দেহ পর্ব ৬
লেখক:মো.নীল চৌধুরী
-এমনটা হলে আমাদের পথে বসা ছাড়া উপায় নেই
-আন্টি এসব কিছুই হবে না,দোয়া করবেন যাতে আল্লাহ সহায় থাকে
-ফি আমানিল্লাহ।
-আচ্ছা আন্টি আজকে তাহলে যাই
-আবার আইসো কেমন?
-হ্যা আসবো বলে অনি আর জান্নাত গাড়ি করে অফিসের দিকে রওনা দেয়।
-তোমাদের পরিবারের সবাই অনেক ভালো
-ধন্যবাদ স্যার
-এত স্যার স্যার করো কেন?
-স্যারকে স্যার বলবো না তো কি বলবো?
-না কিছু না
-সত্যি করে একটা কথা বলবেন?
-আল্লাহরে ছাড়াকে কাউকে ভয় পাই না তাই কারোর কাছে মিথ্যা বলা লাগে না
-আচ্ছা আমার জায়গায় যদি কোন ছেলে মানুষ এমন একটা বিপদে পরতো তাহলে তাকেও কি এমন হেল্প করতেন?
-মা-বাবা শিক্ষা দিয়েছে যাতে সবার বিপদে এগিয়ে যাই। বিপদে পরা মানুষ টা ছেলে না মেয়ে এসবের হিসাব করে সাহায্য করার মত মানুষ আমি না। আমি আমার জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব ততটুকু করার চেষ্টা করতাম
-আপনার মত মানুষ আমি আগে আর কখনো দেখিনি তাই মাঝেমধ্যে মনে হয় আমি বুঝি স্বপ্নঘোরে আছি
-হাহাহা এতটা গুণ গাওয়া লাগবে না, আমি এত ভালো মানুষ না
-কে বলছে ভালো না?
-আমি
-আমার কাছে আপনি মানুষরূপী ফেরেশতা, আপনার সাথে সেদিন পরিচিত না হলে আমাকে আজও মুখে মুখোশ লাগিয়ে ৫০০টাকার জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে দেহব্যবসা করতে হতো
-একদিন বলেছিলাম এসব নিয়ে কথা না বলতে
-অতীত যে আমাকে বারবার হানা দেয়
-মেয়েদের জীবনে কোন অতীত থাকতে নেই, আছে শুধু বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। এই দুইটা নিয়েই ভাবো।
-হু
অনি এতক্ষণ সামনে তাকিয়ে কথা বললেও গাড়ি স্লো করে জান্নাতের দিকে তাকাতেই দেখে জান্নাতের গাল বেয়ে চোখেরজল গড়িয়ে পরছে
-কান্না করছো কেন?
-কান্না করতে ভালো লাগছে
-কান্না করতে কারোর ভালো জীবনে এই প্রথমবার শোনলাম
-অসহায় মানুষদের এমন আরো অনেক অভ্যাস আছে যেটা শুনে আপনাদের ক্লাসের মানুষরা অবাক হবেন-ই।
অনি তখন গাড়ি একপাশে ব্রেক করে টিস্যুর বক্সটা এগিয়ে দিয়ে “কাজল লেপ্টে আছে,ঠিক করে নাও”
জান্নাত তখন একের পর এক টিস্যু ইউজ করতে থাকে।
-এদিকটা কাজল লেগে কালো হয়ে আছে
-কোন দিকটা?
অনি তখন হাতে একটা টিস্যু নিয়ে জান্নাতের দিকে হেলে থুতুনিতে হাত দিয়ে কাজলে লেপ্টে যাওয়া গাল ক্লিন করে দিতে থাকে। অনির এমন বিহেভিয়ারে জান্নাত অনির দিকে অবাকচোখে তাকিয়ে থাকে।
-হ্যা এখন ঠিক হয়েছে
– তিনটায় আপনার মিটিং আছে, এখন অলরেডি ২:৫০ বাজে
-এভাবে বাচ্চাদের মত কান্না করতে হয়?
-আচ্ছা আর হবে না, এখন চলেন
-হুম মনে থাকে যেন
-থাকবে
দিন গিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে,সন্ধ্যা সাতটার দিকে অনি বাসায় ফেরার পরে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সিমি ল্যাপটপ হাতাচ্ছে।
-কি হচ্ছে এসব?
-কিছু না
-কিছু না মানে? ল্যাপটপ হাতাচ্ছিস কেন?
-ল্যাপটপে হাত দিতেই এমন বিহেভ? কয়দিন পরে যে বুকে মাথা রেখে শরীর হাতাবো তখন কি করবা?
-তুই এত বেহায়া কেন? এসব কি বলিস? আমি না তোর বড় ভাই
-কে বলছে তুমি আমার ভাই? তুমি আমার ভাই না
-তাহলে এতদিন ভাই বলে ডাকতি কেন?
-ডো ইউ নো? মোস্ট অফ দ্য রিলেশন যে ভাইয়া ডাক থেকে শুরু হয়
-যাহ ভাগ এখান থেকে
-না যাবো না
-যেতে বলছি যা
-না গেলে কি করবা?
-আশ্চর্য আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো
-আমার সামনে করলে কি সমস্যা? কয়দিন পরে তো দুজন একইসাথে গোসল করতে যাব বলে একটা পেত্নি মার্কা হাসি দেয়
-তুই এখান থেকে যাবি নাকি আমিই চলে যাব?
-ওকে ওকে যাচ্ছি বলে মুখ ভেংচি কেটে চলে যায়।
দশটার দিকে সানির নাম্বার থেকে ফোন আসলে
-হ্যা দোস্ত বল
-তুই দেখছি ব্যবসায় লেগে গেছিস
-কি আর করবো? শেষ পর্যন্ত তো এটাই করা লাগবে
-যাক এতদিনে তাহলে বুঝতে পারছিস
-হুম
-আচ্ছা আমি তোর বাসার নিচে আছি,নাম তুই
-হঠাৎ? কোন সমস্যা হয়েছে নাকি?
-আরে না, আয় তো একটু
-ওকে ওয়েট বলে টি শার্ট টা হাতে নিয়ে পরতে পরতে বেড় হতে যাবে এমন সময় মা ডাক দিয়ে বলে “কিরে কোথায় যাচ্ছিস?”
-সানি নিচে দাঁড়িয়ে আছে
-তারাতারা এসে পরিস
-আচ্ছা
-কিরে দোস্ত এমন সময় আমার বাসার নিচে?
-হিয়া আসছিলো
-কেন?
-ব্যাক করতে চায়
-তাই নাকি?
-তোর নতুন নাম্বার চেয়েছে, আমি এড়িয়ে গেছি
-ভালো করেছিস
-মেয়েটা মনে হয় সত্যিই তোকে ভালোবাসে
-বাহ তোর হঠাৎ এটা মনে হওয়ার কারণ?
-না হয় হাত পা ধরে আমাকে রিকুয়েস্ট করতো না
-ওর মনে হয় টাকার দরকার তাই তোর কাছে এসে এত রিকুয়েস্ট করছে
-বিষয়টা ভেবে দেখ
-ধুররর বেটা কি ভাববো? যে মেয়ে প্রেমের নামে ব্যবসা করে তাকে নিয়ে ভাববো?
-হয়তো ভুল করেছে
-আমি নিজে ওর চ্যাট হিস্টোরি দেখেছি,নিজ চোখে আরেকজনের সাথে ১৮+ চ্যাট করতে দেখেছি আর তুই সেই মেয়ের জন্য রিকুয়েস্ট করতে আসছিস?
-ও এসে আমার কাছে হাত জোর করে বলল যাতে তোকে বলি
-যারা মন নিয়ে খেলা করে তারা হায়নার চেয়েও হিংস্র
-আচ্ছা হিয়া যদি আবার আমার কাছে আসে তাহলে কি বলবো যে তুই ফিরতে রাজি নয় তা বলবো?
-হ্যা সাথে বলে দিবি অনির বিয়ে সামনের সপ্তাহেই
-কিহহহ?
-হ্যা
-বিয়ে করবি অথচ আমরা কেউ জানিনা?
-সময়মত জানবি, এখন জামাল মামার দোকানে চল চা সিগারেট খেয়ে আসি
-হুমম চল
বারোটার দিকে বাসায় ফিরলে
-কিরে তুই না বলে তাড়াতাড়ি এসে পরিস?
-অনেকদিন পরে একটু আড্ডা দিয়েছি
-আচ্ছা আয় খাবি
-হুম চলো
খাওয়াদাওয়া করার পরে রুমে যেতেই দেখে সিমি খাটে পা হেলিয়ে বসে আছে।
-মেয়েদের মত খাও কেন? খেতে এতক্ষণ লাগে নাকি?
-এতকিছু তোর জানা লাগবে না
-বউকে অলওয়েজ তুইতোকারি করো কেন? একটু ভারী কন্ঠে কথাটি বলে
-তোকে যে এতবার বলি তুই কি বুঝিস না যে তোকে আমার বিয়ে করার ইচ্ছা নাই
-কেন আমি কি সুন্দর না নাকি? তুমি জানো আমি কতজনের প্রপোজ পেয়েছি
-ওদের থেকে বাছাই করে একটা বানিয়ে নে
-নাহ আমার তোমাকেই ভালো লাগে
-তুই অনেক সুন্দরী, আমার থেকে অনেক ভালো বর পাবি
-পাওয়া লাগবে না, তুমিই ভালো, আমার তোমাকেই লাগবে
-আচ্ছা ছাদে চল কথা আছে তোর সাথে বলে অনি ছাদের উদ্দেশ্যে হাটা দেয়।
সিমি তখন খুশিমনে অনির পিছুপিছু হাটতে থাকে আর ভাবে ইসসস ছাদে নিয়ে চাঁদকে দেখিয়ে একটা হাগ দিতো।
-বস এখানে বলে দুজন পাশাপাশি একটা টেবিলে বসে
-চাঁদ টা অনেক সুন্দর না?(সিমি)
-হ্যা
-কয়টা চাঁদ এখানে?
-একটা-ই তো
-জগতের সব প্রেমিকরা প্রেমিকাকে পাশে পেলে চাঁদের সাথে তুলনা দেয় অথচ তুমি তার কিছুই করলে না
-তোর প্রতি যদি আমার সত্যিই এমন ফিলিংস আসতো তাহলে আমিও বলতাম কিন্তু তোর প্রতি তো আমার ফিলিংস নাই
-এটাই তোমার কথা? না আরো আছে
-ধর তুই আমাকে অনেক ভালোবাসিস অথচ আমি তোকে ভালোবাসতে পারছি না তাহলে তোর কেমন লাগবে?
-তোমাকে ভালোবাসা দিয়ে আমার প্রতি অভ্যস্ত করে ফেলবো
-অভ্যস্ত আর আসক্ত এক না, কেউ যখন কারোর প্রতি আসক্ত হয় সে তখন তাকে ছাড়া পৃথিবীর আর দ্বিতীয় কাউকে ভাবতে পারে না, আর অভ্যস্ত সে তো সমাজ রক্ষার্থে যতটুকু করা দরকার সেটাই করে।
-আমি তো তোমাতে আসক্ত
-আমি অন্য কারোর মায়ায় আসক্ত,
সিমি এটা শুনতেই যেন মাথায় বাজ পরার মত অবস্থা, একটু আগে কি ভাবলো আর কি হচ্ছে
-শোন সিমি বোন আমার তুই লক্ষী একটা মেয়ে,তোর জন্য আমার চেয়ে বেটার কেউ অপেক্ষা করছে
-তুমি বেস্ট, বেটার দিয়ে কি করবো আমি?
-তুই একজনকে তোর সবটা দিয়ে ভালোবাসলি অথচ সে তোর ভালোবাসার পূর্ণ মর্যাদা দিতে পারলো না তখন কেমন লাগবে বল? তোকে বিয়ে করাটা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হবে
-আচ্ছা আমি আসি বলে চোখেরজল মুছতে মুছতে চলে যাবে এমন সময়
-এই সিমি শোন
-আমার ঘুম পাইছে বলে তাড়াতাড়ি হাটা দিয়ে চলে যায়।
অনি আরো কতক্ষণ ছাদে বসে থেকে ঘুমাতে চলে যায়।
রাত গিয়ে সকাল হওয়ার পরে সিমিকে ব্যাগ গুছাইতে দেখে
-কিরে ব্যাগ গুছাচ্ছিস কেন?(অনির মা)
-বাসায় যাবো
-আজ তোদের বিয়ের শপিং করবি, তারপরে বাড়িতে যাবি
-তোমার ছেলে আমাকে বিয়ে করতে চায় না
-সেটা আমি বুঝবো
-মামি আমি জোরপূর্বক কোনকিছু করতে চাই না
-অনি কি তোকে কিছু বলছে?
-তোমার ছেলে অন্য কাউকে ভালোবাসে
-কিহ?
-হ্যা সাইড দাও
-এই তুই কোথায় যাচ্ছিস? যাইতে পারবি না
-মামি প্লিজ আমাকে যেতে দাও আমার ভালো লাগছে না বলে কান্না করে দেয়
-এই পাগলি মাথা গড়ম করিস না
-মামি এখানে মাথা গড়মের কি আছে? সবাই সবার ভালোবাসার মানুষকে চায়, সেও চাচ্ছে
-কিন্তু অনি তো এমন কোনকিছু বলেনি
-হয়তো লজ্জা কিংবা ভয়ে বলেনি
-আচ্ছা তুই এখানে বস, আমি ওর সাথে কথা বলে আসি বলে অনির মা অনির রুমে গিয়ে “কিরে তুই সিমিকে কিছু বলেছিস?”
-না তো
-তাহলে ও কান্না করছে কেন?
-তা আমি কি করে বলবো?
-কাকে ভালোবাসিস?
-পরে বলবো
-না এখন বল
-আমি গেলাম বলে অনি পাশ কাটিয়ে রুম থেকে বেড় হয়ে জান্নাতের নাম্বারে ফোন দিয়ে…….
চলবে