কিভাবে সংসারকে সুন্দর করবেন??
স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা যত বেশি গভীর হবে ততো বেশি সাওয়াব হবে, অন্তরে প্রশান্তি আসবে।শয়তানের প্রথম এবং প্রধান চ্যালেন্জ থাকে কিভাবে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া,বিবাদ-বিচ্ছেদ ঘটানো যায়।
শয়তান অনেক চেষ্টা সাধনা করে যায়,সুখী দম্পতির পিছে লেগে থাকে। হয়তো একসময় সফলও হয়ে যায়। এর থেকে বাঁচার জন্য দোআ করার কোন বিকল্প নেই।
আল্লাহ তাআ’লা সূরা ফুরকানের এর শেষ আয়াতের ওসিলায় আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে চক্ষু শীতলকারী নারীর জন্য আল্লাহর কাছে দোআ করতে পারি।চক্ষু শীতল হয় নারীর চেহারার সৌন্দর্যে এবং উত্তম আখলাকে।
স্ত্রীর অনুপ্রেরণা ছাড়া স্বামীর উন্নতি করা অনেক কষ্ট সাধ্য বিষয়, স্ত্রীর সাথে কলহ বিবাদ করে কোন পুরুষ সুখি হতে পারেনা।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবুয়াতের আগে ও পরে কত সুন্দর করে উৎসাহ উদ্দীপনা যুগিয়ে এসেছিলেন মা খাদিজা রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহা। এটা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
স্ত্রীরা শিক্ষা নিবেন কিভাবে স্বামীর ভরসার জায়গা হওয়া যায়। ভাইয়েরা দেখবেন কিভাবে স্ত্রীর সাথে মাশোয়ারা করলে জীবনটা সহজ হয়ে যায়।
লাভ ল্যাংগুয়েজ ( love language) পাঁচ টি।
১)Physical expression বাহ্যিক ভঙ্গিমা।
২) পরস্পরের কাজে সহযোগিতা
৩) উপহার
৪)স্বামী স্ত্রী পরস্পর কে সময় দেওয়া
৫) ফিজিক্যাল কন্ট্যাক্ট
ও সাংকেতিক ভাষা।
Physical Expression:-
কেউ কাউকে ভালোবাসলে তার স্পষ্ট ছাপ চোখে মুখে ভেসে ওঠে।
নারীর শরীরের বিভিন্ন ভঙ্গিমার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার লাজুকতা।এটা সৌন্দর্য কে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। যে নারীর লাজুকতা নেই তার উদাহরণ হলো লবণহীন তরকারির মতো।
স্ত্রী তার ফিজিকাল এক্সপ্রেশনের মাধ্যমে স্বামী কে কাছে টেনে নিবে,স্বামী না এসে আর পারবেই না।অনুরূপ স্বামী ও ইশারা ইঙ্গিতে স্ত্রী কে সময় অসময়ে এমনভাবে কাছে টেনে নিবে যেন স্ত্রী তার ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতেই পারবেনা।জোর করে না টেনে আকর্ষন দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে মন জয় করে কাছে পাওয়াতেই চরম সার্থকতা।আর স্বামী স্ত্রীর অটুট সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা বড় ধরনের চ্যালেন্জ।
সহযোগিতাঃ-
স্ত্রী স্বামীর কাজে সহযোগিতা করবে আর স্বামী শতব্যস্ততার মাঝেও সাংসারিক কাজে স্ত্রীর হাতের কাজ এগিয়ে দিবে। না পারলে তার কাজে বেশি বেশি প্রশংসা করে অনুপ্রেরণা দিবে।
এতে দুজনের মহব্বত বাড়বে, সংসারে রহমত আসবে এবং যৌনজীবনেও ইনশাআল্লাহ্ পূর্নতা আসবে। যদি ও এটা কম লোক ই উপলব্ধি করতে পারে।
প্রিয় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বাসায় থাকতেন স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। আর স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করা সুন্নত,এতে সাংসারিক বরকত আসবে যা ভবিষ্যতে সন্তানদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করবে।
অনেকভাবেই দুইজন দুজনকে সহযোগিতা করা যায়, স্বামী স্ত্রী মানে শুধু যৌন মিলন উপভোগ নয়।এটার সৌন্দর্য নির্ভর করছে দুইজনের আন্তরিকতায়।
যতটা সম্ভব পরস্পরকে ছাড় দিতে হবে। কেউ ভূল করলে উত্তমভাবে শুধরে দিন,ইবাদত বন্দেগীতে মনোযোগ দিন,।আল্লাহকে অনেক অনেক ভালো বাসুন।ফরজ, সুন্নত উত্তমরুপে আদায় করে বেশি বেশি নফল আদায় করতে পারলে বোনাস হিসাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ পাবেন।এর থেকে দামি কিছুই নাই,।যদিও এখন বুঝে আসেনা।কিছুটা নৈকট্য লাভের আভাস যদি পান,তার সুবাতাস আপনি যদি একটুও পান, আশেপাশের মানুষ ও সুঘ্রান পাবে।এযেন অন্য রকম এক খুশবু,যা জান্নাত থেকে নেমে আসা এক নিয়ামত।
উপহার বা হাদিয়াঃ-
কে না চায়? উপহার পেলে মন খুশি হয়।যদিও হাদিয়া বা উপহার সামান্য কিছু, মূল বিষয় তো মহব্বত।যে ব্যক্তির অনেক কিছু আছে কোন কিছুর ই অভাব নাই,সেও যদি অতি ক্ষুদ্র সামান্য হাদিয়া, কোন সন্দেহ নাই যে খুশি হবে।
হাদিয়া আদান প্রদান সুন্নাত৷ পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা দূর করে,হিংসা কমে যাবে,সবকিছুই বরকত আসবে। স্ত্রীদের কে মাঝে মাঝে ফুল,চকলেট দিতে পারেন,আর সামর্থের মধ্যেই কিছু সারপ্রাইজড দিন।চাওয়ার আগেই সামনে আনুন,অন্যরকম অনুভূতি কাজ করবে।আর বই পড়ার অভ্যাস থাকলে সুন্দর সুন্দর বই উপহার দিতে পারেন,অভ্যাস না থাকলে অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা করুন।
সবচেয়ে বড় উপহার আয়াত মুখস্ত।কোরআনের আয়াত মুখস্ত করতে একে অপরকে সহযোগিতা করুন। এক এক টা আয়াত মুখস্ত থাকলে জান্নাতে এক এক তলার প্রাসাদের মালিক হবেন,যত মুখস্থ তত তলা। সুবহানাল্লাহ্!!!!
সময় ভাগাভাগি করে নেয়াঃ-
পরস্পরকে সময় দিতে হবে।মাঝে মাঝে ব্যস্ত জীবন ছেড়ে নিরিবিলি পরিবেশে ঘুরে আসুন। সংসারের একঘেয়েমি দূর হয়ে মনটা ফ্রেশ হয়ে যাবে।
স্ত্রীর সাথে খেলা করাও সুন্নত।এতে স্ত্রীর মন ভালো থাকবে,আর স্ত্রী ভাল থাকলে আপনার ই সুবিধা। সময় দিতে না পারলে বুঝিয়ে বলুন, কথা দিন খুব তাড়াতাড়ি আপনার নিয়ত আছে ঘুরতে যাওয়ার।
সবথেকে উত্তম আল্লাহর রাস্তায় সফর করা,এতে করে স্বামী স্ত্রীর মাঝে শ্রদ্ধাবোধ,আন্তরিকতা,মেনে চলার গুন আসবে,যা সংসার জীবনের সুখ বয়ে আনবে।
শারীরিক যোগাযোগ / সাংকেতিক ভাষাঃ-
স্ত্রীর সাথে সাংকেতিক ভাষায় কথা বলুন,যা শুধু স্বামী স্ত্রীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এমনভাবে কথা বলুন অনেক লোকজন থাকলেও কেউ যেন না বুঝে,শুধু আপনারাই বুঝবেন। কখনো কারো ইচ্ছা না করলেও স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যার ই ইচ্ছে হোক,তাকে সাড়া দিতে হবে।এটা পরস্পরের হক্ব যা অনেক গোনাহ থেকে হিফাজত করবে ইনশাআল্লাহ্।।মাঝে জড়িয়ে ধরা,কপালে ছোট চুম্বন,শক্ত করে হাত ধরে রাখা এগুলো সম্পর্কে দৃঢ় মজবুত করে।
সবশেষে সংসার জীবন সুখের হতে হলে আমল বাড়িয়ে দিতে হবে,রবের থেকে কেঁদে কেঁদে চেয়ে নিতে হবে। প্রতিদিনের আমল চালিয়ে নিতে হবে।