#অবন্তিকা_তৃপ্তি
হাসপাতালের স্যাভলন-মেডিসিনের ভ্যাপসা গন্ধ বরাবরই ধ্রুবর পছন্দ নয়। ও কখনোই জ্ঞানত হাসপাতালে আসে না। যখন আসে, তখন হয় সে ড্রাগের ওভারডোজ সহ্য করতে পারে না, নতুবা অ্যানজাইটি অ্যাটকের কারণে। ধ্রুবর বাবা ছেলের এই দুটো ব্যাপারে, সর্বদা তটস্থ থাকেন। অথচ নির্বোধ ছেলে, বাবার এই চিন্তা দেখে ভাবে হয়তো সৌরভ ইয়ামিন স্বার্থের জন্যে ছেলের সুস্থতা নিয়ে এত্ত ভাবেন।
বদ্ধ কেবিনে চিকিৎসা চলছে অদিতির। ধ্রুব বাইরে এতক্ষণ ধরে বসে ছিলো। শেষ অব্দি অতিষ্ঠ হয়ে সিগারেট ধরিয়েছিল একটা। নার্স এসে সেটা নেভাতে বলে গিয়েছে। আপাতত ও চুপচাপ চেয়ারে বসে আছে। ধ্রুবর ফোনটা পকেটে বাজছে অনেকক্ষণ ধরে। ধ্রুব সিগারেট পায়ের জুতো দিয়ে পিষে পকেট থেকে ফোন বের করলো, স্ক্রিনে লেখা উঠেছে ‘Biological Father’
ধ্রুব নাম দেখে কেটে দিল কল। ফোনটা বন্ধ করে আবারও পকেটে ঢুকিয়ে দিল। সৌরভ ইয়ামিন এবার ইমনের ফোনে কল দিলেন। ইমন সৌরভের কল দেখে আলগোছে পাশ থেকে উঠে একটু দূরে গিয়ে কল রিসিভ করল। ওপাশে সৌরভ জিজ্ঞেস করলেন-‘ও কোথায়?’
ইমন একনজর ধ্রুবকে দেখল। তারপর ফিসফিস করে উত্তর দিল-‘আংকেল ধ্রুব আমাদের সাথেই আছে। চিন্তা করবেন না। আমি ওকে বাসায় পৌঁছে দিব।’
‘ও হাসপাতালে কেন গেছে ইমন? ওর কি আবার অ্যাংযাইটি অ্যাটাক হয়েছে? ও ঠিক আছে? নাকি আবার মারামারি করেছে?’
সৌরভ অস্থির রীতিমত। ইমন বুঝে, ধ্রুব কখন কোথায় যায়,ধ্রুবর একেকটা আচরণ সৌরভের নখদর্পণে থাকে। এটা নতুন কিছু না।
ইমন এতগুলো প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে কিভাবে দিবে? ও শুধু বলল-‘আংকেল ধ্রুব একদম ফিট আছে। আমরা একটা কাজে এসেছি এখানে।’
সৌরুভ ইয়ামিন ছেলে সুস্থ আছে শুনে স্বস্থির শ্বাস ফেললেন। চিন্তামুক্ত ভাবে বললেন-‘ঠিকাছে। ছেলেটাকে কিছু খাইয়ে দিয়ো,দুপুরে তো কিছু খেলো না।’
‘জ্বী, আংকেল।’ -ইমন নম্র ভাবে বলল।
সৌরভ ইয়ামিনের ছেলের প্রতি ভয়াবহ দুর্বলতা আছে। এটা ধ্রুবর বন্ধুরা জানে। ওরা এটাকে বাবার স্নেহ হিসেবে ধরেলেও, ধ্রুব ভাবে এসবই স্বার্থ! নির্বোধ ধ্রুব! জীবনেও বাপকে মূল্যায়ন করলো না। ইমন ফোন কেটে এগিয়ে গিয়ে আবার ধ্রুবর পাশে চেয়ারে বসলো। ধ্রুব ইমন বসতেই এবারের যাত্রায় মৃদু হেসে মাথা নিচু করে বলল-‘উনি কল করেছে, রাইট?’
ইমন এ কথা শোনে এবার ভীষণ তেতে উঠে বলল -‘এই উনি কি আবার? বাবা বলতে মুখে বাঁধে কেন তোর?’
ধ্রুব হাসল, উত্তর দিল না।ধ্রুবর এমন খাপছাড়া আচরণ ইমনের রাগ উঠিয়ে দিল। ও কিছু বলতে যাবে তার আগেই ডক্টর কেবিন থেকে বেরিয়ে এলেন। ধ্রুব সঙ্গেসঙ্গে উঠে দাঁড়াল। এগিয়ে গেল মহিলা ডক্টরের দিকে। ডক্টর ধ্রুবকে আপাদমস্তক দেখলেন, ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন-‘মেয়েটার কি হও তুমি?’
ধ্রুব এবার দোনামনা করতে লাগল। কি হয় সে অদিতির,এম ? ফ্রেন্ড, কাজিন নাকি প্রেমি—!
ধ্রুব বড্ড অস্বস্তিতে পড়ে গেছে। ধ্রুব আমতা-আমতা করতে দেখে মহিলা ডক্টর মাঝপথে ধ্রুবকে আটকে দিলেন। বিরক্ত ভঙ্গিতে বললেন-‘ তুমি প্যাশেন্টের যেই হও, ওর শরীর ভীষণ দুর্বল। কিছুদিন রেস্টে থেকে নিয়মিত টেইক-কেয়ার নিলে ভালো হয়ে যাবে। মেডিসিন দিয়েছি আমি, কিনে খাওয়াতে থাকো। বেস্ট অফ লাক!’
মহিলা ডক্টর ধ্রুবকে কথা বলতে বলতে আরো একবার দেখলেন। মলিন শার্ট গায়ে, জিন্স জায়গায় জায়গায় ফাটা-ছেড়া। এটা নাকি আজকালের ফ্যাশন। চুলটাও অগোছালো বড্ড। মহিলা ডক্টর ভেতরে অসুস্থ হয়ে পরে থাকা মেয়েটার প্রতি হঠাৎ ক্ষরেই বড্ড দরদ অনুভব করলেন।এত সুন্দর, ফুলের মতো মেয়েটা এক বখাটের খপ্পরে কিভাবে পরে গেল ভেবে পেলেন না তিনি। উনি ধ্রুবকে বাঁকা নজরে দেখে এড়িয়ে চলে গেলেন। ডক্টর যেতেই ধ্রুব উনার যাওয়ার দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে রইল। ডক্টরের তাকানো ওর মোটেও ভালো লাগেনি। ইচ্ছে করছে ধরে দিয়ে দিতে কয়েকটা। কিন্তু ধ্রুব মেয়েদের গায়ে হাত তুলে না দেখে নিজেকে আটকালো।
ইমন পাশ থেকে ডক্টরের যাওয়ার দিকে চেয়ে দাঁত পিষে বলল—‘ওই ডাক্তার তোকে এভাবে দেখছিল কেন? সাহস দেখ উনার? তোকে জাজ করছে?’
ধ্রুব নিজের দিকে একবার চেয়ে মুচকি হাসল, বলল —‘বাদ দে। সারাক্ষণ এমন গুন্ডার মতো ঘুরে বেড়ালে যে কেউ এভাবে ত্যারা নজর দিবে।’
ইমনের ধ্রুবর কথা মোটেও পছন্দ হলো না। ও কড়া চোখে ধ্রুবর দিকে তাকাল। ধ্রুব কেবিনের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ততক্ষণে।ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না ভাবছে। অদিতি কি ভাববে? ঢোকা উচিত? ইমন পাশ থেকে ধ্রুবর এমন অস্বাভাবিক আচরণ দেখে বিরক্ত হয়ে ওকে হুট করে ঠেলে ঢুকিয়ে দিল কেবিনে। ধ্রুব কেবিনের ভেতরে ঢুকে পরে হতবম্ব হয়ে ইমনের দিকে তাকাল।
অদিতি কেবিনে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে। পাশে নার্স ফল কাটছে অদিতিকে খাওয়ানোর জন্যে। ধ্রুব-ইমনের এমন হাতাহাতি দেখে অদিতি চমকে তাকাল ওদের দিকে। নার্স ওদের এত শোরগোল দেখে বিরক্ত হয়ে বলল —‘এখানে শব্দ করবেন না, প্যাশেন্টের ক্ষতি হবে।’
ইমন ধ্রুবকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে দাঁত দেখিয়ে হেসে বলল —‘প্যাশেন্টের যা ক্ষতি হওয়ার সেটা আমাদের দেখেই ঘটে গেছে, সিস্টার।’
নার্স ইমনের এমন হেয়ালিপনায় বড্ড বিরক্ত। ফল কাটা শেষ হওয়ায় ও ফলের প্লেট অদিতির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল -‘আমি যাই এখন। আপনি বসুন।’
অদিতি ফ্যালফ্যাল চোখে নার্সের দিকে তাকাল, পরপর ধ্রুবর দিকে তাকাল। ধ্রুব তীক্ষ চোখে অদিতির নার্ভাসনেস দেখছে। অদিতি ঢোক গিলো। ও একা থাকবে এ দুটো ছেলের মাঝে? মরেই যাবে অদিতি আতঙ্কে। অদিতি নার্সের হাত চাপল, ভয়-ভয় গলায় বলল —‘আপনি থাকুন প্লিজ। আমাকে ডিসচার্জ দিয়ে তারপর যান।’
নার্স অবাক হয়ে অদিতির দিকে তাকাল। ধ্রুব ইমনের বিরক্ত ভঙ্গিতে দিকে তাকালো , ওর চাওনি বলছে-‘সব দোষ তোর, আমাকে ঠেলে ঢুকালি কেন?’
ইমন নিষ্পাপ এক চাওনি দিল ধ্রুবকে, পরপর অদিতির উদ্দেশ্যে বলল -‘অদিতি, নার্সের আরও কাজ আছে, উনি যাক। তোমাকে দু মিনিট পরেই ওরা ছেড়ে দিচ্ছে। ভয় পেও না। আমরা ভীষণ গুড বয়।’
অদিতি ইমনের কথায় ভীষণ লজ্জায় পরে গেল। যে মানুষগুলো ওর জন্যে এতকিছু করল; এখন অদিতি ওদেরকেই চরিত্র নিয়ে অপমান করে ফেলল। অদিতি নার্সের হাত ছেড়ে দিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো চুপচাপ। অথচ ওর হাত কাঁপছে। সঙ্গে কাঁপছে হাতে ধরে থাকা ফলের প্লেট। নার্স ধ্রুবদের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে। ধ্রুব অদিতির থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে এক সোফায় বসল, পাশে ইমনও বসল।
অদিতি কিছুটা দোনামনা করে একপর্যায়ে অস্বস্থিতে রক্তিম মুখ নিয়ে বলে ফেললো -‘আমি ভীষণ দুঃখিত। আমি আপনাদেরকে থ্যাংক ইউ ইউ বলার পরিবর্তে এমন অদ্ভুত ব্যবহার দিয়ে ফেললাম। আমি ভীষণ লজ্জিত এটাতে।’
ইমন মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে বললো–‘সমস্যা নেই; তোমার এমন আচরণে আমরা ভীষণ অভ্যস্ত অদিতি।’
অদিতি এবারেও লজ্জায় পরে গেল। ও কি সবসময়ই সবার সঙ্গে এমন অদ্ভুত ব্যবহার করে? অদিতি তো ইন্টেনশনালি এমনটা কখনোই করেনা। ও চায়- সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে। কিন্তু ছেলে দেখলেই অদিতির বুক কাঁপে। অদিতি মাথা নিচু করে বসে রইল। ধ্রুব অনেকক্ষণ ধরে অদিতিকে দেখছে। ও নিজের কথা দমিয়ে রাখতে না পেড়ে একসময় হঠাৎ বলে উঠল -‘ফলগুলো খাচ্ছে না কেন? এত বকবক করো সারাক্ষণ।’
অদিতি এহেন কথায় চমকে মাথা তুলে তাকালো ধ্রুবর দিকে। এমন ধরনের কথা হুট করে বলে ধ্রুব নিজেও অবাক হয়ে গেল। ও অপ্রস্তুত ভাবে তাকালো তখন অদিতির দিকে। দুজনের চোখে চোখ পরলো। ধ্রুব গলা খাকারি দিয়ে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলল। অদিতিও তাৎক্ষণিক চোখ সরিয়ে ফেলল। কম্পিত হাতে আলগোছে ফল খেতে লাগলো।
ইমন ওদের এমন অপ্রস্তুত ব্যবহার দেখে সব স্বাভাবিক করতে বলল -‘অদিতি, তুমি কদিন ভার্সিটি এসো না। ডাক্তার তোমাকে রেস্ট নিতে বলেছেন।এগুলো মেনে চলো কদিন।’
অদিতি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। ওর মনে চলছে, অ্যাটেনড্যান্স কমে যাবে সে কথা। হয়তো অদিতির মন পরতে পারে ধ্রুব। ধ্রুব হঠাৎ গম্ভীর গলায় বলে উঠলো—‘পারলে প্রক্সি দিয়ে দেওয়া হবে; কাউকে বলে রাখা হবে।’
অদিতি অবাক হয়ে মাথা তুলে তাকালো ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব তাকিয়ে ছিলো অদিতির দিলে। অদিতি তাকাতেই অপ্রস্তুত হয়ে নিজেকে গা লি চোখ সরিয়ে ফেলল ও। এই মেয়েটার জন্যে ধ্রুব কেন এতকিছু করছে ধ্রুব নিজেও জানেনা। সেজন্যে ওর এমন আচরণে নিজেই ও নিজের উপর মহা বিরক্ত।
অদিতির বুকটা আবার কাঁপছে। ধারকান অস্থির হচ্ছে ভীষণ। ধ্রুবর দিকে চেয়ে থাকলেই মনে হচ্ছে- অদ্ভুত নেশা লাগছে। অদ্ভুত একটা ফিলিংস! অদিতি এক অনুভূতি চিনে না, অদিতির ভীষণ ভয় লাগে; এই অনুভূতিগুলোর আঁচড় যখন মনে লাগে।
_
অদিতি হাঁটতে পারছে না। বারবার মাথা ঘুরাচ্ছে। তাই ধ্রুব হুইল চেয়ার টেনে আনল। অদিতির ভীষণ লজ্জা লাগছিল হুইল চেয়ারে বসতে। যুবতী একজন নারী হয়ে এভাবে বৃদ্ধদের মতো হুইল চেয়ারে বসবে ও? ছি!
অদিতিকে এমন আই-ঢাই করতে দেখে ধ্রুব তীক্ষ চোখে তাকাল ওর দিকে। অদিতি সেই দৃষ্টি দেখে ভয় পেয়ে গেল। সুড়সুড় করে বসে গেল হুইল চেয়ারে। ধ্রুব টেনে নিয়ে গেল লিফ্ট অব্দি চেয়ার। অদিতির মনেমনে বোধ হচ্ছে, আশপাশের সবাই অদিতিকে দেখছে, আর কানেকানে ফিসফিসাচ্ছে। বা কেউ ভিডিও করছে, অদিতির বাবাকে দেখিয়ে দিহে সবকিছু। কিকরে গ্রামের ছাপোষা অদিতি একটা ছেলের থেকে সাহায্য নিচ্ছে, ছেলেপেলেদের আশেপাশে চলে এসেছে। অদিতি আতঙ্কে আবারো নীল হয়ে গেল।ধ্রুব হয়তো সেটা বুঝল, ও নিজের মতো করেই হুইল চেয়ার ঠেলতে ঠেলতে চাপা স্বরে বলল-‘কেউই দেখছে না তোমাকে। বি ইজি, এন্ড কনস্যানট্রেট।’
অদিতি চমকে স্থির হয়ে গেল নিজের জায়গায়। ধ্রুব কিভাবে অদিতিকে এতটা বুঝে ফেলে? অদিতি কি খুব জোরে শব্দ করে চিন্তা করে?ছি,, কি বিশ্রী ব্যাপার এগুলো? অদিতি তারপর চুপ করে গেল পুরোটাসময়।
অদিতিকে যখন গাড়িতে তোলা হচ্ছে, অদিতি শুরুতে কিছুটা বেঁকে বসেছিল। এভাবে কারো এতটা সাহায্য নিচ্ছে ও, সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই অদিতির জন্যে নতুন এবং লজ্জার। এবং অনেকখানি ভয়েরও।
তবে ধ্রুব যখন অদিতির এসব কাজে তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে দেখে অদিতিকে, অদিতির মনে হয় গলা অব্দি শুকিয়ে যায়। মনে হয়, এই বুঝি সবার সামনে এই বখাটে ছেলেটা অদিতিকে থা প্পড় বসাল।
অদিতি না চাইতেও চুপচাপ বসল উবারের পেছনের সিটে।ধ্রুব গাড়িতে উঠল না, অদিতির ব্যাপারটা ভালো লাগবে না তাই। শুধু উবারের ড্রাইভারকে ধ্রুব লোকেশনটা বলে দিল। উবারের ড্রাইবার উত্তরে মাথা নাড়ল। ইমন ড্রাইভারের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করল-‘খবরদার পেছনের মেয়ের দিকে লুকিং গ্লাসেও তাকানো যাবেনা। সি ইজ বুকড! এন্ড সেইফলি পৌছে দিবে। ওই যে আপুর বয়ফ্রেন্ড, ধ্রুব। ও কিন্তু পেছনে পেছনেই থাকবে।’
ড্রাইভার ইমনের কথায় বড়বড় চোখে ধ্রুবর দিকে তাকাল। হয়তো ভাবছে, এ আবার কেমন বয়ফ্রেন্ড? গার্লফ্রেন্ডকে একা ছেড়ে দিচ্ছে?
ধ্রুব তখন ভ্রু কুচকে ইমন-ড্রাইবারের কানাকানি দেখছে। ও বুঝতে পারছে না দুজনের মধ্যে কি কথা হচ্ছে। ধ্রুব ইমনের এমন ন্যাকা ব্যবহারে যারপরনাই বিরক্ত হয়ে বলল—‘দেরি হচ্ছে, বাইকে উঠ।’
ইমন আবারও চোখের ইশারায় শাসালো উবারের ড্রাইভারকে। তারপর হেঁটে বাইকে গিয়ে উঠল। ধ্রুব ড্রাইভারের টাকা আগেই দিয়ে দিয়েছে অদিতিকে লুকিয়ে।
ধ্রুব হঠাৎ অদিতির পাশের জানালা থেকে মুখ বাড়িয়ে জানালায় হাত রেখে অদিতির দিকে তাকালো। আচমকা ধ্রুব এভাবে মাথা ঝুকাতেই, অদিতি একটু সরে বসল অনেকখানি।
ধ্রুব স্বাভাবিক গলায় বলল –
‘মেয়েদের হোস্টেলে আমি যেতে পারবো না। আমি বলে রেখেছি আমার জুনিয়রকে। ও নিচে এসে রিসিভ করে নিয়ে যাবে।’
অদিতি ধ্রুবকে দেখছে, মুখটা ধ্রুবর মারাত্মক গম্ভীর।ও ভয়ে-ভয়ে মাথাটা নাড়ল। ও মূলত বুঝতে পারছে না, অদিতির প্রতি ধ্রুবর কেন হঠাৎ এতো উৎকণ্ঠা! এর পেছনে কারণ কি?ও যা ভাবছে সেটাই কি? না, না! ঢাকার ছেলেদের কাছে হয়তো একটা কেয়ার-এত উৎকণ্ঠা দেখানো স্বাভাবিক কোনও ব্যাপার। এগুলো ওসব নয়, যেসব ওদের গ্রামে ভাবা হয়।
অদিতি গ্রামের, তাই ওর কাছে এসব বেশি বেশি লাগছে। তাই ও নিজেই নিজের মনকে প্রবোধ দিল। ধ্রুব চলে যাচ্ছ। অদিতি পাশের গ্লাস দিয়ে দেখে, ধ্রুবর হাঁটার নিজস্ব ভঙ্গি, হাটার সময় আঙ্গুলের ফাঁকে ঝুলিয়ে রাখা বাইকের চাবি দুলছে।
#চলবে