ফ্রিজ পর্ব ১২
অনেক রাতে দুইজন লোক গরু নিয়ে আসল। অনেক ডাকাডাকি করেও আনোয়ার চাচার সাড়া পাওয়া গেল না। চাচা মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছেন। চাচা না আসলেও তেমন সমস্যা নাই। গরুর সমস্ত টাকা পরিশোধ করা আছে।
লোক দুইটা গরুটাকে আমাদের ঘরের সামনে বেঁধে রেখে চলে গেলেন। ইদের দিনে আবার আসবেন দেখা করতে। তখন আনোয়ার চাচার সাথে দেখা হবে।
আপা আর আমি গরুটাকে দেখছি। কালো রংয়ের গরুটা বেশ বড়সড়। মাথায় একটা কাগজের ফুল লাগান। চোখদুটো মনে হয় ভিজে গেছে! গরুটা কি কাঁদছে? মনে হয় কাঁদছে! আপনজন ছেড়ে আসার কষ্টে নাকি আসন্ন মৃত্যুর ভয়ে! কে জানে?
আমাদের এলাকার গরু কুরবানি হয় দেয়াল ঘেরা মাঠে। আনোয়ার চাচা লোকজনদের বললেন, “আমার গরু বাড়িতে কুরবানি দেয়া হবে।”
একজন লোক এসেছে সে বলল, “ভাইজান তাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।”
“হোক তাতে কি? আমাদের কোনো তাড়া নাই।”
আমি বুঝলাম আমি আর আপা মাঠে যেতে পারব না তাই চাচা বাড়িতে কুরবানি দিচ্ছে। আপা অবশ্য গরু জবাই করা দেখতে পারে না। ওর খুব মায়া লাগে! মুরগি জবাই করলে সে ঘরে গিয়ে বসে থাকে।
আমার গরু জবাই করা দেখতে বেশ ভালো লাগে!
দুপুরের দিকে লিটন মাংস নিয়ে আসল আমাদের বাড়িতে। মা সেই মাংস রাখল না। বলল, “বাবা আমার ঘরে পর্যাপ্ত মাংস আছে। এমন তো অনেকেই আছে যাদের ঘরে মাংস নেই তাদের ঘরে পৌঁছে দাও কেমন।”
লিটন চলে গেল। মায়ের ওপর রাগ করেছ বলে মনে হলো না। আমার মা মানুষ কে খুব সুন্দর করে বুঝাতে পারে।
ইদের দিন বিকালে আপা আর আমি বের হলাম। টুম্পার মা বেশ কয়েকবার কল দিয়েছেন যাওয়ার জন্য। আপা বলল,” চল রুনু একবার ঘুরেই আসি আন্টি এতবার কল দিলেন। “
টুম্পাদের বাড়িতে আপা কখনো যায়নি। প্রথমবার আমার সাথে আসল। টুম্পার মা আমাদের দেখে কী সুন্দর করে হাসি দিলেন। আপা কে বললেন,” তুমি এসেছ খুব ভালো হয়েছে মা।”
আপা কে নিয়ে টুম্পাদের জাম্বু সাইজের ড্রয়িংরুমে বসলাম। আপা বড়ো বড়ো চোখে সব কিছু দেখছে! টিভিটার দিকে তাকিয়ে বলল, “দেখছোস রুনু কত বড়ো টিভি?!”
“টিভি দেখবা আপা? চালু করি।”
“না, থাক তোর পাকনামি করতে হবে না। শেষে আবার কী করে ফেলবি ঠিক নেই।”
“আমি চালু করতে পারি আপা।”
আমি উঠে টিভির নিচে একটা কাচের বাক্সের ওপরে রাখা রিমোটটা নিয়ে বললাম।” খুব সহজ এটা টিপলেই চালু হয়ে যায়।”
“আপা চাপা ধমক দিয়ে বলল, রিমোট রেখে এখানে চুপচাপ বস তো।”
আমি রিমোট টিপে টিভিটা চালু করলাম। আপা কেমন বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার খুব মজা লাগছে! আমি আপার পাশে এসে বসলাম।
“তুই কি প্রায়ই এ বাড়িতে আসিস নাকি?”
“না, কয়েকবার এসেছি। টুম্পার মা খুব ভালো!”
এ সময় টুম্পা হাজির হলো। আপার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “আপা চলো তোমাকে আমার ঘরটা দেখাই।”
আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই টিভি দেখবি না আমাদের সাথে আসবি রুনু?”
আপা টুম্পার সাথে চলে গেল। আমি বসে বসে টিভি দেখছি। একটার পর একটা চ্যানেল পাল্টাচ্ছি। একটা চ্যানেলেও ভালো কিছু দেখাচ্ছে না! সব চ্যানেলে ছবি আর নাটক দেখাচ্ছে। একটা নাটক দেখলেও হয়। কিন্তু ভালো লাগছে না। টুম্পার ঘরে যাওয়া যায়। ও আপার সাথে কী গল্প করছে, কে জানে?
একজন লোক আনোয়ার চাচার মতো বয়স হবে। হাসি হাসি মুখে আমার পাশের সোফায় বসল।” কেমন আছ রুনু?”
আমি আলগা হাসি দিয়ে বললাম, ” ভালো, আপনি কেমন আছেন আংকেল?”
প্রথম না চিনলেও পরে বুঝেছি উনি টুম্পার বাবা। লাল রংয়ের খুব সুন্দর একটা পাঞ্জাবি পরেছেন। দেখতে উনি ধবধবে সাদা। লালা পান্জাবিটাতে বেশ সুন্দর লাগছে!
“তোমার বান্ধু কোথায়?”
“ওর ঘরে গেছে। ” বলেই আমি উঠে দাঁড়ালাম।
“বসো, বসো।”
আমি পায়ে পায়ে টুম্পার ঘরে চলে আসলাম। টুম্পার খাটে বসে আছে আপা।
টুম্পা আপা কে ওর কাছে যে সব বই আছে সব একেক করে দেখাচ্ছে। এ সব বই দেখার কী আছে! ওরা যে কী মজা পায় বই পড়ে, কে জানে?
আমি টুম্পার চেয়ারটাতে বসলাম। আজ আপা পাতা রংয়ের একটা শাড়ি পরেছে। আপা কে কী যে সুন্দর লাগছে! কী সুন্দর করে হাসছে আপা! আমি মুগ্ধ হয়ে আপার দিকে তাকিয়ে আছি। টুম্পা গরগর করে কথা বলে যাচ্ছে।
একটু পরেই টুম্পার আসল। মিষ্টি করে হাসি দিয়ে বলল, “কী করছ তোমরা?”
আমরা কিছু বললাম না।
উনি বললেন, ” এসো খাবার দিয়েছি।”
আমরা টুম্পাদের ড্রাই নিং টেবিলে বসলাম্। কত পদের খাবার থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন আন্টি! আপার অবাক হয়ে বলল,” এত খাবার কেন আন্টি?”
“এত কোথায় দেখলে মা? খাও তো তোমরা।”
টুম্পা, আমার আর আপার মাঝে বসেছে। একটা করে বাটি দেখিয়ে বলছে,” আপা এটা খাও খুব মজা। মা না এটা খুব ভালো রাঁধে! “
আমরা তিনজনই খাচ্ছি। আন্টি চলে গেছেন টিভি রুমে।
আংকেলের সাথে আবার আলাপ হলো চা খাওয়ার সময়। আংকেল খুব ভালো গল্প বলতে পারেন। গল্প শুনে এমন হাসি পায়। টুম্পা তো খিলখিল করে হেসে উঠে। সেই হাসি থামতেই চায় না। আমারও খুব হাসি পাচ্ছিল গল্প শুনে। এখন আরেকটা গল্প শুরু করেছেন।
এক বাচ্চা ছেলে সকালবেলা তার মা কে বলছে, “মা রাতে কী হয়েছে জানো?”
মা একটু ছেলের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইল।
ছেলে বলল, “রাতে আমি একা একা একা বাথরুমে গেছি।”
ছেলেটা প্রতিদিন বিছানা ভিজিয়ে ফেলে। ছেলের এমন কথা শুনে মা খুব খুশি হলো।
মা ছেলের মাথায় হাত দিয়ে আদর করে বলল,” আমার লক্ষীসোনা।”
“মা আমাদের বাথরুমটা তো অটো হয়ে গেছে! রাতে আমি দরজা খোলার সাথে সাথে লাইট জ্বলে গেল! আবার দরজা বন্ধ করার সাথে সাথে লাইট অফ হয়ে গেল!”
মা একটা ধমক দিয়ে বলল, “কী তুমি ফ্রিজে হিসু করেছ!”
ফ্রিজের কথা শুনে মনটা কেমন চঞ্চল হয়ে উঠল! আর কয়েকদিন পরে আমাদেরেও একটা ফ্রিজ হবে। আমার মতো আপারও কী মন এমন করছে?
চলবে–
® নাবিল মাহমুদ