এক মুঠো কাঁচের চুরি
পর্ব ৫০ (অন্তিম পর্ব)
লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
ইফাদ অস্থির হয়ে হসপিটালে,পায়চারি করছে।রোকেয়া বেগম ছেলে’কে শান্ত হতে বলছে।কিন্তু ইফাদে’র অস্থির মনটা’কে কে বোঝাবে।ইফাদ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।তখন-ই কেউ বলে উঠল।
–এত কিসের চিন্তা করছো?
এই সময়ে স্রুতিকে দেখে কিছুটা চমকে উঠল ইফাদ।শান্ত দৃষ্টিতে একবার স্রুতিকে পরখ করে নিয়ে,চোখ নিচে নামিয়ে নিল।স্রুতি আবার বলে উঠল।
–আমি যখন এক্সিডেন্ট করে ছিলাম।তখন তুমি আর তানহা একদিন আমাকে দেখতে এসে ছিলে,এর মধ্যে আর খোঁজ নেওয়া’র প্রয়োজন মনে করলে না।বলল স্রুতি।
–তুমি বিয়ে করেছো?বলল ইফাদ।
–হ্যাঁ বিয়ে করেছি।কি করবো বলো।বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল।বাবা ফাঁসির আদেশ হলো।আম্মু খুব ভেঙে পড়েছিল।বাবার ফাঁসির পরে আম্মু এক মাস ধরে হসপিটালে ভর্তি ছিল।আম্মুর কথা ভেবে বিয়ে করে নিয়েছি।আমার স্বামী এই হসপিটালের-ই ডক্টর।খুব ভালো জানো।আমাকে অনেক ভালোবাসে,আমি তাকে তোমার কথা বলেছি।তোমাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে।কোনো সমস্যা ইফাদ।
–আজকে তানহা’র ডেলিভারি’র তারিখ ছিল।তানহা’কে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।তাই খুব চিন্তা হচ্ছে।বলল ইফাদ।
–তানহা খুব ভাগ্যবতী না চাইতে-ও তোমাকে পেয়ে গেল।আমি এত করে চাইলাম।তবু-ও পাইলাম না।চাইলে-ই কি পেতে হবে।কিছু প্রিয় জিনিস হোক না।অন্য কারো।আমি একা চাইলে তো’ আর হবে না।তোমাকে-ও চাইতে হবে।আমি চেয়েছি।তুমি চাও নাই।তাই হয়তো তোমাকে পাই নাই।আলহামদুলিল্লাহ ভাগ্য করে একটা স্বামী পেয়েছি।অনেক ভালো।বলল স্রুতি।
–আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো থাকুক।এটাই আমি চাই।বলল ইফাদ।
–একি ইফাদ তুমি ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছো?তোমার বউয়ের কিছু হবে না।দেখবে সুস্থ হালে তোমার কাছে ফিরে এসেছে।
–তাই যেনো হয় স্রুতি।
–আচ্ছা আজকে তাহলে আমি আসি।আমার-ও বাবু হবে।পাঁচ মাস চলছে।চেক-আপ করাতে এসে ছিলাম।বলেই স্রুতি চলে গেল।ইফাদ কিছুতেই এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছে না।ছটফট করছে।
প্রেগন্যান্সির রিপোর্টটা হাতে পেয়ে দু-চোখ ভরে এলো চৈতালি’র।খুশিতে দু-চোখ বেয়ে দু’ফোঁটা অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়লো।রিপোর্টটা আলমারিতে রেখে ফাইয়াজ
‘কে ফোন দিল।চৈতালি’কে অস্থির হতে দেখে,অফিসের কাজ ফেলে চিন্তিত হয়ে বাসায় আসলো ফাইয়াজ।চৈতালি’কে কান্না করতে দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল।
–তোমার কি হয়েছে?তুমি কান্না করছো কেনো?আপু তোমাকে কিছু বলেছে?আব্বু তোমাকে কোনো কথা শুনিয়েছে?
চৈতালি দুই পাশে মাথা নাড়ালো।যার অর্থ কেউ তাকে কিছু বলেনি।চৈতালি’কে দু’হাতে আগলে নিয়ে বলল।
–তোমাকে কে কষ্ট দিয়েছে।একবার শুধু তার নাম বলো?
চৈতালি ফাইয়াজে’র থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।তারপরে ফাইয়াজে’র এক হাত চৈতালি’র পেটে ওপরে রেখে বলল।
–ও’ আসার খবর আমাকে খুশিতে কাঁদিয়েছে।ফাইয়াজ ভ্রু কুঁচকে চৈতালি’র দিকে তাকালো।কিছুক্ষণ ভেবে,চৈতালি’র কথা মানে বুঝে,খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠল।
–চৈতালি তুমি সত্যি কথা বলছো?আমি বাবা হতে চলছি।বাবা হবার আনন্দটা এত সুন্দর কেনো?আমার ভেতরে এত একটা সুন্দর অনুভূতি কাজ করছে।যা তোমাকে বলে প্রকাশ করা যাবে না।বলেই চৈতালি’কে নিজের সাথে মিলিয়ে নিল।এই সুন্দর অনুভূতিটা’কে আদরে আদরে ভরিয়ে তুলল।
–আমার তোমার থেকে একটা জিনিস চাই ফাইয়াজ।
–তুমি আমাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার দিয়েছো?আজকে তুমি আমার থেকে যা চাইবে।আমি তোমাকে তাই দিব।
–প্রমিস করছো?
–পাক্কা প্রমিস মেরা বিবিজান”।
–তুমি বাবার সাথে সবকিছু ঠিক করে নাও।বাবা অনেক কষ্ট পায়।বাবা তার ভুল বুঝতে পেরেছে।এই বৃদ্ধ বয়সে ওনাকে আর কষ্ট দিও না।আজকে-ই তোমাদের সব রাগে-অভিমান শেষ করে ফেলবে।তুমি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছো।
চৈতালি’র কথায় ফাইয়াজে’র মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল।মুহূর্তের মধ্যেই মুখটা গম্ভীর করে ফেলল,চৈতালি অসহায় দৃষ্টিতে ফাইয়াজে’র দিকে তাকিয়ে আছে।ফাইয়াজ কিছু একটা ভেবে বলল।
–আমার বউ আমার থেকে কিছু চেয়েছে।আর আমি তাকে সেটা দিব না।তাই কখনো হয়।চলো এখনই বাবার সাথে সবকিছু মিটমাট করে নিব।ফাইয়াজে’র বাবা ড্রয়িং রুমে বসে,খবরের কাগজ পড়ছিলেন।তখনই ফাইয়াজ বাবার পাশে বসলো।মুখটা গম্ভীর করে বলল।
–বুঝলেন চৌধুরী সাহেব,আপনি দিন দিন কেমন জানি, শুকিয়ে যাচ্ছেন।শরীরে শক্তি কমে আসছে।খাওয়া,
দাওয়া ঠিক মতো করেন না।এই শরীর নিয়ে আপনার নাতি-নাতনির পেছনে ছুটবেন কি করে?আমার ছেলে-মেয়েকে কিন্তু আপনাকেই মানুষ করতে হবে।শরীরে শক্তি সঞ্চয় করুন।কিছুটা ভাব নিয়ে বলল।
ফাইয়াজের বাবা খবরের কাগজ রেখে,ছেলের দিকে তাকালো।খুশি হয়ে বলল।
–তুমি সত্যি বলছো ফাইয়াজ?আমি দাদু হয়ে চলেছি।
–জ্বী আব্বু আপনি দাদু হতে চলেছেন।
ফাইয়াজের বাবা চিৎকার দিয়ে উঠল।কি গো’ রাহেলা কে কোথায় আছো।তাড়াতাড়ি ড্রয়িং রুমে আসো।আমাদের বাসায় নতুন মেহমান আসতে চলেছে।চৌধুরী বাড়িতে খুশির রোল পড়ে গেল।ফাইয়াজ তার বাবা বুকে মাথা রেখে কান্না করছে।ফাইয়াজে’র বাবা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
–আচ্ছা বাবা ফাইয়াজ তুমি,সত্যি আমাকে মাফ করে দিয়েছো?
–আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন আব্বু।চৈতালি প্রথম আমার কাছে কিছু চেয়েছে।আমি চৈতালি’র কথা অমান্য করতে পারি নাই।এই ভুলটা আপনি আগে বুঝতে পারলে,হয়তো অকালে দু’টো ফুল ঝরে যেত না।ফাইয়াজে’র বাবার চোখের পানি বলে দিচ্ছে,সে গভীর ভাবি অনুতপ্ত।চোখ দিয়ে চৈতালি’র কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।তিনি চৈতালি’কে বলেছিল।ফাইয়াজ যেনো তাকে মাফ করে দেয়।চৈতালি কিভাবে বলবে।বুঝে উঠতে পারছিল না।অবশেষে আজকে সফল হলো।
বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পেয়ে,ইফাদ উঠে দাঁড়ালো।একটা নার্স এসে ইফাদে’র কোলে,ফুটফুটে কন্যা সন্তান তুলে দিল।ইফাদ অস্থির হয়ে বলল।
–আমার স্ত্রী কেমন আছে?
–আপনার স্ত্রী একদম ভালো আছে।সুস্থ আছে।একটু পরে কেবিনে দেওয়া হবে।তখন দেখা করতে পারবেন।ইফাদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।মনে হলো নিজের জান হাতে পেল।বাচ্চা’কে বুকে জড়িয়ে নিয়ে,আদর করতে লাগলো।
চৈতালিরা সবাই তানহা’র বাচ্চাকে দেখে আসলো।আনন্দে ভরপুর হয়ে উঠল সবার জীবন।
এভাবে ভালো বাসতে বাসতে,পাঁচটা বছর কেটে গেল।আজকে ইফাদে’র মেয়ে ইরার জন্মদিন।সকাল থেকে আব্বু কেক নিয়ে আসো।বলে মাথা খাচ্ছে,আদেরর মেয়ে বলে কথা,ইফাদ একটা কথা-ও বলতে পারছে না।বাবা-মেয়ে’র কান্ড দেখে তানহা হাসছে।সারাদিন প্রশ্ন করে মাথা খায় ইরা।ইফাদ কাউকে একটা ফোন করে কেক দিয়ে যেতে বলল।
–আব্বু ফুপি আসে না কেনো?
–তোমার চৈতন্য ভাইয়া আছে না।চৈতন্য তোমার ফুপিকে খুব জ্বালায়।সেজন্য তোমার ফুপি আসতে পারে না।চৈতন্য হচ্ছে,চৈতালির ছেলে।একটু পরে কেক আসলে ইফাদ,তানহা আর ইরা মিলে কেক কেটে খেয়ে নিল।ইফাদ ইরাকে উদ্দেশ্য করে বলল।
–আম্মাজান গিয়ে দেখে আসুন তো’ আপনার দাদি কি করে?দাদির কিছু লাগবে নাকি।
–আব্বু তুমি একটু অপেক্ষা করো।আমি এখনই গিয়ে দেখে আসছি দাদু কি করে?বলেই ইরা চলে গেল।ইরা চলে যেতেই ইফাদ তানহা’র হাত ধরে নিজের কোলে বসালো।
–কি হচ্ছেটা কি মেয়েটা যেকোনো সময় চলে আসতে পারে।আজকে তুমি কাজে যাবে না।তোমার সাথে আমার কি কথা হয়েছিল।তুমি এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে।
–আমি ভুলি নাই।আমার মনে আছে।বাহিরে গেলে নিয়ে এসে দিব।আজকে আমার কাজে যেতে ইচ্ছে করছে না তানহা।আজকে কাজে না গেলে হয় না।আজকে সারাদিন তোমার সাথে থাকবো।
–আমার তো আর কাজ নেই।আমি সারাদিন তোমার সাথে বসে থাকবো।ভদ্রলোকের মতো কাজে যাও।আমি দোকানে গেলাম।
–আমি রেডি হওয়া পর্যন্ত অনন্ত থাকো।তানহা হেসে ফেলল।এক বাচ্চার বাবা হয়ে গিয়েছে।তবু-ও তার আবদারের শেষ নেই।ইফাদ তৈরি হচ্ছে,তানহা গভীর ভাবে ইফাদে’র দিকে তাকিয়ে আছে।ইফাদ আয়নার মধ্যে থেকে তানহা’কে দেখছে।মেয়েটা এভাবে কি দেখছে।আগে কখনো এভাবে তাকে দেখেনি।ইফাদ রেডি হয়ে তানহা’র সামনে আসলো।চলো বলেই সামনের দিকে হাঁটা শুরু করল।তানহা উঠে ইফাদে’র পিছু পিছু যেতে লাগলো।ইফাদ হঠাৎ করে সামনের দিকে ঘুরে তানহা’কে জড়িয়ে ধরলো।করুন কণ্ঠে বলল।
–আমার তোমাকে রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না তানহা।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে,মনে হচ্ছে আমি বিশাল কিছু হায়িরে ফেলতে চলেছি।ইফদের করুন কণ্ঠ শুনে তানহা ইফাদ’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।একটু পরে দু’জন দু’জনকে ছেড়ে দিল।ইফাদ তানহা’র কপালে অধর ছুঁইয়ে দিয়ে চলে গেল।ইরা এসে বলল।
–আম্মু আব্বু কোথায় গেল।আব্বু আজকে-ও আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল।আজকে বাসায় আসলে আমি আব্বুর সাথে একটা কথা-ও বলবো না।বলেই মন খারাপ করল ইরা।তানহা মেয়েকে কোলে নিয়ে বোঝালো।তারপরে মেয়ে’কে নিয়ে দোকানে চলে গেল।
তানহা দোকানে কাজ করছে ইরা পুরো দোকান জুড়ে খেলা করছে।দুপুর হয়ে এলো।এতক্ষণে ইফাদে’র চলে আসার কথা।তানহা ইফাদ’কে ফোন দিল।
–তুমি কি চুড়ি নিয়ে আসতে গিয়ে হারিয়ে গেলে।
–এই তো আসছি।গাড়ি খুঁজছি।পেলেই বাসায় চলে যাব।আর একটু অপেক্ষা কর বউজান’।তানহা হেসে ফোনটা রেখে দিল।তানহা ফোনে কথায় বলায় ব্যস্ত ছিল।এদিকে ইরা যে,কখন বের হয়ে রাস্তায় মাঝখানে চলে গিয়েছে।সেদিকে তানহা’র খেয়ালই নেই।খেয়াল হতেই দেখলো মেয়েটা রাস্তার মাঝখানে চলে গিয়েছে প্রচুর গাড়ি চলছে।তানহা দৌড়ে বাহিরে গেল।সে,এতটা খামখেয়ালি হলো কি করে।ভেবেই নিজের ওপরে নিজেই বিরক্ত হলো তানহা।ইরা একটা শালিক পাখি ধরার জন্য রাস্তার মাঝখানে চলে গিয়েছে।একটা ট্রাক দ্রুত গতিতে ইরার দিয়ে এগিয়ে আসছে।তা’ দেখে তানহা’র চোখ বড় বড় হয়ে গেল।দূর থেকে হাত নাড়াতে নাড়াতে ইরার কাছে যাচ্ছে তানহা।কিন্তু গাড়ি আলা কিছুতেই গাড়ি থামাচ্ছে না।গাড়িটা ইরার অতি নিকটে চলে এসেছে।তানহা দৌড়ে ইরাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।কিন্তু নিজের সরে যাওয়া’র সময় পেল না।মাটিতে লুটিয়ে পড়লো তানহা’র নিথর দেহটা।মুহুর্তের মধ্যেই রক্তে ভেসে যাচ্ছে কালো রংয়ের পিচ ঢালাই করা রাস্তাটা।আশেপাশে লোকজন জমা হয়ে গেল।ইরা চিৎকার করে কান্না করতে শুরু করল।সমস্ত গাড়ি চলাচল থেমে গেল।ট্রাক ড্রাইভার’কে আটকে রাখা হয়েছে।চিৎকার চেচামেচি শুনে,রোকেয়া বেগম বের হয়ে আসলো।তানহা’কে রাস্তার মাঝখানে পড়ে থাকতে দেখে দৌড়ে গেল।রোকেয়া বেগম’কে দেখে বলল।
–আম্মা আমার ইরাকে একটু দেখবেন।মেয়েটা কোথাও ব্যথা পেল কি না।বলল তানহা।
ইফাদ হাতে চুড়ি নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো।গাড়ির ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে মা’কে মাঝ রাস্তায় বসে থাকতে দেখে,ভির ঠেলে ভেতরে গেল।তানহা’কে এভাবে বিধস্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ইফাদে’র কলিজা কেঁপে উঠল।দৌড়ে গিয়ে কোনো কথা না বলে,তানহা’কে কোলে তুলে নিল।কোনো কথা না বলে,একটা গাড়িতে তুলে,হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়া দিল।রোকেয়া বেগম ইরাকে নিয়ে বাসার মধ্যে গেল।বাসায় তালা দিয়ে,উনি হসপিটালে যাবেন।ইরা এখনো কান্না করছে।তানহা গাড়ির মধ্যে বলেছিল।আমার মেয়ে ঠিক আছে তো’ ইফাদ।ইফাদ তানহা’কে জড়িয়ে ধরে বলেছিল।আমাদের মেয়ে ঠিক আছে।তুমি চিন্তা করো না।তুমি-ও ঠিক হয়ে যাবে।তারপরে তানহা সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিল।
প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে জুরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে ইফাদ।শরীরটা তরতর করে ঘামছে।মনে মনে আল্লাহ
‘কে প্রচুর ডাকছে।রোকেয়া বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে।প্রতিবার শান্ত হতে পরালে-ও,এবার শান্ত হতে ব্যর্থ হচ্ছে ইফাদ।ইরা বাবার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল।
–বাবা তুমি কান্না করো না।আম্মুর কিছু হবে না।আম্মু ঠিক হয়ে যাবে।ইফাদ নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো।দুই ঘন্টা পরে ডক্টর বেড়িয়ে আসলো।ইফাদ অস্থির হয়ে ডক্টরের দিকে ছুটে গেল।
–ডক্টর আমার স্ত্রী কেমন আছে।ঠিক আছে তো’।এত সময় নিয়ে কি করলেন।ইফাদে’র কথা শুনে ডক্টরের মুখটা মলিন হয়ে গেল।মলিন মুখে বলল।
–আই এমন স্যরি ইফাদ।অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে,আমরা আপনার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারি নাই।সি ইজ নো মোর।আপনার স্ত্রী দশ মিনিট আগে মারা গিয়েছে।আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে ছিলাম।কিন্তু আমরা ব্যর্থ হয়েছি।ডক্টরের কথা শেষ হবার সাথে সাথে ইফাদ ডক্টরের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।ডক্টরের কলার চেপে ধরে বলল।
–আমার জীবিত বউকে নিয়ে গিয়ে,মৃত বলছেন।টাকার জন্য এমন করছেন তাই না।আপনাদের কত টাকা লাগবে।নিজের রক্ত বিক্রি করে হলে-ও আপনাদের টাকা দিব।আমার বউকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দিন।ইফাদের কথা শেষ হবার আগে।সাদা কাপড়ে ঢেকে রাখা তানহা’র লাশটা ইফাদে’র সামনে রাখলো।একটা নার্স এসে,তানহা’র মুখের কাপড় তুলে দিল।তানহা’র মলিন মুখখানা দেখে ইফাদ সাথে সাথে সেন্সলেস হয়ে গেল।ডক্টররা ইফাদ’কে একটা বেডে শুইয়ে দিল।ইরা মা মা করে কান্না করছে।রোকেয়া বেগমে’র চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
তানহা’র লাশ বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে।গোসল করিয়ে,সাদা কাফনে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে,তানহা’র লাশটা।চৈতালি কান্না ভেঙে পড়েছে।ইফাদ এখনো সেন্সলেস হয়ে আছে।ফাইয়াজ গাড়ি করে ইফাদ’কে বাসায় নিয়ে এসেছে।ইফাদে জ্ঞান আসতেই ইফাদ ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।হাতে স্যালাইন থাকায়।হাতে ব্যথা অনুভব করল ইফাদ।আস্তে করে স্যালাইন খুলল খুলে,বাহিরে আসলো।একদল মেয়ে তানহা’র লাশটা ‘কে ঘিরে রেখেছে।ছেলেদের কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।ইফাদ কোনো কথা না বলে,দৌড়ে লাশের কাছে চলে গেল।পাগলের মতো কান্না করতে করতে বলল।
–এমন তো’ হবার কথা ছিল না।তুমি বলেছিলে,বাঁচলে একসাথে বাঁচবো।মরলে এক সাথে মরবো।তাহলে আমাকে একা করে দিয়ে কেনো চলে যাচ্ছো?আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিব না।তোমাকে ছাড়া আমি থাকবো কি করে?যাবার আগে এটা আমাকে বলে যাও তানহা।এতটা পাষাণ তুমি হইয়ো না।আমি সহ্য করতে পারবো না।
সবাই মিলের বহু কষ্ট ইফাদ’কে তুলে গোসল করিয়ে তানহা’র জানাজায় নিয়ে গিয়েছিল।জানাজা শেষ করে ইফাদ আর ফাইয়াজ বাসায় চলে আসলো।ইফাদ পাথরের মতো হয়ে গিয়েছে।কোনো কথা বলছে না।দু-চোখ বেয়ে অশ্রু কণা গুলো গড়িয়ে পড়ছে।নিজের রুমে আসতেই ভেতরটা হাহাকারে ভরে গেল।এই রুমটায় অন্য দিন তানহা থাকতো।আজ কেনো নেই।সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।বাঁচতে ইচ্ছে করছে না ইফাদে’র তানহা’র শাড়ি বুকে নিয়ে বিছানায় টান হয়ে শুইয়ে পড়লো।রোকেয়া বেগম ছেলের কাছে আসলো।ছেলের মাথায় হাত রাখলো।ইফাদ বলে উঠল।
–আমাকে কেনো বিয়ে করালে আম্মু।আমি একা ছিলাম।বেশ ছিলাম।কাউকে না পাওয়ার যন্ত্রনায় ছটফট করতে হতো না।তানহা বেইমান আম্মু।তানহা আমাকে ঠকিয়েছে।তোমাকে আমি বলে ছিলাম না আম্মু।মেয়ে মানুষ গুলো ভালো হয় না।এরা সারাজীবন পাশে থাকতে জানে না।এরা ভালোবেসে পালিয়ে যেতে জানে আম্মু।আমি আর থাকতে পারছি না আম্মু।আমাকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলো।এই মৃত্যু যন্ত্রনা আমি সহ্য করতে পারছি না।আমি তানহা’কে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।আমার কাছে তানহা’কে এনে দাও।না হলে বিষ দিয়ে মেরে ফেলো।তানহা কি জানে না।ওকে ছাড়া দম নিতে-ও আমার কষ্ট হয়।আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছে কেনো।এতটা পাষাণ কি করে হয়ে গেল।বলেই কান্না করতে শুরু করল।
ছেলের করুন অবস্থা দেখে রোকেয়া বেগমে’র আত্মা কেঁপে উঠল।ছেলের একি ভয়াবহ রুপ।মা হয়ে সহ্য করাটা কষ্টকর।চৈতালি’কে দেখেই ইফাদ রেগে গেল।
–তুই কেনো এসেছিস।খুব খুশি হয়েছিস।তুই তানহা’কে অনেক কষ্ট দিয়েছিস।আমাকে বলেছিলি।আমার বউ আমাকে অনেক কষ্ট দিবে।তোর কথা সত্যি হয়েছে।আম্মু এই মেয়েকে আমার বাসা থেকে বেড়িয়ে যেতে বলো।আমি এই মেয়েকে খুন করে ফেলবো।ফাইয়াজ চৈতালি’কে সরিয়ে নিয়ে গেল।
–তুমি এখন ভাইয়ার সামনে যেও না।ভাবির মৃত্যুটা ভাইয়া মেনে নিতে পারে নাই।তাই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে।চৈতালি ফাইয়াজ জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।ফাইয়াজ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
তানহা চলে গিয়েছে আজ এক বছর পূর্ণ হলো।কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না।সবাই আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।শুধু স্বাভাবিক হতে পারে নাই ইফাদ।তানহা’কে হারনোর পরে শারীরিক ভাবে আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারে নাই।পাগল হয়ে গিয়ে ইফাদ।ইফাদ’কে রুমে আঁটকে রাখা হয়।সুযোগ পেলে তানহা’র কবরের কাছে চলে যায়।একদিন রাত তিনটার সময় তানহা’র কবরের পাশে গিয়ে শুইয়েছিল।রোকেয়া বেগম আজকে নিজ থেকে ইফাদ’কে তানহা’র কাছে নিয়ে যাবে।রুমে দরজা খুলে দিল।বাহিরের আলো চোখে পড়তেই দু-চোখ বন্ধ করে নিল।শ্যাম বর্ণের পুরুষটা আর শ্যামপুরুষ নেই।শরীরে কালচে ভাব চলে এসেছে।চুলগুলো বড় বড় হয়ে গিয়েছে।সাড়া মুখ দাঁড়িয়ে গজিয়েছে।রোকেয়া বেগম ছেলেকে পরিপাটি করে দিল।তানহা’র কাছে যাবে।কথাটা শোনা মাত্রই ইফাদ মায়ের সকল কথা শুনলো।
একা হাতে #এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইফাদ।কিছুক্ষন কবরের দিকে তাকিয়ে থেকে,কান্না ভেঙে পড়লো।
–আমার ওপরে তোমার বড্ড অভিমান হয়েছে।তাই আমাকে একা করে চলে গেলে।তানহা ফিরে এসো না।আর কখনো তোমার কথা অমান্য করবো না।কোনো আক্ষেপ রাখতে দিব না।তোমাকে ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারছি না।আমাকে একা রেখে চলে যাওয়ার কথা ছিল না।তবে কেনো একা রেখে চলে গেলে।কেনো তোমার সাথে নিয়ে গেলে না।বলতে বলতে তানহার করব দু’হাতে আঁকড়ে ধরলো।তানহা উঠো না।এই দেখো তুমি আমার থেকে চুড়ি চেয়েছিলে না।আমি নিয়ে এসেছি তো’।
#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি।
(সমাপ্ত)
(আসসালামু আলাইকুম।দীর্ঘ দুই মাস সময় নিয়ে গল্প লিখেছি।ভালো মন্দ সব কিছু শুনেছি।এতদিনের যাত্রা এখানেই শেষ হলো।গল্পটা যেমন ভাবে ভাবা ছিল।ঠিক তেমন ভাবেই শেষ করেছি।আমি নিজের সক্রিয়তা বজায় রাখতে ভালোবাসি।আজকে অনন্ত সবার রেসপন্স আশা করছি।সবাই ভালো থাকবেন।নিজের খেয়াল রাখবেন।খুব তাড়াতাড়ি নতুন গল্প নিয়ে হাজির হব।আল্লাহ হাফেজ।)