®রোজা রহমান
‘
চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সোডিয়ামের আলোয় যেটুকু আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাতেই বোঝা যাচ্ছে কুয়াশায় ঘেরা চারিকোণ। প্রকৃতিতে কনকনে ঠান্ডা বিরাজমান। কিন্তু এই ঠান্ডার মাঝে আরো একজোড়া কপোত-কপোতী তাদের প্রেম বিনিময়ে মত্ত। তারা তাদের নয়া প্রেমের ভালোবাসা বিনিময়ের জন্য একে অপরকে ছাদে ডেকেছে৷ তারা আর কেউ না মিহির, ঈশা।
মিহির ঈশাকে ছাদে ডেকেছে নতুন বছরের প্রথম ক্ষণটা ভালোবাসার মানুষের সাথে কাটাবে বলে৷ এমনটা কে না বা চায়? ভালোবাসার মানুষ থাকলেই ইচ্ছে করে প্রতিটা দিন, প্রতিটা ক্ষণ নতুন ভাবে নতুন করে কাটাতে। কোনো উপলক্ষে স্পেশাল করতে৷ তেমনই এদেরও ইচ্ছে হয়েছে।
মিহির ঈশা বারটার আগেই ছাদের এসেছে। ছাদের মোটা ইটের গাঁথা রেলিঙের উপর দু’জন বসে আছে সামনা-সামনি। শরীরে গরম কাপড়। পুরোটাই ভালোভাবে ঢাঁকা এর জন্য শীতে বেশি কাবু করতে পারছে না। শিশিরদের ছাদটা অনেক বড়। উঠলে মনে হয় কোনো খেলার ফিল্ড। রাস্তার আলো এবং আশেপাশের অনেক ছাদের আলোয় আলোকিত করে রেখেছে৷ অন্যদিকের ছাদে অনেকে নিউ ইয়ার উৎযাপন করছে। ওরা বসেছে নিরিবিলি জায়গায় এবং লোকালয় থেকে আড়ালে। তারা নিরিবিলি সময় কাটাবে এই ভাবনায়৷
দু’জনে বারটার পর এসে একে অপরকে উইশ করে নানান গল্পে মত্ত হয়েছে। দূরত্ব তাদের মাঝে কিঞ্চিৎ। তারা এখন একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকার মতোই কথা বলে আচরণ করে। ঈশার দিক থেকে অনেক পজেটিভ ইঙ্গিত পায় মিহির। যার জন্য সে-ও প্রেমিকের মতোই ট্রিট করে। গল্পের মাঝে মিহির ঈশার কোমড় জড়িয়ে ধরে ঝটকা দিয়ে কাছে টেনে নিল। ঈশা চমকাল৷ রেলিঙের এপাশ-ওপাশ করে পা দিয়ে বসা তারা। ঈশা আতঙ্কিত কন্ঠে বলল,
” কি করছ? এভাবে টানলে পড়ে যদি যেতাম? “
” আমি পড়তে দিতাম? “
” হাহ্, নিজেই তো বাঁশের মতো। বাতাসের আগে উড়ে বেড়াও। শরীর হাড্ডিগুড্ডি ছাড়া অন্য কিছু যে আছে বলে মনে হয়না! শুধু হাঁটুতেই লম্বা হয়েছ। বডি, ফিগারে জিরো। “
মিহিরের এত বড় ব্যঙ্গ করাটা সহ্য হয় না। তবুও এই মেয়েটা শুধু তাকে শরীর নিয়ে খোঁটা দেয়। সে না হয় একটু পাতলাপুতলু আর বয়সের তুলনায় তেমনও না। জাস্ট শরীরটায় পাতলা তাছাড়া বডি ফিটনেস সুন্দর তার। গমগমে স্বরে বলল,
” দেখ ধানিলঙ্কা বার বার এটা বলে খোঁটা দিবি না। সময় হলে আমিও বডি বানাব “
এই কথা শুনে ঈশা জোরে হেসে দিল। বলল,
” বডি! তাও তোমার? “
বলে আবার হাসল৷ মিহির আহাম্মকের মতো চেয়ে রইল৷ মানে, সে কী এতটাই হাস্যকর কথা বলল? যে এমন হাসছে এই বে-য়াদবটা! ভ্রু কুঞ্চিত রেখে বলল,
” থামবি! “
ঈশা এবার থামল। মিহির ঈশাকে কখনো তুমি বলে কখনো তুই। আসলে ওর মুডের উপর ডিপেন্ড করে ঈশাকে সম্মোধন করাটা। ঈশা এ নিয়ে কিছু বলে না৷ ভালোই লাগে ওর মুখে তুই, তুমি। মিহির ঈশাকে কিছুপল অবলোকন করল৷ এরপর সে আরেকটু এগিয়ে গেল। ঈশা নির্বিকার। মিহির ঈশার ডান হাতটার মাঝে নিজের আঙুলগুলো গলিয়ে দিয়ে ধরল। তার নিজের ডান হাতটা ঈশার গালের উপর রাখল। চোখের দৃঢ়তা মাপার চেষ্টা করল আলো-আঁধারির মাঝে। এরপর আবদার করল অতি নিপুনতায়,
” এ্যাই ধানিলঙ্কা! ক্যান আই কিস’ড অন ইউর লিপ’স? ”
ঈশা চমকে উঠল। শিরশির করল পুরো কায়া। বুক ধুকপুক করল। তাকাল মিহিরের চোখের গভীরে। দেখতে পেল অতি সুক্ষ্মতায় তা, তার সামনের ছেলেটার বাসনা, ইচ্ছেকে। ঈশাকে চুপ থাকতে দেখে এবং কোনো রিয়েক্ট করতে না দেখে মিহির ঈশাকে আরেকটু টেনে নিল। নিরবতা সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে অধরে অধর ডুবাল৷ অদ্ভুতভাবে ঈশা সায় দিল। মিহিরও নিজের প্রথম চুমুর অনুভূতি ঈশাকে বুঝাল।
কিছু মানুষ হয় কোনো উচিত, অনুচিত দেখে দুনিয়ায় চলে না। তারা তাদের মন মর্জি মতো চলে। ইহকালের পাপপুণ্যতার বিচার করে চলে না। দুনিয়ায় এমন মানুষের বাস ভূরি ভূরি। সকলে কি আর উচিত, অনুচিত, পাপপুণ্য মেনে চলে? তেমনি এই জোড়াও এমন। এরা উচিত অনুচিত দেখল না, পাপপুণ্য বিচার করল না। ব্যস তাদের অন্তরের বাসনা পূূরণ করে নিল।
‘
কিছুক্ষণ পর দু’জন দু’জনকে ছেড়ে দিল। মিহির ঠোঁট কামড়ে হাসল। ঈশা লজ্জায় মিহিরকে জড়িয়ে ধরল। হাসল মিহির। বলল,
” ধানিলঙ্কা! তুই হেব্বি ঝাল রে… “
ঈশা একটা চাপ্পড় বসাল মিহিরের পিঠে৷ আবারও হাসল মিহির৷ কিছুক্ষণ থেকে মিহির বলল,
” এ্যাই চলো। অনেক রাত হয়ে গেছে। আর শীতও লাগছে এখন “
ঈশাও সম্মতি দিয়ে নেমে পড়ল। হেঁটে এসে সিঁড়ি ঘরের দরজা খুলে পা দিতেই দেখতে পেল শশী আর নীহার নেমে যাচ্ছে। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ওরা দু’জনই থেমে পিছন ঘুরে অবাক হয়ে গেল। মিহির, ঈশাও ভরকাল। অস্বস্তিও হলো অনেকটা। ঈশা ফুপুত বড় ভাইয়ের সামনে নিজেকে গুটিয়ে নিল। তুহিন, নীহারকে সে আগাগোড়ায় মানে খুব ভাই হিসেবে৷ তার নিজের ভাই নেই। নীহারের ভ্রু কুঁচকে গেল। শশী বিস্মিত স্বরে বলল,
” ভাইয়া, তুই! “
ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল,
” ঈশা আপু! “
ওরা দুজনেই আবার থতমত খেল। নীহার মিহিরের সাথে সম্পর্ক মানে। শশীর বড় ভাই হিসেবে সে-ও তেমনভাবে মানার চেষ্টা করে। ঈশা বোন হিসেবে শাসন করবে সেটা ঠিক আছে কিন্তু শশীর বড় ভাই মানে তারও সম্পর্কে বড় শা-লাবাবু তাকে কি বলবে? বলল,
” তোমরা ছাদে ছিলে? “
” হ্যাঁ ভাই “
” কেন? “
ঈশা একটু নার্ভাস হলো। তাদের এই এত কম এ্যাজের পার্থক্য তার ভয় হয়। সকলে যদি উল্টো রিয়েক্ট করে বা না মানে! মিহির এবার ঈশার দিকে তাকাল। বুঝল ঈশার অবস্থা। ঈশার হাত ধরল শক্ত করে। চোখ এড়াল না তা সিঁড়িতে থাকা শশী, নীহারের। মিহির ঈশাকে দেখে নীহারেদের সবটা বলল। সব শুনে নীহার, শশী একটু না অনেকটাই অবাক হলো। নীহার বলল,
” তোমাদের এত কম বয়সের পার্থক্য এটা মানবে তো মামা? “
থেমে ঈশাকে বলল,
” কিরে.. বল মানবে মামা? “
ঈশা এবার ভয়ে কেঁদে দিল। বাবা যে এটা নিয়ে ভবিষ্যতে হাঙ্গামা করবে তা তার জানা আছে। তবুও মিহিরকে সে ফেরাতে পারেনি। কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” আমি মিহিরের সাথে থাকতে চাই ভাইয়া”
নীহার কী বলবে বুঝল না। সকলেরই স্বাধীনতা আছে নিজের জীবন সঙ্গী নিজেদের মতো করে নির্বাচন করার। সেক্ষেত্রে যদি তারা এ্যাজ ডিফারেন্ট না দেখে তবে অন্যের দেখে কি হবে? তারা চলতে পারলেই হলো। নীহার বলল,
” নেমে আয় “
কথা মতো নেমে এলো ঈশা। মিহিরও এলো। নীহার বোনের চোখের পানি মুছিয়ে বলল,
” সকলের নিজের জীবন সঙ্গী চয়েস করার অধিকার আছে। তোরা নিজেদের পছন্দ করেছিস ঠিক আছে। কিন্তু এই সম্পর্ক ধরে রাখা এবং এগিয়ে নিয়ে গিয়ে পূর্ণতা দেয়া অনেক কঠিন হবে। যেটা বাস্তবতা। তবে পাশে থাকব আমি ভাই হিসেবে। মামাকে আমি এবং আমরা বোঝাব। “
থেমে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
” শশীর ভাই হিসেবে তোমাকে না দেখে একজন বোনের ভাই হিসেবে বলছি এগিয়ে যেতে পারবে তো? পূূর্ণতা দিতে পারবে? যোগ্য হয়ে দেখিয়ে নিজের অধিকার বুঝে নিতে? “
মিহির সে-কথার উত্তর করল পুরোটা আত্মবিশ্বাসের সাথে। বলল,
” আমি পারব ভাই। ঈশাকে আমি বলেছি। ও’কে ভালোবাসি আমি, পরিবার যদি একটু সেক্রিফাইজ করে তো আমিও যোগ্য হয়ে দেখাব৷ এ্যাজ দিয়ে বিচার না করে আমার যোগ্যতা দিয়ে বিচার করলে।”
নীহার হাসল ঠোঁট টেনে। কাঁধে হাত রেখে বলল,
” ভালোবাসার অধিকার সকলের আছে “
শশী, ঈশা মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইল নীহারের দিকে। মিহির নীহারকে জড়িয়ে ধরল। শশী বলে উঠল,
” তুমি তবে আমার ভাবি?”
ঈশা লজ্জা পেল। মিহির বলল,
” তোকে অত পাকনামি করতে হবে না। নীহার ভাই ঠিকই বলে ইঁচড়েপাকা একটা”
শশী চোখ ছোট ছোট করে তাকাল৷ ঈশা ঠোঁট টিপে হাসল। অতঃপর তারা নিচে নেমে এলো।
___________
সকাল আটটার দিকে মালিথা ভিলায় সকলে উঠে গেছে। জিনিয়ারা আজ চলে যাবে। দুপুরের দিকে বের হবে। বসার ঘরে অনেকে বসে সকালের চা-কফি খাচ্ছে।
‘
দশটার দিকে শিশির রেডি হচ্ছে বাহিরে যাবে। কুয়াশা এলো। বলল,
” বাহিরে যাবে? “
” হ্যাঁ, কিছু লাগবে তোর? “
” নাহ্, তেমন কিছুই লাগবে না “
শিশির আর কিছু বলল না। কুয়াশা বিছানায় বসে কম্বলের নিচে পা ঢুকিয়ে দিল৷ কোলের উপর বালিশ নিয়ে তার সুদর্শন স্বামীকে দেখতে লাগল বসে বসে৷ সে যা-ই পরে তাতেই যেন সুন্দর লাগে। এইযে এখন একটা ফুল জিপের কালো জেন্ট’স গেঞ্জি হুডি জ্যাকেট সাথে কালো গ্যাবাডিংস প্যান্ট, হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি পরেছে এতেই যেন সৌন্দর্য আরো হাজার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে গেছে৷ মেদহীন, চওড়া, হলুদাভ শরীরে সব কালো রঙটা চোখে লাগার মতো। মিররে একনাগাড়ে তাকিয়ে আছে। শিশির এতক্ষণ পর লক্ষ্য করল। ঠোঁট টিপে হাসল বউয়ের নির্লজ্জামী দেখে। দুষ্টু হেসে জ্বলানোর বুদ্ধি এলো মাথায় তৎক্ষনাৎ। শীতে যদিও পারফিউম বেশি ইউজ করা লাগে না সে-ও করে না তবুও আজ নিল৷ জেন্ট’স পারফিউমের সুগন্ধে কুয়াশার নাক সহ মাথা পর্যন্ত ঝা-ঝা করে উঠল৷ শিশির সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে এগিয়ে গেল কুয়াশার কাছে। এগিয়ে গিয়ে ঝুঁকল কুয়াশার দিকে। বলল,
” এভাবে গিলছিস কেন চোখ দিয়ে? এখন মাতোয়ারা হয়েও লাভ নেই আমি বাহিরে যাব। তবে রাতে ফ্রি থাকব তখন… “
সম্পূর্ণ বাক্য পুরো না করে চোখ টিপল সে। কুয়াশা ফুঁসে ওঠল। বুকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
” তুমি তো আচ্ছা ঠোঁট কাটা পাবলিক দেখছি! মুখে কিছুই আঁটকায় না। অসভ্য বুনো ওল একটা, এ্যাই সরো তোহ্!”
বলে আবার ধাক্কা দিল। কিন্তু শিশিরকে সে দুই দুইবার ধাক্কা দিয়েও সরাতে পারল না একচুল পরিমাণ। শিশির ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু চোখে হেসে যাচ্ছে। বলল,
” হ্যাঁ তোহ্ নিজের বউয়ের কাছে অসভ্য হব না তো পাড়ার লোকের বউয়ের কাছে হব নাকি? “
কুয়াশা এবার আরো ফুঁসে ওঠল। দুই হাত দিয়ে ঝুঁকে থাকা শিশিরের চুলগুলো মুঠোয় পুরে টেনে ঘুরিয়ে দিল। বলল,
” তোর সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে বুনো ওলের বাচ্চা! এ্যাই তুই লোকের বউ-ই দেখে বেড়াস? “
শিশির হেসে ফেলল বউয়ের এই অভার পজেসিভনেস দেখে। এই বউ জাতি গুলোই কি এমন? স্বামীদের উপর অভার পজেসিভ! বলল,
” গোবর ঠাঁসা তুই একটা, নিজের বউকে দেখেই দিন রাত যায় আমার লোকের বউ দেখব কখন? “
বলে থেমে আবার বলল,
” আর হ্যাঁ তুই বউ দেখার প্রসঙ্গে গেলি কেন? ছিলাম তো আমি অসভ্যতামি দেখানো কথায়! স্বাধে তো বলি না গোবর ঠাঁসা “
শেষ বাক্য বলতে বলতে মাথায় চাটি মা-রল কুয়াশার। কুয়াশা ‘আহ্’ করে উঠল। মাথা ডলতে লাগল চোখ মুখ কুঁচকে। এরপর শিশির উঠে পড়ল৷ কাছেই দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
” তুই আর সব ট্রিপিক্যাল বউদের মতো স্বামীর উপর অভার পজেসিভ। এটা কিন্তু মটেও ভালো লক্ষণ না গোবর ঠাঁসা! “
কুয়াশা নাক ফুলাতে ফুলাতে বলল,
” এটা হওয়া লাগে না এমনিই চলে আসে। সব বউরাই স্বামীর জন্য একটু বেশি চিন্তা করে। অসব তুমি বুঝবে না। যাও বিদায় হও এখন!”
শিশির চোখ ছোট ছোট করে তাকাল। আবারও মাথায় চাটি মা-রল৷ বলল,
” গোবর ঠাঁসা একটা৷ মনে রাখবি অতিরিক্ত কিছুই ভালো না “
কুয়াশা উত্তর করল না। শিশির আবার ঝুঁকে বলল,
” তবে তোর একটা জিনিস অতিরিক্ত ভালো লেগেছে! “
কুয়াশা শিশির দিকে চোখ ছোট ছোট করে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
” কি?”
শিশির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” তুই অতিরিক্ত স্ট্রোং “
কুয়াশা শিশিরের কথা ধরতে পারল কি? পারল বোধহয়। রেগেমেগে ধাপধুপ করে কয়েকটা কি-ল, ঘু-ষি, চাপ্পড় বসিয়ে দিল শিশিরের বাহু ও পিঠে। শিশির হাসল। উঠে কুয়াশার দিকে তাকাল। শিশিরকে আবার ধাক্কা দিয়ে বলল,
” যাও তোহ্ অসভ্য! “
বলে শুয়ে পড়ল কম্বল মুড়ি দিয়ে। শিশিরও আর জ্বালাল না গোবর ঠাঁসা নামক বউটাকে। হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে চলে গেল সে।
__________
আজ সারাটাদিনই মেঘলা ছিল। সূর্য ওঠেনি। শীতের দিনে এই একটা জ্বালা৷ সূূর্যমামার দেখা মেলা বড় দায়। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাড়ির আত্মীয় স্বজনরা সকলে চলে গেছে। শশীরাও চলে গেছে। কুয়াশা, ইয়াসমিন বৃষ্টির ঘরে বিকেল থেকে গল্প করছিল৷ এখন তারা বৃষ্টির ঘরেই সময় কাটায়।
‘
রাত নয়টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে কুয়াশা নিজের ঘরে পড়ছে। শিশির তার ঘরে আছে। নিজের পড়া শেষ করে শুতে চলে গেল। শীতে রাত জেগে পড়তে বিরক্ত লাগে।
শিশির বিছানায় পড়ছে। রাত এগারটা বেঁজে গেছে। কুয়াশা চাদর রেখে বাথরুমে গেল। কিছুক্ষণ পর এসে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ সারল। শিশির দেখল কুয়াশাকে। বই রেখে ডাকল,
” এদিকে আয়! “
কুয়াশা মিররের সামনে থেকে গিয়ে কাছে দাঁড়ালে সে কুয়াশার শরীর থেকে ওড়না নিয়ে নিল টান দিয়ে। সেটা পাশে রেখে লাইট অফ করে দিয়ে কুয়াশাকে নিয়ে শুয়ে পড়ল। কুয়াশা স্বামীর অভিরুচি বুঝল। কিছু আর বলল না। সায় দিল শুধু।
__________
কেটে গেল একটা সপ্তাহ। আজ থেকে শিশিরের পরীক্ষা শুরু। সকাল থেকে সে-সবেরই প্রস্তুতি নিচ্ছে। কুয়াশা গিন্নীর মতো সব রেডি করে দিচ্ছে। সকাল দশটা থেকে শুরু। শিশির রেডি হয়ে বাবার ঘরের দিকে গেল৷ পেছন পেছন কুয়াশাও গেল। গিয়ে দেখল জাকির মালিথা শুয়ে চোখের উপর ভালো হাতটা দিয়ে রেখেছেন। দরজার সামনে থেকে ডাকল,
” বাবা..! “
ছেলের ডাকে হাত সরিয়ে তাকালেন। ভেতরে আসতে বললেন৷ শিশির গিয়ে বাবাকে সালাম দিল। তিনি উত্তর নিলেন৷ বাবার পাশে বসল সে। বাবার অবস হাতটার উপর হাত রেখে বলল,
” বাবা আমার জন্য দোয়া রেখো৷ আজ থেকে পরীক্ষা। তোমার ছেলে যেন তোমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে “
জাকির মালিথা অমায়িক হাসলেন। ভালো হাতটা ছেলের পিঠে রাখলেন৷ হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
” আমার এবং আমাদের সকলের দোয়া সব সময় তোমার উপর। আল্লাহ সব কিছু ভালো করবেন ইনশাআল্লাহ। আমার ছেলে সফল হবে৷ তার স্বপ্ন পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ। দেখে শুনে সাবধানে যাবে আমার বাবা “
শিশির অমায়িক হাসল৷ বাবার বুকের উপর মাথা রাখল৷ তিনি মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন ছেলের৷ কুয়াশা সব দেখল পাশে থেকে। হিংসাত্মক বাক্যে বলল,
” শুধু ছেলেকেই ভালোবাসবে নাকি আমাকেও একটু চোখে দেখবে? “
শিশির মাথা তুলে চোখ ছোট করে তাকাল৷ কুয়াশা পাত্তা দিল না। জাকির মালিথা হাসলেন মেয়ের কথায়। কাছে ডাকলেন। কুয়াশা এগিয়ে গেলে তিনি বললেন,
” এটা তো আমার মা। আমার কুহেলি মা’য়ের জন্য সবসময় আলাদা ভালোবাসা তোলা থাকে। “
কুয়াশা গদগদ হয়ে হাসল৷ শিশির আগের ন্যায় চেয়ে রইল। কুয়াশা মুখ ঝামটাল। বাবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেল দু’জনে।
নিচে এসে সকলকে পেল৷ মা’য়েরা রান্না ঘর থেকে এলে সকলের উদ্দেশ্যে সালাম দিল শিশির। এরপর সকলের থেকে একে একে দোয়া নিল। জাকিয়া কপালে চুমু দিয়ে দোয়া করলেন। আম্বিয়া, আজমিরা মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করল। সকাল আটটা বলে তুষাররাও বাড়িতে। শনিবার হওয়াতে জাহিদ মালিথাও আছেন৷ সকলের থেকে দোয়া নিল৷ হিম বেস্ট উইশ জানাল। নীহার কথা বলতে বলতে বাহির অবধি গেল সাথে কুয়াশাও। দরজার সামনে থেকে কুয়াশাও অল দ্যা বেস্ট বলে কিছু কথা বলল৷ বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেল সে।
| চলবে |
ছোট গল্প করে করে ৬০ টা পর্ব লিখে ফেললাম
আরো কত লিখতে হবে কে জানে!
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click