দেহ পর্ব ৭
লেখক:-মো.নীল চৌধুরী
-কাকে ভালোবাসিস?
-পরে বলবো
-না এখন বল
-আমি গেলাম বলে অনি পাশ কাটিয়ে রুম থেকে বেড় হয়ে জান্নাতের নাম্বারে ফোন দিয়ে “কোথায় তুমি?”
-বেড় হলাম মাত্র
-ওকে আমি অফিসে আছি তুমি আসো
-আজ এত তাড়াতাড়ি
-তাড়া আছে
-ওকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করেণ আমি আসতেছি
-ওকে বলে অনি ফোন কেটে দেয়।
অনি অফিসে বসে আছে,এসি চলা অবস্থায় ও ঘেমে চলছে। এই মুহূর্তে ওর কি করা উচিৎ সেটা সেও বুঝে উঠতে পারছে না।
-স্যার কি হয়েছে আপনার? আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? এসি চলা অবস্থায় ও ঘামতেছেন, কোন সমস্যা স্যার?
-কয়টার উত্তর দিব?
-না মানে কি হয়েছে আপনার?
-আমি বিয়ে করতে চাই
-ভালো তো,পাত্রী দেখ শুরু করবো নাকি স্যার বলে হাসতে থাকে
-আমার দেখা আছে
-প্রেম করেণ অথচ ঐদিন আমাকে এড়িয়ে গেছেন
-পছন্দ করি, প্রেম না
-আচ্ছা মেয়েটার নাম্বার কিংবা যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা করিয়ে দেন আমি যোগাযোগ করি
-০১৭******৮৯
-এই ওয়েট এটা তো আমার নাম্বার
-এটাই মেয়ের নাম্বার
-মানে?
-আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই
-আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন?
-তোমার মায়ায়
-আপনি কি আমার সাথে প্রাঙ্ক করছেন?
-এখানে প্রাঙ্কের কি আছে? তোমাকে আমার পছন্দ আমি তোমাকে আমার ঘরে তুলতে চাই
-আমার মতো রাস্তার দুই পয়সার বেশ্যাকে?
-একবার বলছিলাম যাতে এটা আর কখনো না বলা হয়
-আমাদেরকে নিয়ে এক ঘন্টা কাটানো যায় কিন্তু এক জীবন কাটানো যায় না,আপনার যদি ওরকম কোন ইচ্ছা থাকে তাহলে আমি আপনার বিছানায় যেতে রাজি।আগে মানুষ ৫০০ টাকা দিয়ে পুরো রাত কাটিয়েছে আর আপনি তো আমার জন্য কতকিছুই করলেন তাই আমার এতে নিষেধ নাই কিন্তু বিয়ের কথা বলবেন না
-আমাকে কি ৫০০ টাকার কাস্টমার মনে হয়?
-আমি পতিতা, আমি এটাই বুঝি
অনি তখন নিজের চেয়ার থেকে উঠে জান্নাতের গালে ঠাসঠাস করে কষে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে “বলছিলাম না নিজেকে কখনো এটার পরিচয় না দিতে? খারাপ তুই না খারাপ হচ্ছে ঐ মানুষগুলো যারা তোকে টাকার বিনিময়ে দিনের পর দিন তোর স্বপ্নগুলোর উপরে কালোরঙ দিয়ে ঢেকে দিয়েছে, খারাপ তুই কিংবা তোরা না খারাপ তারাই যারা তোদের দেহ ভোগ করে”
-আমি বোধ হয় এই চাকরীটাও করতে পারলাম না বলে ঠোঁট চেপে কান্না করে দেয়
-জান্নাত আমাকে বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ
-ভালো থাকবেন আর হ্যা সবকিছুর জন্য আমি দুঃখিত
-কোথায় যাচ্ছো? বলে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে জান্নাতের সামনে গিয়ে দাড়ায়
-আমার পুরনো গন্তব্যে
-আজকে বিকালে আমার পরিবার তোমার এখানে যাবে
-আপনি এসব কি শুরু করছেন? আপনি নিজেই চিন্তাভাবনা করে দেখেন আমি আপনার যোগ্য কি না, আমি তো আপনার যোগ্য না, আমি দেহ বিক্রেতা। আমি যতটা খারাপ আপনি ঠিক ততটাই ভালো,তো আপনিই বলেন আপনি যা বলছেন তা কি ঠিক বলছেন?
-বলছিলাম না মেয়েদের অতীত বলে কোনকিছু নেই,শুধু বর্তমান আর ভবিষ্যৎ
-আপনার পরিবার কি জানে যে আমি দেহব্যবসায়ী?
-এসব ওরা কেন জানবে?
-ওরা যখন জানবে?
-আমি ভালোবাসার মানুষের কলঙ্ক নিজের কাধে নিতে রাজি
-কলঙ্কীদের এই সমাজে ঠাই নেই
-আর ভালোবাসা?
-পুরুষ মানুষরা মাংসাশী প্রাণীদের মত, এদের মনে ভালোবাসা বলতে ওদের যতক্ষণ রোমান্টিক মোড থাকে ততক্ষণই ভালোবাসা থাকে
-সবাইকে এক পাল্লা দিয়ে মাপাটা বোকামি না?
-আপনি আলাদা দেখেই তো আপনাকে বুঝাচ্ছি
-আমাকে বুঝাতে হবে না
-আমার যেকোন একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে, আপনি ভালো লক্ষী একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিয়েন
-হিয়া আমার প্রথম ভালোবাসা, মাস সাতেক আগে সে আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে ধোকা দেয়। মাস ছয়েক আমি হিয়ার অভাবটা খুব ভালো করেই টের পাচ্ছিলাম যদিও তাকে বারবার ভুলবার চেষ্টা করে ভুলতে পারিনি কিন্তু জান্নাত গত কয়েকদিন ধরে আমি যখন তোমার চোখের দিকে তাকাই তখন আমার মনে হয় আমি এই চোখে চোখ রেখে সারাজীবন অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারবো।
-প্রেডিকশন ভুলও হয়
-মন থেকে যেটা বারবার এলার্ম দেয় সেটা কখনো ভুল প্রেডিকশন হতে পারে না
-আমি আঙ্কেলকে বলব যাতে করে আপনার বিয়ের ব্যবস্থা খুব তাড়াতাড়ি করেণ
-তোমার সাথে আমি ভালো থাকবো
-স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কতরকমের ঝগড়াঝাঁটি লাগে, তখন আপনিই পতিতা কিংবা বেশ্যা বলে চুপ করিয়ে দিতে চাইবেন
-আমাকে এত খারাপ মনে হয়?
-খারাপ না তো, আপনি তো সত্যি কথা-ই বলবেন তখন
-আমাকে কি তোমার অপছন্দ?
-কোন মেয়ে আপনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার আগে সে কম হলেও হাজার বার ভাববে
-অথচ তুমি একবারও ভাবলে না
-আমি তো মেয়ে নই, আমি কি? আমি হলাম এই শহরের ক্ষুধার্ত মানুষের খাবা…… কথাটা বলার আগেই অনি হাত দিয়ে মুখ আটকে জবান বন্ধ করে দিয়ে “জান্নাত পবিত্র, ফুলের মত পবিত্র ”
-ছাড়েন কেউ আসলে খারাপ ভাববে
-কেউ আসার আগে নক না করে আসবে না
-আপনি বুঝার চেষ্টা করেণ, আমি আপনার জন্য না, আমার কাছে স্বামীকে দেওয়ার মত কোনকিছুই নাই
-এই যে এই মানুষটা আছে বলে চোখেরজলগুলো হাত দিয়ে মুছবার চেষ্টা করে
-আপনি বুঝার চেষ্টা করেণ প্লিজ
-তোমাকে বুঝতে চাই, উপলব্ধি করতে চাই তোমার ভালোবাসাকে, দেহকে না
-কয়েকদিন পরেই ঘোর কেটে যাবে
-চোখের মায়ায় আটকে গেলে ঘোর কাটে না
-আমি আপনার যোগ্য না
-ছয়মাস আগে তো এসব করতে না, তখন যদি আমি তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতাম তখন কি হতো?
-বললাম না আপনার মত ছেলের প্রস্তাব কোন মেয়ে রিজেক্ট করার আগে কয়েক হাজার বার ভাববে
-তাহলে ছয়মাসের বিনিময়ে এত পরিবর্তন কেন?
-আমার শরীরে তখন কেউ টাচ করতে পারেনি কিন্তু এখন এই ছয়মাসে ৬১১ জন মানুষ আমার দেহভোগ করেছে
-বলেছিলাম এসব না বলতে
-কেন বলবো না বলেন? এগুলো তো সত্যি কথা
-আমার পরিবারের সবাই আজকে বিকালেই তোমার এখানে যাবে
-৬১১ জন মানুষ আমাকে নিয়ে মজা করছে জেনেও আমাকে চান?
-হ্যা চাই
-এই শরীরে স্পর্শ করার আগে ঘেন্না লাগবে না?
-তুমি তো নিজ ইচ্ছায় এসব করোনি,তোমার খারাপ সময়ের সুযোগ নিয়ে ওরা এসব করছে
-আপনার মাথায় ভূত চেপেছে
-আজকে ঐ নীলশাড়িটা পরবে
-আপনি বুঝার চেষ্টা করেন প্লিজ
-আমি আসি এখন, যা বলছি তা যেন ঠিকঠাক ভাবে হয় বলে অনি অফিস থেকে বেড় হয়ে গাড়ি করে বাসায় চলে আসার পরে
-কিরে কি হইছে তোর?(মা)
-কিছু না
-হঠাৎ গেলি আবার হঠাৎ এমন অসময়েও আসলি
-বিকালে তুমি বাবাকে সাথে করে নিয়ে এক জায়গায় যাওয়া লাগবে
-কোথায়?
-বলেছিলাম না আমার একজনকে ভালো লাগে?
-কে সে?
-জান্নাত
-কি করে?
-ঐযে ঐদিন বললাম না বাবাকে চাকরি দিয়ে দিতে
-পিএস?
-হ্যা
-আর সিমি?
-মা আমি যার সাথে ভালো থাকবো মনে হয় তার সাথে থাকাই কি বেটার না?
-সিমির মা-বাবাকে কি বলবো?
-ফুঁপিকে আমি বুঝাবো
-এখন তোর শেষ কথা কি?
-জান্নাতকে দেখে আসো গিয়ে
-ছবিটবি নাই?
-নাহ
-এতদিন প্রেম করে একটা ছবিও তুলতে পারোস নাই?
-আমি কি বলছি আমি প্রেম করি? আমার ওকে ভালো লাগে,ভালো লাগে মানে অনেক ভালো লাগে
-আচ্ছা তোর বাবাকে বলবো
-মা প্লিজ ওকে আমার ভালো লাগে খুব
-আমার সিমির জন্যে খারাপ লাগছে
-আমি সিমিকে বুঝিয়ে সব ঠিকঠাক করে ফেলবো, তুমি জান্নাতের সাথে কথা বলে দেখো দেখবা তুমিও মুগ্ধ হয়ে যাবে
-আমার তো ভালো নাও লাগতে পারে
-আগে তো দেখো
-আচ্ছা তোর বাবাকে জানাচ্ছি
-আচ্ছা এখুনি ফোন দিয়ে বলো আসতে
-আচ্ছা বাবা দিচ্ছি বলে মোবাইল হাতে নিয়ে ফোন দিয়ে “হ্যালো কোথায় তুমি?”
-অফিসেই, কেন?
-তোমার ছেলের পছন্দ করা মেয়েকে দেখতে যেতে হবে
-সিমির সাথে না সব ঠিক হয়ে আছে
-ও তো রাজি
-এটা কি ছেলেখেলা নাকি? ওদের সবার সাথে কথা হয়ে গেছে অথচ এখন এসব কি বলছো?
-আমি বলছি নাকি? তোমার ছেলে বলতেছে
-বিয়ে সিমির সাথেই হবে বলে ফোন কেটে দেওয়ার পরে অনির মা অনির দিকে তাকিয়ে “শুনলি তো কি বললো?”
-আমি ওকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না
-সিমি তোকে খুব ভালো রাখবে
-ওকে আমি সব সময় বোনের মত ট্রিট করে আসছি আর হঠাৎ তোমরা বলে দিলে যে ওকে বিয়ে করে বৌ বানাতে, এটা কি হয় নাকি?
-তা তোর বাবাকেই বলিস বলে রুমের দিকে হাটা দেয়
-তোমরা রাজি না হলে আমি অন্য চিন্তাভাবনা করবো, অনির মা তখন থেমে পিছনে ফিরে “কি বললি?”
-কাজী অফিসে……
চলবে