| [ ১৮+ এলার্ট ]
®রোজা রহমান
‘
আজ মালিথা ভিলায় বৌভাতের অনুষ্ঠান। সকাল ভোরে আলোআঁধারি নায়-ই কাঁটতে সব আয়োজন শুরু হয়ে গেছে৷ বড়রা অর্থাৎ জাকিয়ারা তিন জা সহ জাকির, জাহিদ মালিথারা তদারকি করছে৷ বাবুর্চিরা রান্নার কাজে লেগে পড়েছে। আত্নীয়দের সকালের খাবার রান্না করে অনুষ্ঠানের রান্না করছে৷ বাসন-কোসনের টুংটাং, আত্নীয়দের হট্টগোল। ছোটদের মাঝে অনেকেই এখনো নিচে নামে নি।
শিশির, কুয়াশা নিচে নামল সেসময়ে একসাথে৷ বৃষ্টি, ইয়াসমিনও এলো। বর্ষণ এখনো ঘুমচ্ছে। তুষার, তুহিন বাবাদের সাথে। শিশিররা নামতেই একে একে অনেকেই একটু পর চলে এলো৷ রিজভী, স্মৃতি, মিহির, ঈশা, অয়ন, শান্ত, নাদিম সকলে এলো৷ অনিরা এখনো আসেনি৷ বসার ঘরে বসে সব টুকটাক গল্প করতে লাগল।
‘
আজানের সময় নীহার শশীকে তুলে পাকসাফ হয়ে নামাজ পড়েছে। শুধু নামাজটা কোনো রকম আদায় করেছে শশী৷ শরীর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে তার৷ একদম নেতিয়ে পড়ে আছে বিছানায়৷ ব্যথা-বিষে জর্জরিত পুরো শরীর। এদিকে পেট ব্যথায় ফুঁপাচ্ছে। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে৷ এসব দেখে নীহার পাগল প্রায়৷ কী করবে না করবে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার। বউ তার একদিনেই নাজেহাল আর সে কিনা এই কয়টাদিন আদরে আহ্লাদে রাখতে চেয়েছিল!! ভবিষ্যত তার বানের জলে ভেসে যাবার মতো। সে-তো অতি সাবধানই ছিল! তবুও এই অবস্থা! মেয়েমানুষের এতটা নাজুক হলে চলে! বয়সও তো কম না৷ ঊনিশ চলে, তবুও! এই জন্যই সে বলেছিল শরীর সাস্থ ঠিক করতে। শরীরে তো হাড্ডিগুড্ডি ছাড়া কিচ্ছু নাইকো-ই সাথে জোর বলও নাই। ভেবেই একটু বিরক্ত লাগল নীহারের৷ পাশে বসে থেকে মাথা ঘুরিয়ে শশীর উদ্দেশ্যে বলল,
” বলেছিলাম শরীর সাস্থ ঠিক করো৷ একটুও জোর বল নেই এই শরীরে৷ এই শরীর নিয়ে নেচে তো ভালোই বেড়াতে পারো তিড়িং বিড়িং করে! তোমার এই অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমি রাতে অশুর হয়েছিলাম!”
শশী কিছুই বলল না৷ সে আগের ন্যায় বিছানায় বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে চলল৷ নীহার ভাবছে কাকে ইনফর্ম করলে ভালো হবে আর সব কিছুর হ্যান্ডেল করে সলিউশন পাওয়া যাবে৷ যদিও ফাস্ট এইড বক্সে নরমাল পেইন কিলার, জ্বরের অ্যান্টিবায়োটিক আছে কিন্তু এতে কাজ হবে বলে মনে হয়না। জ্বর অতিরিক্ত উঠেছে। তাই একবারে ভালো ঔষধ দিয়ে ব্যথা, জ্বর কমানোর কথা ভাবল৷ আজ এভাবে পড়ে থাকলে ব্যাপারটা একদমই খারাপ হবে। ডক্টরের পরামর্শ নিতেই হবে৷ ভালো ঔষধ দিতে হবে। ভাবতে ভাবতে সে আগে শশীকে থামানোর প্রস্তুতি নিল৷ বউটা তার বাচ্চা সাথে অতিরিক্ত নাজুক হারে হারে টের পেয়েছে৷ এরপর থেকে নিজের আরো সাবধান হতে হবে। ভেবেই শশীকে হাত ধরে তুলল। তুলে নিজে আধ শোয়া হয়ে বসে ছিল সেই কোলে বউকে বসিয়ে জড়িয়ে নিল৷ বুকের উপর মাথাটা নিয়ে বাচ্চাদের মতো করে জড়িয়ে ধরল। শশীও চুপটি করে রইল। জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে কী যে করবে মেয়েটাকে নিয়ে! বাড়ি ভর্তি আত্নীয় স্বজন কী ভাববে! লজ্জায় মাথা কাটা যাবে বউয়ের এই অবস্থা টের পেলে। একে যত জলদি সুস্থ করা যায় ততই ভালো। ভেবে বলল,
” খুব ব্যথা করছে! “
” হ্যাঁ “
” জ্বরও ভালোই উঠছে! “
বলে কপালে চুমু দিল। দুইহাতের আঁজলায় নিয়ে আহ্লাদী বাণী ছুড়ল,
” স্যরি পাখি, কেঁদো না”
” উহু, আমিই স্যরি। বউ হিসেবে পারফেক্ট না আমি। আপনার কোনো দোষ নেই। “
নীহার বিদ্যুৎ গতিতে শশীর মুখের দিকে তাকাল। শশী লজ্জা পেয়ে গেল। তবুও বলল,
” আপনি পারফেক্ট স্বামী। সবদিক দিয়ে পারফেক্ট।”
” ইঁচড়েপাকা তো আর স্বাধে বলি নাহ্!! বাচ্চা বউ আমার কী পাকা দেখো!”
শশী মুখ খুলে শব্দহীন হেসে ফেলল। নীহারের বুকে কপাল ঠেকিয়ে দিল। নীহারও ঠোঁট টিপে হাসল। বুকের সাথে চেপে ধরে কল দিল শান্তকে। ওপাশ থেকে রিসিভ করলে সে বলল,
” শা-লা ঘুম তোদের ভাঙেনি! সারারাত কি করছিলি? “
শান্তর কথা এলো,
” শা-লা আমাদের ঘুম ঠিকই ভাঙছে৷ তোরই ভাঙেনি। সারারাত জাইগা তুমি ছিলাও ব্যাটা আমরা নাহ্। এখন উল্টা গলাবাজি রাখ আর বল কী হইছে!”
নীহার এবার শীতল হলো৷ হুমকি দেয়া স্বর করে বলল,
” ম্যাসেজ করছি৷ যা বলব একদম কাঁটায় কাঁটায় করবি নয়তো আজ আমার নতুন জুতোজোড়া ছিঁড়েই ছাড়ব!”
বলেই কল কেটে দিল৷ ম্যাসেজ করে সেন্ড করল। শশী হতবাক হয়ে গেল৷ বলল,
” এসব কী! “
” কি?”
” শান্ত ভাইকে এসব বললেন?”
” নাহ্। শুধু বলেছি শিশিরকে সাথে করে ডক্টরের কাছে যেতে৷ এছাড়া উপায় নেই৷ আমিও এখন বেরোতে পারব না৷ ভাইরা নানান প্রশ্ন করবে বিব্রত হব। লজ্জায় পড়তে হতো পরিবারের সামনে। তাই ওসব ঝামেলায় গেলাম না৷ শিশির সব হ্যান্ডেল করে নেবে ওদিকে৷ ভাই আমার প্রচুর বুদ্ধিমান। ডক্টরের কাছে গিয়ে কল করাবে সরাসরি। ডক্টরকে আমি নিজেই বলব।”
শশীর তবুও লজ্জা লাগছে৷ বলল,
” লজ্জা পাচ্ছি আমি!”
বলেই মুখ ঢেকল বুকে৷ নীহার হেসে বলল,
” তুমি যদি জ্বরে এভাবে আজ পড়ে থাকো এমনিতেও লজ্জায় পড়বে। একটু পর সকলে জেনে যেত, তখন কি করতে? আর পরামর্শ অনুযায়ী ভালো ঔষধ খেলে এক-দুই ঘন্টার মাঝে কমে যাবে সব৷ তাহলে ম্যানেজ করে নিতে পারব বুঝলে? আমি চাইনা আমার বউ গুরুজনদের সামনে লজ্জায় পরুক। শিশির আমার ভাই ঠিকই কিন্তু ওর সাথে আমার বন্ধুর মতোই সম্পর্ক। আর তোমার বড় ভাইও তাই ওকেও সরাসরি কিছু বললাম না৷ এমনি বুঝে নেবে৷ সব দিকেই বিবেচনা করে এটাই ব্যাটার মনে হলো আমার। সো, নরমাল হও। “
শশী মুগ্ধ হলো স্বামীর উপর। কী সুন্দর পরিবার থেকে বউকে প্রটেক্ট করে নিচ্ছে! সত্যি এসবে পরিবারের সামনে লজ্জায় পড়তে হতো৷ নীহার বলল,
” একটু কষ্ট করো একটু পরেই ঔষধ আনবে। আমি ভাবিকে খাবার নিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দেব। সব ম্যানেজ করে নেবে৷”
থেমে শশীর মুখ উঠাল৷ একটু মেকি ঝাঁঝ নিয়ে আবার বলল,
” তোমার চোখ মুখ বসে কী অবস্থা হয়েছে দেখছ? একদিনেই কুপোকাত! জ্বর টর বাঁধিয়ে বসে থাকল৷ আমার ছুটিটায় মাটি করে দিল!”
শশী নীহারের মুখের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে বসে রইল৷ কথায় বলতে পারল না৷ নীহার শশীর দিকে তাকাল৷ বলল,
” কী ওভাবে কি দেখছ? ভুল বলেছি আমি? “
শশী বিরক্ত হয়ে নীহারের বুকে কামড় বসিয়ে দিল৷ বলল,
” হ্যাঁ, ভুলই বলেছেন। ফাজিল পুরুষলোক!”
” বাচ্চা মেয়ের সাহস দেখেছ! “
শশী ভেঙচি কেটে কাঁধে মাথা এলিয়ে দিল৷ নীহারও হেসে জড়িয়ে ধরে রাখল।
‘
সকাল সাতটার দিকে নীহার নিচে নামল। সকলে বসার ঘরেই ছিল৷ বৃষ্টিরা সকলে বসে আছে। শিশির, শান্ত মাত্রই এলো। নীহার বৃষ্টির কাছে গিয়ে বলল,
” ভাবি! “
” হ্যাঁ দেবরজী! “
” উঠে আসো একটু “
বৃষ্টি আসলে জিজ্ঞেস করল ডাকার কারণ। সে বলল,
” একটু উপরে যাও। শশীর জ্বর উঠেছে। শিশির ঔষধ এনেছে ঐ দেখো দাঁড়িয়ে। নিয়ে গিয়ে খাইয়ে দাও। একটু খাবার নিয়ে যাও। ম্যানেজ করো সব৷ “
নীহার কথাগুলো বলতে খুবই বিব্রত হলো৷ ইয়ারকি ফাজলামি চলে কিন্তু এমন কথা একটু বিব্রতই হচ্ছে। যতোই ভাবি হোক! তাদের ভাবির সাথে গভীর ফাজলামোর কোনো সম্পর্ক নেই। যথেষ্ট সম্মান করে সবাই বৃষ্টিকে। এতগুলো দেবরের মাঝে সে-ও বেশ সাচ্ছন্দ্যেই চলাফেরা করে নতুন থেকেই৷ দেবরগুলোও তেমনই৷ এই জন্য নীহার বিব্রতই হচ্ছে। বৃষ্টি বুদ্ধিমতি বীনা কথায় মেনে নিল৷ আর কাউকে কিছু না বলে না বুঝতে দিয়ে নিজেই খাবার নিয়ে শিশিরের থেকে ঔষধ নিয়ে উপরে চলে গেল৷ বাড়ির বড় বউ সে। সব দিকে সামলানোর দায়িত্ব তার এবং এতগুলো বছরে সে শিখেও গেছে তা৷
‘
সকাল দশটার দিকে হৈহল্লা বেঁধে গেল। সকালের খাবার খেয়ে সব কাজে নেমেছে৷ শিশিররা সকলেই ব্যস্ত। বৃষ্টি শশীকে আর এই বেলায় নিচে যেতে দিল না৷ তারা সকলে শশীকে সঙ্গ দিল ওর ঘরে৷ একটু পরেই বিউটিশিয়ান আসবে। শশীকে সাজাতে বসিয়ে তারা গোসল সারবে। তারাও সাজবে৷ এতগুলো মেয়েরা সাজবে লেট হবে। আপাতত ঘরেই কাজ চালাল৷ বৃষ্টিও তেমনটাই জানিয়েছে বলে কেউ আর শশীকে নিচে ডাকেনি।
‘
দুপুর বারটার পর শশীকে সাজানো হয়ে গেছে৷ পরনে তার গোলাপি রঙের ভারী লেহেঙ্গা। ভারী মেকআপ সাথে জুয়েলেরী অসম্ভব সুন্দর লাগছে৷ শশীর পর কুয়াশা সাজছে। বৃষ্টি ছেলেকে তৈরি করতে গেছে৷ বর্ষণকে তৈরি করে সাজবে৷ কুয়াশাও লেহেঙ্গা পরেছে একদম গাঢ় সবুজ রঙের৷ এটা কেনা ছিল তার৷ লেহেঙ্গাটা অসম্ভব সুন্দর। গাঢ় সবুজ লেহেঙ্গা ভারী মেকআপ, সোনার গহনা পুরো অপ্সরা৷ শিশিরের অপ্সরা৷ সাজ হয়ে গেলে সে নিজেদের ঘরের দিকে গেল।
‘
শিশির গোসল করতে ঢুকেছে। পানির শব্দ আসছে৷ তাই সে বসল বিছানায়। কিছুক্ষণ পর শিশির বের হলো৷ বের হয়ে কুয়াশাকে দেখল৷ চোখ জুড়ানো সুন্দরী বউ তার। এমন সুন্দরী বউ থাকতে কী বাহিরের মেয়েদের দিকে তাকানোর প্রয়োজন পড়বে? উহু একদম না! অন্তত তার তো পড়বে না৷ অন্যদের পড়বে কীনা জানা নেই৷ ভেবেই এগিয়ে গেল৷ সামনে দাঁড়িয়ে তার সেই উপমা আওড়াল,
” আমার অপ্সরা আহ্লাদী বউ “
কুয়াশা মিষ্টি হাসল৷ সেজেই সর্বপ্রথম সে স্বামীকে দেখাতে এসেছে৷ বাহিরের পুরুষের সামনে সে যায়নি আগেই৷ তার স্বামীর অধিকার সে। হাসি মুখেই কুয়াশা উঠে দাঁড়াল৷ শিশিরের গায়ে কিছু নেই পরনে শুধু পাঞ্জাবির পাজামা। সেটাও গাঢ় সবুজ৷ আজ তাদের ড্রেসআপ মেসিং হয়ে গেছে৷ কুয়াশা বিছানা থেকে সিম্পল হালকা কাজ করা গাঢ় সবুজ পাঞ্জাবিটা তুলে নিল৷ দুই কদম এগিয়ে স্বামীর সামনে দাঁড়াল। একদম অতি নিকটে। তাকাল শিশিরের দিকে। দু’জনের নজরে নজর বন্দী করা৷ কুয়াশা একহাত শিশিরের কাঁধের উপর দিয়ে স্বামীর অর্ধভেজা নগ্ন লোমশ বুকে চুমু আঁকল ঠোঁটজোড়া দাবিয়ে। শিশির অমায়িক হাসল৷ মুখ তুলে কুয়াশাও অমায়িক হাসল। এরপর হাতের পাঞ্জাবিটা শিশিরকে পরিয়ে দিল নিজেই৷ শিশির নির্বিকার। সে ঠাঁই দাঁড়িয়ে শুধু বউয়ের কাজে সায় দিচ্ছে।
আবার বিছানার উপর থেকে কালো কোটিটা তুলে নিল৷ কোটিটার বোতাম খুলল এরপর শিশিরকে হাত দিতে ইশারা করল৷ বীনা বাক্য বউয়ের থেকে পরে নিল সে৷ কুয়াশা অতি যত্নে এক একটা বোতাম লাগাল পাঞ্জাবির উপরের কালো কোটিটার৷ শেষ করে তাকাল। শিশিরের ভেজা চুলগুলোর মধ্যে হাতের আঙুল গলিয়ে দিয়ে এলোমেলো করল চুল। হাসল দু’জনেই। কুয়াশা এক হাতে লেহেঙ্গা ধরল অন্যহাতে শিশিরের ডান হাতটা। এগিয়ে গেল মিররের সামনে। তাকাল দুইজন পাশাপাশি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়৷ ইশশ কী সুন্দর মানিয়েছে দু’জনকে! পারফেক্ট কাপল। কুয়াশা কালো বেল্টের ঘড়িটা তুলে নিল ড্রেসিংটেবিলের উপর থেকে৷ সেটাও শিশিরের বাম হাতে পরিয়ে দিল৷ চিরুনী নিয়ে শিশিরকে মাথা ঝুঁকাতে ইশারা করল। এবার নিঃশব্দে হেসে ফেলল শিশির৷ ঝুঁকিয়ে দিল মাথা বউয়ের সামনে। কুয়াশা মুচকি হেসে সুন্দর করে চুলগুলো গুছিয়ে আঁচড়িয়ে দিল, শিশিরের হেয়ার স্টাইল অনুযায়ী৷ পারফিউম নিয়ে স্প্রে করল। এরপর তা রেখে মাথা তুলে তাকাল। কুয়াশা তার সুদর্শন স্বামীকে এবার চোখ ভরে দেখল। এরপর জড়িয়ে ধরল দুইহাতে। শিশিরের পিঠের উপর আলতো করে দুই হাত রাখল। বুকে মাথা রেখে বলল,
” আমায় সর্বপ্রথম দেখার একমাত্র অধিকার আমার সুদর্শন স্বামীর তেমনই আমার স্বামীর উপর মুগ্ধ হবার, আকৃষ্ট হবার অধিকারও একমাত্র আমারই। “
তা শুনে শিশির বুক থেকে মুখ তুলল কুয়াশার৷ কপালে চুমু আঁকল। বলল,
” আমার একমাত্র আহ্লাদী বউয়েরই সব অধিকার। আজীবন তা বজায় থাকবে৷ এমন মায়াবিনী বউয়ের উপর থেকে নজর সরাতে আমার ইহজীবন শেষ হয়ে যাবে। পরপারে গিয়েও আমার অপ্সরা আহ্লাদীকে দেখব। “
কুয়াশার চোখ ছলছল করে উঠল। বলল,
” মাথা ঝুঁকাও আবার! “
শিশির মুচকি হেসে ঝুঁকাল৷ সে শিশিরের কপালে চুমু দিল। মুখ তুলে চোখের অতল গহ্বরে চেয়ে বলল,
” আল্লাহ যেন এই ইহজীবনের মতো জান্নাতি সুখ আমায় পরকালেও দেন৷ আমি যেন আমার স্বামীর সাথে পরপারেও এভাবে থাকতে পারি। সেখানেও যেন আমার জান্নাত আমার শান্তির কারণ হয়৷”
কুয়াশার কথায় বুকের কোথাও গিয়ে যেন লাগল তার৷ প্রশান্তিময় হাসল। বুকটা ভরে উঠল৷ ইশশ এত সুখ কোথায় রাখবে সে! এই মেয়েটাকে কখনো এমন ভাবেই নি৷ অপছন্দের জন্য কখনো ভালো গুণ দেখেনি৷ মেয়েটা যে অমায়িক!! পরিবারের একমাত্র মেয়েরা যদি এত এত ভালোবাসা পায় তারা হয় নাদান৷ আর তার বউ দেখো তোহ্ কী বুদ্ধিমতী! আহ্লাদী বাবা, চাচি-চাচুদের, ভাইদের কাছে আহ্লাদী। এখন তার একমাত্র আহ্লাদী। এই মেয়ের সাথে সংসার করতেও তার শান্তি মনে হয়। সারাজীবনেও বোধহয় বিরক্ত আসবে না। আসবে কি করে? মেয়েটা তো সেই সুযোগই দিচ্ছে না৷ তিনটা বছর হতে যাচ্ছে এখনো রোজ রোজ সম্পর্কের নতুনত্ব পায় সে। মেয়েটা রোজ নতুন নতুন অনুভূতির সাথে পরিচয় করায়। কুয়াশা হাসল। এরপর জুতোর র্যাক থেকে শিশিরের জুতো আনল। সামনে লেহেঙ্গা একটু তুল নিয়ে বসল হাঁটু মুড়িয়ে। শিশির হতবাক, অবাক হলো। বিমূঢ় বদনে চেয়ে রইল। একটা জুতো নিয়ে মাথা তুলে বলল,
” পা দাও! “
শিশির তড়াক বলল,
” ওঠ আমি পরে নিচ্ছি! “
” বেশি বলো সবসময়। পা দিতে বলছি দাও! “
বিরক্ত আর জিদ্দি স্বর তার৷ শিশির উপায় না পেয়ে দিল। একে একে দুই পায়েই পরিয়ে দিল এরপর উঠে পড়ল। তাকাল শিশিরের পানে। শিশির অনিমেষ চেয়ে বউয়ের দিকে। এরপর হাত ধরে টেনে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে নিল৷ কুয়াশাও ধরল। হাসল সে। সময় নিয়ে জড়িয়ে নিজের বুকের প্রশান্তি মেটাল৷ বউয়ের উম্মুক্ত কাঁধে চুমু দিল ঠোঁটজোড়া রেখে৷ ছেড়ে দিয়ে উন্মুক্ত বুকে চুমু দিল। এমন লক্ষ্মীমন্ত বউয়ের প্রতি সে আবেগী হয়ে উঠল৷ তাকিয়ে দু’জনেই মুচকি হাসল। শিশির বউয়ের হাত ধরল শক্ত করে আঙুলের মাঝে আঙুল গলিয়ে দিয়ে। এরপর বলল,
” চল!”
বলে পা বাড়াল৷ কুয়াশাও বিনা বাক্যে পায়ে পা মিলাল।
‘
নিচে নামল শিশির কুয়াশা হাত ধরে একসাথে। দুইজনের ড্রেসআপ মিলে যাওয়াতে সকলের চোখে পড়ল। মুগ্ধ হলো উপস্থিতরা৷ জাকিয়া, আজমিরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ দুই জনই অমায়িক হাসলেন৷ কী সুন্দর মানিয়েছে দু’জনকে!! প্রাণ ভরে তাদের ছেলে মেয়েকে দোয়া দিলেন। নীহার, শশীকে আগেই বৃষ্টিরা নামিয়ে এনেছে। সকল আত্নীয়রা চলে এসেছে। নীহারের পরনেও গোলাপি পাঞ্জাবির সাথে কালো কোটি। পুরুষরা একই রকম পরেছে৷
দুপুর তিনটার দিকে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করল। হানিফ সাহেব মেয়ে আর মেয়েজামাইকে নিয়ে যাওয়ার তাড়া দেখালেন৷ সকলেই সম্মতি দিলেন৷ জাকির মালিথা জলদিই বেড়িয়ে পড়তে বললেন। জাকিয়া, আম্বিয়া, আজমিরা নতুন বউমাকে বিদায় দিলেন৷ তিনটার পর ওরা চলে গেল। অনি আর ওর স্বামী চলে গেল। অভিও ওর বউকে নিয়ে চলে গেল৷ রিজভীও স্মৃতিকে নিয়ে চলে গেল। থাকল শুধু আম্বিয়ার বোন, বোনজামাই, অয়ন, ঈশা। ঈশার বাবা, মা চলে গেলেন সকলের থেকে বিদায় নিয়ে৷ সাব্বির, সাবিব আজ থাকবে বড় ফুপুর বাড়ি৷ বিকেল হতে হতে বাড়ি ফাঁকা হয়ে গেল অনেকটা৷
বর্ষণ দুরদুর করে বেড়াচ্ছে বসার ঘরে৷ হিম কোলে তুলে নিল৷ নিয়ে বসল সোফায়৷ চেঞ্জ করতে গেছে সকলে উপরে আর পুচ্চুটাকে নিচে রেখে গেছে৷ জাকিয়ারা অবশ্য দেখছেন বসে৷ সে খেলা করে বেড়াচ্ছে। হিমকে পেয়ে ডাকল,
” তাতু তাতু! ভুমম… “
হিম তা শুনে চুমু দিল গালে৷ নরম তুলতুলে গাল। খেলতে লাগল হিমের সাথে সে।
‘
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমেছে৷ সকলে নামাজ কালাম আদায় করে বসেছে বসার ঘরে। জাকিয়ারা, জাকির মালিথারা বসার ঘরেই৷ অনেকে অবশ্য নেই এখানে৷ ওনারা ক্লান্ত শরীর নিয়ে বসেছেন৷
শিশির গরমে না পেরে গোসলে ঢুকেছে। ঐদিকে ব্যস্ত ছিল কাজ করতে হয়েছে। গা চিপচিপ করছে। সাতটা বাজে। কুয়াশা নিচে থেকে ঘরে এলো। দেখল বিছানায় বসে শিশির চুল মুচছে৷ সে দরজা আঁটকে দিল। শিশিরের সামনে এসে শিশিরের থেকে তোয়ালে নিয়ে পাশে রাখল। শিশির ভ্রু কুঁচকাল কিঞ্চিৎ। তা দেখে আহ্লাদী এবার আহ্লাদের ভোল ধরল। বসে থাকা শিশিরের কোলের উপর চড়ে সামানাসামনি বসল৷ দুই পা শিশিরে দুই পাশে গলিয়ে দিয়ে শিশিরের ঊরুর উপর বসেছে। দুই হাতে পেটের নিচে দিয়ে গলিয়ে পিঠের উপর নিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তৎক্ষনাৎ। স্বামীর কাঁধের উপর মাথা এলিয়ে দিয়ে লেপ্টে রইল চোখ বন্ধ করে বুকের সাথে৷ শিশির পুরোটা ক্ষণ চুপ থেকে আহ্লাদী বউয়ের কার্বার দেখে গেল শুধু৷ এবার সে-ও কুয়াশার পিঠে এক হাত দিয়ে অন্যহাত মাথায় রেখে বলল,
” কি হয়েছে আমার আহ্লাদী বউয়ের? “
” কিছু না “
” কিচ্ছু না? “
” হুঁ “
বলে মাথা তুলল কাঁধ থেকে দু’জনে সামনাসামনি। একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পারছে৷ শিশিরের পা’জোড়া মেঝেতে সেই পা’জোড়ার ঊরুর উপর কুয়াশা বসে। কুয়াশা কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখল শিশিরকে। এরপর শিশিরের মুখটা দুই হাতের আঁজলায় নিয়ে অধর চুম্বন করল। শিশির বুঝল না হলোটা কি আহ্লাদীর? আজ হঠাৎ এত আদর পেল কেন নিজে থেকেই! তবে বউকে সঙ্গ দিল৷ একহাত কোমড়ে দিল অন্যহাত গালের উপর নিল৷ কুয়াশা দুই হাতের আঁজলায় শিশিরের মুখ ধরে রেখেছে৷
কিছুক্ষণ পর কুয়াশা ছাড়ল। শিশির দেখল বউয়ের চোখে পানি টলমল করছে৷ এখনি গড়িয়ে পড়বে। তা দেখে তড়িৎ জিজ্ঞেস করল,
” চোখে পানি কেন তোর? কি হয়েছে? কে কি বলেছে? কি লুকাচ্ছিস? “
” কেউ কিছু বলেনি। এমনি। কে কি বলবে আমায়? আমার স্বামীর প্রতি আমি ক্ষণে ক্ষণে মুগ্ধ হয়৷ সে সবদিক এত সহজে কীকরে সামলে নেয়? “
শিশির ভ্রু কুঁচকাল৷ বউয়ের মুখের এক্সপ্রেশনের সাথে কথার খেই মেলাতে পারছে না৷ তার কাছে কিছু গড়বড় লাগছে৷ মুখের উপর হাত দিয়ে ঠোঁটের পাশে বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে আহ্লাদী বাণী ছুড়ল,
” কি হয়েছে সোনা? বল আমায়! “
” বলছি তো কিছু না!”
ঝাঝ নিয়ে বলে শিশিরের শরীরের পাতলা সাদা টিশার্টের উপরেই মুখ নিয়ে নাক ঘষতে লাগল৷ নাক সহ মুখ ঘষতে লাগল৷ শিশির কথা রেখে নরমাল কথায় এলো। বলল,
” দেখ গোবর ঠাঁসা, মাত্রই গোসল করে আসলাম কিন্তু! “
” তাতে আমার কি? “
নাক ঘষা অবস্থায় উত্তর করল৷ শিশির কুয়াশার চুলের পেছনে মুঠোয় পুরে নিয়ে মাথা উঠাল৷ চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কিছু না তো? “
” না “
” তো আমারও কিছু না৷ “
বলে কুয়াশা ওড়না টেনে খুলে নিয়ে বিছানায় আউড়ে ফেলল কুয়াশাকে। কুয়াশা নির্বিকার৷ তা দেখে শিশির বলল,
” ও… আহ্লাদীর আদর লাগবে? তো এটা মুখে না বলে এত ভাজুংভুজুং করার কি আছে? “
” তুমি যে বুনো ওল একটা তাই৷ আদর দাও জলদি। “
শিশির হেসে ফেলল। এই তার আহ্লাদীর আহ্লাদীপনা। ভালো না বেশে থাকতে পারে!
_____________
পরের দিন নীহার শশীকে নিয়ে চলে এলো বিকেলের দিকে। শশী এসেই আনন্দে ভেঙে পড়ল। কুয়াশাদের সাথে সে পারমান্যান্ট থাকতে পারবে। সকলে মিলে বসার ঘরে আড্ডায় মত্ত হলো৷ পিচ্চি বর্ষণের কথা এবং কাজে হেসেও কুটিকুটি হলো সকলে৷ নীহার, শিশির সময় বুঝে একে অপরকে টিপ্পনী কেটে মজা করল৷ হিম সুযোগ বুঝে বরশিও ফেলল৷ কুয়াশার সাথে অলমোস্ট শিশিরের ঝগড়া, হাতাহাতি তো থাকবেই, সেটার কোনো মাফ নেই৷ তারা বুনো ওল বাঘা তেঁতুল যেখানে থাকবে লড়াই তাদের চলবেই এবং এটা চলেতেই থাকবে।
সন্ধ্যার আগে অয়ন তার মা বাবারা চলে গেল। ঈশাও চলে গেছে। বাড়ি এখন আবার আগের মতো ফাঁকা৷ তুষার রাত দশটার দিকে বিদায় নিয়ে চলে গেল নিজের কর্মস্থলে৷ বৃষ্টির মনটা খারাপ হয়ে গেছে এতে৷ জা’য়েরা মিলে সঙ্গ দিল অনেকটা রাত পর্যন্ত। আড্ডা করে সকলে শুতে চলে গেল৷
| চলবে |
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click