®রোজা রহমান
‘
সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামল আমাদের সোনার বাংলাদেশ। ছোটকালে বাংলা পাঠ্য বইয়ে অনেক পড়েছি, জেনেছি। আমাদের বাংলাদেশের সৌন্দর্য কবিরা, লেখকরা তাদের অনুভূতি দ্বারা বিভিন্ন ভাবে কবিতা,পঙক্তি, ছোট গল্প, বড় গল্পের মাঝে তুলে ধরেছেন। সত্যি অপরূপ সৌন্দর্য্যের অধিকারী আমাদের শস্য-শ্যামল বাংলাদেশ৷
শহর অঞ্চল থেকে বের হলে জানা যায় বাংলাদের সৌন্দর্য। যদিও এখন গ্রাম অঞ্চলও শহর অঞ্চলের মতো পরিণত হচ্ছে। বড় বড় খাল-বিল ভরাট করে বড় বড় বিভিন্ন দালান-কোঠা তৈরি হচ্ছে।
‘
শশীদের গ্রামটা অপরূপ সুন্দর। বড় বড় মাঠ সবুজে সবুজে ছেয়ে আছে। যতদূর চোখ যায় রাস্তা পাশে দিয়ে তাকালে ততদূর শুধু মাঠ আর মাঠ। কৃষকরা কৃষি কাজ করছে। মাঠের মাঝে তাদের আনাগোনা চলছে। আসছে অগ্রহায়ণ-পৌষ মাস। নবান্ন উৎসবের মাস৷ ধান লাগানোর তোড়জোড় করছে কৃষকরা। নতুন চালের ভাত, শীতের পিঠা খাবার মাঝে তাদের নবান্নের উৎসব। ধান পাকলে কেটে বাড়িতে তুলতে পারলে যে হাসি কৃষকদের ঠোঁটে ফুটে ওঠে তা অমায়িক। তাদের প্ররিশ্রম স্বার্থক হয়।
শশীদের গ্রামের নাম ধলসা। ওদের বাড়ি যাবার রোডটা আগে মাটির ছিল বেশ কয়েক বছর হচ্ছে পাকা হয়েছে৷ দুই পাশের বড় বড় মাঠের মাঝখান দিয়ে যাতায়াতের জন্য রাস্তা হয়েছে। আগের থেকে বেশ উন্নত হয়েছে।
শহর থেকে বেরিয়ে শিশিরদের মাইক্রো গ্রামের পথ ধরেছে৷ তারা কেউ বাইক বা সিএনজি নেইনি৷ দুটো মাইক্রো করে এসেছে৷ কারন সদস্য সংখ্যা একে তো অনেক তারউপর শিশিররা বাইক নিলে তাদের বাবা-মা’দের সিএনজি করে আসতে অনেক সমস্যা হতো৷ এই জন্য দু’টো মাইক্রো নিয়েছে। কার নেয় নি তার কারণ অল্প কয়েকজন ছাড়া বসতে পারত না৷ কিন্তু শিশিরদের কথা তারা জার্নিটা উপভোগ করবে সকলে মিলে। এই জন্য বড়রা একটা মাইক্রোতে আর শিশিররা একটাতে। যদিও শিশিরদের গাড়িতে তুষার,তুহিন নেই।
গাড়ির জানালা খুলে দিয়েছে৷ শ-শ করে বাতাস ঢুকছে গাড়ির ভেতর। মাঠের দৃশ্যতে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। মাঠের পাশে কয়েক জায়গায় বড় বড় পুকুরও কাটা। হয়তো মাছ চাষ করে। সকলে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। শহরে থেকে থেকে তাদের চোখ এসব সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে৷ শহরে তো গাড়ির পেঁ-পুঁ শব্দ, যানজট এসব দেখেই দিন পাড় হয়! গ্রামের মতো নিরিবিলি, শান্তিময় জায়গা আর দু’টো নেই। শান্তির নিঃশ্বাস টানা যায় গ্রামে।
কুয়াশা দেখতে দেখতে একসময় মন্ত্রমুগ্ধ কন্ঠে বলে উঠল,
” কী অপরূপ সুন্দর জায়গা! “
সকলে কুয়াশাকে দেখার চেষ্টা করল৷ সে জানালার পাশে বসা। শিশির সামনে থেকে বলল,
” হ্যাঁ, খালামণিদের গ্রাম অনেক সুন্দর। আমি ছোট থাকতে দুইবার এসেছিলাম। কিন্তু তখন আরো অন্যরকম ছিল। মাটির রাস্তা ছিল এখন তো পাকা হয়েছে। আর ঘরবাড়িও বেশিরভাগ মাটির তৈরি ছিল। পাকাবাড়ি খুব বেশি ছিল না। পাকা বাড়ি বলতে ইট দিয়ে চারচালা করে বানানো ঘর-বাড়ি। “
নীহার বলল,
” হ্যাঁ, শশী শুধু ওর গ্রামের কথা বলে৷ কথা বলতেই গেলেই বলে তার গ্রাম নাকি অনেক সুন্দর। এখন দেখে সত্যি মনে হচ্ছে অনেক সুন্দর। কোনো ময়লা নেই রাস্তা পরিস্কার, সবুজ গ্রাম। মিষ্টি হাওয়াও। ফ্রেশ নিঃশ্বাস নিতে পারছি। “
মিষ্টি হাসল সকলে। কুয়াশা শিশিরকে উদ্দেশ্য করে বলল,
” নিজে তো দুইবার এসেছিলে। কোনোদিন তো নিয়েও আসোনি। বড় আম্মু একবার আনতে চেয়েছিল। কিন্তু তুমি তো বুনো ওল, সবটাতে বেগড়া দিতে হবে তোমার৷ তোমার জন্য বড় আম্মু আমাকে কোথাও নিয়ে যেতে পারত না। স্বাধে তো বলি না গলা চুকলানোর গোডাউন! ”
” তোকে? তাও আবার আমার সাথে আনতাম? দেখ তাহলে, তোর চাচাদের জন্য কী দিন এসেছে আমার জীবনে। এখন আমার সবখানে তোকে নিতে হয়৷”
শিশিরের কথাটা শুনে গাড়িতে থাকা সকলে হেসে দিল। সত্যি কী দিন এসেছে তাদের! কুয়াশা রেগে গেল। সে-ও উল্টো জবাব দিল,
” হ্যাঁ, দিন খারাপ না হলে কী আর তোমাকে আমার সহ্য করতে হয়? তোমার বাপ চাচারা সারাজীবনের জন্য তোমার মতো গলা চুলকানোর গোডাউনকে সঙ্গী করে দিয়েছে। এখন সারাজীবন গলা চুলকিয়ে জীবন পাড় করতে হবে আমার। নিজেকে দেখলে নিজেরই অভাগী নারী মনে হয়। হায় আফসোস!!”
শিশির উচিত জবাব পেয়ে কটমট করে উঠল। কুয়াশা পাত্তা দিল না৷ সকলে আরেকদফা হাসল৷ এভাবে শিশির কুয়াশার ঝগড়া শুনতে শুনতে তারা শশীদের বাড়িতে পৌঁছে গেল৷
পর পর দু’টো গাড়ি থামতে দেখে গ্রামের মানুষের কৌতূহল বাড়ল। তারা বাড়ি থেকে বের হয়ে ভিড় জমাল৷ গ্রামের মানুষ এমনি কেউ একজন হাঁক ছেড়ে ‘এ্যাই’ বললেও তাদের কৌতূহলের শেষ থাকে না।
গাড়ি হর্ণের শব্দ ও গাড়ি থামার শব্দ পেয়ে শশীর বাড়ির সকলে বেড়িয়ে এলো। আনন্দে আটখানা শশী। মেয়েটাকে বোধহয় শাসানি দেয়া হয়েছে এই জন্য বাড়ির সামনে ভেতরে উত্তেজনা থাকলেও বেশি লাফাল না৷
হানিফ সাহেব সহ মিহির, শশীর বড় ভাই এগিয়ে গেল। সকলকে সাদরে গ্রহণ করে নিলেন৷ কোলাকুলি করে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলেন। নীহার নেমে দূর থেকে শশীকে দেখল। তার ইঁচড়েপাকা সেখানে দাঁড়িয়েই আনন্দে ভেঙে পড়ছে৷ হাসল ক্ষীণ৷ নীহারের বন্ধু শান্ত পাশে এসে গুঁতো দিয়ে বলল,
” কিরে ভাই…! অনুভূতি কীরকম আমাদেরও একটু বল! “
নীহার মেকি রাগ নিয়ে চাটি মে-রে বলল,
” শা – লা চুপ থাক “
শান্ত হাসল দাঁত বের করে। শিশির নেমে নীহারের পাশে এসে দাঁড়াল। এখন শিশির একটু জ্বালাবে। সে সুযোগ পেয়েছে। বলল,
” এ ভাই, তোর শ্বশুড়বাড়ি দেখ। কী রাজকপাল রে তোর? বিয়ের আগে শ্বশুরবাড়ি চলে এলি? ফিলিংস বল!”
শান্ত হেসে উঠল৷ বলল,
” শিশির মাত্র এটা জিজ্ঞেস করেছি বলে বে- দ্দপটা মা-রল “
নীহার বেশ ভালোভাবে বুঝল এদের আজ সময় এসেছে। এতদিন সে সুযোগ নিয়ে এসেছে। এখন তার পালা। ভেবে কিছু আর বলল না৷ তবে সে-ও দ্বিগুণ টিপ্পনী কেটে বলল,
” ফিলিংস আমার, বাসর ঘরে যাবার আগের মুহূর্তের মতো বুঝলি! কিন্তু হায় আফসোস তোর বোনটা তো ল্যাদা বাচ্চা। এখনো দুইটা বছর আমার আঙুল চুষতে হবে৷ আর রাজকপাল কই পেলি? বল হতভাগা কপাল। তা না হলে কি শ্বশুরবাড়ি এমন বসে থাকতে আসি? “
তা শুনে শিশির, শান্ত দু’জনেই হেসে দিল৷ একই সুরে বলল দু’জন,
” আহারেহ্ বেচারা..! “
বলে আবার হাসল। নীহার কিছু বলল না৷ সেসময়ে রিজভী, হিম এসে দাঁড়াল পাশে। এরপর সকলকে বাড়ির মধ্যে যাবার জন্য বললেন হানিফ সাহেব। সকলের রাস্তা ছেড়ে বাড়ির খোলা অংশ যাকে গ্রামে বলা হয়, ‘খোলা’ সেখানে পা দিল। বেশ বড় জায়গা খোলা বাড়ির সামনে। শশীরা এখানে নতুন বাড়ি করেছে৷ ওদের দাদার বাড়িটা কিছুটা দূরে৷ ওর দাদা দাদি নেই। চাচাদের সাথে সম্পর্ক ভালো নেই৷ জমি জায়গা নিয়ে ঝামেলা হওয়ার পর ঐ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে এখানে বাড়ি করে। এটা অবশ্য দাদাদের থেকে পাওয়া জমি। প্রথমে টিন দিয়ে আপাতত ছিল। এরপর একতালা বিশিষ্ট ফ্ল্যাট করেছেন হানিফ সাহেব। এটাও বেশ পরিশ্রমে করা৷ গত সাত-আট বছর ধরে পুরোটা কমপ্লিট করেছেন৷ দু’বছর মতো হচ্ছে সম্পূর্ণ করেছেন৷ শশীর বড় ভাই ব্যাংকে জব করেন। আর হানিফ সাহেব ছোট খাটো একটা সরকারি চাকুরীজীবি৷
ওরা শশীদের কাছে যেতেই শশী আগে কুয়াশাকে সহ বৃষ্টি, ইয়াসমিনকে জড়িয়ে ধরল আনন্দে উত্তেজনায়। এরপর ঈশা, স্মৃতিকে ধরে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করল। জিনিয়া বোনের সাথে, জা’দের সাথে কথা বললেন৷ শশীর ভাবিও বেশ হাসিখুশি মনের৷ তবে একটু হিংসুটে আছে৷ শশী আর তার সম্পর্ক খুব একটা মাখোমাখো না৷ সে শশীকে বেশি একটা কাছে টানে না আর শশীও তেমন একটা যায় না।
এরপর শশী আর নীহারের চোখাচোখি হলো। হাসল দু’জন অমায়িক৷ সকলে না থাকলে বোধহয় এতক্ষণ জড়িয়ে ধরে উত্তেজনা বুঝিয়ে দিত ইঁচড়েপাকাটা৷ ভেবেই হাসল নীহার। শশী সকল ভাইদের সাথে কথা বলল। তুষার, তুহিন ড্রাইভারকে সব জিনিস পত্র বের করতে বলে বাড়ির মধ্যে নিয়ে আসতে বলল।
এবার জিনিয়া সকলকে ভেতরে ঢুকতে বললেন। গ্রামের লোক সকলে চেয়ে আছে। তারা কেউ কেউ জানে কেউ কেউ জানে না। সব কৌতূহল নিয়ে চেয়ে রইল।
বাড়িটা গ্রামে হলেও বেশ ভালোই সৌখিনতা আছে৷ হানিফ সাহেব সুন্দর করেই তৈরি করেছেন৷ টু-পাটিশন বাড়ি। মাঝে চলাচল রাস্তা। দুই পাশে তিনটা তিনটা করে ছয়টা রুম, সামনে একটা ডাইনিং এবং পাশে একটা কিচেন রুম৷
গ্রাম অঞ্চলে হাজার ফ্ল্যাট বাড়ি হলেও উঠান থাকে। বাড়ির উঠানেও কাজের জন্য অনেক কিছুই থাকে৷ তেমনি শশীদের বাড়িতেও। ভেতরে ঢুকে ঘর পেরিয়ে উঠানে গেলে মাটির চুলার রান্নাঘর সহ টয়েলট, চাপ-কলতলা আছে৷ ভেতরে বাহিরে দুই জায়গাতেই আছে৷ এরপর উঠান পেরিয়ে ডানে গেলে কিছুটা চিকন রাস্তায় হাটলে বাঁধায় করা শানের ঘাট বিশিষ্ট পুকুর৷ এটা হানিফ সাহেব করেছেন৷ মাছ চাষ করেন তিনি৷ সেখান থেকে বেশ ভালো আয় হয় উনার৷ এছাড়া আবাদি জমিও আছে৷
সকলে ঘুরেফিরে দেখল বেশ৷ শিশিররা শেষবার এসেছিল তখন এবাড়ি পুরোটা করা হয়েছিল না৷ কুয়াশা বৃষ্টিকে বলল,
” ভাবি বাড়ি সহ আশপাশটা অপূর্ব সুন্দর। এমন গ্রামেই তো বাড়ি করতে হবে দেখছি”
” হ্যাঁ, তুমি আর তোমার বর মিলে বাড়ি বানিয়ে সংসার করিয়ো “
কুয়াশা ভড়কে গেল৷ বলল কী আর বুঝল কী? এদের কাছে এখন আর কিছুই বলা যায় না।
কুয়াশাদের আপাতত এক ঘরে দেয়া হলো আর বড়োদের এক ঘরে৷ শিশিরদের মিহিরের ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো। ছয়টা ঘরের চারটা ঘর মিলিয়ে শশীরা থাকে৷ দুইটা পড়ে থাকে৷ দুপুর তিনটা বেজে গেছে। সকলকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলা হলো। দুপুরের খাবার দেয়া হবে একেবারে। আগামীকাল এঙ্গেজের অনুষ্ঠান হবে ছোটখাটো৷ জাকিয়ার ভাইরা আগামীকাল আসবে বলেছেন।
কুয়াশারা বোরকা খুলে উঠানের চাপকল তলায় গেল। ওরা ইচ্ছে করেই গেল৷ ভেতরে ওয়াশরুম আছে কিন্তু তাদের ইচ্ছে হলো নিচে আসার। এমন ইচ্ছে শিশিরদেরও হলো। ওরাও নিচে এসেছে। শশী, মিহির সব দেখিয়ে দিচ্ছে। নীহার জিজ্ঞেস করল,
” শশী..! পুকুরটা কাদের?”
” আমাদের। আব্বু করেছেন৷ মাছ ছাড়েন প্রতি বছর “
” বাহ্.. শ্বশুর বাড়ির মাছ খেতে হবে তো তাহলে।”
শশী লজ্জা পেল। সকলে হাসল।
মিহির বলল,
” হ্যাঁ, অনেক প্রজাতির মাছই আছে৷ বর্শি দিয়ে তো ধরি আমরা “
” আমিও ধরব মিহির ভাই “
হিমের কথায় মিহির বলল,
“আচ্ছা কাল তো হবে না পরশু ধরব “
কুয়াশা হিমের উদ্দেশ্যে বলল,
” তোর আবার পুকুরে বর্শি ফেলে মাছ ধরতে শখ জাগল? সুযোগ বুঝে তো আমাদেরই টপ দিস “
সকলে হেসে ফেলল। শিশির বলল,
” এ্যাই মিহির..! গোসল করা যাবে না? “
” হ্যাঁ, ভাই করি তো আমরা। ঘাট বাঁধা আছে “
” আচ্ছা গোসল করব “
” এখন? “
” হ্যাঁ, বিকেলে নামব “
শিশিরের সাথে নীহার, শান্ত, রিজভী, হিম ও সাথ বাঁধল। কুয়াশা চোখ ছোট ছোট করে শিশিরের দিকে তাকিয়ে রইল৷ শিশির তা দেখে মাথায় চাটি মে-রে বলল,
” ওভাবে কি দেখছিস গোবর ঠাঁসা? তোর বর যে হ্যান্ডসাম সকলে জানে। তাই দেখতে হবে না এত “
হা হা করে সব হেসে দিল। কুয়াশা মাথা ডলতে ডলতে শিশিরের গায়ে মুখের পানি ফুড়ুৎ করে ফেলে দিয়ে দৌড় দিল। কারণ ওর মুখে পানি ছিল তখন৷ কুলকুচি করছিল৷ সেই সময়ে মে-রেছে শিশির। সেও সুযোগ বুঝে কুলিটা গায়েই দিল। সকলে মিটিমিটি করে হাসছে। এদের এই স্বভার আর গেল না৷ কোথাও একসাথে গেলেই এভাবে দু’জনের ঝগড়া, মা-রা মা-রি দেখতে দেখতে দিন যায়।
এদিকে শিশির কুয়াশার চোদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে। কতত বড় বে-য়াদব!! সকলে হাতমুখ ধুয়ে চলে গেল উপরে।
_________
বিকেল হয়ে গেছে। গ্রামের বিকেলটাও মনোমুগ্ধকর। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে সকলে বিশ্রাম করছিল। শশীর তিন চাচা। তার মাঝে এক চাচা মা-রা গেছেন আর দুইটার মাঝে একজনারা কথা বলেন না। ঝামেলা হবার পর থেকে। আর একজন কথা বললেও বেশি একটা আসেনা। তবে হানিফ সাহেব সকলকেই বলে এসেছেন জাকির মালিথাদের সাথে যেন দেখা করতে আসে। শশীর কাজিনরা প্রায় সকলেই বিবাহিত। যারা আছে তারা এসে দেখা করে গেছে।
বিকেলে সকলে পুকুরে নামবে বলে ঠিক করল শিশিররা। কারণ গরম লাগছে সকলের। এছাড়া জার্নি করে এসেছে শরীরটাও কেমন লাগছে। গোসল করলে ভালো লাগবে।
কথা অনুযায়ী সকলে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এলো। তুষার, তুহিন এদিকে নেই। তারা বাবা, চাচুদের সাথে সব সময় থাকে। বাবাদের সাহায্য করে। শিশিরদের বেড়িয়ে যেতে দেখে কুয়াশারাও বের হলো। পুকুর পাড়ে একটু ঘুরাঘুরি করা হবে।
শশী সকলকে নিয়ে গেল পুকুর পাড়ে। অসাধারণ জায়গা। বড় বড় আম গাছ দুটো পুকুরের ধারে। পরিবেশটা অসম্ভব সুন্দর। বিকেলের মৃদু সূর্যে আলো পড়ছে পুকুরের পানিতে তাতে জ্বল জ্বল করছে পানি। সূর্যের তেজ নেই কিন্তু আলোটা লালাভ হয়ে এসেছে৷ চারিদিকে সবুজ প্রকৃতি। সকলে মুগ্ধ হলো দেখে৷ শশীর পাশে নীহার এসে দাঁড়াল৷ আস্তে করে বলল,
” নাহ্.. বউয়ের থেকে শ্বশুর বাড়িটাই বেশি সুন্দর দেখছি। ঘরজামাই থাকতে হবে তো! “
শশী চোখ ছোট ছোট করে তাকাল। এদিকে নীহার আস্তে বললেও বৃষ্টি, ইয়াসমিন, কুয়াশা শুনে নিল কথাটা৷ ওরা হেসে উঠল। কুয়াশা জোরে করে বলল,
” তাহলে ভাইয়া শ্বশুরের মেয়ের সাথে বিয়ে না করে বাড়ির সাথে করো। ঘরজামাই থাকার চেয়ে ঘরকেই বউ বানিয়ে সংসার করতে রয়ে যাও। যুক্তি কিন্তু সেই দিলাম!”
কুয়াশা যুক্তি তো দিল কিন্তু তার যুক্তি দিতে না দিতেই মাথায় চা-টি পড়ল। সেটা অবশ্যই শিশির দিয়েছে। বলল,
” তোর এসব ফালতু লজিক কোথায় পাস তুই? এমন ফালতু লজিক দিয়ে লয়ার হবি তুই? আবার বড় বড় লেকচার মা-রিস আমার সাথে কেচ লড়ে হারাবি আমায়! তোর এইসব ফালতু লজিক তো আমি তুরি মে-রে উড়াব ”
” এ্যাই…! তোমার কি মনে হচ্ছে আমার মাথাটা সরকারি জায়গা? যখন তখন হাত চালাচ্ছ? আর ভুল কি বললাম আমি? “
শিশির কিছু বলতে যাবে রিজভী বলল,
” ভাই তোরা ঝগড়া কর আমরা গেলাম “
শিশির কুয়াশাকে রাগী নজর দিয়ে সে-ও চলে গেল। আর নীহার যাবার আগে শশীর কানের কাছে ঝুঁকে মুখ নিয়ে বলল ,
” বিয়ের পর রাতে সুবিধা হবে দেখছি শ্বশুরবাড়ি এলে। শ্বশুরের এত বড় পুকুর থাকতে বাথরুমের প্রয়োজন পড়বে না “
শশী জমে গেল। নীহার যেতে যেতে দুষ্টু নজরে দুষ্টু হাসি দিতে দিতে চলে গেল। কুয়াশা ভ্রুর মাঝে রাগ নিয়ে এগিয়ে গেল। মেয়েরা সকলে বাঁধায় করা শানের উপর বসল। গল্প করতে। শিশিররা সকলে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেছে। সকলে শার্ট খুলে পুকুরে ঝাপ দিল। শিশির ওর নানিদের ওখান থেকে সাঁতার শিখেছিল। নীহারেরও শেখা আছে। হিমও পারে টুকটাক। শিশির নেমে টান দিয়ে শার্ট খুলে ফেলল। এদিকে বৃষ্টিরা গল্পে মগ্ন কিন্তু কুয়াশা শিশিরকে দেখতে ব্যস্ত।
শিশিরও শার্ট খোলার পর কী মনে করে যেন পেছনে তাকাল৷ দেখল কুয়াশা তাকেই দেখছে অনিমেষ। তা দেখে হাসল সে। সকলের অগোচরে চোখ টিপল। কুয়াশা লজ্জা পেল কিন্তু চোখ সরাল না। তাকিয়ে রইল। এই ছেলে সব অনুভূতিগুলোকে এক জায়গায় বেঁধে ফেলে। শিহরণ জাগানোর ওস্তাদ। শার্টহীন উজ্জ্বল হলুদ পেশিবহুল শক্ত-পোক্ত পিঠ থেকে কোমর অবধি অতি আকর্ষণীয়। শিশির দাঁত বের করে হাসতে হাসতে নিচে নেমে ঝাঁপ দিল৷ বউ তার এক্কেবারে ম-রেছে।
কুয়াশা ভাবিদের সাথে গল্প করছে আর শিশিরকে দেখছে। অতি দক্ষতার সাথে সাঁতার কাটছে। দুই রাউন্ড দিয়ে সকলেই হাঁপিয়ে গেছে। তাই একে একে এসে সিঁড়িতে বসল। টুকটাক কথা বলছে। শশীর এবার নীহারের দিকে চোখ গেল। উল্টো ঘুরে আছে। পিঠ দেখা যাচ্ছে। একে একে স্মৃতি, ঈশাও তাকাল। স্মৃতি রিজভীকে দেখল। তারা রিলেশনে আছে এখন। ঈশাকে মিহির প্রপোজাল দিয়েছে। কিন্তু তেমন ভাবে আগায়নি তারা। এত কম বয়সের ডিফারেন্স এইজন্য ঈশা আগাচ্ছে না। তবুও ভালোলাগা আছে। পরে কী হবে জানা নেই। ওদের এক একটাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বৃষ্টি, ইয়াসমিন হেসে বলল,
” এভাবে গিলে খাচ্ছ কেন তোমরা বেচারাদের? ডায়রিয়া হবে, কম করে খাও।”
সকলে ভড়কে গেল। চোখ ফিরিয়ে নিল। ওরা দু’জন হেসে ফেলল৷ কুয়াশা সকলের অগোচরে আবার তাকাল। আজ তার কী হলো কে জানে! কখনো শিশিরকে এমন গোসল করা অবস্থায় দেখেনি। আজ দেখে খুবই আকর্ষণীয় লাগছে। নিয়ন্ত্রণহীন হচ্ছে কী!!
কিছুক্ষণ গোসলের পর সকলে উঠে পড়ল। বৃষ্টি, ইয়াসমিন চলে গেছে। তাদের ডেকেছে। কুয়াশারা হাঁটাহাঁটি করছে পুকুরের সামনে আম গাছের নিচে। আর গল্প করছে। এমন সময় আবারও শিশিরের দিকে নজর চলে গেল কুয়াশার। এ মেয়ে আজ নির্লজ্জ হয়ে গেছে। ভাবটা এমন জীবনে শিশিরকে দেখেনি। শরীরে পানিগুলো সূর্যের লালাভ আলোয় জ্বল জ্বল করছে। নাহ্ আর তাকানো যাচ্ছে না৷ চোখ ফিরিয়ে নিল।
শিশির কুয়াশার হাবভাব সবই দেখল। দেখে দেখে মুচকি মুচকি হাসল৷ ভালোই জব্দ করা যাচ্ছে দেখি!
‘
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। চারিদিকে নিঃস্তব্ধতায় ছেয়ে যাচ্ছে। গ্রামের সন্ধ্যাটাও কী সুন্দর! চারিদিকে আজানের ধ্বনি কানে আসছে।নামাজের কিছুক্ষণ পর কারেন্ট চলে গেল। গ্রামে এই একটা জ্বালা বেশি। কারেন্ট অতিরিক্ত যায়। একে তো গরম আর কারেন্ট চলে গেল! সকলে হা-হুতাশা করতে লাগল। জিনিয়া আর শশীর ভাবি রান্নার আয়োজন করছিল সাথে জাকিয়ারা তিন জা সাহায্য করছিল। শশীরা সেখানে চার্জার দিয়ে সকলে মিলে ছাদে চলে গেল। এই গরমে ঘরে থাকা বড্ড কষ্টদায়ক। জাকির, জাহিদ, আমিনুল হককে নিয়ে হানিফ সাহেব চেয়ার পেতে বসলেন উঠানে৷
ছাদে পাটি বিছিয়েছে সকলে। মৃদু আলো শুধু। লাইট টাইট কিছু আনেনি। পূর্ণ জোৎস্না রাত না হলেও অন্ধকারটাও ততটা গভীর না। সকলে সকলকে হালকা আলোয় দেখতে পারছে। হাত পাখা নিয়ে বসল। সকলের কাছে নেই অবশ্য। শিশিরের কাছে পাখা ছিল না। কুয়াশার কাছে আছে৷ সে গিয়ে কুয়াশার কোলের উপর শুয়ে পড়ল। বলল,
” জোরে জোরে বাতাস কর৷ প্রচন্ড গরম লাগছে “
সকলের সামনেই শুয়েছে। কুয়াশা কিছুটা ভড়কে গেল। মিটিমিটি হাসল সকলে ওদের কাণ্ড দেখে। তুষার, তুহিনও আছে। ইয়াসমিন হাসতে হাসতে বলল,
” শিশির তোর জায়গা হলো না? বউয়ের কোলের উপর শুতে হলো? “
” না হয়নি। বউ আমার সো বউয়ের কোলও আমার। তোমরা তোমাদের কাজ করো। ”
এমন কথায় আবার হাসল সবাই। বৃষ্টি টিপ্পনী কেটে বলল,
” বাবাহ্ এখন সব তোমার? কে যেন বলেছিল, ‘তোর মতো গোবর ঠাঁসাকে বিয়ে করার থেকে রাস্তার পাগলকে বিয়ে করা ভালো!’ “
শিশির ভড়কে গেল৷ এরাই যত নষ্টের গোড়া৷ একটু বউয়ের প্রতি অধিকারও দেখাতে পারে না। আগে যা করেছে করেছে তাই বলে এখন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তুলতে হবে! শিশির কুয়াশার দিকে তাকাল৷ সে তার দিকেই তাকিয়ে। ভেঙচি কাটল কুয়াশা৷ বলল,
” বুনো ওল বলেছিল “
সবাই হেসে ফেলল। তবে সত্যি সত্যি বাতাস করতে লাগল কুয়াশা৷ ভালোই লাগছে শিশিরের৷ আহ্ কী রোমান্টিক ব্যাপার স্যাপার৷ বউয়ের কোলে শুয়ে বউয়ের হাতে পাখার বাতাস খাচ্ছে। কুয়াশা বাতাস করতে করতে একটা হাত শিশিরের চুলের মধ্যে সহ, গলা, বুকে চালাচ্ছে, কখনো আবার কপালেও স্লাইড করছে। শিশির অনুভবে বুঝল তা৷ এটাও বুঝল বউ তার কতটুকু গরম লাগছে মাপার চেষ্টা করছে। ঘামও মুছিয়ে দিচ্ছে কপাল থেকে হাতের পিঠে, তালুতে করে। কুয়াশা অন্ধকারে সকলের অগোচরে শিশিরের শার্টের বুকের উপরের বোতাম গুলো খুলে দিল একে একে৷ খুলে বুক আলগা করে দিল। শিশির অনেক আপ্লূত হলো বউয়ের এহেন কাজে। সকলের অগোচরে কুয়াশার হাতের ফাঁকে হাত গলিয়ে দিল। ঠোঁটে ধরে গাঢ় একটা চুমু খেল হাতের পিঠে। কুয়াশা কেঁপে উঠল একজোড়া তপ্ত ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে। হালকা আলোয় নজরে নজর পড়ল দু’জনের৷ হাসল দু’জনে অমায়িক। একজনের দুষ্টু হাসি তো একজনের লজ্জাময় হাসি। দু’জন দু’জনকে বুঝিয়ে দিল একে অপরে ঝগড়া করুক আর চুলোচুলি করুক অনুভূতি, ভালাবাসা তাদের মাঝে কতটা গভীর।
| চলবে |
শুরুর শিশির, কুয়াশাকে পড়ো কয়েকটা পর্বতে৷ বলা যায়না এমন শিশির, কুশাকে আর নাও পেতে পারো সব। তবে রোমান্স সাথে অবশ্যই থাকবে।
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click