| [ ১৮+ এলার্ট ]
®রোজা রহমান
[ সম্পূর্ণ গল্পটা প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্তমনস্কদের জন্য নির্ধারিত ]
‘
চারিদিকে বেশ নিঃস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে। কিন্তু রাত মাত্র আটটা৷ গ্রামের রাত এমনই৷ সন্ধ্যার পর পরই নিঃস্তব্ধতায় ছেয়ে যায়৷ শহরের মতো তো আর গ্রামেও সবসময় গাড়িঘোড়া চলে না! এছাড়া গ্রামে অধিকাংশ মানুষ অতি জলদি খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ে। যারা একটু লেখাপড়া করে তারা রাত জাগে। আর পুরুষগণ দোকানপাটে বসে গল্পগুজব সহ টিভি দেখে রাত দশটা-এগারটা বাজায়৷ এই গ্রামের রাত জাগা৷
তবে শশীদের গ্রামটা এখনো আগের রেশ ধরেই আছে৷ এখানে তেমন আধুনিকতা আসেনি এখনো। যার জন্য এত জলদি নিঃস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে।
কারেন্ট এলো মাত্র। গল্পের মাঝেই এসেছে। ওদিকে জিনিয়া সকলকে ডেকে পাঠিয়েছেন। জানিয়েছেন এসে খেয়ে নিতে আগে৷ নয়তো আবার কারেন্ট গেলে খেতে সমস্যা হবে৷ কারেন্ট থাকতে থাকতে খেয়ে নিক৷ যখন তখন আবার চলে যাবে। সকলে বিষয়টা বুঝল৷ কথা খারাপ না। কিন্তু এত জলদিও খাবার অভ্যাস নেই৷ শহর অঞ্চলের মানুষ বলে কথা! তবুও সকলে উঠে নিচে চলে গেল।
‘
খাবার খেতে সকলে নিচে পাটি বিছিয়ে বসেছে৷ এতগুলো মানুষের ডাইনিং টেবিলে জায়গা হবে না। আর টেবিলে বসলেও বার বার বসতে হবে কয়েকজন করে করে। এই ভেবে ছোট, বড় পুরুষ সহ কুয়াশারা, বৃষ্টিরা বসেছে৷ পরিবেশন করার দায়িত্বে আছেন জিনিয়া, শশীর ভাবি, জাকিয়া, আম্বিয়া, আজমিরা।
খাবার সকলে তৃপ্তি করে খাচ্ছে৷ গ্রামের সব ফরমালিন মুক্ত ফ্রেশ সবজি পেয়ে সকলে আপ্লূত। দুপুরে তেল মসলার খাবার রান্না করা হয়েছিল মেহমানদের জন্য। এখন সেগুলো আছে কিন্তু সেগুলো কেউ তাকিয়েও আর দেখছে না৷ জিনিয়া রাতের জন্য রান্না করেছেন, নিজেদের বাড়ির ধানের চাউলের ভাত, ডাউল, পটলের চপ ভাজি, বেগুনের চপ ভাজি, আলু ভাজি, লাল শাক ভাজি, নিজেদের পুকুরের রুই মাছ ভুনা সহ টুকটাক আরো কয়েকটা পদ৷ এগুলো খেয়ে সকলে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শহরে শাক-সবজি কিনে খায় সেগুলোর স্বাদই পাইনা সকলে মনে হয়৷ আর এগুলো কী মজাদার!! শিশিররা, কুয়াশারা সমানে বলে যাচ্ছে তা। তা শুনে সকলে হাসছে। নীহার তো বলেই ফেলল,
” নাহ্, এখানেই থেকে যাব তো। এত মজাদার খাবার ছেড়ে থাকা যাই! “
সকলে শুনে খাবার মাঝে জোরে জোরে হেসে দিয়েছে। আম্বিয়া বললেন,
” কেন রে তোর ঘরজামাই থাকার শখ আছে নাকি? “
” আরেহ্ আম্মু থাকলে কি সমস্যা? শাশুড়ীর হাতের মজাদার সব খাবার খেতে পারব। রোজ রোজ শ্বশুরের পুকুরের মাছ, ক্ষেতের টাটকা সবজি খেতে পারব “
সকলে আবার হাসল। আম্বিয়া বললেন,
” পাঁজি ছেলে “
জিনিয়া বললেন,
” একমাত্র মেয়ে-জামাইকে ঘরজামাই রাখতে সমস্যা হবে না আমাদের। থাকতে পারো নীহার”
শশী এসব শুনে লজ্জায় নূয়ে পড়ল। নীহার আঁড়চোখে তাকাল শশীর দিকে। হানিফ সাহেব হেসে বললেন,
” তবে আর কি? জামাই, শ্বশুর মিলে একসাথে মাছ ধরে বাজারজাত করব আর মাঠে ফসল সহ শাক-সবজি আবাদ করব। কি চলবে না নীহার? “
” দৌড়বে। আমি রাজি “
সকলে আবার হেসে কুটিকুটি হলো। শিশির পাশে থেকে নীহারের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
” এখন পটালেও কাজ হবে না ভাই৷ সময় এখনো দুই বছর…। এর আগে বউ পাচ্ছিস না। তোর শ্বশুর তোকে নাকানিচুবানি খাইয়েই মেয়ে দেবে। ”
শুনে নীহার আফসোসের শ্বাস ফেলল। কিন্তু এদিকে হিম কথাটা বলেই ফেলল জোরে করে,
” কিন্তু নীহার ভাই তোমার এসবের জন্য এখনো দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে। শ্বশুর পটিয়েও কাজ নাই। “
কথাটা শোনা মাত্রই শিশির, নীহার দু’জনেরই নাকে-মুখে ভাত উঠে বেশম লেগে গেল৷ কাশতে কাশতে অবস্থা কাহিল হলো। মাত্রই কথাটা আলোচনা করছে তারা এই লিলিপুট তা বলেই দিল সকলের সামনে? হিমের কথা শুনে কুয়াশা সহ সকলে হা হা করে হেসে দিয়েছে৷ শশী আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। নীহার কাশতে কাশতে চোখ বড় বড় করে তাকাল সকলের দিকে। কী লজ্জাজনজ কথাবার্তা!!
এদিকে শিশির হিমকে কটমট নজরে দেখল। শা-লা একটা পেয়েছে সে! বদের আড্ডি৷ ভাই-বোন দুটোই এক। জীবনডা জ্বালিয়ে খেল। টোপ টা এক্কেবারে সঠিক সময় মতোই ফেলেছে।
নীহার এবার হিমের দিকে তাকাল। কিড়মিড় নজরে কটমট করতে করতে৷ একপর শিশিরের কাছে বিড়বিড় করে বলল,
” শা-লা একটা পেয়েছিস তুই৷ ওর মতো একটা শা-লা থাকলে আর কিছুই লাগে না সকলের সামনে নাকানিচুবানি খাওয়ার জন্য”
শিশির শুনে মিটমিট করে হাসছে। এভাবে হাসাহাসি করতে করতেই আজ খাওয়া সম্পূর্ণ করল। বেশ আনন্দ লাগছে সকলের৷ নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ মনোমুগ্ধকর।
খেয়ে দেয়ে সকলে বিশ্রাম নিচ্ছিল। এমন সময় আবার কারেন্ট গেল৷ কী জ্বালা! খেয়ে উঠে সকলের আরো গরম লেগে গেছে বেশি। হানিফ সাহেব সকলকে বাহিরে গিয়ে বসতে বললেন চেয়ার পেতে। জাকির মালিথারা সহ এবার তুষার, তুহিন বাবাদের সাথে উঠানে বসল৷ শশীর বড় ভাই সৌরজও আছে। শিশির, নীহাররা বাবার সাথে বসতে গেল কিন্তু শশী বসতে দিল না। সে শিশিরকে টেনে নিয়ে এলো। ছাদে যাবে বলল। শিশিররাও আর মানা করল না। কারণ সেখানে বেশ ভালোই ফুরফুরে বাতাস বইছে৷
‘
ছাদে সকলে বসল। আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডার মাঝে দশটার দিকে ইয়াসমিন, বৃষ্টি উঠে চলে গেল। কারেন্ট আসার নাম নেই। কখন আসবে কে জানে! আড্ডার মাঝে শশীকে ডেকে নীহার একটু দূরে বসল। তারা তাদের মতো গল্প করছে তাই সেদিকে আর কেউ গেল না তা নিয়ে কথাও বলল না। কাটাক একটু সময় নিজেদের মতো করে৷
‘
রাত এগারটার দিকে কারেন্ট এলো। সকলের আড্ডা ভেঙে নিচে যেতে চাইল। ঘুমও ধরেছে সকলের। কিন্তু, এদিকে শিশির আগের ন্যায় কুশার কোলের উপর মাথা রেখে ঘুমে কাঁদা। নীহার এসে শিশিরকে ডাকল কিন্তু সে বান্দার ওঠার নাম নেই। অনেকেই ডাকল বান্দা উঠছে না, আশ্চর্য!! নীহার এবার চোখ ছোট ছোট করে তাকাল। রিজভীও বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করল। কিন্তু বুঝে উঠতে পারল না। শিশিরের ঘুম একটু গাঢ় আগাগোড়াই৷ কুয়াশাও আর ডাকতে দিল না। বলল,
” ভাইয়া থাক। একটু ঘুমিয়ে নিক। তোমরা গিয়ে শুয়ে পড়ো “
” পাগল নাকি? বে-য়াদবটা ঘুমাবে আর তোকে একা এখানে বসিয়ে পাহারা দিতে রেখে যাব? “
” সমস্যা হবে না ভাইয়া। তোমরা শুয়ে পড়ো। আমি ডেকে তুলে আনছি। বেশিক্ষণ থাকব না”
শশী বলল,
” বুবুর সাথে আমি থাকছি। আপনারা চলে যান”
” না তোমার থাকতে হবে না। আমি থাকছি। তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো। অনেক রাত হয়েছে ”
এবার রিজভী বলল,
” নীহার ভাই, থাক এরা৷ চলো আমরা নিচে যায়৷ কুয়াশায় পারবে ও’কে ডেকে তুলতে। চেনোই তো ওদের!”
কথাটা নীহার ভাবল৷ কথা মন্দ না৷ কুয়াশা যেমনই হোক তুলে নেবে। রাতও ততটা গভীর হয়নি। ভেবে বলল,
” আচ্ছা, তবে বেশি লেট করিস না। বে-য়াদবটাকে তোল ডেকে। না উঠলে মে-রে উঠাবি। বে-য়াদব আরামের জায়গা পেয়েছে। দেখো কেমন নাকে তেল দিয়ে ঘুমচ্ছে “
শেষ বাক্য দুটো বিড়বিড় করে বলল। কিন্তু রিজভী বিষয়টা ধরে ফেলেছে তাই মিটমিট করে হাসছে৷ স্মৃতিও ধরতে পেরেছে। রিজভীর দিকে তাকিয়ে হাসছে দু’জন ওরা চলে গেল একে একে। কুয়াশা এবার একটু ভয় পাচ্ছে। তবে শিশিরকে ডাকার ইচ্ছে হলো না কেন যেন৷ কোলের উপর মাথা রেখে ঘুমচ্ছে দেখতে কী সুন্দর লাগছে! কুয়াশা শিশিরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। ঘুমে তার স্বামীটাকে আবছা আলোয় কী সুন্দর লাগছে! ভেবে মুচকি হাসল। ইশশ এটাকে বিয়ে না করার জন্য কতশত বাহানায় না করেছিল! আর এখন মনে হচ্ছে নাহ্, বিয়ে না করলে এত সুন্দর ছেলেটা হাত ছাড়া হয়ে যেত। নিজ মনেই পাগলামী ভাবনা ভেবেই হেসে ফেলল একটু শব্দ করে।
তৎক্ষনাৎ শিশির কুয়াশার কোলের উপর থেকে মাথা তুলে এক ঝটকায় কুয়াশাকে টেনে নিয়ে শুইয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল। শুয়ে গলার মাঝে মুখ গুঁজে দিল। ঘটনা গুলো এতটায় জলদি হলো যে কুয়াশা কিছু বুঝে ওঠার সুযোগই পেল না। হতভম্ব, হতবাক, বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। চমকেও বেশ উঠেছে৷ শিশির গলায় মুখ গুঁজে দিয়েই বলল,
” ঘুমা ”
মানে কী!! কুয়াশা বলল,
” এ্যাই…! তুমি ঘুমোও নি? তুমি না ঘুমে কাঁদা ছিলে? তোমাকে না ঘুম থেকে তোলা গেল না? আর এখন এসব কি? “
” তোর অত বুঝে কাজ নেই। তুই ঘুমা৷ ওরা আমাকে আলাদা ঘরে শুতে দিত। আর আমার এখানের স্মেল না নিলে ঘুমই হবে না। তাই এই বুদ্ধি। বেশি না বুঝে ঘুমা। “
কুয়াশা হতবাক হয়ে হা হয়ে গেল। বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় সে। মানে এই ছেলে এতক্ষণ ঘুমের ভান ধরে ছিল? তারজন্য এতক্ষণ ডেকেও বান্দা উঠে নি? কী চালাক লোক চিন্তা করা যায়!! বলল,
” তুমি ঘুমের ভান ধরে ছিলে এতক্ষণ? কী চালাক গো তুমি! একদম চতুর শৃগাল “
শিশির মুখ গুঁজে রেখেই ফিসফিস করে হেসে ফেলল৷ বলল,
” হুঁ, ওরা আমার আহ্লাদী বউটাকে অন্য ঘরে শুতে দিত আর আমাকে অন্য ঘরে৷ ওমন ঘুমানো আমার পক্ষে সম্ভব না। এই দুই মাসে তুই আমার অভ্যাস হয়ে গেছিস। তোর নেক স্মেল না নিলে ঘুম ধরে না। এটা নেশা আমার। সকলে নেশাদ্রব্য সেবন করে আর আমি তোর নেক স্মেল সেবন করে ঘুমায়। সকলের সাথে শুতে পারব না আমি। “
কথাগুলো আহ্লাদের সাথে বলে আরেকটু টেনে নিল কুয়াশাকে৷ কুয়াশা হাসবে নাকি অবাক হবে? সেটাই বুঝছে না। কতটা বউ পাগল হয়েছে চিন্তা করা যায়! কুয়াশা ভেবে বলল,
” তুমি তো দেখছি আস্ত একটা বউ পাগল হয়ে গেছ গো। শিশির মালিথা বউ পাগল? ভাবা যায়!! এ্যাই তুমি না আমাকে বিয়েই করতে চাই ছিলে না! কী যেন বলেছিলে! ‘ তোর মতো গোবর ঠাঁসাকে বিয়ে করার জন্য ম-রে যাচ্ছি না আমি, হুহ্ ”
শিশির মুখ তুুলে কুয়াশার দিকে তাকাল। চোখে চোখ রাখল আবছা আলোয়। সে-ও ভ্রু কুঁচকে বলল,
” সে-তো তুইও বলেছিলি যে,’তোর মতো বুনো ওলকে বিয়ে করে সারাজীবনের জন্য গলা চুলকানোর রুগী হতে পারব না’ অথচ এখন নিজেই সুযোগ বুঝে ছোঁচার মতো ছুঁকছুঁক করে আমাকে দেখিস। ভাবে লাগে গিলে খেতে পারলে বাঁচিস। পুকুর পাড় থেকে যেভাবে দেখছিলি। ভাগ্যিস আম্মু ছোট কালে নজর টিকা দিয়েছিল “
শিশিরের কথা শুনে কুয়াশা ভড়কে তো গেল কিন্তু শেষ কথাটা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠল। শিশিরও হাসল তা দেখে৷ চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা তার আহ্লাদী বউকে রাতের আবছা আলোয় অপূর্ব, অপ্সরার থেকে কম কিছু লাগছে না। এটায় তো চাঁদ। আর চাঁদের প্রয়োজন পড়বে? উহু পড়বে না।
কুয়াশা হাসি থামিয়ে আমতাআমতা করে মেকি রাগ দেখাল৷ ঝাঁঝ নিয়ে বলল,
” নিজে যে সি’ডি’উস করছিলে তারবেলায়?”
” আচ্ছা? আমি সি’ডি’উস করছিলাম?”
” তা নয়তো কি? “
” হয়েছিলিস সি’ডি’উস? “
” হুঁ, তুমি পুরোটা অতিশয় আকর্ষণীয়। সুদর্শন পুরুষ। “
কথাটা অকপটে কুয়াশা শিশির চোখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে বলে দিল। শিশির তা শুনল। সে বউয়ের উপর পূর্ণ দৃষ্টি দিল এবার। ছাদের শানে একহাতে ভর দিয়ে শোয়া সে। কুয়াশা চিৎ হয়ে শোয়া৷ শিশির কুয়াশার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমার ঘরের অপূর্ব চাঁদ “
কুয়াশা লজ্জা পেল। লজ্জায় মুখ গুঁজে দিল শিশিরের বুকে। শিশিরও অন্য হাতটা দিয়ে কুয়াশা বুকের সাথে চেপে ধরল। হাসল সে। সুখ সুখ লাগে খুব। কিছুক্ষণ পর কুয়াশা বলল,
” সকলে কি ভাববে? “
” কিছুই ভাববে না৷ আমি ম্যানেজ করে নেব ”
” ছাদের দরজা খোলা “
” আঁটকে দিয়ে আয় “
কুয়াশা তা শুনে উঠে বসল। পাশে থেকে ফোন নিয়ে শশীকে কল দিল। একটা বালিশ আর একটা কয়েল নিয়ে ছাদে আসতে বলল। কথা বলে ফোন রাখল৷
‘
এদিকে শশী কথা অনুযায়ী বালিশ আর কয়েল, লাইটার নিয়ে চুপিচুপি ছাদে যাচ্ছিল। কিন্তু সামনে নীহার বেঁধে গেল৷ নীহার ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। জিজ্ঞেস করল,
” এসব নিয়ে কোথায় যাচ্ছ? “
ভড়কে গেল শশী। যতোই হোক কুয়াশা বোন তার৷ সে-ও বুঝেছে, তারা একা থাকতে চায়। তবুও আমতাআমতা করে বলল,
” শিশির ভাইয়া বলল ছাদেই ঘুমবে। তাই দিতে যাচ্ছি “
নীহারের ভ্রু আরো কুঁচকে গেল। বলল,
” কুয়াশা এসেছে? “
ধুর..এত প্রশ্ন করতে হবে কেন! ভড়কানো কন্ঠে সত্যিটায় বলল। নয়তো আরো প্রশ্ন করবে। নীহার শুনে ভড়কে গেল। শিশিরের মতিগতি এবার বুঝল৷ তবে আনন্দও পেল৷ বলল,
” চলো আমিও যাচ্ছি “
” না না লাগবে না। আপনি থাকেন আমি দিয়ে চলে আসছি ”
নীহার তা শুনে শশীর হাত থেকে বালিশ নিতে নিতে বলল,
” ইঁচড়েপাকা মেয়ে। এত বুঝো কেন তুমি? বড্ড বেশি পাকনা তুমি। “
শশী লজ্জা পেল। কথা না বলে হাঁটতে লাগল। কিন্তু নীহার শশীর আঙুলে আঙুল গলিয়ে দিয়ে শক্ত করে হাত ধরল। বলল,
” চলো..”
শশী কথা না বাড়িয়ে হাঁটতে লাগল। এমন সময় নীহার বলে উঠল,
” ইঁচড়েপাকা মেয়ে..! অন্তর জ্বালিয়ে খাঁক করে দিচ্ছ কিন্তু! দুইটা বছর অপেক্ষা করা কিন্তু দায় হবে আমার। ছাঁই না হয়ে যাই আবার “
শশী বরফ হলো তা শুনে। হাঁটার গতি কমিয়ে দিল। নীহার তাকিয়ে পেছনে দেখল। চোখে চোখ পড়ল। শশী নীহারের গভীর নজরে অনিমেষ তাকিয়ে। দহন বেড়ে গেল নীহারের। হাত ছেড়ে শশীর বাহু ধরে কাছে টানল। দূরত্ব অতি কম তাদের মাঝে৷ কিঞ্চিৎ ফাঁকা। তারা সিঁড়ির সামনে। এখনো একটা সিঁড়িও অতিক্রম করেনি। ডাইনিংএর আলো আসছে এদিকে। শশীর হাতে ফ্ল্যাস জ্বালানো ফোনের। নীহার শশীর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে চুমু আঁকল। বলল,
” জলদি বড় হও। আমার অপেক্ষার অবসান জলদি ঘুচাও “
শশী কি এতটাই ছোট? তার কি এলোমেলো লাগে না এসব শুনলে? সে-ও বুঝছে সব। তারও ভেতর এলোমেলো হচ্ছে। দহন বাড়ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। নীহারের কথা শুনে সে লজ্জায় কপাল ঠেকিয়ে দিল নীহারের বুকে। বলল,
” এতটাও ছোট না আমি। এলোমেলো আমিও হই। এমন করে আর বলেন না প্লিজ “
নীহার হাসল৷ এই মেয়েটা তাকে পুরোই শেষ করে দেবে। থাক আর এসব বলে কাজ নেই৷ হুবু বউ তার ইঁচড়েপাকা। অপেক্ষার প্রহর জলদি শেষ হোক। ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। বলল,
” চলো “
শশী আর কথা বলল না। দু’জনেই সিঁড়ি ভেঙে উপরে গেল। শশী ছাদের দরজা নক করল। কুয়াশা উঠে এলো। দেখল নীহারও সাথে। ভড়কে গেল। লজ্জা পেল সে। নীহার তা বাদ দিয়ে দরজার মুখের কাছে থেকেই মৃদু চেঁচিয়ে বলল,
” এ্যাই বে-য়াদব, আমার বোনকে ছাড়া ঘুম হয় না, এটা বললেই পারতিস! ওমন নাটক করার কি ছিল? নাটকবাজ সব। ছোট থেকে তোর নাটক দেখতে দেখতে বুড়ো হয়ে গেলাম৷ ”
শিশির তা শুনে বলল,
” রাজাকা-রের বংশধর, দুইনাম্বারী করে বিয়ে দিয়ে এখন আবার বউয়ের থেকে আলাদা শুতে কইস? লজ্জা করে না তোদের? “
” আচ্ছা? লজ্জা আমাদের পাওয়া উচিত?”
ওদের দু’জনের কথা শুনে শশী, কুয়াশা হতভম্ব হয়ে গেল। কুয়াশা তো লজ্জায় মিইয়ে গেল৷ শিশির বলল,
” এ ভাই, তুই এখানে কেন এলি রে? যা তো! কাল তোর বিয়ে দিয়ে দেব একেবারে। আর কাঁইন্দা বেড়াইস না “
কী সব লাগাম ছাড়া কথা-বার্তা বলছে দুই ভাই? এরা এভাবেও কথা বলে? ওরা দুইজন হা করে চেয়েই রইল শুধু।
” আমার কাঁইন্দা বেড়ানোর কারণ তো তোর বোন। ইঁচড়েপাকা নিয়ে যত দুনিয়ার জ্বালা আমার “
শশী কপাল চাপড়ে দাঁড়িয়ে রইল। কুয়াশা তৎক্ষনাৎ বালিশ নিয়ে নিল নীহারের থেকে। এরপর শশীর থেকে কয়েল। শশীও সুযোগ বুঝে নীহারকে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেল। ওপাশ থেকে শিশির কিছু একটা বলল যা কান অবধি এলো না।
‘
কুয়াশা গিয়ে মৃদু রাগ নিয়ে বলল,
” কীসব কথা বললে ভাইয়ার সামনে? “
” তোর ভাই আমারও ভাই৷ আর ওর সাথে আগে থেকেই এভাবে কথা বলি আমি “
” তবুও লজ্জা লাগল আমার “
কুয়াশা কথা বলতে বলতে কয়েল জ্বালিয়ে দিল। শিশির কিছু বলল না। সে বালিশ নিয়ে শুলো। নিরিবিলি প্রকৃতিতে রাত কাটাবে বউয়ের সাথে ইশশ কী সুন্দর অনুভূতি! তাকাল কুয়াশার দিকে। কুয়াশা আজ অদ্ভুত একটা কাজ করল৷ যেটা এই অবধি করেনি। শরীর থেকে ওড়না খুলে পাশে রাখল৷ এটা করা কারণ এখানে ফ্যান নেই শুধু প্রকৃতির বাতাস৷ মাঝে মাঝে গরম বেশি লাগছে। তাই ওড়না খুলে ফেলল। শিশিরের সাথে শুলেও সে ওড়না নিয়েই শুয়েছে এতদিন। আসলে সবকিছু জলদিও হয়না। এখন আস্তে আস্তে লজ্জা ভেঙে যাচ্ছে। তাই আজ পারল এমনটা।
এদিকে শিশিরের আবছা আলোয় তা দেখে পুরো শরীর ঝনঝন করে উঠল তার৷ কুয়াশার দিকে তাকিয়ে বলল,
” এ্যাই গোবর ঠাঁসা..! কি করছিস? এটা ছাদ। এভাবে আমার কাছে এসে মা-রবি নাকি আমায়? “
কুয়াশা তাকাল৷ লজ্জা সে পাচ্ছে কিন্তু পাত্তা দিল না৷ দুষ্টু হেসে শিশিরের কাছে এগিয়ে গেল৷ চোখে মুখে কেমন যেন দুষ্টুমি খেলা করছে তার সাথে দুষ্টুমি হাসি তো আছেই। এগিয়ে গিয়ে শিশিরের একদম কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” তোমাকে সিডিউস করছি। বিকেলে আমাকে করেছ না? এখন আমি করছি। শোধবোধ “
বলে উঠে ঠোঁট টিপে হাসল শিশিরের চোখের দিকে তাকিয়ে৷
এদিকে শিশির তো শেষ! কুয়াশাকে এক ঝটকায় বুকে ফেলল৷ বলল,
” দিন দিন, ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস। তুই যে এতটা পাকনা জানতাম না তো! দেখে তো মনে হতো ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানিস না৷ আহ্লাদী আহ্লাদ ছাড়া আর কিছুই জানিস না৷ বিয়ের পর তো আমি রীতিমতো চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু এখন তো দেখি আমার ভাবনা উল্টো “
” বিশ্বাস করো, তুমি এখন যেটুকু ভাবছ তার থেকেও দ্বিগুণ আমি “
শিশিরের শরীর আবার ঝনঝন করে উঠল৷ এ কি আজ মে-রে দেবে? এদিকে কুয়াশা শিশিরকে জব্দ করতে পেরে সেই আনন্দিত। সে কি কম? বিকেলে তাকে জ্বালিয়েছে। এবার তার পালা৷ নামের মান রাখতে হবে না? বুনো ওল বাঘা তেঁতুল কি এমনি এমনি উপাধি পেয়েছে? শিশির এবার কুয়াশার বাহু ধরে শানের উপর ফেলে তার বুকের নিচে পিষিয়ে ধরল। কন্ঠে নিজের ব্যক্তিত্বের দাম্ভিকতা ফুটিয়ে তুলল শিশির৷ কুয়াশার ঠোঁটের উপর ডান হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে লাগল। কুয়াশা কেঁপে উঠল। আবছা আলোয় কুয়শার ঠোঁট, মুখ, নাক, চোখে নজর দিতে দিতে কন্ঠে পুরো দাম্ভিকতা নিয়ে বলল,
” বিলিভ মি কুয়াশা, এটা ছাদ না হলে আজ দেখেই ছাড়তাম আমার ভাবনার থেকে কতটা বেশি তুই!”
কুয়াশার বুক ঢিপঢিপ করছে। শিশির ক্ষেপে গেছে৷ সে যে বাঘের সাথে লড়তে এসেছে! এই ছেলে যে তার থেকে দ্বিগুণ মাত দিতে পারে। তবুও নিজেকে দমাল না৷ বলল,
” হাহ্ জানা আছে। “
শিশিরের ব্যক্তিত্বে গিয়ে লাগল কুয়াশার এমন ব্যঙ্গ করাটা। তার ভেতরের পুরুষত্ব চিৎকার করে বলছে কুয়াশা তার ব্যক্তিত্বকে, পুরুষত্বকে ব্যঙ্গ করছে। সে ভেতরে থেকে জ্বলে উঠল। কুয়াশার কথা তার সহ্য হলো না৷ দাম্ভিকতা ও রূঢ় স্বরে বলল,
” কমলার কোয়ার ন্যায় ঠোঁটজোড়া তোর। তোর এই ঠোঁটজোড়ার অধিপতি তোর ঠোঁটে তার আধিপত্য ঘটাবে এখন। মানা কী করে করিস দেখি “
বলে কুয়াশাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না। ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল৷ শুরুতে একটু বুঝতে সময় নিল সে। বুঝে উঠে কেঁপে উঠল কুয়াশা৷ পুরো শরীর অবস হয়ে এলো। শরীর নেশায় বুদ হয়ে গেল। মাতালের ন্যায় শরীর পড়ে যেতে চাইল৷
অনেক প্রতীক্ষার পর এই ছোঁয়া। শুকনো খরখরা মাটিতে চৈত্রর এক ফোঁটা বৃষ্টির পানি পড়লে যেমনটা তরতাজা হয়ে ওঠে দু’জনেরই ঠিক তেমন অবস্থা হচ্ছে। চৈত্রর খরা কাটিয়ে ফসলগুলো প্রাণ ফিরে পাবার মতো অবস্থা দু’জনের অধরযুগলে। অনুভূতিরা এতদিন দলা বেঁধে ছিল৷ আজ যেন সকল বাঁধা অতিক্রম করতে চাইল।
কুয়াশা এই সামান্য ছোঁয়া হজম করতে পারছে না। বেগ পেতে হচ্ছে। শিশির পুরো নেশার মধ্যে। গভীর থেকে গভীরতর সেই অধর চুম্বন। কুয়াশা তালও মেলানোরও সময় পাচ্ছে না৷ এ ছেলের সব কিছু পারফেক্ট৷ কিসটাও করছে পারফেক্টলি৷ ভেবে নিয়ে কুয়াশা এবার দু’হাতে ঝাপটে ধরল শিশিরের ঘাড় সহ গলা৷ শিশির কুয়াশার রেসপন্স পেয়ে আরো গভীর হলো। পান করতে লাগল দু’জন অমৃত সুধা৷ দু’জনের নিঃশ্বাসের শব্দ অতি ভারী হয়ে এসেছে৷ কিন্তু এখনো অধর চুম্বনে তারা। চোখ বন্ধ দু’জনের। তারা তাদের কাজে মত্ত। কোথায় কি হচ্ছে না হচ্ছে দেখার নেই।
শিশির এবার অধর চুম্বন অবস্থাতেই কুয়াশাকে তুলে নিজের শরীরের উপর নিয়ে নিল। সে চিৎ হয়ে শুয়ে, কুয়াশা তার শরীরের উপর শুয়ে। এখনো ছাড়ে নি। ভাবটা এমন আজ কিস করেই রাত কাবার করবে৷ যেন আর কখনো পাবে না কেউ কাউকে৷ কুয়াশার একটা হাত শিশিরের গালের উপর। শিশির এক হাত কুয়াশার কোমড়ে রেখেছে অন্য হাত কুয়াশার গাল গলিয়ে চুলের পেছনে নিয়ে গিয়ে শক্ত করে মুঠো করেছে৷ কুয়াশা এই নেশায় বুদ হয়ে আছে বলে সেই ব্যথাকে পাত্তা দিচ্ছে না৷ অন্য সময় হলে এই ব্যথা দেবার শাস্তি দিয়ে দিত হয়তো৷ অন্যদিকে খেয়াল নেই। প্রণয়ের প্রথম ছোঁয়া অনুভব করতে ব্যস্ত সে।
শিশির এতক্ষণ পর এবার একটু আগের রাগটা কুয়াশার অধরে ঝারল। কামড় দিল ঠোঁটে। কুয়াশা গুঙিয়ে উঠল। সে-ও দিল। শিশিরের থেকে জোরে। কেউ কারো থেকে একচুল পরিমাণ কম না৷ শিশির ব্যথা পেয়ে এবার ছেড়ে দিল কুয়াশাকে। কুয়াশার মুখ সরিয়ে নিয়ে চোখ খুলে তাকাল কুয়াশার দিকে। কুয়াশাও তাকাল চোখ খুলে এবার। লজ্জারা দলা পাকাল এবার৷ শিশির হাসছে মিটমিট করে। হাঁপাচ্ছে সমানতালে দু’জন। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর ফেলছে। অনুভূতির জোয়ার দু’জনের সমান৷ শরীরের উত্তপ্ততা দু’জনেই টের পাচ্ছে। কুয়াশার চোখে, ঠোঁটে নজর বুলাতে বুলাতে বলল,
” নাহ্, বউ আমার পারফেক্ট পার্টনার। চুমুতেই বুঝে গেলাম “
তা শুনে কুয়াশা লজ্জায় লাল হলো। মুখ গুঁজে দিল শিশিরের গলায়৷ শিশির ফিসফিস করে হেসে উঠল। কুয়াশার পিঠ, কোমড়ে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। সে কুয়াশাকে আরেকটু জব্দ করতে ফিসফিস করে বলল,
” কুয়াশা..! আ’ম ইমপ্রেসড বাই ইউর রেসপন্স। পারফেক্টলি ভেরি এট্রাক্টিভ “
কুয়াশা আবার কেঁপে উঠল। মুখ গুঁজে রেখেই বলল,
” চুপ করো.. আমি লজ্জা পাচ্ছি “
শিশির এবার জোরে জোরে হেসে ফেলল। মুখ ঘুরিয়ে চুমু খেল কুয়াশার মাথায়। বলল,
” আচ্ছা?”
” হুঁ “
” ঘুমা ”
” ছাড়ো “
” কেন? “
” ঘুমাতে বললে!”
” এভাবে ঘুমা। নিচে শানের উপর ঘুমাতে পারবি না৷ আমি নিজেই শুতে পারছি না৷ তুই আরো পারবি না৷ অভ্যাস থাকা লাগে মেঝেতে শোবার “
কুয়াশা আপ্লূত হলো৷ আরকটু ঝাপটে ধরল শিশিরকে৷ মুখ গুঁজে চোখ বন্ধ করে পড়ে রইল স্বামীর বুকে। আজ এই রাত সরণীয় রাত৷ গ্রামের রোমাঞ্চকর পরিবেশে খোলা আসমানের নিচে স্বামীর থেকে পাওয়া প্রথম প্রণয়ময় চুম্বন সাথে স্বামীর বুকে শুয়ে রাত কাটানোর স্বভাগ্য কয়জনের হয়?
শিশির মনমেজাজ ফুরফুরে হয়ে গেছে৷ ঠোঁটে তৃপ্তিময় হাসির রেখা। বুকে থাকা মেয়েটা তার নিয়তি। জীবন রাঙিয়ে দিয়েছে। আজ মনে হচ্ছে না সত্যি জীবন সুন্দর জীবনের রঙ সুন্দর।
| চলবে |
আমার পাঠকগণ খুবই দুষ্টু। শিশির কুয়াশার থেকে তারাই উঠে পড়ে লেগেছে বাসর দেখতে৷ যাও তোমাদের ইচ্ছের আংশিক পূরণ করে দিলাম।
বলেছিলাম না এরা রোমান্সও করবে একে অপরকে টেক্কা দিয়ে?
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click