সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গলো বউয়ের ডাকাডাকিতে। এই এক্ষুনি ঘুম থেকে উঠো। তোমার ছেলে কি রেজাল্ট করছে দেখবা না?
হঠাৎ করে মনে পড়লো আজকে তো ছেলের রেজাল্ট দেওয়ার কথা। নির্ঘাত বংশের মুখ উজ্জ্বল টাইপ রেজাল্ট করছে। ছেলের রেজাল্ট কার্ড হাতে নিয়ে দেখি বিজ্ঞান আর গণিতে অল্পের জন্য ফেইল করেনি।
ছেলেকে কাছে ডেকে বললাম ” আব্বু তুমি না প্রথম সাময়িক আর দ্বিতীয় সাময়িকে বিজ্ঞান আর গণিতে ভালো রেজাল্ট করছিলা। এবার এমন করলা কেন? তুমি না কিছুদিন আগেই বললা তোমার বার্ষিক পরীক্ষায় গণিতে আর বিজ্ঞানে ভালো পরীক্ষা হইচে? তাহলে রেজাল্ট এমন কেন?
আব্বু আমার কোনো দোষ নেই৷ সব পরীক্ষাই আমি ভালো দিয়েছি। কিন্তু সাদিয়া ম্যাম নাম্বার দেয়নাই। ছেলের কথায় অবাক হয়ে বললাম বলো কি” তুমি ভালো লিখলে ম্যাম নাম্বার দিবে না কেন?
আমিও জানিনা আব্বু। আগে ম্যাম অনেক আদর করতো। চকলেট কিনে দিতো।কিন্তু ২-৩ মাস হলো কোনো আদর করে না। শুধু বকে। আর আমাকে নাম্বার দিতে চায় না। এইজন্যই মনে হয় ম্যাম আমাকে গণিতে আর বিজ্ঞানে নাম্বার দেয়নি।
ছেলের কথা শুনে মাথায় আগুন ধরে গেলো। ড্রাইভার কে কল দিয়ে বললাম ” তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করো এখন রোমানের স্কুলে যাবো”।
রোমানের স্কুলে গিয়ে ওকে বললাম ” কোন ম্যাম তোমাকে নাম্বার দেয় না দেখিয়ে দেও। আজ সেই ম্যামের একদিন কি আমার একদিন “। ছেলে আমায় একটা রুমের সামনে গিয়ে দেখিয়ে বললো ” আব্বু ঐ ম্যাম টা আমাকে নাম্বার দেয় না”।
তাকিয়ে দেখি সামনে একজন ম্যাম অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছে। উনার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে উনাকে বললাম আপনি আমার ছেলেকে নাম্বার দেন নি কেন?
ম্যাম আমার দিকে হতেই দেখি “সাদিয়া” অর্থাৎ আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড। অর্থাৎ যে মেয়ের খাতা দেখে আমি সারাজীবন পাশ করে এসেছি। অর্থাৎ যে মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ আজ রোমানের যে মা হতো। অর্থাৎ আমি হতাম যে মেয়ের স্বামী।
সাদিয়া কে দেখেই বললাম, তুমি এখানে?
সাদিয়া বললো ” জীবনে অনেকবার তোমাকে খাতা দেখিয়ে পাশ করিয়েছি কিন্তু তোমার ছেলেকে ভালো নাম্বার দিবো এটা তো সম্ভব নয়। প্রথম আর দ্বিতীয় সাময়িক এক্সামে জানতাম না ওটা তোমার ছেলে। নাহলে তখনও ঠিক করে খাতা চেক করলে তোমার ছেলে পাশ করতো কিনা সন্দেহ আছে। তোমার ডিএনএ ওর শরীরে আছে না। সব বুঝা আছে আমার।
ছেলে দেখি আমাদের মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। অর্থাৎ মনে মনে সব কথা রের্কড করে রাখছে মাকে গুছিয়ে বলার জন্য। এর আগেও সে এমন করেছে। তাড়াতাড়ি ছেলেকে নিয়ে মার্কেটের পথে রওনা দিলাম। ছেলেকে বললাম তোমার যা যা প্রয়োজন সব ড্রাইভারের সাথে করে ভিতরে গিয়ে কিনে নিয়ে আসো৷ তোমাকে আমি নতুন স্কুলে ভর্তি করে দিবো। এবার থেকে তুমি ভালো নাম্বার পাবে৷ আগের স্কুলের ম্যাম নিষ্ঠুর। তার স্কুলে তোমাকে পড়াবো না। অনেক ঘষামাজা করলাম ছেলেকে।বললাম ওর আম্মুকে যেন এসব না বলে দেয়। ছেলেকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে অফিস চলে গেলাম।
রাতে ফিরবার আগে নতুন একটা স্কুলের খোঁজ নিয়ে এলাম। কিন্তু সবার আগে খোঁজ নিয়েছি এই স্কুলের টিচার লিস্টে আমার কোনো এক্স আছে কিনা।
রাতের বেলা বাসায় এসে দেখি বউ আর বাচ্চা কাপড়চোপড় ঘুছিয়ে বসে আছে। বউকে বললাম, কোথাও যাচ্ছ নাকি?
বউ বললো হ্যাঁ, ছেলেকে নিয়ে একবারে বাপের বাড়ি যাচ্ছি। এখানে আর থাকবো না। বউকে বললাম, এবার আমার দোষ?
বউ একটা লিস্ট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বের হয়ে গেলো। এটা তার পুরাতন অভ্যাস। আমার ভুল গুলো লিস্টে লিখে সে বাপের বাড়ি চলে যায়।
লিস্ট হাতে নিয়ে চেক করলাম।
ভুল নাম্বার এক।
১। রোমানের এই স্কুলে আমি ভর্তি করতে চাইনি। তুমি করিয়েছ। এখন বুঝতে পারছি সাদিয়া ম্যামকে চুপিচুপি দেখার জন্য ছেলেকে এই স্কুলে ভর্তি করানো।
২। এই যে মাঝেমধ্যেই ছেলেকে নিজ থেকে স্কুলে নিয়ে যাও সেটা আসলে সাদিয়া ম্যামকে দেখার জন্য।
৩। বাসর রাতে আমাকে সাদিয়ার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। তুমি বলেছিলে তুমি নিস্পাপ। জীবনে প্রেম করোনি।
৪। তোমার ভুলের জন্য ছেলে কষ্ট পাবে কেন?
বিঃদ্রঃ খবরদার আমার বাবার বাড়ির দিকে মুখ ঘুরাবে না। তুমি তোমার মতো আমি আমার মতো।
এক্স গার্লফ্রেন্ড
রিফাত আহমেদ
আমাদের সকল হাসির গল্প এখানে