| ১৮+ এলার্ট
®রোজা রহমান
‘
তাল পাকা ভাদ্র মাস। আর এই তাল পাকা মাসে তাল দিয়ে পিঠা বানিয়ে না খেলে চলে? তাল পিঠা বানানো, খাওয়ার যে মজা সেই আমেজটাই তো ফিকে পড়ে যাবে! ভাদ্র মাসে চারিদিকে তাল পাকা গন্ধে ম-ম করে। তাল দিয়ে হরেকরকমের পিঠা তৈরি হয়। এই তালপিঠা কে না খায়? তাল পাকলে গ্রাম বলো আর শহর বলো তালদিয়ে পিঠা তৈরি করে পিঠা উৎসব হয়। বেশ আনন্দ পাওয়া যায় পিঠা তৈরির মাঝে। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার স্যাপার আছে। গ্রামের প্রায় বাড়িতেই তালপিঠা বানানো হয়। গ্রামে একটু প্রচলন বেশি এই উৎসবে। তাল বড়া, তাল পাকান, তাল রুটি, তাল ভাপা, তাল খিলি, পুডিং, কেক আরো অনেক কিছু তৈরি হয় তাল দিয়ে।
‘
আজ তাল পিঠা তৈরি করছেন জিনিয়া। বোনদের, বোনজামাইদের, বোনের ছেলে মেয়েদের, এবং হবু জামাইকে আজ জিনিয়া তালপিঠা খাওয়াবেন বলে ঠিক করেছেন৷ শশীর দাদাদের তাল গাছ আছে ঐ বাড়িতে। সৌরজ লোক নিয়ে তার দাদাদের গাছ থেকে পাকা তাল পাড়িয়ে এনেছে। সকাল থেকে সেই আয়োজনই চলছে৷ বাড়িতে পাকা তালের গন্ধে ম-ম করছে। জিনিয়ার সাথে জাকিয়া, আম্বিয়া, আজমিরা, সিমী, বৃষ্টি, ইয়াসমিনও লেগেছে৷ তাল ছিঁলে সেটার রস বের করে সেটা চাল গুঁড়ো আর গমের আটা দিয়ে বড়া বানানো হয়, পাকান করা হয়৷ বাজারের ময়দা দিয়ে রুটি হয়৷ তো জিনিয়া তাল বড়া সহ পাকান, রুটি করবেন৷
কুয়াশারা বাড়িতে এসে দেখল শশীদের বাড়ির উঠানের রান্নাঘরে আয়োজন করেছেন৷ রান্না ঘর থেকে পাকা তালের গন্ধ পেয়ে কুয়াশারা গেল সেদিকে৷ গিয়ে দেখল তাল ছিঁলে রস বের করছে। বিষয়টা বেশ ইন্টারেস্টিং। ঝুঁড়ির সাথে ডলে তালে রস বের করা হচ্ছে। কুয়াশা দেখে বলল,
” বড় আম্মু, এগুলো দিয়ে তাল পিঠা হবে? “
” হ্যাঁ, তোর খালামনি তার মেয়ে জামাইয়ের জন্য পিঠা তৈরি করছেন৷ পিঠা দিয়ে জামাই আদর হবে “
শুনে হাসল সকলে। শশী লজ্জা পেল। কুয়াশা, ঈশারাও বলল করবে ওগুলো। জাকিয়া মানা করলেন না। ওদেরও রস বের করতে দিলেন৷ হাতে হাতে করলে জলদি হবে৷ কথায় আছে ‘দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ’ বাংলা ব্যাকারণ বইয়ের ভাবসম্প্রসারণ।
যায়হোক সকলে মিলে করতে করতে জলদি হয়ে গেল রস করা। কুয়াশারা গোসল করবে বলে উঠে এলো। কিন্তু আজ তাদেরও পুকুরে গোসল করার জন্য শখ জাগল৷ আর সেটাই প্ল্যান করল৷ শশীকে বলল পুকুরে গোসল করবে। কুয়াশা কখনো পুকুরে গোসল করার সুযোগ পায়নি। করবেই বা কোথায়? থাকে শহরে তেমন জায়গা নেই পরিবেশও নেই। আর গ্রামের পরিবেশে কখনো থাকা হয়নি তার৷ আজমিরাকে বলতেই আজমিরা মানা করে দিলেন। বললেন,
” একদম না। কখনো করিসনি। অভ্যাস নেই৷ কোনো অঘটন ঘটে যাবে৷ পুকুরে অনেক পানি। বর্ষাকালে ভরে গেছে। বেশি বললে মা-ইর খাবি “
কুয়াশা বিরক্ত হলো। করে নি তো কি হয়েছে? সে কি ছোট? বলল,
” আম্মু আমি ছোট না। আর আমি বেশি নামব না৷ স্মৃতি, শশী, ঈশাও থাকবে। তাহলে সমস্যা কি? দাও না আম্মু যেতে। আমার খুব ইচ্ছে করছে। ভাইয়ারা করছে আমারও ইচ্ছে করছে। “
” এবার তো আরোই দিব না। অতগুলো ছেলের মাঝে গোসল করতে যাবি? মা-ইরের অভাব হচ্ছে তোর। আহ্লাদ করিস না, সর..! “
কুয়াশা এবার না পেরে রান্না ঘরে বসে নারিকেল কুঁড়তে থাকা শাশুড়ীর গলা জড়িয়ে ধরল পেছন থেকে৷ আহ্লাদ করে বলল,
” ও বড় আম্মু..! তুমি অন্তত অনুমতি দাও! তোমার ছেলেদের তুলে দেব গিয়ে। তবুও আমি করব। দাও অনুমতি “
” বুবু একদম নাহ্। “
” তুমি চুপ থাকো মন্ডলের মেয়ে! তোমার সাথে কথা বলছি আমি? আমি আমার শাশুড়ীর সাথে কথা বলছি “
কুয়াশার কথা শুনে কেউ জোরে হাসল কেউ মিটমিট করে হাসল৷ জাকিয়া জোরেই হাসলেন৷ আজমিরা হাসি হাসি মুখ করেই বললেন,
” আচ্ছা? এখন আহ্লাদ করার সময় শাশুড়ী হলো?
মায়ের কথার প্রত্যুত্তর করল না। জাকিয়াকে আবার বলল,
” হেসো না। অনুমতি দাও তোহ্!”
থেমে আবার বলল,
” দাও না, ও আম্মু! “
সকলে অবাক চোখে চাইল কুয়াশার দিকে। কুয়াশা লজ্জা পেয়ে গেল৷ আজ সে প্রথম আম্মু বলে ডাকল জাকিয়াকে। তাও আহ্লাদী তার কার্জ সিদ্ধি করার জন্য। জাকিয়া এবার কুয়াশাকে পেছন থেকে হাত ধরে সামনে আনলেন। তাকালেন কুয়াশার পানে। চোখ জোড়া ছলছল করে উঠল উনার। টেনে বুকে নিয়ে আবেগী স্বরে বললেন,
” মা রে..! কী যে শান্তি লাগছে আমার। আমার মেয়ে আম্মু ডাকল আমায়? “
বলে চোখে মুখে চুমু আঁকলেন৷ বললেন,
” আমার মেয়ে তুই ছেলে বউয়ের আগে। সেই জন্মের পর থেকে তোকে মানুষ করেছি। তোর মায়ের তুই প্রথম সন্তান থাকায় কিছুই করতে পারত না, আমিই তোর সব করতাম৷ আজ আম্মু ডাক শুনে বুকে শান্তি লাগছে৷ “
কুয়াশা বুকে থেকেই বলল,
” তোমাদেরই মেয়ে আমি। জন্ম দিলেই কি মা হওয়া যায় শুধু? এমন পরিবার কয়জনের হয়? আমার রাজকপাল৷ তাইতো তোমাদের মতো পরিবার পেয়েছি”
আজমিরা, আম্বিয়া মুচকি হাসলেন। জাকিয়া হেসে বললেন,
” অবশেষে পারমানেন্টলি শাশুড়ী হয়েই গেলাম?”
কুয়াশা মাথা নূয়ে নিল লজ্জায়। বলল,
” অনুমতি দাও “
জাকিয়া এবার আজমিরার দিকে তাকালেন৷ আজমিরা বার বার মানা করছেন। কথা আজমিরার ঠিক আছে। তবে কখনো কখনো ছোট ছোট ইচ্ছেকে প্রাধাণ্য দেয়াই যায়! এতে খুব বেশি ক্ষতি হয় না৷ জাকিয়া বললেন,
” থাক করুক। শখ করছে যখন৷ কখনো করে নি৷ “
বলে কুয়াশার উদ্দেশ্যে বললেন,
” সিঁড়িতে থাকবি৷ বেশি নিচে নামবি না৷ বেশিক্ষণ কেউ থাকবি না “
কুয়াশা মেনে নিল৷ খুশিতে গদগদ হয়ে গেল৷ দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলো রান্না ঘর থেকে। এসে শশীদের সাথে পুকুরে গেল৷
‘
পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখল শিশিররা এখনো উঠেনি৷ দুপুর টাইমে গোসল করতে বেশ ভালোই লাগছে৷ তাছাড়া কালই সকলে চলে যাবে এইজন্য পুকুরে গোসল করার আনন্দটা উপভোগ করে নিচ্ছে। সকলে সাঁতরে বেড়াচ্ছে। শিশির সাঁতার কাটতে কাটতে কুয়াশার দিকে নজর গেল৷ তোয়ালে হাতে দাঁড়িয়েছে এসে। ভ্রু কুঁচকে গেল। নীহারও দেখল ওরা সব তোয়ালে হাতে এসে দাঁড়িয়েছে। সাঁতার কেটে এসে থামল। শিশির মৃদু চেঁচিয়ে বলল,
” এখানে কি তোদের? “
কুয়াশা উপর থেকে অনেকটাই চেঁচিয়ে শিশিরকে বলল,
” এ্যাই…! ওঠো তোমরা। এবার আমরা গোসল করব। “
শিশিরের ভ্রু আরো কুঁচকে গেল৷ রাগও উঠল এখানে এসে এমন চেঁচিয়ে কথা বলতে শুনে৷ ধমকে বলল,
” এ্যাই বেয়াদব গোবর ঠাঁসা.. চেঁচাচ্ছিস কেন? বেয়াদবি কিন্তু বেশি করছিস! ”
কুয়াশা এবার আস্তে বলল,
” ওঠো তোমরা৷ আমরা গোসল করব “
” কিহ্ বললি? “
” কানে কম শুনো? “
” তোর সাহস কতটা বেড়েছে? আর কোন বিবেকে এখানে গোসল করার কথা বলছিস? “
কুয়াশা বলল,
” তো কি হয়েছে? “
শশী বলল,
” ভাইয়া তোমরা উঠে যাও। ইচ্ছে করছে যখন করুক। “
শিশির বলল,
” ও জীবনে পুকুরে গোসল করেছে? “
” তো করি নি বলেই তো করব। ওঠো তোমরা “
নীহার বলল,
” জেদ করিস না কুশু। অনেক পানি পুকুরে। আর তোরা কখনো করিস নি পারবি না। অঘটন ঘটতে সময় লাগবে না”
” ভাইয়া, তুমিও এক কথা বোলো না তোহ্! আমি বড় আম্মুর থেকে অনুমতি এনেছি৷ তোমরা উঠে এসো৷ বেশিদূর নামব না “
শিশির এবার রেগে গেল আরো ওর তর্ক করা দেখে৷ বলল,
” তবুও তর্ক করেই যাচ্ছিস? এ্যাই যাবি তোরা এখান থেকে? “
স্মৃতি, ঈশা, শশী কেঁপে উঠল। শিশির কথাটা অনেক রূঢ় স্বরে বলেছে৷ রিজভী বলল,
” আহ্ শিশির, এভাবে বলছিস কেন? ভালো করে বোঝা, কুয়াশা, স্মৃতি, ঈশা যাও বাসার মধ্যে করো গিয়ে “
” ও ভালো কথার জাত না দেখছিস না? “
” হ্যাঁ, আর নিজে যত ভালোর জাত? তোমারই তো জাত! আবার বড় বড় লেকচার মা-রছ? ভালোভাবে বলছি তবুও ত্যাড়ামি করছ! “
কুয়াশার কথায় কটমট করে উঠল শিশির৷ বলল,
” তুই যাবি এখান থেকে? “
” নাহ্ “
” কুশু দেখ এখানে আমরা অনেক ছেলে আছি। অবুঝের মতো করিস না। শশীর না হয় অভ্যাস আছে তোদের নেই। শশী..! যাও এখান থেকে ওদের নিয়ে “
শশী ভয় পেয়ে গেল নীহারের ধমকে। কথা বলতে পারল না। কুয়াশাকে বলল,
” বুবু চলো৷ বাথরুমে কোরো৷ এখানে করতে হবে না “
” আমি তো করবই “
শিশির তা শুনে বলল,
” কি বললি আরেকবার বল? “
” আমি পুকুরেই গোসল করব “
শিশির শোনা মাত্র একটা ডুব দিল। এরপর কিছুক্ষণের মাঝে উঠেও পড়ল৷ বলল,
” হ্যাঁ, এবার বল কি বলছিলি?”
সকলে দেখল শিশির ডুব দিয়ে পুকুরের পানির তলদেশ থেকে কাঁদা তুলে এনেছে৷ কুয়াশা তা দেখে রেগে উঠল। শিশির বলল,
” আরেকটা কথা বলবি তো কাঁদা ছুঁড়ব। যাবি এখান থেকে? “
” দেখো বেশি বেশি করছ কিন্তু! আমি তো বলি নি তোমাদের সাথে করব! তবে এমন করছ কেন? “
” তোর বোধশক্তি নেই সেটা আমরা সকলেই জানি৷ গোবর ঠাঁসা তো আর এমনি এমনি বলি না! এখন যাহ্ “
” যাব নাহ্ “
” তোকে তোহ্ “
বলতে বলতেই শিশির হাতে থাকা কাঁদা ছুঁড়ে কুয়াশার গায়ে মা-রল। কুয়াশা এবার রেগে গেল দ্বিগুণ। নীহার, রিজভী বলে উঠল,
” শিশির..! কী করছিস কী! “
” ওর সাথে এটা করাই উচিত।”
কুয়াশার শরীরে কাঁদা ছুটে আসায় সে রাগে, ক্ষোভে কেঁদে দিল। তবে শব্দ করে না। চোখে পানি নিরবে ছেড়ে দিল। একটু না হয় শখ করে গোসলই করতে চাইছে! আর কি করতে চাইল? এটাতেও এই বুনো ওলের বাচ্চার বেগড়া দিতে হবে? সে রাগে, ক্ষোভে ধেই ধেই করে চলে গেল৷ শশী বলল,
” এমনটা না করলেও পারতে ভাইয়া৷ শখ করছিল অনেক “
বলে চলে গেল কুয়াশার পেছনে। সকলেই গেল। ওরা যেতেই নীহার বলল,
” এতটা রূঢ় না হলেও পারতি “
” সাফাই গাইস না বোনের৷ অনেক আহ্লাদ বেড়েছে৷ এতটাও মানব না৷ ভালোবাসার মতো বাসব শাসনও করব৷ ও যা বলবে শুনতে হবে নাকি? তা ছাড়া ঐ গোবর ঠাঁসাকে এত করে বলা হচ্ছে কখনো করিসনি, পারবি না৷ তবুও কেন জেদ করতে হবে ওর? অঘটন ঘটতে কী সময় লাগে? পুরো ভরা পুকুর৷ জীবনে ডুব টা কিকরে দিতে হয় সেটাও বোধহয় দেয় নি। তো পুকুরে কি করে গোসল করবে ও? ও-কে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাচ্ছি না। তুই লাই দিস না তোহ্। “
বলে বসে পড়ল সিঁড়িতে। নীহার হাসল। হাসল রিজভীরাও৷ পাশে ওরাও বসল। হিম বলল,
” এতটা কী করে ভালোবাসলে ভাই আমার বোনকে? “
তাকাল হিমের দিকে শিশির। মুচকি হেসে হিমের চুল গুলো এলোমেলো করে দিল হাত দিয়ে। বলল,
” তবুও দেখ, তোর গোবর ঠাঁসা বোনটা এই রাগের মাঝের ভালোবাসাটা বুঝল না। দেখ গিয়ে কেঁদে কেটে নাকের পানি চোখের পানি এক করছে হয়তো। গোবর ঠাঁসা নাম সার্থক করে দিল”
হাসল সব৷ শিশির আবার নেমে ডুব দিল। বলল আমি উঠলাম। বলতে না বলতেই আবার কুয়াশা হাজির হলো। কেঁদে কেটে নাকের পানি চোখের পানি এক করে জাকিয়াকে ধরে এনেছে। তার পুকুরে গোসল করা চায় ই চায়। জেদ যখন একবার উঠেছে তার তা না করে সে থামবে না। জাকিয়া এসে ধমকে বললেন,
” এ্যাই..! কাঁদা ছুঁড়েছিস কেন ওর গায়ে?”
” আম্মু তুমি এবার এসো না তো ও’কে লাই দিতে৷ পুকুরে গোসল করবে বলছে৷ জীবনেও করেছে? “
শিশিরের কথা শুনে কুয়াশা ফুঁসে উঠল৷ বলল,
” তোমাকে কে এতসব ভাবতে বলছে? “
বললেই কী আর হলো! তারই তো ভাবনা!তার বউ তার ভাবনা। এটাই এই মেয়ে বুঝছে না৷ তার জেদ চেপে গেছে একদম। তারউপর শিশির কাঁদা ছুঁড়েছে আরো রেগে গেছে৷ জাকিয়া বললেন,
” শখ করছে, কখনো করেনি করুক। আর নিচে নামবে না বেশি আমি বলে দিয়েছি। একটু আধটু শখকে প্রাধাণ্য দিতে হয়৷ উঠে আয় তোরা “
” আম্মু, তুমি অন্তুত এমন বলো না। পুকুরের সিঁড়ি অনেক পিছলা৷ আর কিসের ভরসায় নামতে দেবে তুমি? স্মৃতিরা সাঁতার পারে না৷ আমি কাউকেই এখানে গোসল করতে দেব না৷ যে শখে বিপদ হবার সম্ভবনা সে শখকে প্রাধাণ্য না দেয়াটাই ভালো “
তা শুনে এবার কুয়াশা জোরে জোরে কেঁদে দিল। স্মৃতি, ঈশা বাথরুমে ঢুকে গেছে গোসল করতে। কিন্তু এই জেদি টা জেদ ধরে বসে আছে। জাকিয়া বললেন,
” আব্বু কিছু হবে না করতে দে “
শিশির এবার একটু নরম হলো। কুয়াশার কান্নার দিকে তাকাল৷ এরপর নীহারের দিকে তাকাল। নীহার ভাইয়ের চোখের ভাষা বুঝে গেল। মুচকি হেসে বলল,
” আমরা উঠে যাচ্ছি। “
বলে উঠতে লাগল একে একে। শিশির এবার চেঁচিয়ে বলল,
” নেমে আয় গোবর ঠাঁসা। আস্তে আস্তে নামবি৷ পিছলা সিঁড়ি অনেক ”
তা শুনে রিজভী, শান্ত, মিহির, হিম হাসল। জাকিয়াও মুচকি হাসলেন। তবুও বউকে একা ছাড়বে না। কী দরদ ভাবা যায়!! শশী হেসে বলল,
” বুবু যাও, তোমার বরটা তোমাকে একা ছাড়বেই না বোঝা হয়ে গেছে। “
কুয়াশা কাঁদতে ছিল। শিশিরের কথা শুনে কান্না থামিয়ে দিয়েছে৷ জাকিয়া বললেন,
” যাহ্, এবার আর ভয় নেই৷ “
বলে জাকিয়া চলে গেলেন৷ নীহাররাও একে একে চলে গেল। কুয়াশার কেন যেন লজ্জা লাগল। বুনো ওলটা খুবই ফাজিল৷ একা নামতে সে দেবেই না আর তার বউও গোসল না করে ক্ষান্ত হবে না৷ দুটোই এক। এক রকম জেদ৷
তো এমন কিছুই করুক যেটাতে দু’জনই সন্তুষ্ট হয়! শিশিরেরও চিন্তা মুক্ত, কুয়াশারও গোসল হবে৷ তার থেকে বড় কথা তারা স্বামীস্ত্রী একসাথে গোসল করতে পারছে৷ আহ্ কী সুন্দর রোমান্টিক ব্যাপার স্যাপার!
কুয়াশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শিশির পানি থেকে বলল,
” আসবি? নাকি উঠে আসব আমি? দেখ অনেকক্ষণ কিন্তু পানিতে আছি আমি “
কুয়াশা শুনে এবার নিচে নামতে লাগল। উপড়ের দুই-তিনটা সিঁড়ির পরই পিছলা সিঁড়ি। পুকুরে পানি থৈ থৈ করছে। বর্ষার পানিতে ভরে গেছে পুকুর। শিশির বলল,
” আস্তে আয় “
কুয়াশা পা টিপে টিপে নামল। পানিতে পা দিতে একটু ভয়ই করছিল৷ নেমে কোমড় অবধি পানিতে যেতেই শিশির বলল,
” দাঁড়া ওখানে “
বলে উঠে এলো কুয়াশার কাছে৷ দাঁড়াল কুয়াশার কাছে। যেখানে কুয়াশার কোমড় অবধি পানি সেখানে শিশিরে কোমড় ছুঁতেও পারছে না পানি৷ শিশির কুয়াশার কাছে এসে বলল,
” বড্ড জেদি তুই”
বলে কোলে তুলে নিল কুয়াশাকে৷ কুয়াশা কোল থেকেই ফুঁসে উঠল,
” একশবার হব৷ আমার ইচ্ছে করেছে তুমি মানা করবে কেন? “
কুয়াশাকে কোলে নিয়ে নামতে নামতে বলল,
” আমিই করব সব “
কুয়াশা তা শুনে কিছু বলল না। শিশির তার বুক অবধি পানিতে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিল কুয়াশাকে৷ কুয়াশার গলা অবধি পানি হলো৷ শিশির হেসে বলল,
” এতটুকু লিলিপুটের আবার জেদ দেখো আকাশ সমান! “
কুয়াশার খোঁটাটা গায়ে লাগল। বলল,
” ওরে আমার লম্বু খাঁ রে। একটু লম্বা হয়ে আসছে বড়াই মা-রাতে “
” কী ভাষা রে তোর! মা-র খাচ্ছিস না তাই স্পর্ধা বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন!”
কুয়াশা বলল,
” তো কি বলব? আমি ঠিকই আছি লম্বা। তুমিই একটু বেশি লম্বা তাই এমন মনে হচ্ছে। লিলিপুট না আমি “
শিশির হাসল। কোমড় পেচিয়ে ধরল। এক সিঁড়ি উপরে উঠল। এবার কুয়াশার একটু কম পানি হলো। বলল,
” দেখো, নাকের পানি চোখের পানিই এক করে ফেলেছে! “
কুয়াশা শিশিরকে দূরে ঠেলতে লাগল। বলল,
” সরো আগলা পিরিত লাগবে না আমার “
শিশির এবার একটা অস্বাভাবিক কাজ করল। কুয়াশার কামিজ জামার নিচে হাত রাখল। কেঁপে উঠল কুয়াশা। পানির নিচে জামাবিহীন খালি শরীরের উপর স্পর্শ বুঝতে পেরে। হাতটা কুয়াশা কোমড়ের বাঁকা খাঁজের মাঝে। এবার চেপে ধরল সেখানে৷ নরম শরীরে এমন লাগাম ছাড়া স্পর্শ কুয়াশাকে কাঁপিয়ে তুলল৷ শিশির অন্য হাত দিয়ে কুয়াশার খোঁপা করা চুলগুলো খুলে দিল৷ শ্যাম্পু করা চুল গুলো ঝরঝর করে ছড়িরে পড়ল৷ এরপর কুয়াশাকে ঘুরিয়ে নিজের বুকের সাথে পিঠ নিয়ে নিল কুয়াশার৷ যে হাত কোমড়ে ছিল এতক্ষণ সেটা পানির মাঝে স্লাইড করতে করতে পেটের উপর নিয়ে গেল৷ কুয়াশা এবার জড়িয়ে গেল৷ সহ্য হলো না এত গভীর স্পর্শ। খামচে ধরল শিশিরের হাত। তড়িঘড়ি করে বলল,
” কি করছ? ”
” এখনো মনে হচ্ছে আগলা পিরিত দেখাচ্ছি আমি?”
কুয়াশা উত্তর করল না৷ শিশির বলল,
” অধিকার তুই আমার৷ আগলা পিরিত দেখানোর প্রয়োজন পড়বে আমার? “
কুয়াশা কোনো উত্তর করতে পারল না৷ এই ছেলের সব কথার উত্তর রেডিই থাকে৷ কাজে এবং কথায় দু’টোতেই বুঝিয়ে দেবে।
কুয়াশা কানের পিঠের চুল সরিয়ে ঘাড়ের উপরের কানের পিঠে ঠোঁট ছুঁয়ে চুমু দিল গাঢ় একটা। চুমু দিয়ে বলল,
” বল, পড়বে? “
” উহু “
হাসল উত্তর শুনে৷ যেখানে চুমু দিল সেখানেই একটা ছোট্ট কামড় দিল। কুয়াশার পেটের উপরের হাতটা আরেকটু গলিয়ে ডানে থেকে বামে নিয়ে কুয়াশাকে পেট ধরেই ঘুরাল। কুয়াশা চোখ বন্ধ। সে এত এত প্রগাঢ়, গাঢ়, গভীর ছোঁয়া নিতে পারছে না। বুক হাঁপড়ের মতো উঠা নামা করছে৷
শিশির হাসল৷ একটু ছুঁয়ে দিলেই উনিয়ে পড়ে! কথাটা ভেবে হাসল আবার আপন মনে। কুয়াশাকে নিয়ে তৎক্ষনাৎ ডুব দিল৷ কুয়াশা প্রস্তুত ছিল না এটা। তাই কাশি উঠে গেল৷ আবার নিঃশব্দে হাসল সে৷ মুখে পানি সরিয়ে কুয়াশাকে দেখল। কুয়াশা দু’হাতে মুখের পানি সরাল।
সরিয়ে ঝাঁঝ নিয়ে বলল,
” এটা কি হলো?”
” কি হলো? “
নেশালো কন্ঠ তার। কুয়াশা থমকে গেল। শিশিরের নগ্ন শরীরে নজর দিল৷ লোমশ ভেজা বুক৷ পড়ে আছে লোমগুলো। বুকের উপরে কামড়ের দাগ। তা অতি নিকট থেকে স্পষ্ট তাজা মনে হচ্ছে৷ দাগ গুলো দেখে তেমনটায় মনে হচ্ছে৷ মনে পড়ল সে কামড় দিয়েছিল৷
এদিকে শিশির অভিভূত হচ্ছে কুয়াশাকে ভেজা চুলে, ভেজা শরীরে দেখে৷ আজ প্রথম কুয়াশাকে গোসলরত অবস্থায় দেখল৷ চুলগুলো ভিজে লেপ্টে আছে, ঠোঁটজোড়া ভিজে সজীবতায় ছেয়ে গেছে, চোখের পাঁপড়িগুলো ভেজা, সামনের চুল গুলো ভিজে সামনে গলা সহ বুকে এসে পড়ে আছে৷ জামার গলার খোলা অংশটুকু হলুদ ফর্সা। সেখানে পানি পরে জ্বল জ্বল করছে মনে হচ্ছে। নেশা ধরে গেল শিশিরের। শরীরে ঝিম ধরে আসছে। কুয়াশা শিশিরের চোখের দিকে তাকিয়ে সবই দেখল। লজ্জা পেল খুব৷ এভাবে আজ প্রথম৷ এসব ছোট ছোট অনুভূতির সাথে নিত্য দিন পরিচয় হচ্ছে। লজ্জারা কুঁড়ে ধরে৷
শিশির হাত তুলে কুয়াশার চুলগুলো সামনে থেকে সরিয়ে গলা আরো আলগা করে দিল৷ ওড়না শরীরে তবুও কুয়াশার ভেজা শরীরে লজ্জা করছে৷ বলল,
” লজ্জা পাচ্ছি আমি”
” কিছু করি নি তো আমি! শুধু দেখছি “
কুয়াশা আরো নূয়ে পড়ল৷ শিশির দুষ্টু হাসল। এ ছেলে এক নাম্বার খাঁটি দুষ্টু। বলল,
” আমার আহ্লাদী বউয়ের গোপন সৌন্দর্যগুলো অতি আকর্ষণীয়। আমি মাতাল হচ্ছি তো! “
” ধেৎ…”
বলে ডুব দিল কুয়াশা। উঠে বলল
” সাঁতার শেখাও আমায় “
” একদিনে কি শিখবি? “
কুয়াশা কিছু বলল না৷ শিশির বলল,
” চল সাঁতরে আসি তোকে নিয়ে “
” কিভাবে? “
শিশির উত্তর না করে কুয়াশাকে বুকে নিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। বলল,
” গলা জড়িয়ে ধরে রাখ “
কুয়াশা ভয় পেয়ে গেল। তবুও ধরে রাখল শক্ত করে। শিশির ও’কে নিয়ে চিৎ হয়ে অনেকটা দূরে সাঁতার কেটে গেল। বলল,
” অনুভূতি বল? স্বামীর বুকে চড়ে সাতাঁর কাটছিস “
” তুমি একটু না অনেকটা ফাজিল আর দুষ্টু এটা কি জানো তুমি? “
” এতদিনে টের পেলি তা? “
কুয়াশা উত্তর করল না৷ শিশির ও’কে নিয়ে সাঁতরে আবার চলে এলো। আগের জায়গায় দাঁড়াল৷ ডুব দিল দু’জন। কুয়াশা এবার শিশিরের গলা জড়িয়ে ধরে উঠে পড়ল শিশির মুখের সামনে মুখ নিল৷ তাকাল দু’জন দু’জনের দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে। শিশির হাসল বউয়ের এহেন কাজে। কুয়াশা শিশিরের কপালে চুমু আঁকল গভীর, গাঢ় ঠোঁট দাবিয়ে। শিশির খুবই অবাক হলো। ভালো লাগায় ছেয়ে গেল এই স্পর্শটুকু৷ অনুভূতিরা প্রজাপতির ন্যায় উড়তে লাগল৷ এই মেয়ে যে তাকে অনেক ভালো বেসে ফেলেছে তার বোঝা হয়ে গেছে৷ চুমু একে মুখ তুলে শিশিরের মুখের দিকে তাকাল৷ এরপর চোখের দিকে৷ হাসছে শিশির মিটমিট করে। বলল,
” মাতাল তো আরো করে দিলি৷ নিজের বিপদ নিজে কেন ডাকছিস গোবর ঠাঁসা?”
কুয়াশা কিছু বলল না হাসল শুধু। শিশিরকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
” এটা সুন্দর একটা অনুভূতির সাথে পরিচয় করালে বলে পারিশ্রমিক দিলাম “
হেসে ফেলল শিশির। এরপর কুয়াশা শিশিরের কাছে আরো এগিয়ে গিয়ে সেই কামড় দেয়া স্থানে আবার কামড় দিল দুই পা উঁচু করে। শিশির কিছু বুঝে ওঠার আগেই হয়ে গেল সব৷ এই গোবর ঠাঁসা যে রোমান্টিক মুড থেকে একবারে জন্তুু মুডে চলে যাবে ধারণায় ছিল না তার৷ অনেকটা জোরে বুকের সেই স্থানে কামড় দিয়ে শিশিরকে জোড়ে একটা ধাক্কা দিল৷ শিশির উল্টে অনেকটা দূরে চলে গেল পানির উপর থেকে। দাম্ভিকতার স্বরে বলল,
” আর এটা আমাকে কাঁদা ছুঁড়ার জন্য “
বলেই তড়িঘড়ি করে উপরে উঠে পড়ল৷ এখানে আর থাকা যাবে না। নয়তো বিপদ শরীরের উপর ধেয়ে আসবে। কুয়াশা দৌড়ে উঠে ছুট দিল কিন্তু বেচারা বেশি দূর এগুতে পারল না৷ দৌড়ে উপরে উঠে সেই দৌড়ের উপরই যেতে গিয়ে শান ছেড়ে যেই না মাটিতে পা দিয়েছে ওমনি ধপাস। পড়েছে বেশ আচ্ছা জোরেই৷ কোমড় বোধহয় আর নেই। চেঁচিয়ে উঠল।
” আহ্! মা গো…”
বলে। পিছলার উপর পণ্ডিতি করতে গিয়ে পড়ল৷ শিশির এবার হা হা করে হেসে ফেলল। চেঁচিয়ে বলল,
” সাজা পেয়ে গেলি তো? অনুভূতি বল? পিছলার উপর পণ্ডিতি করতে গেছিলি নাহ্? বোঝ এবার কেমন লাগে “
কুয়াশা চেঁচিয়ে চলেছে কোমড় ধরে। সে আবার বলল,
” কোমড় কি কোমড়ের জায়গায় আছে? নাকি গেছে? “
” এ্যাই বুনো ওলের বাচ্চা আমার কোমড় গেছে। এসে ধর “
” তোর কোমড় আমি ধরব কেন? তোর কোমড় তুই ধর। ঘাঁ যার ব্যথাও তার “
বলে সে গা ছাড়া ভাব নিয়ে ডুব দিল। এরপর উঠে পড়ল৷ কুয়াশা চেঁচিয়েই চলেছে৷ লেগেছে বেশ আচ্ছা মতোই। পেছনে এসে বলল,
” কোমড় তো কোমড়ের জায়গায় আছে৷ খসে নি তো। তাহলে এমন হামলাচ্ছিস কেন নাটকবাজ? “
” বুনো ওলের বাচ্চা, ব্যথা পেয়েছি অনেক। উঠতে পারছি না। মা গো “
শিশির হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। তাকে কামড় দেবার সাজা৷ হাসি দেখে কুয়াশা আরো রাগল। এবার কেঁদে দিল শব্দ করে রাগে, ব্যথায়। শিশির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখল মুখে ব্যথার ছাপ এসেছে বুঝল লেগেছে ভালোই। সে শরীরে শার্ট জড়াল। এরপর ঘাঁটের শানের উপর থেকে ফোন নিয়ে শশীকে কল দিল৷ শশী ধরতেই জিজ্ঞেস করল বাড়ির ভেতর উঠানে কেউ আছে কিনা! শশী জানাল মায়েরা রান্নাঘরে। শিশির রান্নাঘরের দরজা বন্ধ করতে বলল কিছুক্ষণের জন্য। বলে আশেপাশে নজর রাখতে বলল বড়রা কেউ যেন না থাকে উঠানে। বিব্রবতবোধ হবে নয়তো৷ সব বলে কল কেটে কুয়াশাকে কোলে তুলে নিল৷ নিয়ে হাঁটা ধরল। বলল,
” নাটকবাজ গোবর ঠাঁসা। “
| চলবে |
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click