে যাবে সেসময়ে হিম বলে উঠল,
” এ্যাই বুবু.. তুমি শিশির ভাইকে কামড়েছ কেন? ”
ল্যাহ হয়ে গেল এইটারই কমতি ছিল। এই লিলিপুটটা সুযোগ বুঝে বর্শি ফেলে। কুয়াশা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকাল৷ এতগুলো বড় ভাই, ভাবির সামনে ইজ্জতের ফালুদা হয়ে গেল। আগে যদিও কামড়েছে কিন্তু সেটা রাগ, জেদ, হিংসা, সহ্য করতে না পাড়ার জন্য। কিন্তু এখনের কামড়ের মানে অন্যরকম। শিশির কুয়াশার দিকে কিড়মিড় করে কটমট নজরে তাকাল৷ ভাবটা এমন এখনি কুয়াশাকে কাঁচায় খেয়ে ফেলতে পারলে বাঁচত। যত দোষ এই গোবর ঠাঁসাটার৷ ফা’জিল বুক, পিট ছেড়ে এখন গালে এসেছে। কবে না ঠোঁটেও কামড়ে দেয় ভেবেই আরো রেগে উঠল৷ জীবনটা কামড়ময় হয়ে গেল এই গোবর ঠাঁসার জন্য।
শিশির ভাবতে না ভাবতেই নীহার কথাটা বলেই দিল। সে শিশিরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” এ ভাই, প্রথমে পিঠে খেয়েছিস, তারপর বুকে, আজ গালে এরপর কনফার্ম ঠোঁটে খাচ্ছিস। জীবন তোর কামড়ময়। হায় আফসোস!! “
এই বলে সে হা-হুতাশ করতে লাগল৷ আর শিশির? সে চোখ বড় বড় করে চেয়ে রইল। এরা কী দিয়ে তৈরি? বড় ভাই হয়ে এমন কমেন্ট!
এদিকে বৃষ্টি, ইয়াসমিন জোরে হেসে দিয়েছে হিমের কথা শুনে। তুষার, তুহিন মিটমিট করে হাসছে। ভাই, বোনগুলো তারা পেয়েছে বটে, পুরাই অষ্টম আশ্চর্য। শিশির এবার না পেরে হিমকে বলল,
” এ্যাই ফাজিল! তোর মুখ চুপ থাকে না?”
” ল্যাও ঠ্যালা, যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর! আমি তো তোমার প্রতি দরদ দেখালাম৷ সেই তুমিই আমাকে বকছ? বুবু তোমাকে কামড়েছে তাইতো বললাম! “
আবার হেসে ফেলল বৃষ্টি, ইয়াসমিন এবার নীহারও হাসল শব্দ করে। কুয়াশা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না৷ সে এবার কান, নাক দু’টো-ই মলা দিল, জীবনেও আর গালে কামড় দেবে না। খুবই লজ্জাজনক পরিস্থিতি। শিশির এবার উঠে গিয়ে হিমের মুখ চেপে ধরল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” চুপ কর ফাজিল ”
হিম হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। সে এতটাও ছোট না যে এইসব বুঝবে না। মেয়েদের সাথে এই বয়সেই ফ্লার্ট করে বেড়ায়। সে ছেলে পাকনা হবে না!!
সকলে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। বিয়ের পর থেকে শিশির, কুয়াশা মালিথা ভিলায় বিনোদনের মাধ্যমে হয়ে উঠেছে। যে যেমন পারে মজা করে বিনোদন নেয়। জীবনডা বেদনাময়, কামড়ময়, বিনোদনময় হয়ে গেল তাদের।
_________
বিকেলের দিকে তুষার সহ তুহিন মিলে মিষ্টি নিয়ে এলো। সকলে মিষ্টি মুখ করল৷ এবং আশেপাশের কিছু বাড়িতে দেবার ব্যবস্থা করল। বৃষ্টির বাবা পরের শুক্রবারে আসতে চেয়েছেন। এসে মেয়েকে দেখে যাবেন বলেছেন৷
জাকিয়া পাড়াঘরে মিষ্টি দেবার দায়িত্ব কুয়াশা আর ইয়াসমিনকে দিলেন৷ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তারা বাড়ি থেকে বের হলো। বৃষ্টি বলল সে হাঁটবে একটু। জাকিয়া অনুমতি দিলেন। বললেন বাড়ির সামনেই হাঁটতে। আর কোথাও না যেতে। তিন জা একসাথে বের হলো। বৃষ্টি বাড়ির সামনে রইল আর কুয়াশা, ইয়াসমিন পাশের বাড়ি গেল।
‘
শিশির ঘরে আধশোয়া হয়ে ফোন টিপছে। কিছুক্ষণ পর বাইরে যাবে৷ এমনই সময়ে কোথা থেকে কুয়াশা বিদ্যুৎ বেগে দৌড়ে এসে শিশিরকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। শিশির চমকে উঠল৷ বিষয়টা এত তাড়াতাড়ি হলো বুঝতে একটু সময় নিল। যখন বুঝল কুয়াশা ফাঁপর দিয়ে কান্না করছে তখন বিস্মিত হলো৷ এভাবে আজ অবধি কেঁদেছে এ? আজ কি হলো তবে? কোথা থেকেই বা এলো? কান্না করছে কেন? আর সহ্য হলো না৷ হতবাক মূহুর্ত কাটিয়ে তড়িঘড়ি করে কুয়াশাকে নিয়ে উঠে বসল৷ কোলের উপর বসিয়ে নিল৷ আগলে ধরল। হতভম্ব হয়ে একের পর এক জিজ্ঞেস করতে লাগল,
” এ্যাই কুয়াশা…! কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন? বল আমায়! আরে এভাবে কাঁদছিস কেন? কে কি বলেছে? এ্যাই সোনা..? আরেহ্ “
বলতে বলতে কুয়াশাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল৷ সে শিশিরের গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে৷ কাঁদছে তো কাঁদছেই৷ থামাথামি নেই। কান্নার রেশটাও বুকে লাগার মতো৷ এই আহ্লাদীকে আজ প্রর্যন্তও এমন হৃদয়বিদারক কান্না করতে দেখেছে খুব কম৷ বাবার জন্য ছাড়া কারো জন্য কান্না করে না৷ আর আজ এর কি হলো? বাবার কথা মনে পড়ছে কি? ভেবে আবার গলার মাঝে থেকে কুয়াশা মুখটা তোলার চেষ্টা করল। কিন্তু সে শক্ত হয়ে আছে। শক্ত করে ধরে আছে গলা। মুখ তুলতে নারাজ৷ শিশির মাথায় হাত দিয়ে বুলোতে বুলোতে বলল,
” এ্যাই সোনা..? বাবার কথা মনে পড়ছে?”
কোনো রেসপন্স নেই তার।
” আরেহ্ সোনা বলনা রে কি হয়েছে? কে কী বলেছে আমার বউকে? থাম এবার.. চুপ কর। এ্যাই কুয়াশা..!”
কুয়াশা এমন ভাবে কাঁদছে যে কেউ তার কান্নার আওয়াজ শুনলে নড়ে উঠবে৷ ভেতরে হৃদয় ভেঙে গেলে যেমন কষ্টের কান্না আসে তেমনই কান্নার আওয়াজ। ওর কান্নার আওয়াজে শিশিরের ভেতর তোলপাড় হলো। কি এমন হলো? সে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল এবার। আগে কান্না করে নিক। এভাবে বলবে না৷ বোঝা হয়ে গেছে।
এরই মাঝে সকলে হতভম্ব হয়ে ছুটে এলো। আগে এলেন জাকিয়া। এসেই হতভম্ব হয়ে বললেন,
” কি হয়েছে? এ্যাই শিশির ও এমন কান্না করছে কেন? কি করেছিস আমার মেয়ের সাথে “
শেষ কথাটা বেজায় রেগে বললেন জাকিয়া। আজমিরা এসে মেয়েকে এভাবে কাঁদতে দেখে হতবাক হয়ে গেলেন। এ তো পাড়ায় গেছিল মিষ্টি দিতে। এখন আবার কান্না করছে।
” শিশির! আব্বুরে কি হয়েছে ওর? কাঁদছে কেন? কিছু করেছিস? “
মা, বড় আম্মুর কন্ঠ পেয়ে কুয়াশা কান্নার রেশ কমিয়ে শিশিরের থেকে উঠে সরে আসতে গেল কিন্তু, শিশির সরতে দিল না। এমনকি সে নিজেও ছাড়ল না। জড়িয়ে রাখল। তা টের পেয়ে কুয়াশাও আর সরল না৷ তার কান্না এবার ফুঁপানিতে রূপ নিল। এবার ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। ইয়াসমিন হতভম্ব হয়ে এলো৷ একে একে সকলে চলে এলো এবার। সকলে এসে এক কথা জিজ্ঞেস করল,
” কি হয়েছে? ও এমন কাঁদছে কেন? কি করেছিস শিশির ওর সাথে? “
সকলে ভাবছে শিশির মে-রেছে। শিশির এবার না পেরে উত্তর করল,
” বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি৷ আমি নিজেও জানি না কি হয়েছে। হঠাৎ-ই এসে এভাবে কাঁদতে লাগল। এত জিজ্ঞেস করছি কিছুতেই কিছু বলছে না। শুধু কান্না করে চলেছে ”
এবার ইয়াসমিন উত্তর করল৷ কুয়াশার সাথে সেই ছিল। কুয়াশা একদম বিদ্যুৎ গতিতে দৌড়ে এসেছে বলে ইয়াসমিন ওর সাথে আসতে পারেনি। ইয়াসমিন সবটা বলতেই শিশিরের চোয়াল আপনাআপনি শক্ত হয়ে গেল৷ শরীরের রগ ফুলে ফেঁপে উঠল। রাগে মাথা দপদপ করতে লাগল। কুয়াশাকে সেই রাগে আরো জোরে চেপে ধরল বুকের সাথে। সকলে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ইয়াসমিনের মুখে সব শুনে৷ নীহার, তুহিন, তুষার শুনে তৎক্ষনাৎ বেড়িয়ে যেতে নিলে শিশির বলল,
” থামো ভাই.. জবাব আমি দেব ”
বলে সে কুয়াশাকে এবার তুলল বুক থেকে। বিধস্ত মুখ তার। কান্নার জেরে চোখ, মুখ লাল হয়ে গেছে। ফুঁপাচ্ছে অনেকক্ষণ কান্নার ফলে৷ শিশির যত্ন করে চোখের পানি মুছে দিল। সকলে দেখল শিশিরের যত্ন, দায়িত্ব। জাকির মালিথা, জাহিদ মালিথা মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলেন। তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আগলে রাখতে এই ছেলেই পারবে তাদের মেয়েকে৷ শিশির বউয়ের চোখ মুছিয়ে শীতল কণ্ঠে বলল,
” চুপপ ”
কুয়াশা বাচ্চাদের মতো ফুঁপাচ্ছে। শিশির তা দেখল। দেখে কুয়াশাকে নামিয়ে পাশে বসিয়ে দিল। এরপর কোনো কথা না বলে হনহন করে বড় বড় পা ফেলে বেড়িয়ে গেল৷ পেছন পেছন তুষার, তুহিন, নীহারও গেল।
এদিকে মা, চাচিরা, ভাবিরা কুয়াশাকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন৷ জাকিয়া বৌমাকে বুকে চেপে ধরলেন। তাদের ছোট্ট মেয়ে৷ আজমিরা চোখের পানি ছেড়ে দিলেন৷ একমাত্র মেয়ের কষ্টটা বুঝতে একটুও সময় লাগছে না তার। আম্বিয়া মাথায় হাত বুলিয়ে নানান ভাবে বোঝাতে লাগলেন৷
জাকির মালিথা, জাহিদ মালিথা ওদিকে আর গেলেন না৷ উনারাও নানান ভাবে মেয়েকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন।
| চলবে |
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click