#অবন্তিকা_তৃপ্তি
ধ্রুব এই মলিন-বিমুগ্ধ মেয়েটাকেই দূর থেকে মনটা ভরে দেখে যাচ্ছে।সাদা গায়ে অদিতির সৌন্দর্য যেন রীতিমত চোখে লাগছে ধ্রুবর। ও স্থির ভাবে রোবটের মতো চেয়ে রয় ওর দিকে। অদিতি হেঁটে একটা ফোনের দোকানে ডুকছে।ধ্রুব কি মনে করে হঠাৎ! নিজেই বরাবরের মতো নিজের সংকীর্ণ মনের সঙ্গে বে/ইমানি করে, ওকে চমকে দিয়ে বড়বড় পা ফেলে নিজেও ফোনের দোকানে ঢুকে পরে।
অদিতি তখন তার হাতের বাটন ফোন দোকানির দিকে বাড়িয়ে রেখেছে; দোকানি ধ্রুবকে দেখে অদিতিকে এড়িয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে সালাম ঠুকলো:
‘সালাম ধ্রুব ভাই।’
ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে বসতে বললো। অদিতি ধ্রুবর নাম শুনেই মুহূর্তেই কেমন গুটিয়ে গেল। ওর হাত স্পষ্ট কাঁপছে; ও কাঁধের ব্যাগটা খামচে ধরে স্থির হয়ে গেল। ধ্রুব ততক্ষণে ওর পাশে এসে হেলান দিয়ে দাড়িয়েছে। অদিতি স্পষ্ট ঘ্রাণ শুকছে, ধ্রুবর গা থেকে ভাসছে মাদকের মতো পারফিউমার সুঘ্রাণ। এই পারফিউমের ঘ্রাণ ধ্রুব যখন দোকানে ঢুকেছে তখনই পুরো দোকানময় ছড়িয়ে গেছিলো।
ধ্রুব অদিতিকে দেখল, ওকে কাঁপতে দেখে ধ্রুব হেসে উঠল নিঃশব্দে। দোকানি বড়বড় চোখে ধ্রুবর হাসি দেখে স্তব্ধ হয়ে অদিতির দিকে তাকাল। অদিতি তখন ওর বাটন ফোন থেকে সিম খুলছে। দোকানি ওদের দুজনকে দেখে যা বোঝার বুঝে গেল। উনি ধ্রুবর দিকে চেয়ে ভ্রু বাঁকিয়ে অদিতিকে ইশারা করে কিছু বোঝাল;, ধ্রুব সম্মতিস্বরূপ হাসলো। দোকানি এবার ঠোঁটভরে হেসে সঙ্গেসঙ্গে পাশে থাকা সহকারীকে তাড়া দেখালো- ‘ওই সবুজ, ম্যাডাম রে চেয়ার আইনা দে। ধ্রুব ভাই, আপনি আমার এই সোফায় এসে বসেন। কি খাবেন বলেন? কোক আনাই? আপনি তো খান দেখি সবসময়।’
ধ্রুব আরো কিছুক্ষণ থাকবে নাকি এখানে? অদিতি আড়চোখে ধ্রুবর দিকে ওকে তাকালো। ধ্রুব ততক্ষণে সোফায় পা ছড়িয়ে বসেছে। দোকানি ধ্রুবর কিছু বলার আগেই কোক একটা হাজির করেছে। অদিতির জন্যে এনেছে আইসক্রিম। দোকানি অদিতিকে আইসক্রিম সাধছে দেখে ও ভীষণ অবাক হলো। অদিতি অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে দ্রুত দুহাতে মানা করে বসলো- ‘লাগবে না আমার ভাইয়া, আপনি খামোকা এগুলো আনলেন কেন? আমি খেয়ে এসেছি।’
লজ্জায় পরে এমন নানা কথাই বলতে লাগল ও। দোকানি শুনল না। জোরপূর্বক হাতে আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে গাল ভরে হেসে বললো ——‘আমাদের ভাই কিন্তু বাইরে শক্ত হলেও ভেতরে ভীষণ নরম, ভাবি। আপনে তারে ভালো রাইখেন।’
ধ্রুব দোকানির এভাবে সরাসরি বলা দেখে খুকখুক করে কেশে উঠলো। অদিতিও ভ্রু কুঁচকে ফেলল! এই ‘ভাবি’ ভার্সিটি ছাড়িয়ে ডাক এতদূর অব্দি এসে গেছে?এসব নিশ্চই ধ্রুব বা এর গ্যাং এর কাজ? অদিতি এবার কিছুটা বিরক্ত হলো, ধ্রুবর দিকে তাকালে ধ্রুব দু কাধ উঁচু করে ঠোঁট উল্টে ফেলল,এমন একটা ভান করল যেন এসবের কিছুই ওর কাজ নয়। অদিতি ছোট করে হতাশার শ্বাস ফেলল!
ও দোকানির দিকে চেয়ে বললো-‘ভাইয়া আমার ফোন কবে নাগাদ ঠিক করে দিতে পারবেন?’
দোকানি অদিতির ফোনটা সহকারীকে ডেকে ওর হাতে দিয়ে দিল। অদিতির দিকে চেয়ে যথাসম্ভব অমায়িক গলায় বললো—‘আজকেই দিবো ভাবি। আপনার কাজ সবার আগে হবে আমার দোকানে, দশ মিনিট খাড়ান।’
প্রতি বাক্যে এতবার ‘ভাবি’ ডাকা রীতিমত হজম হচ্ছে না অদিতির। ও এবার দোকানির দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে উঠল——‘ভাইয়া, আমি বিয়ে করিনি এখনো। আমাকে প্লিজ ভাবী ডাকবেন না এভাবে।’
দোকানি হতবম্ব চোখে অদিতির দিকে চেয়ে আবার ধ্রুবর দিকে তাকাল, যেন সে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের কথা শুনছে। ধ্রুব চোখের ইশারায় বোঝাল- এই মেয়ে যা বলছে চুপচাপ তা মেনে নাও।
দোকানি বুঝল ধ্রবর কথা। সে নিজেকে শুধরে নিয়ে, এবার বলল-
‘সরি আপু, আমি ভেবেছি আপনি আর.. বাদ দেন। এই কামরুল; আপুর ফোন ঠিক হইসে? উনি আর কত অপেক্ষা করবে?’
বসের থেকে তাগাদ পেয়ে কামরুল হাত চালাচ্ছে দ্রুত। অদিতি অবাক; একটু আগেই এই দোকানি তাকে বলেছে পরশু এসে ফোন নিয়ে যেতে। এখন দশ মিনিটের মধ্যেই কাজ হাসিল? ওর বুঝে কিছুই আসলো না।
অদিতির ফোন ঠিক করে দেওয়া হলো। দোকানি অদিতির দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল-‘আপু, আপনি এই যুগে এসেও বাটন ফোন ইউজ করেন? আমার দোকানে কিন্তু ভালো টাচ ফোনআছে? দেখাব আপনাকে?’’
অদিতি দোকানে সাজিয়ে রাখা স্মার্টফোনগুলোর দিকে একনজর চোখ বুলিয়ে তারপর মলিন হেসে বলে-‘লাগবে না ভাই, আসি! থ্যাঙ্ক ইউ কাজটা এতো দ্রুত করে দেওয়ার জন্যে।’
দোকানি লাজুক হাসল। অদিতি চলে যেতেই দোকানি ধ্রুবর দিকে এগিয়ে গেল। ধ্রুব দোকানির হাতে খালি কোকের ক্যান ধরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। দোকানি ধ্রুবর দিকে চেয়ে হতাশ গলায় আফসোস স্বরে বললো—‘ভাই, ভাবি পটেনি এখনও, না?’
ধ্রুব উত্তর দিল না। দোকানির দিকে এক হাজার টাকার একটা নোট বের করে দিয়ে বলল-‘এটা রাখো, ও যতবার এই দোকানে আসবে, ততবার আমার বউ হিসেবে বেস্ট ট্রিট দিবে।’
দোকানি হাতে এক হাজার টাকার নোট নিয়ে ফ্যালফ্যাল চোখে ধ্রুবর দিকে চেয়ে রইল। ধ্রুব ততক্ষণে দোকান থেকে বেরিয়ে অদিতির পিছু নিয়েছে।
___
‘অ্যাই মেয়ে, দাঁড়াও। কথা আছে তোমার সঙ্গে।’
ধ্রুব দৌড়াতে দৌড়াতে পেছন থেকে ডেকে আসছে। অদিতি থেমে গেল। নিঃশ্বাস আবারও থেমে গেছে যেন। যেই ধ্রুব এগিয়ে গিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো, হৃদপিণ্ডে যেন একদম লাফিয়ে উঠে দ্রুত সঞ্চালিত হতে থাকলো। প্রতিবার কেমন এমন হয়? ধ্রুব কাছাকাছি এলেই, অদুটি বুঝতে পারে ও আর স্বাভাবিক থাকছে না। উলোট
পালোট হচ্ছে ও। এমনটার কারণ কি?
অদিতি ভয়েভয়ে আশেপাশে তাকাল, কেউ কি দেখছে ওদের? কোদি বাবা জেনে যায়? ধ্রুব ওর তাকানো দেখে বুঝে ফেলল, আশ্বস্ত করার জন্যে শান্ত স্বরে বললো——‘কেউ নেই এখানে, রিল্যাক্স।’
অদিতি তবুও ভয় কাটল না। ও ধ্রুবর চোখে চোখ রাখছে না। অন্যদিকে চেয়ে কাধের ব্যাগটা একহাতে খামচে ধরে চাপা স্বরে জিজ্ঞেস করল-‘ক-কি চাই আপনার?’
চাই তো অনেককিছুই। তোহ ধ্রুব আপাতত সেসব কথায় গেলোই না। সরাসরি ও কথা বাড়ালো, বলে উঠল —‘আমার গিটার।’
‘ম-মানে?’ – অদিতি মাথা তুলে তাকাল, ওর অবাক গলা।
‘আমার গিটার নষ্ট করে ফেলেছিলে,সেটা তুমি ঠিক করে আমায় ফেরত দিবে। আগামীকাল আমাদের আড্ডার জায়গায় এসে নিয়ে যাবে; মনে থাকে যেন।’
‘কিন্তু ওটা আমি ইচ্ছে করে করিনি-‘—অদিতি অস্বস্তি নিয়ে বললো।
‘তো? তোমার ইচ্ছে বা অনিচ্ছার ভিত্তিতে কেউ চলবে নাকি? কাল এসে নিয়ে যেন যাও।নাও গো।’
ধ্রুবর শক্ত-কাঠকাঠ স্বর যেন অদিতির গলা শুকিয়ে ফেলল। এতদিন ধ্রুবর নরম ব্যবহার দেখে অদিতি কিসব আকাশ-কুসুম ভেবে বসেছিল। অথচ এখন পুরো চিত্রই ভিন্ন। ধ্রুব বাইরে যেমন শক্ত, ভেতরে তেমনি শক্ত। অদিতি এতকাল ভুল ভেবে এসেছে। ধ্রুবর এমন রূপ দেখে ওর মুখটা এবার শুকনো হয়ে গেল। ও ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল-‘ঠ-ঠিকাছে, আমি ঠিক করে দিব। নিয়ে আসবেন ভার্সিটি কালকে।’
অদিতি আর দাঁড়ালো না। ঘুরে চলে যাওয়ার সময়; ওর লম্বা কোমর ছড়ানো চুল ধ্রুবর বুকের কাছে এসে ধাক্কা খেলো। ধ্রুবর বুকে হঠাৎ এই ধাক্কায় যেন সুনামি বইয়ে গেল। ও চোখ বুজে ফেলে, আবার ঘোর লাগা চোখে তাকালো।
হেঁটে বেশিদূর যেতে পারেনি অদিতি, হঠাৎ ওর চুলে টান পরলো, লম্বা চুলের একটা অংশ আটকে গেল ধ্রুবর শার্টের বোতামে, আচমকা চুলের গোড়ায় ব্যথা অনুভব করায় গুঙিয়ে উঠে পেছনে তাকাল অদিতি।
ধ্রুব নিজেও আহাম্মক হয়ে শার্টের দিকে চেয়ে আবার অদিতির দিকে তাকাল। অদিতি ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। ধ্রুব ওকে দেখছে, ওরা দুজন এই ঘটনায় অনেকটাই কাছাকাছি চলে এসেছে।
অস্বস্তিতে অদিতি আর একবারও ধ্রুবর চোখের দিকে তাকাল না। বরং চুলের গোড়া একহাতে চেপে অপরহাতে নিজের চুল টানল কিছুক্ষণ। ছুটছে না, উল্টো চুল ছিঁড়ে হাতে আসছে। চাইলেই অদিতি শার্টের বোতাম থেকে আরাম করে চুল ছাড়িয়ে নিতেই পারে। কিন্তু এতে দুজনেই না চাইতেও একে অপরের আরো কাছে আসতে হবে; যা অদিতি কোনোদিনও চাইবে না।
ধ্রুব তীক্ষ চোখে অদিতির নাচন-কোদন দেখেই যাচ্ছে। ওর বড্ড হাসি পাচ্ছে এই অবস্থায়। যতই অদিতি চায়: ধ্রুব থেকে দূরে যেতে! ততই যেন ডেস্টিনি ওদের টেনে-জোর করে একে অপরের কাছাকাছি এনে ফেলে। অদিতি চাইলেও যেমন ধ্রুবকে ইগনোর করতে পারেনি; তেমনি ধ্রুব নিজেও না চেয়েও ছুটে এসেছে এতটা পথ।
ওদিকে, চুল ছুটছে না দেখে অদিতি রেগে-বিরক্ত হয়ে এবার টান দিতে উদ্যত হলো চুল। ধ্রুব যেন এতে হতভম্ব হয়ে গেল। ও হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলো-‘ রিল্যাক্স! রিল্যাক্স! ওয়েট, আমি হেল্প করছি। চুল ছিড়ে ফেলার দরকার নেই।’
অদিতি থেমে গেল। কানের পেছনে চুল গুঁজে আস্তে করে হাত সরিয়ে ফেললো। ধ্রুব ওর দিকে চেয়ে, তারপর মনেমনে হেসে উঠে চুল বোতাম থেকে ভীষণ যত্ন নিয়ে ছাড়িয়ে দিল। তারপর অদিতির দিকে চেয়ে বললো-
‘ডান? এতগুলো চুলে ছিঁড়লে অযথাই।’
ধ্রুবর ঠোঁটে উপহাস! অদিতি মাথা নিচু করে ছোট করে ‘ধন্যবাদ’ বলল, তারপর এক ছুটে বেরিয়ে গেল।
অদিতি দৌড়ে চলে যাচ্ছে। ধ্রুব বুকের শার্টের ওই বোতাম আরও একবার দেখল, তারপর অদিতির যাওয়ার দিকে চেয়ে হঠাৎ করেই ওর হাসি ফুটল ঠোঁটে! ধ্রুব আনমনে হয়ে বলে বসলো-
‘এমন শুকনো থ্যাঙ্ক ইউ-ও আশা করিনি।’
___________
ধ্রুব সেদিন বাড়ি ফিরলো। বাড়ি ফিরলে দেখে সৌরভ ইয়ামিন খাবার টেবিলে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। সার্ভেন্ট খাবার বেড়ে টেবিলে সাজাচ্ছে। ধ্রুব যেতেই সৌরভ খবরের কাগজ রেখে ফেললেন দ্রুত।
উদ্দেশ্য, ছেলে দেখুন তাকে; বুঝুক বাবা যেসময় ফ্রি থাকে, সেই সময় পুরোটাই তার ছেলের জন্যে। সৌরভ মুখ ভরে, হেসে ছেলেকে ডাকলেন-
‘ধ্রুব, আসো! বাপ-বেডা আজ অনেকদিন পর একসঙ্গে খাবার খাবো।’
ধ্রুব বাঁকা চোখে তাকাল, পরপর তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো——-‘কামওমন, এখানে কেউ নেই তোমার নাটক দেখার জন্যে।ইউ ক্যান এনজয়।’
ধ্রুব সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠে গেছে। সৌরব ইয়ামিনের বুকটা কেঁপে উঠল। বাবাদের ছেলের প্রতি ভালোবাসাটুকু ধ্রুব কত সহজেই নাটক বলে চলে গেল। ছেলের প্রতি এই দুরুত্ব সৌরভকে বড্ড পোড়ায়। সৌরভ চান, এই নাটকের শেষ হোক। ছেলেটা তার বুকে আবার ফিরে আসুক।অতীতের ভুলগুলো যদি টাইম ট্রাভেল করে শুধরে ফেলা যেত, সৌরভ যত টাকায় লাগতো; উনি সব মুছে ফেলত ধ্রুবর স্মৃতি থেকে।
তার ভাবনার মধ্যেই ফোনে কল এলো হঠাৎ, উনি মনটা খারাপ করে কল রিসিভ করলেন। ওপাশ থেকে একজন বলল—‘‘স্যার; ধ্রুব স্যারকে আজ একটা মেয়ের সঙ্গে দেখা গেছে। আমার মনে হচ্ছে, এটা সেই গুজবের মেয়েটাই।’
সৌরভের মুখ-চোখ হঠাৎ উজ্জল হয়ে গেল। উনি চমকিত গলায় বললেন-‘মেয়েটা কি অদিতি? অদিতি হায়াত? রাহুল, প্লিজ দ্রুত খবর নাও। আমি নিজে ওই মেয়ের সঙ্গে দেখা করবো। আমার ছেলেকে এবার আমি নিজে ওর সবচেয়ে পছন্দের জিনিস পাইয়ে দিতে চাই।’
ওপাশ থেকে আরও কিছুক্ষণ কি বলা হলো। সৌরভ কথা বলে কল কাটলেন। উনার চোখে-মুখে অদ্ভুত খুশি খেলা করছে। ধ্রুবকে সামলে নেওয়ার জন্যে এবার হয়তো আল্লাহ কাউকে পাঠিয়েছে! সৌরুভ দোয়া করতে লাগলেন মনেমনে- এই মেয়েটাই যেন ধ্রুবর জীবন পাল্টে দেওয়ার জন্যেই আসে। কঠোর ধ্রুব ইয়ামিনের ভেতরের নরম স্বত্তাকে বাইরে টেনে নিয়ে আসে।
____
ধ্রুব রুমে ঢুকে ফ্রেশ না হয়েই, সর্বপ্রথম ওর গিটার হাতে তুলল। গিটারের একপাশে এখনো লেখা -‘DONT TOUCH’
ধ্রুব ওই লেখাটায় হাত বুলালো, চোখে ভাসে অদিতির গোলগাল আতঙ্কিত-ভয়ার্ত মুখটুকু। যে মেয়ে ধ্রুবকে দেখলেই গুটিয়েই যায়, কাধের ব্যাগ চেপে ধরে কম্পিত হাতে।
ধ্রুব অদিতির একেকটা কান্ড মনে করে আনমনে কখন হেসে উঠে ও নিজেও বলতে পারেনি।
ধ্রুব এবার নিজের কাজ শুরু করে। গিটার হাতে নিয়েই নিজের এতদিনের শখের ইন্সট্রুমেন্টের স্ট্রিং দুটো টেনে-টুনে আলগা করে ফেলল। ট্যানিং পেগস্ -গুলো বারবার ঘুরিয়ে নষ্ট করে ফেলল। অযথাই গিটারের স্ট্রিং-ফ্রেটস-ব্রিডস এদিক-সেদিক করে নষ্ট করার চেষ্টা করলো।
সব কাজ শেষ করে, গিটারের এবার চালানোর চেষ্টা করলো। বিদঘুটে একটা আওয়াজ আসছে এটা থেকে। নিজের গিটারের আওয়াজ নিজেই বিরক্ত হয়ে কানে আঙুল ঢুকিয়ে কান চেপে ধরল।
তারপর ধীরে ধীরে তার এতদিনের শখের নষ্ট গিটারে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভাবতে লাগলো অনেককিছু। হয়তো ধ্রুব ইয়ামিনের শখের জিনিসই তার শখের নারীকে পাইয়ে দিতে পারে!
ধ্রুব গিটারে হাত বুলাতে বুলাতে বাঁকা হেসে বললো কটা লাইন-
‘Love me like your guiter
You can have me
I’ll be your shining stars!’
#চলবে
#চলবে