®রোজা রহমান
‘
জালাল মালিথা অর্থাৎ জাকির, জাহিদ, জাহিন মালিথার বাবা। তিনি ছিলেন অনেক পরিশ্রমী। জালাল মালিথা উনার বাবার একমাত্র ছেলে সন্তান ছিলেন৷ তাদের পারিবারিক অবস্থা যে আহামরি ভালো ছিল তা না৷ সে সময় তারা ছিলেন নিম্ন-মধ্যেবিত্ত পরিবারের। ফসলি জমি জায়গা অনেক থাকলেও জালাল মালিথার বাবা ছিলেন অশিক্ষিত। তিনি কৃষি কাজ করতেন। কিন্তু সেই কর্মের মাধ্যমেই তিনি ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছিলেন। কৃষি খাতের মাধ্যমে অনেক টাকাই আয় করতেন। যা দিয়ে সংসার খরচ সহ টাকা সঞ্চয় করতে পারতেন। সেসবের ভেতর থেকে ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। জালাল মালিথা বাবার কষ্ট বিফলে যেতে দেননি। তিনি বেশ ভালো মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ স্নাতকোত্তর করেছিলেন।
এরপর তিনি সরকারি ব্যাংকের চাকরি শুরু করেছিলেন। চাকরি পাবার পর ধীরে ধীরে সচ্ছলতা বেড়েছিল। এভাবে আস্তে আস্তে টাকা জমিয়ে তিনি শহরের কাছে জায়গা কিনেছিলেন। তিন ছেলে হলে তাদেরকেও এক-একজনকে উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তুলেছিলেন। ছেলেরা লেখা-পড়া করে আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠেছিল। তিনিও চাকরি শেষে টাকা পেয়ে সেই টাকা সহ একটু একটু করে জমিয়ে রাখা টাকা দিয়ে শহরের কাছে শখের বাড়ি করেছিলেন৷ বড় ছেলে এবং মেজো ছেলের কৃতিত্ব অনেক বাড়িটাতে। বাবা-ছেলেরা মিলে শখের বাড়ি করেছিলেন৷ গড়ে তুলেছিলেন মালিথা ভিলা। সেই নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে তারা হয়ে উঠেছিলেন উচ্চ-মধ্যবিত্ত৷ লাখ-লাখ কোটি-কোটি টাকা না থাকলেও অধিক সুখ এবং আনন্দ বরাদ্দ ছিল তাদের সংসারে। বাবার পেনশনের টাকা এবং দুই ছেলের কর্মের পারিশ্রমিকের আয় দিয়ে ভালোই সংসার চলে যেত।
ছোট ছেলে জাহিন মালিথা তখন ছোট পড়াশোনা করতেন কলেজে। ছোট ছেলেটা একটু মেধাতে কমা ছিলেন। জাহিন মালিথা অনার্স করতেন সরকারি কলেজে। সেখানেই আজমিরা বেগমের সাথে পরিচয় হয়ে একই বর্ষে প্রণয়ে জড়িয়েছিলেন৷ আজমিরা বেগম বাবারা ছিলেন নিম্ন শ্রেনীর মানুষ। কোনো মতে কাজ করে চলে যেত দিনগুলো৷ তিন বোন ছিলেন উনারা৷ তিনি ছোট মেয়ে থাকায় লেখাপড়ার সু্যোগ পেয়েছিলেন। ভাবনা ছিল লেখাপড়া করে চাকরি করবেন। কিন্তু তার আগেই জাহিন মালিথার সাথে সম্পর্কে জড়ান এবং জাহিন মালিথার হাত ধরে চলে আসেন অর্নাসে থাকতেই৷
বাড়িতে অবশ্য জালাল মালিথা হা’ঙ্গা’মা করেছিলেন৷ কিন্তু দুই ভাইয়ের সাপোর্টে আজমিরা বেগম মালিথা বাড়িতে জায়গা পেয়েছিলেন৷ সেখানে ধীরে ধীরে সংসার জীবন শুরু করেছিলেন৷ জাহিন মালিথা তিন বছর পর ছোট একটা চাকরি পেয়েছিলেন প্রাইভেট কোম্পানিতে৷ তার আগে বাবা ভাইদের টাকাতেই চলতেন। চাকরি পাবার পর বেশ কিছু বছর পর
একটা মেয়ে হলো। তার নাম কুয়াশা। কুয়াশা হবার পর জাহিন মালিথার একটু কদর বাড়ল বাড়িতে সাথে আজমিরা বেগমেরও৷ শাশুড়ী, শ্বশুর ভালোবাসতে শুরু করলেন৷ কারণ বাড়ির একমাত্র নাতনী কুয়াশাকে পেয়ে তারা অনেক খুশি। এরপর হিমেল হলো৷ ভরা সংসার তখন জাহিন মালিথার ও আজমিরা বেগমের।
এমন-ই সুখের সংসারে এক সময় ঝর নেমে এলো৷ সেই ঝরে নিয়ে গেল জাহিন মালিথাকে৷ চাকরি থেকে আসার পথে তিনি লা-শ হয়ে এলেন বাড়িতে। রোড এক্সি-ডেন্টে আজমিরা বেগমের সুখ কেঁড়ে নিয়ে গেল। ছেলে-মেয়ে নিয়ে তিনি পাগল হবার মতো। তখন মাথার উপর হাত রাখলেন দুই ভাশুর এবং জা। তখন তিনি মনে মনে ভেবেছিলেন কোন এক সময় বোধহয় পূন্যের কাজ করেছিলেন যার বিনিময়ে তিনি এমন শ্বশুরবাড়ি পেয়েছেন, এমন ভাশুর, জা পেয়েছেন৷ আজমিরা বেগমের কাঁচের মতো টুকরো হয়ে ভেঙে যাওয়া সংসারে ঢাল হলেন ভাশুররা এবং তার ছেলে মেয়ের ঢাল হলেন ভাশুরের ছেলেরা৷ জীবনে সুখ তখন একটু একটু করে ফিরতে লাগল। স্বামীর মৃ-ত্যু শোক থেকে বেড়িয়ে তিনি সন্তানদের মানুষ করাতে মন দিলেন। লেখাপড়া যেটুকু-ই করুক কখনো বাইরে কাজ করতে বের হননি। মূলত বের হতে দেননি ভাশুররা৷ এছাড়া আজমিরা বেগমও একটু বেশি নরম-সরম ছিলেন বাইরের জগতে গিয়ে কাজ করে সংসার করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। শ্বশুর প্রথমে মা-রা গেলেন তারপর শাশুড়ী। তিনি এখন সংসারে কাজ করেন আর ছেলে মেয়েকে মানুষ করেন। সংসারের কোনো কঠিন কথা বার্তায় নাক গলান না। বিনি পয়সায় খেতে পড়তে পারছেন সেখানে কার সাথে উচ্চ-বাচ্চ করবেন? তাছাড়া ভাশুর এবং জা রা কখনো খারাপ কথা তাকে বলেন না৷ কখনো খোঁটাও দেন না সেসব নিয়ে। নরম স্বভাবের জন্য সবাই-ই ভালোবাসেন৷ উনারা-ও বোঝেন আজমিরা বেগমের তারা ছাড়া কেউ নেই।
______
আজমিরা বেগম সেই তখন থেকে কেঁদে যাচ্ছেন। মেয়ের নিস্তেজ শরীর দেখে। শুকনো মুখে হসপিটালের বেডে পড়ে আছে কুয়াশা৷ হসপিটালে আসবার পথে একবার বমি করেছিল আবার হসপিটালে এসেও বমি করেছিল। পর পর তিনবার বমি করে মেয়েটা আধা ম-রা হয়ে গেছে৷ বমি যখন যার হয় তখন সে-ই একমাত্র বোঝে কেমন লাগে। খবর পেয়ে ভাইরা সহ চাচু-চাচিরা ছুটে এসেছে৷ তাদের আদরের মেয়ের এমন করুণ অবস্থা দেখে সবাই-ই শোকাহত। জাকিয়া বেগমও প্রথমে কেঁদে দিয়েছিলেন মেয়ের অবস্থা দেখে৷ হিমেলও বোনের এমন অবস্থা দেখে কেঁদেছে। ভাইরা আদরের বোনের এমন অবস্থা দেখে ছটফট করতে লেগেছিল। এদিকে আজমিরা বেগম সময়ে সময়ে কেঁদে কেঁদে উঠছেন। মেয়েকে যেমন শাসন করেন তেমনি জান দিয়ে ভালোও বাসেন। একমাত্র মেয়ে কিনা!! চঞ্চল মেয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে কেউ সহ্য করতে পারছে না৷
‘
রাত নয়টা। স্যালাইন চলছে কুয়াশার। মেয়েটা ক্লান্ত শরীর নিয়ে বেডের সাথে মিশে আছে। ঘুমচ্ছে এখন। চাচুরা সব চলে গেছেন সব ঠিকঠাক করে। আজমিরা বেগমের সাথে জাকিয়া বেগম রয়ে গেছেন হসপিটালে। শিশির, নীহার বৃষ্টি ও আছে এখনো। বৃষ্টিও চলে যাবে একটু পর তুষারের সাথে। রিজভী, স্মৃতি, ঈশা সন্ধ্যের সময় চলে গেছে। থাকবে শুধু শিশির, নীহার কুয়াশার মা আর জাকিয়া বেগম। আম্বিয়া বেগম চলে গেছেন। কারণ তিনি স্কুল থেকে এসে খুবই ক্লান্ত থাকেন। এছাড়া বাড়িতেও একজনের প্রয়োজন। রাতে এখানে খাবার পাঠাতে হবে রান্না করতে হবে।
আজমিরাকে শান্ত হতে বলছেন বৃষ্টি, জাকিয়া। কিন্তু শান্ত করতে পারছেন না। মা’য়ের মন কিনা!! সন্তানের একটু অসুস্থতাতেই ভেঙে পরেছেন৷ মায়েরা এমনি। নাড়ি ছেড়া অংশের কষ্ট কখনো সহ্য করতে পারে না। তাহলে আজমিরা বেগম সহ্য করে কিকরে! তার স্বামী যাবার পর এই দুই টুকরো সুখ নিয়েই তিনি বেঁচে আছেন। সমস্ত বেঁচে থাকা প্রয়াশ-ই তো তার ছেলে মেয়ে।
শিশির, নীহার বাইরে বসে আছে। শিশির সেই তখন থেকে হাসফাস করছে। কুয়াশার এমন নিস্তব্ধতা সে-ও মানতে পারছে না। ঝগড়া, মা-রা মা-রি করার জন্য মনে হচ্ছে হাসফাস করছে। এরা নিয়ম করে তিন-চার ওয়াক্ত চুলোচুলি করে। সেখানে আজ করতে পারছে না বিষয়টা শিশিরের কাছে অস্বাভাবিক লাগছে। মনে হচ্ছে নিজেদের অস্তিত্ব পাচ্ছে না। কুয়াশাকে বার বার বমি করতে দেখে শিশিরও ঘাবড়ে গেছিল৷
কুয়াশা কখনো কোথাও যায় নি। মূলত যেতে দেওয়া হয় নি তাকে। নানার বাড়ি, মামার বাড়ি বলে একটা জিনিস থাকে, সেটা কুয়াশার থেকেও নেই। এজন্য সবসময় শিশির সান্নিধ্যে-ই থেকেছে৷
শিশিরকে ওরকম হাসফাস করতে দেখে নীহার ওর কাঁধে হাত রেখে বলল,
” কিরে ওমন করছিস কেন? সমস্যা হচ্ছে? সমস্যা হলে তুই চলে যা আমি তুহিন ভাইকে ডেকে নেব। গিয়ে বিশ্রাম করিস। ”
শিশির নীহারের কথায় একটু অপ্রস্তত হলো। সত্যি বলতে তার বাঁধছে৷ তবুও ভাইয়ের কাঁধের উপর আদুরে ভাবে মাথা এলিয়ে দিল। ভাইয়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো করে বলল,
” না ভাই। আমার কষ্ট হচ্ছে না৷ আমি থাকব। কুশুটা কেমন শান্ত হয়ে আছে সেটা সহ্য হচ্ছে না। কেমন মুখটা শুকিয়ে গেছে তা দেখে ভালো লাগছে না। ঝগড়া করতে পারছি না। ওর নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকাতে কিছু মিস করছি “
নীহার মুচকি হাসল ভাইয়ের কথা। সে ভাইকে আরেকটু টেনে নিল৷ বড় ভাইয়ের দায়িত্ব নীহার ভালোই পালন করে। আর সে-ও ছোট থেকে দেখে আসছে, এই ছেলেটাকে সবাই একটু বেশি আদর করে অন্যদের থেকে। সকলের আদরে হয়েছেও আদুরে। ভাইয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কিছু কথা ভাবল, কে বলবে এই ছেলের বোনের প্রতি দরদ নেই? দরদ আছে কিন্তু দেখায় না। ঐ যে! কেউ কারো থেকে কম না৷ দু’জনের ইগো এক রকম। সারাদিন কুয়াশার সাথে ঝগড়া করে এখন আবার মিস করছে। আপন মনে হেসে উঠল নীহার। ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে বলল,
” মন খারাপ করিস না। জলদি সুস্থ হয়ে উঠবে তোর বাঘা তেঁতুল। তখন করিস ঝগড়া। ”
শিশির আবার অপ্রস্তত৷ এই ছেলেটা ভাবে কুয়াশার প্রতি তার অন্যরকম টান আছে, সে যেরকম দেখায় তেমন না। কিন্তু সে তো জানে আসলেই কিছু নেই। বোন হিসেবে যা দেখার দেখে। এমন-ই খুব একটা টানও কাজ করে না। ওর সাথে শুধু লাগতেই ভালো লাগে। কেন জানি আপন কিছু ফিল আসে না। শত্রু শত্রুই ফিল আসে সব সময়। আর তার এই ভাই কি না কি ভাবে। যাকে বলে, ‘আকাশ কুসুম ভাবনা’। বলেছিলও একবার৷ সেসব কিছুই না, অসম্ভব! কখনো সম্ভব না। কখনো হবেও না।
সে ভাইয়ের কাঁধ থেকে মাথা তুলে বলল,
” দেখ ভাই সেসব কিছু না৷ আমার কিন্তু এসব শুনলে রাগ ওঠে, বিরক্ত লাগে। ওর সাথে আমার ঝগড়া, মা-রা মা-রি করতেই ভালো লাগে। ছোট থেকে করে আসছি এখন সেটা অভ্যেস হয়ে গেছে। আজ ওর এমন নিঃস্তব্ধতা ভালো লাগছে না তাই বললাম। এখানে অন্য মানে আনবি না৷ “
তারপর একটু থেমে বলল,
” ঐ গোবর ঠাঁসার সাথে কিছুই হবে না আমার। চাচাতো বোন সেটাই মানতে পারি না আবার আসছিস অন্য সম্পর্ক নিয়ে। তোর এই আকাশ কুসুম ভাবনা ভাবা বন্ধ কর, হুহ “
শেষ কথাগুলো কেমন ব্যঙ্গ করে বলল। নীহার দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলল। এ বিষয়ে কিছু আর বলল না। নয়তো রেগে ব-ম হয়ে যাবে এ ছেলে। আর ব-ম হলে, বিপদ! কথা বলবে না। অযাচিত ভবিষ্যতের কথা নিয়ে তাই না ঘাটায় ভালো। ভবিষ্যতে কি আছে না আছে সেটা ভবিষ্যত-ই বলে দেবে। নীহার কথা ঘোরাল। বলল,
” ধুরর, আমি কি সেসব কিছু বলেছি? তুই কি ধরছিস? আমিও তো বললাম বাঘা তেঁতুল সুস্থ হলে ঝগড়া করিস৷ তোকে না ও বুনো ওল ডাকে!! “
এই বলে ঠোঁট টিপে হাসল নীহার৷ শিশির বিরক্ত হলো। তবুও আবার ভাইয়ের কাঁধে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরল। জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করল। ক্লান্ত লাগছে। সারাদিন দৌড়ঝাপ করেছে। শরীর এলানোর টাইম পায় নি সে। এখন এখানে তেমন জায়গাও নেই৷
_____
আজ শুক্রবার। কেটে গেছে চারদিন। এই চারদিনে কুয়াশা একদম সুস্থ হয়ে উঠেছে৷ অবশ্য দুই দিনের দিনই সুস্থ হয়ে গেছিল অনেকটা তবুও তাকে রেস্টে থাকতে হয়েছে। হসপিটাল থেকে পরেরদিন বিকেলেই নিয়ে আসা হয়েছিল।
এই চারদিনে শিশির খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি ঝগড়া করার জন্য। কারণ তাকে কুয়াশার কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয় নি বেশি একটা। সবাই জানে সে কুয়াশার কাছে ঘেঁষা মানে চুলোচুলি করবে। তবুও টুকিটাকি ঠুকামুকি করেছে মুখে। কুয়াশা গলার জোর, শরীরের তেজ না পেলে-ও ছাড়ও দেয় নি।
‘
আজ শুক্রবারে মালিথা ভিলা থেকে বড়রা যাবে ইয়াসমিনদের বাড়ি অর্থাৎ তুহিনের মামার বাড়ি। তারই বিয়ের পাকা কথা বলতে। বাড়িতে ঠিক হলো বড়দের সাথে ছোটরাও যাবে। যদিও এটা কথা ছিল না। জাকির মালিথা ছোটদের নিয়ে যেতে চাননি। কিন্তু তুহিনের মামা সকলকেই যেতে বলেছেন। এতে সবার সাথে টুকটাক পরিচয় সহ সরাসরি দেখাও হয়ে যাবে।
মানে, নিজেদের মেয়ে বলে কি হয়েছে? তাই বলে মেয়ে দেখার রিচুয়াল টা পূরণ করবে না? এটা একটা কথা হতে পারে? তাই কুয়াশা সহ সবাই তুহিনকে ধরেছিল যাতে ম্যানেজ করে। তুহিনও ভাই-বোনদের পাম্প-পট্টির গ্যারাকলে পড়ে মাকে বলে সব ম্যানেজ করেছে। এখন সবাই আনন্দে আটখানা। দৌড়ে দৌড়ে সবাই তৈরি হচ্ছে। নামাজ শেষেই সবাই রওনা হবেন। আজ জাহিদ মালিথাও থাকছেন। উনার পোস্টিংটা পাবনাতে। তাই সেখান থেকে আসতে পারেন না রোজ রোজ৷ সপ্তাহে আসার চেষ্টা করেন। নামাজ শেষে সবাই রওনা দিল চৌরহাসের দিকে। কারণ ইয়াসমিনদের বাসা চৌরহাসে। যেখানে গাড়িতে গেলে পাঁচ-সাত মিনিট সময় লাগে। শিশিরদের বাড়িটা যেখানে সেখানের নাম আড়ুয়াপাড়া।
জাকির মালিথা খুব একটা বিলাসিতা পছন্দ করেন না তাই সামর্থ থাকা স্বত্তেও কখনো প্রাইভেট গাড়ি কেনার পক্ষপাতিত্ব হননি। পাবলিক যানবাহনেই যাতায়াত করেন। এখন তাদের যাবার জন্য রিকশা নিয়েছেন। ছোটরা বাইক নিয়েছে। তুষার, তুহিন, নীহার, শিশির চারজনেরই বাইক আছে। নীহার কুয়াশাকে নিয়েছে, হিমেল তুহিনের সাথে উঠেছে, বৃষ্টি তুষারের সাথে।
আর একজনের কথা কি বলব? নবাবজাদা একাই একশ। সে একাই বাইক নিল। তিনি কাউকে নেবার পক্ষে নেই। ব্লাক গ্যাবাডিংস প্যান্টের সাথে ব্লাক সার্ট চোখে ব্লাক সানগ্লাস উজ্জ্বল হলুদ ফর্সা শরীরে যেন নজর কেঁড়ে খাচ্ছে। হিরো লুক নিয়ে বাইকে উঠেছে। ভাবটা এমন মনে হচ্ছে যেন, পাত্র তুহিন না সে নিজেই এবং তারই জন্য পাত্রী দেখতে যাচ্ছেন সকলে। কুয়াশার তো তা দেখে এই অবধি একশত বার ভেঙচি কাটা হয়ে গেছে। এবারও ভেঙচি কেটে বলল,
” হুহ নবাবজাদা! ভাব দেখলে আর বাঁচি না। লাগে যেন, কোথাকার না কোথাকার রাজপুত্তুর। সেই তো সে বুনো ওল!! হুহ “
| চলবে |
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part )